ফিরে পাওয়া, ফিরে আসা-‘এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ’

একজন উইম্বলডন জিতলেন সপ্তমবারের মতো। পঞ্চমবারের মতো আরেকজন। অল ইংল্যান্ড ক্লাবের চেনা সেই সেন্টারকোর্ট, চিরচেনা সেই ট্রফি। তবু এখানে আরেকটি ট্রফি জয়ের পর আবেগাপ্লুত রজার ফেদেরার
 সপ্তম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা। অনুভূতি তো অবিশ্বাস্য হওয়াই উচিত।


পরিস্থিতির কারণে এটা কতটা আলাদা?
রজার ফেদেরার: হ্যাঁ, আমার মনে হয়, যেকোনো গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনাল, বিশেষ করে উইম্বলডন জয়ের অনুভূতি তো অন্য রকমই। অ্যান্ডির বিপক্ষে ফাইনালটা তো একেবারেই অন্য রকম ছিল। জিতেছি বলে খুব খুশি আমি। এটা অবশ্যই বিশেষ কিছু।
 উইম্বলডনে আপনার সাত শিরোপার সুখ-স্মৃতি। এখানে কি ভাগ্যের ছোঁয়া অনুভব করেন?
ফেদেরার: হ্যাঁ, কিছুটা। এখানে এলে আমি একটু বেশিই ভালো বোধ করি। তবে কেন, সেটা আমি জানি না। সেই শুরু থেকেই এখানে এলেই কেন যেন মনে হয়, আমি ভালো খেলতে পারব। বছরের পর বছর আমি ওই ভালো খেলাটা ধরে রাখতে পেরেছি।
 আপনার অন্য গ্র্যান্ড স্লামগুলোর মধ্যে এই উইম্বলডনের অবস্থান কোথায়?
ফেদেরার: সত্যি বলছি, কিছু কারণে এই শিরোপার মাহাত্ম্যটা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। এই মুহূর্তটার জন্য খুবই উদগ্রীব ছিলাম। যখন এল, খুব খুশি। খুশিটা ছিল ব্যাপারটা শেষ হওয়ার ও চাপটা সরে যাওয়ার। চাপটা এসেছিল গত বছরের দুঃখজনক হারের জন্য। ইউএস ওপেনের হারটাও এর জন্য দায়ী। গত দুই বছরে আমাকে দুবার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এবার তাই ট্রফির পাশে নিজেকে কল্পনাও করিনি কিংবা আগ বাড়িয়ে কোনো কিছু ভাবিনি। র‌্যাঙ্কিং-শ্রেষ্ঠত্ব বা সপ্তম বা ১৭তম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা—কোনোটা নিয়েই ভাবার চেষ্টা করিনি। তাই মনে হয়, আমার অর্জনটাকে ঠিকমতো উপলব্ধি করতে অনেক সময় লাগবে।
 আর কি গ্র্যান্ড স্লাম জিতবেন—এই প্রশ্নটাই তো ঘুরেফিরে শুনতে হয়েছে। বারবার একই প্রশ্ন শোনা কতটা কঠিন ছিল?
ফেদেরার: যখন খারাপ সময়ের শুরু তখন কখন অবসরে যাব সে প্রসঙ্গ নিয়েও বলতে লাগল তারা। বাজে ফর্মটা অস্থায়ী একটা ব্যাপার। আগাসিকেও এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। ...শুনে খুশি হবেন, আমি আরও কয়েক বছর খেলে যাব। আমি এই জয়টাকে সামনে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।
 অ্যান্ডি আপনাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট বলেছেন। পেলের পাশেই আপনাকে স্থান দিয়েছেন। নিজেকে কি সে অবস্থানে দেখেন আপনি?
ফেদেরার: এটা জনগণেরই মতামত। সত্যিই দারুণ। আর টেনিসকে অন্যান্য খেলার সঙ্গে তুলনা করাটাও চমৎকার। অন্যান্য খেলার কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনীয় হওয়াটা অবশ্যই দারুণ সম্মানেরও।
আমি টেনিস খেলাটাকে যেভাবে পেয়েছি, যাওয়ার সময় তার চেয়ে ভালো অবস্থাতেই রেখে যেতে চাই। টেনিসে অসাধারণ সব প্রতিদ্বন্দ্বিতা (ব্যক্তি-দ্বৈরথ) আমরা দেখে এসেছি। বেকার-এডবার্গ, কুরিয়ার-আগাসি-সাম্প্রাস। অনেকেরই নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারপর আসে অন্য খেলা। তবে একেক খেলার ধরন একেক রকম হওয়ায় এক খেলার কারও সঙ্গে আরেক খেলার অন্যজনের তুলনাটা ঠিক চলে না। তবে আমি বিভিন্ন খেলার কিংবদন্তিদের কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা খুঁজে নিয়েছি। পেলে, এডবার্গ, বেকার, জর্ডান, টাইগার উডস, ভ্যালেন্টিনো রসি এমনই কয়েকজন। এঁরাই আমাকে আরও সামনে এগোনোর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। চাইলে যে আপনার পক্ষে কিছু পাওয়া সম্ভব, এটা বোঝার জন্যও তাঁদের দিকে তাকাতে হবে আপনাকে।
 এই শিরোপা ও এক নম্বর হওয়াটা শুধু দুই সপ্তাহেই আসেনি। এটা একটি প্রক্রিয়ার ফল। এমন কোনো মুহূর্তকে বেছে নিতে পারবেন, যেখান থেকে এই পুনরুত্থানের শুরু?
ফেদেরার: তাই তো, কখন...। সম্ভবত গত বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেন। গ্র্যান্ড স্লামটা আমার অবিশ্বাস্য কেটেছে। ফাইনালে রাফার কাছে হারলেও জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। শুধু ভাগ্যটাই সহায় ছিল না। ইউএস ওপেনেও দারুণ খেলেছি। দুর্ভাগ্য আমার, সেমিফাইনালে অসাধারণ খেলল জোকোভিচ। ঠিক ওই সময়েই আমার বিশ্বাস জন্মাতে লাগল কিছু ব্যাপার বোধহয় এবার আমার পক্ষে আসবে। তবে এটা এমনিতেই আসবে না, কাজ করতে হবে। এরপরই আমি বেশ লম্বা একটা ছুটি নিলাম। ইউএস ওপেনের পর ডেভিস কাপের আগে কোনো ম্যাচ খেললাম না। কারণ, আমি শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম, কোয়ার্টারে বা সেমিফাইনালে হারতে চাইনি। আর যখন ঘরের কোর্ট বাসেলে ফিরে এলাম, অনেক কিছুতেই পরিবর্তন দেখতে পেলাম। ফিরে এল বিশ্বাসটাও। এরপর যখন প্যারিস ও লন্ডনে এলাম, আত্মবিশ্বাস অনেক উঁচুতে। বুঝতে পারলাম, ২০১২ সালে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
 গত দুই বছরে কোন ব্যাপারে ছাড় দিতে হয়েছে—সূচি না অনুশীলন?
ফেদেরার: লোকজন মাঝেমধ্যে ভুলে যায় আমার যমজ দুটো মেয়ে আছে। আমার জীবনে তাদের প্রভাব অপরিসীম। তারা আমার খেলাকে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। কারণ, জীবনের সেরা কিছু খেলা আমি এখনই খেলছি এবং সেটা অনেক দিন পরেই হচ্ছে।
তবে সবকিছু একসঙ্গে করতে পারাটা একটা চ্যালেঞ্জই। এ ছাড়া ভুল থেকেও শিক্ষা নেওয়া যায়। আপনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের সবার ক্ষেত্রেই যাতে এটা কাজ করে, সেই চেষ্টা করতে হবে। স্বীকার করছি, ব্যাপারটা সব সময় এত সহজ হয় না।
আজকের জয়টা অবশ্যই আমার ও আমার পরিবারের স্বপ্ন সত্যি করেছে। এই সাফল্যের মঞ্চে ওঠার সময় ওদের পাশে থাকাটা সত্যিই অনেক বড় পাওয়া।
উইম্বলডনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
থেকে ভাষান্তর: মোহাম্মদ সোলায়মান

No comments

Powered by Blogger.