মহানগরের পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে কোন্দল by একরামুল হক

চট্টগ্রাম মহানগরের পর দক্ষিণ জেলা বিএনপিতেও কোন্দল দেখা দিয়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বোয়ালখালীতে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের গাড়িতে হামলার ঘটনায়। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সূত্র জানায়, ওই হামলা করেছেন স্থানীয় রাজনীতিতে মোরশেদ খানের প্রতিপক্ষ বলে পরিচিত নগর বিএনপির নেতা


এরশাদ উল্লাহর অনুসারীরা। ব্যবসায়ী এরশাদ উল্লাহ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য তিনি মোরশেদ খানকে দায়ী করেন। এর আগে এ আসন থেকে একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মোরশেদ খান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় তিনি বিদেশে ছিলেন। নির্বাচনের পর থেকে এই দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব-ক্ষোভ। বৃহস্পতিবার মোরশেদ খানের গাড়িতে হামলার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির এই কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। ১২ মার্চ ঢাকার মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে মোরশেদ খান গণসংযোগে গিয়ে নিজ দলীয় কর্মীদের হামলার শিকার হন।
দলীয় সূত্র জানায়, মোরশেদ খানের গাড়িতে হামলাকারীরা একসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। এখন তাঁরা এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে আছেন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহমদ খলিল খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি থাকাকালে ২০০৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যারা তাঁর ওপর হামলা করেছিল, তারাই মোরশেদ খানের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু নেতা এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লালন করছেন। সন্ত্রাসীরা সুযোগ পেলে ছোবল মারতে চিন্তা করে না, যা মোরশেদ খানের গাড়ি ভাঙচুর থেকে প্রমাণিত হয়। ওরা আসলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর লোক।’
জানতে চাইলে এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা এম কে আনোয়ারকে ফুল দিতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। ফুলের তোড়া মোরশেদ খানের ব্যক্তিগত সহকারী রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেন। তাই বিক্ষুব্ধ কর্মীরা মোরশেদ খানের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে মোরশেদ খান ধানের শীষ প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। চান্দগাঁও ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলরকে প্রার্থী করে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে ধানের শীষের ভোট কাটার সুযোগ করে দেন। এ কারণে তাঁর সঙ্গে আমার বিরোধ হয়।’
সম্প্রতি বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন করা হলে কয়েকজন বাদ পড়েন। বাদপড়া ব্যক্তিদের মধ্যে এরশাদ উল্লাহ ও আহমদ খলিল খানের সমর্থকেরাও রয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এরই জের ধরে মোরশেদ খানের গাড়িতে হামলা হয় বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আহমদ খলিল খান দাবি করেন, ‘বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতি কলুষিত হয়ে পড়েছে। মান-ইজ্জত নিয়ে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে গেছে। তাই চুপচাপ সব কিছু দেখছি, নীরবে সব সহ্য করছি। আমার ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে মোরশেদ খানের গাড়ি ভাঙচুর করার দুঃসাহস কেউ দেখাত না।’
জানতে চাইলে এম মোরশেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িবহরে আমাদের কেউ হামলা করেছে কি না, তা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারী ঢুকে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা পেটোয়া বাহিনীতে বিশ্বাসী নই। আমরা মিলেমিশে কাজ করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘সংগঠনের কেউ এ কাণ্ড ঘটালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অনুপ্রবেশকারী কেউ জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে ত্রিমুখী কোন্দল রয়েছে, এটা অনেক পুরোনো। এই তিনটি ধারার নেতৃত্বে আছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন। এখন একই রকম কোন্দল দেখা দিয়েছে দলটির দক্ষিণ জেলার রাজনীতিতেও।

No comments

Powered by Blogger.