বুকজ্বলাকী খাব কী খাব না by অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

রিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।ত
ফিশ অ্যান্ড চিপস। চিকেনকারি, ঝালমসলা ফ্রাই, বিরিয়ানি, রেজালা—এসব খেলে কি বুক জ্বলবে? খাব? ভালো প্রশ্ন। তবে উত্তরটা এত সহজ নয়।


বুকজ্বলা যাকে বলে ‘হার্ট বার্ন’ ব্যাপারটি হার্ট বা হূদ্যন্ত্রের কোনো সমস্যা নয়। বুক থেকে গলা পর্যন্ত জ্বলুনির মতো অস্বস্তি হলো হার্ট বার্ন।
পাকস্থলী ও খাদ্যনালি—এ দুটোর সংযোগস্থলে রয়েছে একটি রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক। পাকস্থলীর অম্ল যদি সেই রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক দিয়ে গলিয়ে ওপর দিকে উঠে খাদ্যনালি বেয়ে এবং খাদ্যনালিকে উত্তেজিত করে তাহলে বুকজ্বলা হয়।
কিছু কিছু খাবার বুকজ্বলা বাড়াতে পারে।
বুকজ্বলা বাড়ায়: বেশি খাবার, খুব বেশি খাবার
বুকজ্বলার ঝুঁকির ব্যাপারে কী পরিমাণ খাবার খাচ্ছেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। আবার একসঙ্গে অনেক খাবার খেয়ে ফেলা, বুকজ্বলার ব্যাপারে এসব বিচার-বিবেচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
খাওয়ার পরিমাণ কমানোর জন্য ছোট ছোট প্লেটে খাবেন।
চর্বিবহুল খাবার
‘চর্বিবহুল খাবার পাকস্থলীতে থাকে দীর্ঘ সময়, আর যত দীর্ঘ সময় থাকবে, অস্বস্তি হবে তত বেশি,’ বলেন Tell me what to eat if I have Acid refluxy গ্রন্থের প্রণেতা ম্যাগি। চর্বিবহুল বৃহৎ পরিমাণে খাবার খেলে যেমন অনেক বড় বেশি ফ্রাইড চিকেন, চিপস, উইংস খেলে দুই রকম ক্ষতি হয়—বেশি খাওয়া হলো আবার বেশি চর্বিও খাওয়া হলো। বুকজ্বলা অনেক বাড়বে।
বুকজ্বলা কমাতে হলে: চর্বি খাওয়া কমাতে হবে
প্রিয় খাবারগুলো যে একেবারে বাদ দিতে হবে, তা নয়। এদের ভিন্নভাবে রান্না করলে, প্রস্তুত করলে প্রশমিত থাকবে বুকজ্বলা। কিছু খাবার তেলে না ভেজে, সেঁকে, আগুনে ঝলসে, গ্রিল করে বা রোস্ট করে খাওয়া যায়। রান্নার রকমফের ঘটিয়ে বুকজ্বলা যায় কমানো, স্বাস্থ্যও হয় ভালো।
বুকজ্বলা বাড়ে: অম্লধর্মী খাবারে
অম্ল খাবার, যেমন—টমেটো, টমেটো সস, সালসা, সাইট্রাস ফল, কমলালেবু, জাম্বুরা, গ্রেপফ্রুট খালি পেটে খেলে অনেক সময় ঢেঁকুর, বুকজ্বলা হয়।
ভিনেগারও বেশি অম্লধর্মী, তবে এটি তো এমনি খাওয়া হয় না; সালাদ ড্রেসিং ও অন্যান্য ডিশে যোগ করা হয়।
অম্লধর্মী খাবার এড়ালে ভালো
টমেটো, সাইট্রাস ফল ছাড়া তাজা ফল, সবজি আরও আছে। তবে খেলেও খেতে হবে কম, ছোট টুকরা। টমেটো সস কম নেওয়া হলো, সঙ্গে স্প্যাগেটি, মাংস ও সবজি।
যেসব পানীয় উসকে দেয় বুকজ্বলা
পানীয়র ব্যাপারেও সতর্কতা চাই। এর মধ্যে রয়েছে কফি, ক্যাফিনযুক্ত চা, কোলা, অন্যান্য কার্বনেটেড পানীয় এবং মদ। ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পাকস্থলীতে অম্লরস ক্ষরণ উদ্দীপিত করে এবং মদ্যজাতীয় পানীয় খাদ্যনালির রন্ধ্রনিয়ন্ত্রককে শিথিল করে, ঘটায় বুকজ্বলা ও কোমল পানীয়র সোডা পেট ফাঁপায়, তা থেকে বুকজ্বলা।
অন্য পানীয় গ্রহণ করুন
বুকজ্বলা রোধ করতে হলে এমন সব পানীয় পছন্দ করুন, যেগুলো হিসহিসে, গ্যাসযুক্ত নয়, বিকল্প হলো হার্বালটি, দুধ বা শুধু জল। খাদ্যের সঙ্গে জল পান করলে পাকস্থলীর অম্লরসও লঘু হবে; বুকজ্বলা হবে কম। টমেটো, কমলা বা লেবুর রস পরিহার করা ভালো।
বুকজ্বলা ধরায় চকলেট
চকলেটে রয়েছে ক্যাফিনের মতো উদ্দীপক এবং ক্যাফিন হতে পারে বুকজ্বলার জন্য দায়ী। চকলেট খাওয়া বাদ না দিতে পারলেও কম তো খাওয়া যেতেই পারে।
বুকজ্বলা ঘটায় ঝালমসলা খাবার
ঝালমসলা খাবার, হট সস আনে বুকজ্বলা। তবে সব সময় হট ঝাল খাবারই নয়, পেপারমিল্ট শীতল ঝাল মোটেই নয়। কিন্তু খাদ্যনালির রন্ধ্রনিয়ন্ত্রককে শিথিল করে ঘটায় বুকজ্বলা। আবার রসুন ও পেঁয়াজ ঝাল বা তেমন মসলা খাবার না হলেও ঘটায় বুকজ্বলা।
বুকজ্বলা টিপস
এই ঝালগরম খাবার ধরে রাখুন। তবে এ জন্য সারা জীবন পানসে, মৃদু, আকর্ষণহীন খাবার খেতে হবে কেন? কমিয়ে আনুন ঝাল। মরিচ-মসলা কম খান। খাবারে যোগ করুন পুদিনাপাতা, ধনেপাতা। মজা হবে। ঝালের বদলে।
চুইংগাম চিবান
ম্যাগে বলেন, আহারের পর চুইংগাম চিবানো ভালো। এতে লালাক্ষরণ বেশি হয়, পাকস্থলীর অম্লরস প্রশমিত হয়, পাকস্থলীর খাবার দ্রুত যেতে থাকে অন্দ্রনলে।
আরও টিপস
খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়বেন না। ডিনারের তিন ঘণ্টা পর শোয়া ভালো। ধূমপান করলে স্থূলদেহ হলে বুকজ্বলা বেশি হয়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ধূমপান বর্জন শ্রেয়। বেশি বুকজ্বলা হলে, বেশি দিন চললে চিকিৎসক দেখানো আবশ্যক।

No comments

Powered by Blogger.