চরাচর-কালের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে লালকুঠি by শরাফত হোসেন
মোগল নির্মাণশৈলী ও কৌশল অবলম্বনে নানাবিধ সুবিধার কথা বিবেচনায় এনে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী ওয়াইজঘাটে ১৮৭৪ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় ভবনটির, শেষ হয় ১৮৭৯ সালে। তবে ভবনটি উদ্বোধন করা হয় ১৮৮০ সালের ২৫ মে। বলছিলাম, রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও সৌন্দর্যময় স্থাপত্যিক নিদর্শন নর্থব্রুক হলের কথা।
দলিল-দস্তাবেজে স্থাপনাটির নাম নর্থব্রুক হল হিসেবে উদ্ধৃত থাকলেও চমকা লালে রাঙা ভবনটি সাধারণের কাছে 'লালকুঠি' হিসেবেই পরিচিত। ১৮৭৪ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় বা গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থব্রুক এক সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর এই ঢাকা সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ঢাকার প্রখ্যাত ধনী ব্যক্তি ও জমিদাররা টাউন হল হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ভাওয়াল রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী, খ্যাতনামা ধনাঢ্য ও জমিদাররা ১০ হাজার-পাঁচ হাজার করে চাঁদা দানের মাধ্যমে এই হলের নির্মাণ তহবিল গঠন করেন। প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব অভয় চরণ দাস ছিলেন উদ্যোক্তা কমিটির সেক্রেটারি। নর্থব্রুক হল নির্মাণের পর প্রচীন ঢাকার জাঁকজমকপূর্ণ নাগরিক অনুষ্ঠানগুলো এখানেই আয়োজন করা হতো। বর্তমানে নর্থব্রুক হলের কর্তৃত্বভার রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে গৌরব ও ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে ঐতিহাসিক স্থাপনাটির।
লালকুঠির মূল ফটকের সামনে একটি রবীন্দ্র স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় একাধিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ঢাকায় এলে লালকুঠিতে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি ও পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধরে রাখতেই রবীন্দ্রচর্চাকেন্দ্র ট্রাস্টের সহযোগিতায় ঢাকা সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হয়ে এ স্মৃতিফলক স্থাপন করে, এটি উদ্বোধন করা হয় ২০১১ সালের ৩০ জুলাই। লালকুঠির দুটি প্রবেশদ্বারের মাঝামাঝি একটি সুদৃশ্য তারা আকৃতির ফোয়ারা রয়েছে, এটির সৌন্দর্যও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মলিন হয়ে গেছে। ফোয়ারাটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। স্থাপনাটিতে প্রবেশ করলে প্রথমে একটি চতুরস্র হলঘর পড়বে। হলঘরটির উত্তরের গাড়ি বারান্দা, দক্ষিণের ছোট ছোট কোঠা এবং আধানলাকার ছাদ ধাপে ধাপে উঁচু হয়ে ওঠায় ইমারতটিকে বাইরের দিক থেকে দেখতে পিরামিড আদলের মনে হয়। আর সার্বোপরি লালকুঠির মাঝের হলঘরটির ওপর রয়েছে মোগল ধাঁচে তৈরি একটি আদর্শ গম্বুজ। নর্থব্রুক হল বা লালকুঠিতে একটি বহু পুরনো গ্রন্থাগার রয়েছে। গ্রন্থাগারের দুইজন কেয়ারটেকার আছেন। ১৮৮২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নর্থব্রুক হলের সঙ্গে 'জনসন হল' নামে একটি ক্লাবঘর মতান্তরে গণপাঠাগার সংযুক্ত করা হয়, যদিও তা 'নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি' নামেই খ্যাত ছিল। পাঠাগারটির সংগ্রহের খুব সুনাম ছিল। এই পাঠাগার গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে যে তহবিল সংগ্রহ করা হয়, তাতে ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ পাঁচ হাজার, ত্রিপুরার মহারাজ এক হাজার, বালিয়াটির জমিদার ব্রজেন্দ্র কুমার রায় এক হাজার, রাণী স্বর্ণময়ী সাত শ, কালীকৃষ্ণ পাঁচ শ এবং বিশ্বেশ্বরী দেবী পাঁচ শ টাকা দান করেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমে এক হাজার বই নিয়ে ১৮৮৭ সালে পাঠাগারটি খোলা হয়। এই পাঠাগারের জন্য নাকি বিলেত থেকে বই এনে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাঠাগারের অনেক বই নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৫০-এর দিকে নর্থব্রুক হল টেলিগ্রাফ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরে কিছুদিন 'সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ' হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যায়।
এ ছাড়া নর্থব্রুক হলের পেছনে তিনটি কক্ষ স্থানীয় ছোট-বড় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব সংগঠনের সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ তথা আনুষঙ্গিক কার্যক্রমগুলো এখানেই পরিচালিত হয়।
শরাফত হোসেন
লালকুঠির মূল ফটকের সামনে একটি রবীন্দ্র স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় একাধিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ঢাকায় এলে লালকুঠিতে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি ও পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধরে রাখতেই রবীন্দ্রচর্চাকেন্দ্র ট্রাস্টের সহযোগিতায় ঢাকা সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হয়ে এ স্মৃতিফলক স্থাপন করে, এটি উদ্বোধন করা হয় ২০১১ সালের ৩০ জুলাই। লালকুঠির দুটি প্রবেশদ্বারের মাঝামাঝি একটি সুদৃশ্য তারা আকৃতির ফোয়ারা রয়েছে, এটির সৌন্দর্যও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মলিন হয়ে গেছে। ফোয়ারাটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। স্থাপনাটিতে প্রবেশ করলে প্রথমে একটি চতুরস্র হলঘর পড়বে। হলঘরটির উত্তরের গাড়ি বারান্দা, দক্ষিণের ছোট ছোট কোঠা এবং আধানলাকার ছাদ ধাপে ধাপে উঁচু হয়ে ওঠায় ইমারতটিকে বাইরের দিক থেকে দেখতে পিরামিড আদলের মনে হয়। আর সার্বোপরি লালকুঠির মাঝের হলঘরটির ওপর রয়েছে মোগল ধাঁচে তৈরি একটি আদর্শ গম্বুজ। নর্থব্রুক হল বা লালকুঠিতে একটি বহু পুরনো গ্রন্থাগার রয়েছে। গ্রন্থাগারের দুইজন কেয়ারটেকার আছেন। ১৮৮২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নর্থব্রুক হলের সঙ্গে 'জনসন হল' নামে একটি ক্লাবঘর মতান্তরে গণপাঠাগার সংযুক্ত করা হয়, যদিও তা 'নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি' নামেই খ্যাত ছিল। পাঠাগারটির সংগ্রহের খুব সুনাম ছিল। এই পাঠাগার গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে যে তহবিল সংগ্রহ করা হয়, তাতে ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ পাঁচ হাজার, ত্রিপুরার মহারাজ এক হাজার, বালিয়াটির জমিদার ব্রজেন্দ্র কুমার রায় এক হাজার, রাণী স্বর্ণময়ী সাত শ, কালীকৃষ্ণ পাঁচ শ এবং বিশ্বেশ্বরী দেবী পাঁচ শ টাকা দান করেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমে এক হাজার বই নিয়ে ১৮৮৭ সালে পাঠাগারটি খোলা হয়। এই পাঠাগারের জন্য নাকি বিলেত থেকে বই এনে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাঠাগারের অনেক বই নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৫০-এর দিকে নর্থব্রুক হল টেলিগ্রাফ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরে কিছুদিন 'সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ' হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যায়।
এ ছাড়া নর্থব্রুক হলের পেছনে তিনটি কক্ষ স্থানীয় ছোট-বড় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব সংগঠনের সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ তথা আনুষঙ্গিক কার্যক্রমগুলো এখানেই পরিচালিত হয়।
শরাফত হোসেন
No comments