নির্মমতার কোলাজ by জুলফিয়া ইসলাম
মানুষ সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। এ কথা কারোরই অজানা নয়। অথচ জেলখানা জীবনের দু'একজন কয়েদির জীবন কাহিনী শুনে মনে হলো_ মানুষ আসলে কি এক শ্রেণীর সমাজবদ্ধ জানোয়ার? আমার বন্ধু কান্তার 'উৎস' নামে একটি সংগঠন আছে।
স্থানীয় জেলখানার নারী বন্দিদের হালহকিকত জানতে একদিন তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। অভিজ্ঞতার দু'একটি কোলাজ তুলে ধরলাম।
মেয়েটির নাম পদ্ম। অথচ চেহারা, কথাবার্তা, চালচলন কিছুর মধ্যেই পদ্মের আভাস নেই। মেয়েটির ছোট একটি বাচ্চা আছে। একপা, দু'পা করে হাঁটে। কারও গ্গ্নাস ভেঙে ফেলে। আবার কারও বিছানা ভিজিয়ে দেয়। সবাই বাচ্চাটিকে মেনে নিলেও খুনের মামলার আসামি টগর ছিল অত্যন্ত রাগী। সে বাচ্চাটিকে মেনে নিতে পারত না। তার আজীবন কারাবাস। বহু চেষ্টায়ও বেল হয়নি। আর এ কারণেই বুঝি কয়েদখানার সবাইকে কথার বাণে আহত করত। বছর দুয়েক আগে পদ্মকে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এ কারাবাসে রেখে যায়। সে নিজের স্বামীকে হত্যা করার অভিযোগে ও নন-বেলেবল ধারায় বন্দি আছে। অথচ পদ্ম জানে, তার অসুস্থতার সময় তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সুস্থ হলে ওরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। ও যখন এখানে আসে তখন ওর ছোট শিশুটি গর্ভে ছিল। এখন ও হেঁটে বেড়ায়।
পদ্মের স্বামী ওর ভাইবোনদের মধ্যে একটু বোকাটে ধরনের ছিল। হাবাগোবা স্বামীর জন্য বিয়ের পর থেকেই মেয়েটির অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়। বোকা মানুষটি উল্টাপাল্টা কাজের জন্য ভাইদের কাছে প্রায়ই হেনস্তা হতো। এমনকি মারধরও খেত। পদ্মের বড় জা প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। আর ছোট ভাই ছিল অবিবাহিত। সেই সুবাদে দুই ভাইয়ের মনোরঞ্জন করতে হতো পদ্মকে। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর রাতে ভাশুর, দেবরের মনোরঞ্জন করা_ এভাবে জীবনটাকে সে মেনে নেয়। তার স্বামী প্রতিবাদের চেষ্টা করলে ভাইদের হাতে মার খেতে হতো।
যেদিন ঘটনা ঘটল সে রাতে পদ্ম অসুস্থ ছিল। পদ্মের ভাশুর ওর সঙ্গে জোরাজুরি করলে স্বামী বাধা দিলে ভাশুর তাকে মারতে শুরু করে। স্বামীর মুখ দিয়ে যখন গলগল করে রক্ত ঝরতে থাকে তখন পদ্ম অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ও শুনতে পায়, ওর স্বামী মারা গেছে। সেই থেকে ও এই জেলে।
ওর ঘটনা শুনে কান্তা বলল, তুমি যদি চাও তবে আমি তোমাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারি। পদ্ম অম্লান বদনে বলল, সে জেলেই থাকতে চায়। এখানে কেউ ওকে মারে না। কারও মনোরঞ্জন করতে হয় না। পেট ভরে খেতেও পায়। এই হলো পদ্মের কাহিনী।
পদ্মের পাশের কয়েদি মেয়েটির নাম লিলি। সে তার মাকে খুন করে জেলে এসেছে। বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করেও তার কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাওয়া যেত না। যেদিন লিলি আমাদের সঙ্গে প্রথম কথা বলল, সেদিন কান্তাকে সে প্রশ্ন করল, আপনার ছেলেমেয়েরা কি আপনাকে ভালোবাসে? এজাতীয় প্রশ্নের কী উত্তর হতে পারে তা আমার জানা নেই। লিলির বাবা ও মা আলাদা বসবাস করত। মা ও লিলি একই বাড়িতে বসবাস করত। প্রতি রাতে দু'তিনজন মানুষের সঙ্গে সহবাস করতে মা তাকে বাধ্য করত। এই মানুষগুলো তার মায়ের সঙ্গেও বিছানার সঙ্গী হতো। এসএসসি পরীক্ষার আগেই মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর লিলি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। লিলির পরপর তিনটি ভ্রূণ হত্যা করে। এরপর ওর যে বাচ্চাটি গর্ভে আসে সে তার জন্ম দিতে চায়। এটা নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয়। ঝগড়ার ফলে পাশে রাখা তক্তা দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই ওর মায়ের মৃত্যু হয়। ওর বক্তব্য, মাকে হত্যার উদ্দেশ্য ওর ছিল না। ও হাতে আঘাত করতে চেয়েছিল, কিন্তু ওটা মাথায় লেগে যায়। জেলখানায় থেকে ও সন্তানটির জন্ম দিতে পেরেই সুখে আছে। লিলির আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সবার ধারণা, জেলে থেকে মেয়েটির চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। পেটের ক্ষুধা এবং রাত্রিকালীন নিরাপত্তার আশায় সে জেলে থাকতে চায়। জানি না, আমাদের দেশে কতজন নারী এমনভাবে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় আবার বন্দিজীবনেই থাকতে চাইছে।
মেয়েটির নাম পদ্ম। অথচ চেহারা, কথাবার্তা, চালচলন কিছুর মধ্যেই পদ্মের আভাস নেই। মেয়েটির ছোট একটি বাচ্চা আছে। একপা, দু'পা করে হাঁটে। কারও গ্গ্নাস ভেঙে ফেলে। আবার কারও বিছানা ভিজিয়ে দেয়। সবাই বাচ্চাটিকে মেনে নিলেও খুনের মামলার আসামি টগর ছিল অত্যন্ত রাগী। সে বাচ্চাটিকে মেনে নিতে পারত না। তার আজীবন কারাবাস। বহু চেষ্টায়ও বেল হয়নি। আর এ কারণেই বুঝি কয়েদখানার সবাইকে কথার বাণে আহত করত। বছর দুয়েক আগে পদ্মকে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এ কারাবাসে রেখে যায়। সে নিজের স্বামীকে হত্যা করার অভিযোগে ও নন-বেলেবল ধারায় বন্দি আছে। অথচ পদ্ম জানে, তার অসুস্থতার সময় তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সুস্থ হলে ওরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। ও যখন এখানে আসে তখন ওর ছোট শিশুটি গর্ভে ছিল। এখন ও হেঁটে বেড়ায়।
পদ্মের স্বামী ওর ভাইবোনদের মধ্যে একটু বোকাটে ধরনের ছিল। হাবাগোবা স্বামীর জন্য বিয়ের পর থেকেই মেয়েটির অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়। বোকা মানুষটি উল্টাপাল্টা কাজের জন্য ভাইদের কাছে প্রায়ই হেনস্তা হতো। এমনকি মারধরও খেত। পদ্মের বড় জা প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। আর ছোট ভাই ছিল অবিবাহিত। সেই সুবাদে দুই ভাইয়ের মনোরঞ্জন করতে হতো পদ্মকে। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর রাতে ভাশুর, দেবরের মনোরঞ্জন করা_ এভাবে জীবনটাকে সে মেনে নেয়। তার স্বামী প্রতিবাদের চেষ্টা করলে ভাইদের হাতে মার খেতে হতো।
যেদিন ঘটনা ঘটল সে রাতে পদ্ম অসুস্থ ছিল। পদ্মের ভাশুর ওর সঙ্গে জোরাজুরি করলে স্বামী বাধা দিলে ভাশুর তাকে মারতে শুরু করে। স্বামীর মুখ দিয়ে যখন গলগল করে রক্ত ঝরতে থাকে তখন পদ্ম অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ও শুনতে পায়, ওর স্বামী মারা গেছে। সেই থেকে ও এই জেলে।
ওর ঘটনা শুনে কান্তা বলল, তুমি যদি চাও তবে আমি তোমাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারি। পদ্ম অম্লান বদনে বলল, সে জেলেই থাকতে চায়। এখানে কেউ ওকে মারে না। কারও মনোরঞ্জন করতে হয় না। পেট ভরে খেতেও পায়। এই হলো পদ্মের কাহিনী।
পদ্মের পাশের কয়েদি মেয়েটির নাম লিলি। সে তার মাকে খুন করে জেলে এসেছে। বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করেও তার কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাওয়া যেত না। যেদিন লিলি আমাদের সঙ্গে প্রথম কথা বলল, সেদিন কান্তাকে সে প্রশ্ন করল, আপনার ছেলেমেয়েরা কি আপনাকে ভালোবাসে? এজাতীয় প্রশ্নের কী উত্তর হতে পারে তা আমার জানা নেই। লিলির বাবা ও মা আলাদা বসবাস করত। মা ও লিলি একই বাড়িতে বসবাস করত। প্রতি রাতে দু'তিনজন মানুষের সঙ্গে সহবাস করতে মা তাকে বাধ্য করত। এই মানুষগুলো তার মায়ের সঙ্গেও বিছানার সঙ্গী হতো। এসএসসি পরীক্ষার আগেই মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর লিলি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। লিলির পরপর তিনটি ভ্রূণ হত্যা করে। এরপর ওর যে বাচ্চাটি গর্ভে আসে সে তার জন্ম দিতে চায়। এটা নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয়। ঝগড়ার ফলে পাশে রাখা তক্তা দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই ওর মায়ের মৃত্যু হয়। ওর বক্তব্য, মাকে হত্যার উদ্দেশ্য ওর ছিল না। ও হাতে আঘাত করতে চেয়েছিল, কিন্তু ওটা মাথায় লেগে যায়। জেলখানায় থেকে ও সন্তানটির জন্ম দিতে পেরেই সুখে আছে। লিলির আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সবার ধারণা, জেলে থেকে মেয়েটির চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। পেটের ক্ষুধা এবং রাত্রিকালীন নিরাপত্তার আশায় সে জেলে থাকতে চায়। জানি না, আমাদের দেশে কতজন নারী এমনভাবে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় আবার বন্দিজীবনেই থাকতে চাইছে।
No comments