তবলার ছন্দেই জীবনের ছন্দ by শাহ্রিয়ার হ্যাপি

ছোটবেলা থেকেই দুষ্ট আর ডানপিটে ছিলেন। ছেলেরা যা করত তাই করতে মন চাইত। খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ, গাছে ওঠা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গান-বাজনার দিকেই ঝুঁকে গেলেন, কারণ পারিবারিক আবহটা ছিল সেরকম। পরিবারের সবাই গান-বাজনা করতেন। সেই থেকে তার শুরু। তবে এ ক্ষেত্রেও তিনি ব্যতিক্রম রয়ে গেলেন।


তার ডানপিটে স্বভাবই হয়তো তাকে টেনে নিল তেরে কেটে তা, তেরে কেটে তা'র দিকে। না নৃত্যকলা নয়, তালে-বোলে হয়ে উঠেছেন একজন দক্ষ তবলাবাদক। রোকেয়া আজমল মলি। তবলা বাজানো শুধু ছেলেদের কাজ না মেয়েরাও যে দক্ষ হয়ে এ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন দেখিয়ে দিলেন তিনি। মলির জন্ম হয়েছিল ভারতের দার্জিলিংয়ে, ওখানেই দাদাবাড়ি। আর নানাবাড়ি ঢাকার গাজীপুরে। লেখাপড়াটা শুরু হয়েছিল কলকাতায়। ওখানকার আবাসিক স্কুলে পড়তেন। ৭ বছর বয়স থেকেই হাত পড়ে তার তবলায়। তিনি বললেন, ছোটবেলা থেকেই কেন যেন এই বাদ্যযন্ত্রটার প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ বোধ করতাম। তবলার ছন্দ আমার মন নাচিয়ে দিত। আর এখন মনের নাচনের সঙ্গে হাতের নাচনে হয়ে উঠেছেন তুখোড় তবলাবাদক। তবলা বাজানোর প্রতি আগ্রহকে পবিরার কখনোই বাধাগ্রস্ত করেনি বরং সবাই উৎসাহ দিতেন, বিশেষ করে মা বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। কাজ, লেখাপড়া সবটাই রুটিন অনুযায়ী করেছেন ছোটবেলা থেকেই, এখনও তা বজায় রেখেছেন একইভাবে। বিয়ের পর ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশে আছেন। তবলা বাজানোর পাশাপাশি নিয়মিত সঙ্গীতচর্চাও করছেন। ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে তবলা বাজাচ্ছেন। বললেন, এখনও শেখার অনেক কিছু বাকি আছে। প্রতিনিয়তই আমি শিখে যাচ্ছি। বর্তমানে তিনি থাকেন পুরান ঢাকায় । সেখানে একটি একাডেমীতে গান ও তবলা বাজানোর শিক্ষক তিনি। শিল্পীগুরু বশির আহমেদের সঙ্গে ৭ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি বললেন, এটা আমার সৌভাগ্য, তার সঙ্গে কাজ করে প্রতিনিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করছি। বিটিভির তালিকাভুক্ত তবলাবাদক তিনি। তবলা ছাড়াও হারমোনিয়াম এবং মাউথ অরগান খুব ভালো বাজাতে পারেন মলি। নিভৃতে নিজের অন্তরের শান্তির জন্য মাউথ অরগান বাজিয়ে থাকেন তিনি। তবে তবলা বাজানো তার নেশা এবং পেশা। তিনি বলেন, অনেকে এখনও খুব অবাক হন মেয়ে মানুষ তবলা বাজায়! এটা তো ছেলেরা বাজায়। মেয়েরা তবলা বাজাবে কেন? আমি তাদের বুঝিয়ে বলি, ছেলেদের কাজ আর মেয়েদের কাজ বলে কিছু নেই। যে কাজ করতে ভালো লাগবে সেই কাজই করা উচিত। তবলার প্রতি ভালোবাসা আর একাগ্রতা তাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বলে তিনি মনে করেন। তবে স্বামীর সহযোগিতার কথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেন। তিনি বলেন, সবসময় আমার কাজের মূল্যায়ন করে আসছেন তিনি। আমার কাজে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি বরং উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। এক ছেলের মা মলি। ছেলেকে এখন থেকেই পড়ালেখা করানোর পাশাপাশি গান ও তবলা বাজানো শিখাচ্ছেন। মলি বলেন, আমাদের দেশে মহিলা তবলা বাদকের সংখ্যা খুব কম। অনুষ্ঠান করতে গেলে, কিংবা যখন আমি মেয়েদের তবলা বাজানো শেখার কথা বলি তখন অনেক অভিভাবকই বলেন, মেয়েরা আবার কীভাবে তবলা বাজাবে, কিন্তু যখন আমি বাজাতে শুরু করতাম তখন সবাই অবাক হয়ে যেত। সব অনুষ্ঠানে তবলা বাজিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে তিনি। তাকে দেখে কিছু মেয়ে অনুপ্রাণিতও হচ্ছে । তিনি বলেন, এটাই আমার সার্থকতা। মাসে কমপক্ষে পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। গান আমার শখ, কিন্তু তবলা আমার নেশা এবং পেশা। তবলা বাদক হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে পছন্দ করি। এ বিষয়ে নিজেকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.