বাংলাদেশের জনসংখ্যা-প্রতিটি জন্মই হোক পরিকল্পিত

অস্বাভাবিক জনস্ফীতির এই বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম থিতিয়ে পড়েছে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারের উদ্যোগ প্রায় শূন্যের কোঠায়। পরিণতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না- মানুষ বাড়ছে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ধর্মীয় অন্ধত্ব, দারিদ্র্য ও বিনোদনের অভাবজনিত কারণে।


আবার অপরিকল্পিত পরিবারের কারণে শিশু মৃত্যু, মাতৃত্বকালীন অসুস্থ থাকা এবং প্রসূতি মৃত্যুহারও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়ে আছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে প্রজনন হার ২.৭ শতাংশ। অথচ এই হার শ্রীলঙ্কায় ০.৫, থাইল্যান্ডে ০.৭ মিয়ানমারে ০.৯ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে শিশু মৃত্যুহার কমে এসেছে বাংলাদেশে। এই সাফল্যকেও বাংলাদেশের প্রয়োজনের নিরিখে যথাযথ বলা যাবে না। তাই প্রসূতি মৃত্যুহার ও শিশু স্বাস্থ্যহানির কারণগুলো দূর করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। আর সে জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন দারিদ্র্য নিরসন করা। দারিদ্র্য নিরসন না হওয়ার কারণে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতিও দুর্ভাগ্যজনক। নারী ও শিশু পাচার থেকে শুরু করে নির্যাতনের নিত্য ঘটনাগুলোর পেছনেও কাজ করছে মূলত দারিদ্র্য। দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা গেলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমিয়ে আনা সম্ভব। যা জীবনব্যবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শিক্ষার অভাব এখনো প্রকট। কুসংস্কারমুক্ত সমাজের জন্যও শিক্ষা অপরিহার্য। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থাকলে মানুষের মধ্যে কুসংস্কার কমে আসতে পারে। সেদিক থেকেও আমাদের সমাজের অবস্থান পিছিয়ে আছে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটির বেশি। এই জন্মহার অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৪ কোটি ২৯ লাখে। বাংলাদেশে এখনই যেখানে মানুষের আহার ও বাসস্থানের সংস্থান করতে গিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়, সেখানে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর আহার ও বাসস্থান তখন অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াবে। ফলে এখন যে হারে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, বর্ধিত জনসংখ্যার এই দেশে তা কমিয়ে আনা তো সম্ভব হবেই না, বরং বেড়ে যাবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। যার প্রভাব পড়বে সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও।
একসময় বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রোল মডেল ছিল। আমাদের সেই সাফল্যকে ধরে রাখতে না পারার কারণে দেশের অগ্রগতি বাধার মুখে পড়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের তহবিল সংস্থান হতো অধিকাংশই বিদেশি অনুদানে। অনুদানপ্রাপ্তি কমে আসার কারণে এই খাতের ব্যয় সংকোচন করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা প্রয়োজন। যেকোনো উপায়ে হোক, জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিম্ন পর্যায়ে আনতে হবে দেশের স্বার্থে।

No comments

Powered by Blogger.