রমজানে সবার কথা ভাবুন by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
মসজিদভিত্তিক পাঠাগার কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জনবল অনুমোদন ও বিগত এক বছরের বকেয়া বেতন প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মডেল মসজিদ পাঠাগার লাইব্রেরিয়ান খাদেম অ্যাসোসিয়েশন। গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়।
সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে মসজিদের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৯টি। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৩০টি জামে মসজিদ। শুধু ঢাকা মহানগরীতে মসজিদ রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯৮৫টি। মসজিদের আধিক্যের কারণে ঢাকা 'মসজিদের নগরী' বলে পরিচিত। জরিপ অনুযায়ী দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ৩৫ থেকে ৫০টি মসজিদ রয়েছে। গ্রামের তুলনায় শহর এলাকায় মসজিদের সংখ্যা বেশি। উল্লেখ্য, হাতেগোনা কয়েকটি মসজিদ বাদে দেশের প্রায় সব মসজিদই বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়।
দেশের মসজিদগুলোর মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার মসজিদ রয়েছে মসজিদভিত্তিক পাঠাগার। এসব মসজিদে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, লাইব্রেরিয়ান ও খাদেম হিসেবে কর্মরত আছেন প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ লোক। মসজিদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই বিশাল জনগোষ্ঠী নিরলসভাবে মসজিদকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করে যাচ্ছে সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে। এখন সময় এসেছে এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে উদ্ভূত নানা সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ধারণা দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার। তাদের কৃষি আবাদ, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালনসহ আত্মনির্ভরশীল করার বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুললে তা হবে সমাজের জন্য উপকারী। অবশ্য দেশের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মধ্যে যারা দুর্ঘটনায় পতিত, প্রতিবন্ধী, দুরারোগ্য ব্যাধিজনিত কারণে অক্ষম বা যারা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ ও আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে একটি ফান্ডও গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সুফল এখনও শুরু হয়নি।
হাদিসে মসজিদকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জায়গা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী বিধানে বলা হয়েছে, মসজিদ যদি 'আবাদ' (চালু) না থাকে অর্থাৎ মসজিদে যদি নিয়মিত জামাতে নামাজ না হয় এবং যেসব কাজের জন্য মসজিদ নির্ধারিত, সেসব যথাযথভাবে পালিত না হয়_ তা হলে ওই এলাকার সবাই গুনাহগার হবেন। বস্তুত মসজিদগুলোকে আবাদ করার দায়িত্ব পালন করছেন খাদেম-মুয়াজ্জিনরা।
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় সবচেয়ে উঁচু হবে' অর্থাৎ তিনি অনন্য মর্যাদার অধিকারী হবেন। এতে বোঝা যায়, মুয়াজ্জিন আর আল্লাহর প্রিয় জায়গার খাদেমদের মর্যাদা। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেওয়া থেকে শুরু করে মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তারা পালন করেন। ফলে সাধারণ মুসলি্লরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করেন; কিন্তু তাদের নেই চাকরির বিধিমালা, নেই নিয়োগপত্র ও যথাযথ সম্মানীর ব্যবস্থা। প্রায়ই দেখা যায়, মসজিদ কমিটির সদস্যরা খাদেম-মুয়াজ্জিনদের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অযাচিত ব্যবহার করে থাকেন, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
শুধু খাদেম-মুয়াজ্জিন নয় ইমাম সাহেবের বেতনও অতি সামান্য। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে ইমামরা সরকারিভাবে কোনো বেতন পান না। তাই খাদেম-মুয়াজ্জিন ও ইমাম নিয়োগে একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। এটা দরকার মসজিদ পরিচালনা কমিটির জন্যও। প্রায়ই দেখা যায়, মসজিদ পরিচালনা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতে, অনেক সময় মসজিদের কর্তৃত্ব নিয়ে মারামারিও হয়, যা অনভিপ্রেত। মসজিদ মুসলিম সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আর মসজিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হলেন মুসলিম সমাজের অনন্য মর্যাদার অধিকারী। ইবাদত-বন্দেগির প্রত্যেক স্তরে তারা মিশে আছেন সবার সঙ্গে। তারপরও তারা ব্যাপকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত।
আমরা মনে করি, খাদেম-মুয়াজ্জিনদের কর্মমুখী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে সরকার, সমাজসেবক ও নেতৃস্থানীয় আলেমদের। খাদেম-মুয়াজ্জিনী কোনো চাকরি নয়; তারপরও অর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেকে এ কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এমতাবস্থায় তাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তাদেরও উদ্যোগী হতে হবে। মানবতাবোধসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকই মনে করেন, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের নিয়মিত বেতন হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে সরকারি নীতিমালা থাকা জরুরি। প্রয়োজনে তাদের দিয়ে প্রোডাকটিভ কিছু কাজও করানো যেতে পারে।
রমজান মাস আসছে। রমজানের অতিরিক্ত কাজও তারা সম্পাদন করবেন। যেভাবে বাকি এগারো মাস করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের জন্য সহায়ক ও মঙ্গলজনক হয় এমন কিছু ভাবার জন্য সমাজপতিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রইল। মনে রাখবেন, আপনি যে মাওলার কুদরতি পায়ে সেজদা করছেন, সেই স্থান নিয়মিত তারা পরিষ্কার রাখেন, আবাদ রাখেন। সুতরাং আমাদের কি দায়িত্ব নয় তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের মনের কালিমা মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়া?
muftianaet@gmail.com
দেশের মসজিদগুলোর মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার মসজিদ রয়েছে মসজিদভিত্তিক পাঠাগার। এসব মসজিদে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, লাইব্রেরিয়ান ও খাদেম হিসেবে কর্মরত আছেন প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ লোক। মসজিদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই বিশাল জনগোষ্ঠী নিরলসভাবে মসজিদকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করে যাচ্ছে সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে। এখন সময় এসেছে এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে উদ্ভূত নানা সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ধারণা দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার। তাদের কৃষি আবাদ, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালনসহ আত্মনির্ভরশীল করার বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুললে তা হবে সমাজের জন্য উপকারী। অবশ্য দেশের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মধ্যে যারা দুর্ঘটনায় পতিত, প্রতিবন্ধী, দুরারোগ্য ব্যাধিজনিত কারণে অক্ষম বা যারা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ ও আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে একটি ফান্ডও গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সুফল এখনও শুরু হয়নি।
হাদিসে মসজিদকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জায়গা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী বিধানে বলা হয়েছে, মসজিদ যদি 'আবাদ' (চালু) না থাকে অর্থাৎ মসজিদে যদি নিয়মিত জামাতে নামাজ না হয় এবং যেসব কাজের জন্য মসজিদ নির্ধারিত, সেসব যথাযথভাবে পালিত না হয়_ তা হলে ওই এলাকার সবাই গুনাহগার হবেন। বস্তুত মসজিদগুলোকে আবাদ করার দায়িত্ব পালন করছেন খাদেম-মুয়াজ্জিনরা।
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় সবচেয়ে উঁচু হবে' অর্থাৎ তিনি অনন্য মর্যাদার অধিকারী হবেন। এতে বোঝা যায়, মুয়াজ্জিন আর আল্লাহর প্রিয় জায়গার খাদেমদের মর্যাদা। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেওয়া থেকে শুরু করে মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তারা পালন করেন। ফলে সাধারণ মুসলি্লরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করেন; কিন্তু তাদের নেই চাকরির বিধিমালা, নেই নিয়োগপত্র ও যথাযথ সম্মানীর ব্যবস্থা। প্রায়ই দেখা যায়, মসজিদ কমিটির সদস্যরা খাদেম-মুয়াজ্জিনদের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অযাচিত ব্যবহার করে থাকেন, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
শুধু খাদেম-মুয়াজ্জিন নয় ইমাম সাহেবের বেতনও অতি সামান্য। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে ইমামরা সরকারিভাবে কোনো বেতন পান না। তাই খাদেম-মুয়াজ্জিন ও ইমাম নিয়োগে একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। এটা দরকার মসজিদ পরিচালনা কমিটির জন্যও। প্রায়ই দেখা যায়, মসজিদ পরিচালনা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতে, অনেক সময় মসজিদের কর্তৃত্ব নিয়ে মারামারিও হয়, যা অনভিপ্রেত। মসজিদ মুসলিম সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আর মসজিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হলেন মুসলিম সমাজের অনন্য মর্যাদার অধিকারী। ইবাদত-বন্দেগির প্রত্যেক স্তরে তারা মিশে আছেন সবার সঙ্গে। তারপরও তারা ব্যাপকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত।
আমরা মনে করি, খাদেম-মুয়াজ্জিনদের কর্মমুখী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে সরকার, সমাজসেবক ও নেতৃস্থানীয় আলেমদের। খাদেম-মুয়াজ্জিনী কোনো চাকরি নয়; তারপরও অর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেকে এ কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এমতাবস্থায় তাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তাদেরও উদ্যোগী হতে হবে। মানবতাবোধসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকই মনে করেন, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের নিয়মিত বেতন হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে সরকারি নীতিমালা থাকা জরুরি। প্রয়োজনে তাদের দিয়ে প্রোডাকটিভ কিছু কাজও করানো যেতে পারে।
রমজান মাস আসছে। রমজানের অতিরিক্ত কাজও তারা সম্পাদন করবেন। যেভাবে বাকি এগারো মাস করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের জন্য সহায়ক ও মঙ্গলজনক হয় এমন কিছু ভাবার জন্য সমাজপতিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রইল। মনে রাখবেন, আপনি যে মাওলার কুদরতি পায়ে সেজদা করছেন, সেই স্থান নিয়মিত তারা পরিষ্কার রাখেন, আবাদ রাখেন। সুতরাং আমাদের কি দায়িত্ব নয় তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের মনের কালিমা মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়া?
muftianaet@gmail.com
No comments