সিরিয়ার হামায় গণহত্যা-নিন্দায় বিশ্ব নেতারা, ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান-নিরাপত্তা পরিষদের সক্রিয় ভূমিকার দাবি

সিরিয়ার হামা প্রদেশের ত্রেইমসে গ্রামে সরকারি বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। দেশটিতে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।


তিনি সতর্ক করে বলেন, 'এ ব্যাপারে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হবে আসাদের হাতে পুনরায় গণহত্যা চালানোর লাইসেন্স তুলে দেওয়া।'
সিরিয়ার সংকট নিরসনে আরব লিগ মনোনীত বিশেষ দূত ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান দাবি করেন, ত্রেইমসে গণহত্যার মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে 'তাচ্ছিল্য' করেছে সিরিয়া। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি 'সনির্বন্ধ আহ্বান'ও জানান এই দুই নেতা।
সিরিয়ার সরকারবিরোধীদের দাবি, হামা প্রদেশের ত্রেইমসে গ্রামে সরকারি বাহিনীর ভারী অস্ত্রের হামলায় গত বৃহস্পতিবার কমপক্ষে ১৫০ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। তাদের দাবি সঠিক হলে দেশটিতে ১৬ মাসের চলমান সংঘাতের মধ্যে এটি হবে অন্যতম ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এ গণহত্যার জন্য 'সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে' দায়ী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষের দাবিই নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা যায়নি। তবে গ্রামবাসীর ওপর হামলায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও ট্যাংক ব্যবহারের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। গত এপ্রিল থেকে সিরিয়ায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশনের (ইউএনএসএমআইএস) প্রধান জেনারেল রবার্ট মুড গত শুক্রবার রাতে এটি নিশ্চিত করেন।
বান কি মুন গত শুক্রবার বলেন, 'সিরিয়ার মর্মান্তিক রক্তক্ষয়ী ঘটনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যে অতি শিগগির সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আমি আহ্বান জানাই। এ ব্যাপারে কিছু না করার অর্থ হবে পুনরায় গণহত্যা সংঘটনে সিরিয়ার সরকারের হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া।' ত্রেইমসের ঘটনাকে 'লোমহর্ষক' উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি পরিকল্পনার প্রতি আসাদের দেওয়া অঙ্গীকার কতটা আন্তরিক, সে ব্যাপারে 'ঘোর সন্দেহ' সৃষ্টি করে এ ঘটনা। জাতিসংঘ মহাসচিব গণহত্যার ঘটনায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারেরও তীব্র নিন্দা জানান। কফি আনানও কঠোর ভাষায় এর নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'হামলায় কামান, ট্যাংক ও হেলিকপ্টারের ব্যবহার সিরিয়া সরকারের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। আসাদ সরকারের এ আরচণ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের প্রতি অবজ্ঞা পোষণ।' এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, 'এ ঘটনাই প্রমাণ করে, সিরিয়া সরকার পরিকল্পিতভাবে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে।' তিনি বলেন, শিগগিরই অস্ত্রবিরতি কার্যকর এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাবদল নিশ্চিত করতে আনানের পরিকল্পনাকে নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণ সমর্থন দেওয়া উচিত।'
গত এপ্রিলে সিরিয়ার ব্যাপারে দুটি প্রস্তাব পাস হয় নিরাপত্তা পরিষদে। এর একটি সিরিয়ায় ইউএনএসএমআইএস পাঠানো। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ছয়টি শর্ত পূরণসাপেক্ষে আনানের শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়নে আসাদকে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার বন্ধেরও শর্ত রয়েছে।
এদিকে ইউএনএসএমআইএসের তিন মাসের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০ জুলাই। পুনরায় এর মেয়াদ বাড়াতে হলে এর মধ্যেই ভোটাভুটির আয়োজন করতে হবে। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার জাতিসংঘে নিয়োজিত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও পর্তুগালের প্রস্তাব হলো_ভারী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে আসাদ সরকারকে আরো ১০ দিন সময় দেওয়া হোক। যাতে আনানের শান্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটানো হয়।
অন্যথায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে পশ্চিমারা কেবল ইউএনএসএমআইএসের মেয়াদ আরো ৪৫ দিন বাড়ানোর পক্ষে। এর বিপরীতে রাশিয়ার প্রস্তাব হলো, ইউএনএসএমআইএসের মেয়াদ ৯০ দিন বাড়ানো। তবে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সেখানে কিছু বলা হয়নি।
এদিকে, সিরিয়ার সরকারকে রাশিয়া হেলিকপ্টার পাঠাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রপ্তানিকারী সংস্থা রসোবোরোনেক্সপোর্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'সিরিয়ার বেশ কয়েকটি এমআই-২৫ হেলিকপ্টার মেরামত শেষে জাহাজে তোলা হয়েছে। জাহাজটি মুরমানক্স বন্দর থেকে যাত্রা করে রাশিয়ার আরেকটি বন্দরে ভিড়েছে।' মুরমানক্স বন্দর সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্টারফেক্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, জাহাজটি গত মঙ্গলবার বাল্টিক্স বন্দরের উদ্দেশ্যে মুরমানক্স বন্দর ছেড়েছে। তবে কেন জাহাজটি দেশের এক বন্দর ছেড়ে আরেক বন্দরে ভিড়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে, ইরান জানিয়েছে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে একযোগে তারাও সিরিয়ার সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রহিম মেহমানপারাস্ত বলেন, সিরিয়ায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং নিরাপত্তা কার্যকরে যথাযথ ভূমিকা পালনে ইরান তৈরি।' প্রসঙ্গত, এর আগেও ইরান একাধিকার এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। তবে তারা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে অস্থিরতা জিইয়ে রেখেছে বলে পশ্চিমাদের অভিযোগ। কয়েকটি আরব দেশও একই অভিযোগ করেছে। সূত্র : এএফপি, গার্ডিয়ান।

No comments

Powered by Blogger.