শুধু উপবাস থাকা নয় by কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
রমজান মাসের আগমনে মুসলমানের হৃদয়ে স্পন্দন জাগ্রত হয়। তারা আনন্দিত হন এই ভেবে যে, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আবার এসেছে মাহে রমজান। তারা রমজানকে স্বাগত জানান। সাধারণভাবে মনে করা হয়ে থাকে, রোজা অর্থ উপবাস থাকা। কাজেই অনেকের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে,
রোজা থাকা অর্থাৎ উপবাস থাকার মধ্যে এমন কী কল্যাণ নিহিত রয়েছে যা পালন করা ফরজ করা হয়েছে? রোজা শুধু নির্দিষ্ট সময় উপবাস ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা নয়, একই সঙ্গে আরও অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। মিথ্যা, পরনিন্দা, অশল্গীলতা, ধোঁকাবাজি, ঝগড়া-বিবাদসহ সব ধরনের অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। খাবার থেকে বিরত থাকার সঙ্গে সঙ্গে চোখ বিরত থাকবে অন্যায় দৃষ্টি থেকে, কান বিরত থাকবে অনর্থক কথা ও অশল্গীল গান শোনা থেকে। কোনো রোজাদার ব্যক্তি সব ধরনের অন্যায় ও অসৎ পথে চলা থেকে বিরত থাকবেন। উলি্লখিত গুণাবলি অর্জন করা তখনই সম্ভব যখন অন্তরে আল্লাহর ভয় সদা জাগ্রত থাকবে। সংযমের মাস রমজানে সিয়ামের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করে সংযমী হওয়ার শিক্ষাই গ্রহণ করে থাকে।
শরিয়তের দৃষ্টিতে সব ধরনের অন্যায় ও গর্হিত আচার-আচরণের জন্য আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শরিয়তের বরখেলাপ কাজ যাতে সংঘটিত না হয় সে জন্য আল্লাহ রোজা ও নামাজসহ আরও অনেক বিষয় ফরজ করে দিয়েছেন মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। রোজা হচ্ছে একটা গোপন ইবাদত। আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য রোজার ভূমিকা অপরিসীম। আত্মিক উন্নতির জন্য এটি একটি শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। আমাদের মধ্যে নৈতিকতার যে হাহাকার চলছে, সঠিকভাবে সিয়াম পালনের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'রোজা হলো ঢাল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশল্গীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায়, তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম পালনকারী।' (মুসলিম)
একজন মানুষ সত্যিকার অর্থেই সিয়াম পালনের মাধ্যমে নিজের বদভ্যাসগুলো পরিহার করার জন্য সচেষ্ট হলে এবং এক মাস যাবৎ এ সাধনা জারি রাখলে তার মধ্যে অনবরত সৎ কাজ করার অনুভূতি সৃষ্টি হবে, যা পরবর্তীকালে সব ধরনের অন্যায় ও অশল্গীলতা প্রতিরোধে শক্তি জোগাবে। এ অনুভূতিই একটি মানুষকে উন্নীত করতে পারে নৈতিকতার উচ্চ শিখরে। রমজান মাসে রোজার মাধ্যমে শুধু নৈতিক অথবা আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয় তা না। বৈষয়িক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এর অনুশীলন খুবই উপকারী। রোজা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়েও আমরা বলতে পারি, রমজান হচ্ছে বরকতপূর্ণ একটা মাস। সুতরাং রমজান আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এ মাস আমরা যারা পেয়েছি তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিজেদের শুধরে নেওয়ার।
kalamidea@yahoo.com
No comments