গুনাহমুক্ত জীবনের অঙ্গীকার by আবদুল্লাহ মুকাররম

সব ইবাদতই আল্লাহর জন্য করা হয়। তবে রোজাকে আল্লাহর জন্য বলার হেকমত হচ্ছে, সব ইবাদতে লোক দেখানোর প্রবণতা থাকতে পারে, কিন্তু রোজায় সেই সুযোগ থাকে না মোটেও। কাউকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়া যেতে পারে। দান-খয়রাতও দানবীর হওয়ার জন্য হতে পারে।


রোজা ছাড়া অন্য সব ইবাদতেই এমনটা হওয়া অবাস্তব কিছু নয়। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে এমন ভাবনার সুযোগই থাকে না। কেননা তাতে দেখানোর কিছু নেই। তা করা না করা বাহ্যত সমান। যখন বান্দা নির্জনে থাকে তখন তার জন্য কোনো কিছু খেয়ে রোজার বাহানা করলে বোঝার উপায় থাকে না। আবার প্রচণ্ড গরমে পিপাসায় কাতর অবস্থায় নির্জনে পানি পান না করলে তার প্রমাণও থাকে না। কেবলই খোদাভীতি, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মানসিকতাই তাকে রোজা রাখতে অনুপ্রাণিত করে এবং সে মানসেই বান্দা রোজা রাখে।
নির্দিষ্ট সময়ে পানাহার বর্জনসহ আরও কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। রোজাকালীন এসব থেকে বিরত থাকা সওয়াবের কাজ। আবার সেহরি শেষ সময়ে খাওয়া সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ। তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত, ইফতারের সময় অযথা না খেয়ে বিলম্ব করা পাপ। সুতরাং এখানে খাওয়া না খাওয়ার বিষয় বড় নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়নটাই মুখ্য। না হয় বাহ্যত এক মিনিট আগে-পরে খাওয়ায় পুণ্য কিংবা পাপের কী আছে? এটাই প্রতিপাদ্য বিষয়। আমি আল্লাহর নির্দেশের দরুন হালাল বস্তু বর্জন করছি। আবার তাঁর নির্দেশেই দ্রুত খাদ্য গ্রহণ করছি। কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, 'হে রাসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, কোরবানি এবং জীবন ও মরণ সব আল্লাহর জন্য। আয়াতের ভাষ্যমতে, মুসলমানদের যাবতীয় কাজ আল্লাহর জন্য। রোজায় মানুষ আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে তাঁর সন্তুষ্টি কামনায় হালাল কাজ থেকে বিরত থাকে। তাহলে রমজানে অন্যান্য হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য নয় কি? নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, 'অনেক রোজাদার এমন রয়েছে উপোসযাপন ব্যতীত রোজা তার কোনো উপকারে আসে না।' (দারামি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা). থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা এবং মিথ্যানির্ভর কাজ বর্জন করতে পারেনি তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।' (বুখারি)
উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে সহজেই অনুমেয়, রমজানের রোজাকে কার্যকর করতে অন্যান্য গুনাহ বর্জন অপরিহার্য, না হয় সারাদিন উপোস থাকার কোনো অর্থ হয় না। এটাই রোজার প্রকৃত দাবি_ গুনাহমুক্ত একটি মাস অতিবাহিত করা। মানুষকে মুত্তাকি বানানোর মূলমন্ত্র এটাই। সচেতন কেউ রবের নির্দেশ পালনার্থে রোজায় হালাল কাজ বর্জন করে সব সময়ের হারামে সে লিপ্ত হতে পারে না।
 

No comments

Powered by Blogger.