স্বাস্থ্যবীমার ফায়দা নিতে সুস্থ নারীদের জরায়ুচ্ছেদ!

গরিব পরিবারগুলোকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের যে স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প চালু আছে, বিবেকহীন এক শ্রেণীর চিকিৎসক এর ফায়দা লুটছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা অনেক নারীর জরায়ু কেটে ফেলেছেন।


এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নারীদের ভয় দেখিয়ে তাঁরা এ কাজ করেছেন। সরকারের কাছ থেকে বীমার টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকরা এ কাজ করছেন। ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে সম্প্রতি এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে।
গরিব পরিবারের রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচার বিনা মূল্যে করে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে ভারত সরকার স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প হাতে নেয়। সে অনুযায়ী চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের বিনিময়ে ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলো গরিব পরিবারপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০ হাজার রুপি পর্যন্ত দাবি করতে পারে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ভারতের চিকিৎসক, নার্সিং হোম বা ক্লিনিক এবং বিভিন্ন বীমা কম্পানি এ প্রকল্পের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরিব নারীরা অনেক সময়ই খুব সাধারণ শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে যান। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, জরায়ু ফেলে না দিলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ওই নারীদের ভয় দেখান চিকিৎসকরা। কোমর ব্যথার চিকিৎসা নিতে গিয়ে নারীরা জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। এ ধরনের অনেক অভিযোগ সরকারের তদন্তাধীন। উল্লেখ্য, অল্প বয়সে ও অনেকবার গর্ভধারণ, অপুষ্টি, বাড়িতে কষ্টকর উপায়ে সন্তান প্রসবসহ নানা কারণে ভারতের গরিব নারীদের মধ্যে জরায়ুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। জরায়ুচ্ছেদের পর সন্তান জন্মদান ক্ষমতা হারানোসহ নারীদেহে অস্থিক্ষয় ও নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমর আগারওয়াল গত বুধবার জানান, তাঁর রাজ্যে স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের অন্যায় সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, 'টাকা পাওয়ার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নারীদের জরায়ু ফেলে দেওয়ার কুপরামর্শ দেওয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জরায়ুচ্ছেদের খরচ বাবদ চিকিৎসকরা প্রায় এক কোটি রুপি উঠিয়ে নিয়েছেন। সংগত কোনো কারণ ছাড়াই এসব অস্ত্রোপচার হয়েছে।' প্রাথমিক তদন্তের পর ছত্তিশগড়ের ৯ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, গত ছয় মাসে ছত্তিশগড়ে দুই হাজারের বেশি নারীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে এবং এর বেশির ভাগই হয়েছে বেআইনিভাবে। গত পাঁচ বছরে এ রাজ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি নারীর জরায়ু বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, ডেইলিমেইল।

No comments

Powered by Blogger.