অবৈধ সমুদ্রযাত্রা-রোহিঙ্গাদের নতুন কৌশল!
কক্সবাজারের টেকনাফের একটি হোটেল থেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ১৭ জন আটক হওয়ার যে খবর বৃহস্পতিবারের সমকালে ছাপা হয়েছে, সেটা 'নিমজ্জিত হিমশৈলীর দৃশ্যমান চূড়া' মাত্র। এমন অনেক দলই ওই উপকূল থেকে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। বেশিরভাগই ঘটে স্থানীয় প্রশাসনের অগোচরে।
এই সমুদ্রযাত্রা কেবল বেআইনি নয়; সব অর্থেই বিপজ্জনকও বটে। আটক ১৭ জন যেভাবে সাধারণ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দীর্ঘ ও দুর্গম সমুদ্রপথ পাড়ির প্রস্তুতি নিয়েছিল, সেটা আত্মহত্যারই শামিল। মালয়েশিয়ায় অনিশ্চিত জীবন তো অপেক্ষা করছেই; কমবেশি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথও কি কম বিপদসংকুল? ঝড়-নিম্নচাপের সময় অথৈ সমুদ্রে ছোট্ট ওই তরী খড়কুটো ছাড়া আর কী? গত বছর ডিসেম্বরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমন একটি নৌকাই ডুবে গিয়েছিল। দিকভ্রান্তি, ডাকাতি, নিদেনপক্ষে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উপকূলীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয় তো রয়েছেই। তারপরও তারা কেন প্রাণ হাতে নিয়ে অকূলে পাড়ি জমায়? বিভিন্ন সময় যাচাই করে দেখা গেছে, আটকদের অধিকাংশই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বুধবারের অভিযানে সেই চিত্র স্পষ্টতর হয়েছে। বিমানপথে কড়াকড়ির পর তারা এখন সমুদ্রের 'সহজ' পথ বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের অবৈধ সমুদ্রযাত্রার প্রায় অবারিত এই সুযোগ একদিকে বিদেশে আমাদের জনশক্তির বাজার ও ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে; অন্যদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সীমান্ত পার হতে উৎসাহিত করছে। অবৈধপথে সমুদ্র পাড়ি দিতে উসকে দিচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিককেও। বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিয়ে এই মৌরসী পাট্টা চলতে দেওয়া যায় না। যে দেশের নাগরিকই হোক, অবৈধ সমুদ্রযাত্রায় মানবিক বিপর্যয়ের দিকটিও আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। প্রয়োজনে মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগও নেওয়া যেতে পারে। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও উদ্যোগী না হলে স্থানীয় দালালনির্ভর এই চোরাকারবার নির্মূল করা যাবে না। আমরা চাই, সমুদ্র উপকূল সম্ভাবনার সিংহদুয়ার হোক; স্বার্থহানি, মানবিক বিপর্যয় ও নিরাপত্তাহীনতার কানাগলি নয়
No comments