হ্যালো সিটিজেন! by জামান সরদার
সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে দেশের প্রধান নির্বাহীর যোগাযোগ সম্পর্কে যেসব ধ্রুপদী ধারণা বিভিন্ন সময় বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা 'এক বাক্যে' ভেঙে দিয়েছেন। ৪ জুলাই সংসদে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তার ব্যবহৃত দুটি সেলফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা নাগরিকদের উদ্দেশে প্রকাশ করে দিয়েছেন।
তার পরিবারের সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে কেউ সুযোগ নিতে চাইলে তা সরাসরি জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। উৎসুক অনেকে ওইসব নম্বরে ফোন করছেন; নাম ভাঙানোর অভিযোগ নয় কেবল_ লঘু-গুরু অনেক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কারও কারও কথাও হচ্ছে। সর্বশেষ সংযোজন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেশীয় অর্থায়ন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে 'বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন' তিনি।
নাগরিক সুখ-দুঃখ জানার এই আয়োজন চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। গ্রামের বাসিন্দারা কালেভদ্রে সরকারপ্রধানকে দেখেন জনসভায়। ঢাকাই জীবনে প্রধানমন্ত্রী মানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টিত রাজপথে সাইরেনের উচ্চকিত শব্দ। এছাড়া আমজনতার কাছে তিনি টেলিভিশনের পর্দায় দেখা মানুষ মাত্র। তারা যখন ফোনের ওপাশে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর শুনতে পায়, তা হৈ হৈ কাণ্ডই বটে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রাজা-প্রজার এই ফোনালাপ কতটা টেকসই? কতদিন প্রধানমন্ত্রী এভাবে ফোন ধরবেন? ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র দুটি ফোন নম্বরে কতজন কথা বলার সুযোগ পাবেন? প্রধানমন্ত্রীর সময় ও অগ্রাধিকারের প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। নিছক হাই-হ্যালোর জন্য রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কতটা সময় দেওয়া উচিত? বিশেষ সহকারী বলেছেন 'সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝেও যখনই সময় পাচ্ছেন, তখনই ফোন ধরছেন।' তার মানে, অনেকে বঞ্চিতও হচ্ছেন। নেহাত উৎসুকের ভিড়ে অতি প্রয়োজনীয় ফোনদাতা হয়তো 'প্লিজ কল আফটার সামটাইম' শুনেই যাচ্ছেন।
বড় কথা, সামনের দিনগুলোতে ব্যক্তি শেখ হাসিনার জায়গায় অন্য কেউ যদি প্রধানমন্ত্রীর আসন অলঙ্কৃত করেন, তিনিও কি নিজের ফোন নম্বর প্রকাশ করে দেবেন?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের এই 'ফোন-ইন' অনুষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের যৌক্তিকতা সেখানেই স্পষ্ট। রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা বিশ্বের নানা দেশেই প্রচলিত। তার কোনোটিই আমাদের মতো সরাসরি ফোনের সুযোগ নয় বটে; অনেক বেশি টেকসই ও কার্যকর।
যেমন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দফতর, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। ডাক, ই-মেইল ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে যোগাযোগের ঠিকানা, নিয়মাবলি লিখেও পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বার্তার সংখ্যার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবগুলোর জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। বিশিষ্ট বিষয়েই কেবল তিনি ফিরতি বার্তা পাঠাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসও সাধারণ নাগরিকের বার্তা ও বক্তব্য গ্রহণ করে_ যথারীতি ফোনে, ফ্যাক্সে ও ডাকে। সেখানে যোগাযোগের ১৭টি পদ্ধতিও বাতলানো রয়েছে। প্রাঞ্জল ভাষায় এ-ও বলা রয়েছে, কেউ যেন প্রত্যাশা না করেন, তার ফোনটি স্বয়ং বারাক ওবামা ধরবেন। প্রেসিডেন্টের পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কংগ্রেসম্যান এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া প্রেসিডেন্টকে সরাসরি দেখা, কথা বলার সুযোগ নেই। হোয়াইট হাউসের নির্দিষ্ট কর্মকর্তাই বার্তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজন ও সময়মাফিক সাড়া দেবেন। প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বার্তাটি যাওয়া জরুরি কি-না, তারাই ঠিক করে দেবেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যোগাযোগের ঠিকানায় রক্ষিত ই-মেইল বা ডাক ঠিকানাটি কতজন জানে? কতজন বার্তা পাঠায়? সেগুলো নিয়মিত যাচাই-বাছাই করা হয় কি? দেশের কত ভাগ নাগরিক ডাক ও ই-মেইল ব্যবহার করেন, সেটাও প্রশ্ন। 'মোবাইল' ফোনের প্রসারের এই যুগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে যোগাযোগের জন্য বরং ডজনখানেক সেলফোন যুক্ত করা যেতে পারে। ২৪ ঘণ্টা খোলা সেসব ফোনে সাড়া দেবেন সতর্ক অথচ সহৃদয় কিছু ব্যক্তি। যাদের কাছে সাধারণ নাগরিক প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবেন। আর বাছাইকৃত বার্তা পেঁৗছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনিও সময় ও অগ্রাধিকার বুঝে ফিরতি ফোন দেবেন। উপযুক্ত ব্যক্তির ফোন বেজে উঠবে; ওপাশে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ_ হ্যালো সিটিজেন!
zsardar2012@gmail.com
নাগরিক সুখ-দুঃখ জানার এই আয়োজন চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। গ্রামের বাসিন্দারা কালেভদ্রে সরকারপ্রধানকে দেখেন জনসভায়। ঢাকাই জীবনে প্রধানমন্ত্রী মানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টিত রাজপথে সাইরেনের উচ্চকিত শব্দ। এছাড়া আমজনতার কাছে তিনি টেলিভিশনের পর্দায় দেখা মানুষ মাত্র। তারা যখন ফোনের ওপাশে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর শুনতে পায়, তা হৈ হৈ কাণ্ডই বটে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রাজা-প্রজার এই ফোনালাপ কতটা টেকসই? কতদিন প্রধানমন্ত্রী এভাবে ফোন ধরবেন? ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র দুটি ফোন নম্বরে কতজন কথা বলার সুযোগ পাবেন? প্রধানমন্ত্রীর সময় ও অগ্রাধিকারের প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। নিছক হাই-হ্যালোর জন্য রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কতটা সময় দেওয়া উচিত? বিশেষ সহকারী বলেছেন 'সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝেও যখনই সময় পাচ্ছেন, তখনই ফোন ধরছেন।' তার মানে, অনেকে বঞ্চিতও হচ্ছেন। নেহাত উৎসুকের ভিড়ে অতি প্রয়োজনীয় ফোনদাতা হয়তো 'প্লিজ কল আফটার সামটাইম' শুনেই যাচ্ছেন।
বড় কথা, সামনের দিনগুলোতে ব্যক্তি শেখ হাসিনার জায়গায় অন্য কেউ যদি প্রধানমন্ত্রীর আসন অলঙ্কৃত করেন, তিনিও কি নিজের ফোন নম্বর প্রকাশ করে দেবেন?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের এই 'ফোন-ইন' অনুষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের যৌক্তিকতা সেখানেই স্পষ্ট। রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা বিশ্বের নানা দেশেই প্রচলিত। তার কোনোটিই আমাদের মতো সরাসরি ফোনের সুযোগ নয় বটে; অনেক বেশি টেকসই ও কার্যকর।
যেমন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দফতর, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। ডাক, ই-মেইল ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে যোগাযোগের ঠিকানা, নিয়মাবলি লিখেও পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বার্তার সংখ্যার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবগুলোর জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। বিশিষ্ট বিষয়েই কেবল তিনি ফিরতি বার্তা পাঠাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসও সাধারণ নাগরিকের বার্তা ও বক্তব্য গ্রহণ করে_ যথারীতি ফোনে, ফ্যাক্সে ও ডাকে। সেখানে যোগাযোগের ১৭টি পদ্ধতিও বাতলানো রয়েছে। প্রাঞ্জল ভাষায় এ-ও বলা রয়েছে, কেউ যেন প্রত্যাশা না করেন, তার ফোনটি স্বয়ং বারাক ওবামা ধরবেন। প্রেসিডেন্টের পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কংগ্রেসম্যান এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া প্রেসিডেন্টকে সরাসরি দেখা, কথা বলার সুযোগ নেই। হোয়াইট হাউসের নির্দিষ্ট কর্মকর্তাই বার্তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজন ও সময়মাফিক সাড়া দেবেন। প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বার্তাটি যাওয়া জরুরি কি-না, তারাই ঠিক করে দেবেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যোগাযোগের ঠিকানায় রক্ষিত ই-মেইল বা ডাক ঠিকানাটি কতজন জানে? কতজন বার্তা পাঠায়? সেগুলো নিয়মিত যাচাই-বাছাই করা হয় কি? দেশের কত ভাগ নাগরিক ডাক ও ই-মেইল ব্যবহার করেন, সেটাও প্রশ্ন। 'মোবাইল' ফোনের প্রসারের এই যুগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে যোগাযোগের জন্য বরং ডজনখানেক সেলফোন যুক্ত করা যেতে পারে। ২৪ ঘণ্টা খোলা সেসব ফোনে সাড়া দেবেন সতর্ক অথচ সহৃদয় কিছু ব্যক্তি। যাদের কাছে সাধারণ নাগরিক প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবেন। আর বাছাইকৃত বার্তা পেঁৗছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনিও সময় ও অগ্রাধিকার বুঝে ফিরতি ফোন দেবেন। উপযুক্ত ব্যক্তির ফোন বেজে উঠবে; ওপাশে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ_ হ্যালো সিটিজেন!
zsardar2012@gmail.com
No comments