অর্ধেক সারই ভেজাল by ইফতেখার মাহমুদ
সারা দেশে বোরো ধানের চারা রোপণ প্রায় শেষ। এখন জমিতে সার ও সেচ দেওয়ার পালা। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আশঙ্কার সঙ্গে কৃষকের সামনে ঠিক এ সময়ই নতুন এক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর তা হচ্ছে সারে ভেজাল।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) সারা দেশ থেকে সারের নমুনা সংগ্রহ করে
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) সারা দেশ থেকে সারের নমুনা সংগ্রহ করে
পরীক্ষা করে দেখেছে, ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া ৪২ থেকে ৫০ শতাংশ সারে ভেজাল রয়েছে। ২০১০ সালে করা একই পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ সারে ভেজাল পাওয়া গিয়েছিল।
এসআরডিআইয়ের ওই পরীক্ষায় দস্তা সার (জিংক সালফেট) ও মিশ্র সারের (এনপিকেএস) প্রায় ৮০ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে। সিঙ্গেল সুপার ফসফেট (এসএসপি) সারে ৬৭ শতাংশ ও জৈব সারে ৫২ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে। তবে ইউরিয়া সারের সবচেয়ে কম, ২ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে।
এসআরডিআই সারা দেশ থেকে ১৭ রকমের সারের তিন হাজার ৫০২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাটি করেছে। এতে দেখা গেছে, ডিলারদের দোকানে বিক্রি হওয়া ৪২ শতাংশ সারে প্রয়োজনীয় উপাদান নেই। ইটের গুঁড়া, মাটি, বালু, কাচের টুকরো, মুরগির বিষ্ঠা, কারখানার বর্জ্য প্রভৃতি মিশিয়ে ডিলার ও ক্ষুদ্র উৎপাদকেরা সার বিক্রি করছেন।
এ ছাড়া সংস্থাটি প্রথম বারের মতো নিজস্ব উদ্যোগে আরও এক হাজার সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। তাতেও ৫০ শতাংশ সারে ভেজাল পাওয়া গেছে।
এসআরডিআইয়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিলার ও স্থানীয় উৎপাদকেরা সার ভেজাল-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার ও সরকারি বিভিন্ন কারখানার উৎপাদিত সার পরীক্ষা করে তারা কোনো ভেজাল পায়নি।
কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জন্য ২০ লাখ টন ইউরিয়া, ২২ লাখ টন টিএসপি, ১৫ লাখ টন এমওপি ও ১৭ লাখ টন ডিএপি সারের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের পুরোটাই সরকার বিদেশ থেকে আমদানি ও সরকারি ছয়টি সার কারখানা থেকে সরবরাহ করে।
টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের বেশির ভাগ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বেসরকারি আমদানিকারকেরা আমদানি করেন। এই সার বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) পাঁচ হাজার ২০০ জন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।
সারে ভেজাল থাকায় ফসল উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ার পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পরীক্ষায় ভেজাল জিংক সালফেট ও জিপসাম সারের মধ্যে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হেভি মেটাল, ক্যাডমিয়ামের মতো উপাদান পাওয়া গেছে। উৎপাদিত ফসল থেকে খাদ্যের মাধ্যমে এসব উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যানসার, লিভার ও হাড়ের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
এসআরডিআইয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ফসল আবাদ করার ফলে মাটিতে বেশ কিছু উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। আর ফসল ঠিকমতো বেড়ে ওঠার জন্য সারের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু উপাদান যুক্ত করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৪০ থকে ৫০ শতাংশ সারের মধ্যে ওই উপাদানগুলো নেই। জিপসাম, মিশ্র সার ও জিংক সালফেট সারে ভেজাল মেশাতে গিয়ে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক ভারী ধাতব পদার্থ (হেভি মেটাল) মেশানো হচ্ছে।
সার ডিলার, উৎপাদক ও আমদানিকারকদের সংগঠন বিএফএর সভাপতি কামরুল আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ডিলার এক রকম নন। সারে ভেজাল দেওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে সারে ভেজাল চিহ্নিত করতে পাঁচ হাজার টাকার একটি তহবিল দেওয়া হয়। সারের নমুনা সংগ্রহ করে ভেজাল পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত একজন ডিলারের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
কোন সারে কী পরিমাণে ভেজাল: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাঠানো নমুনার ভিত্তিতে তৈরি সারের মানসংক্রান্ত প্রতিবেদন-২০১১ অনুযায়ী, ১৭ রকমের সার পরীক্ষা করা হয়েছে। জিংক সালফেট সারের ৯৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৯ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে। এর পরই রয়েছে এনপিকেএস বা মিশ্র সার। ২৩২টি নমুনার মধ্যে ৭৬ শতাংশ সারেই ভেজাল। জৈব সারে ভেজালের হার ৫২ শতাংশ।
বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হওয়া ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সারে ২৬ শতাংশে, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেটে ২১ শতাংশ, মিউরেট অব পটাশে (এমওপি) ১৩ শতাংশ, বোরন সারে ৪৩ শতাংশ, জিপসাম সারে ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য সারের মধ্যে ৩৭ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে।
মিশ্র ও দস্তা সারের বিপদ: এসআরডিআই দেশের ১১টি অঞ্চল থেকে দস্তা সারের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই সারে ২১ শতাংশ দস্তা ও ১০ দশমিক ৫ শতাংশ সালফার থাকার কথা। কিন্তু প্রায় ৮০ শতাংশ সারে ওই পরিমাণ দস্তা ও সালফার পাওয়া যায়নি। বরং পাওয়া গেছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্যাডমিয়াম, লেড ও নিকেল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাডমিয়াম, লেড ও নিকেলের সংস্পর্শে এলে অর্থাৎ যেসব কৃষক এই উপাদানগুলো জমিতে দেবেন, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের কিডনি ও লিভার বিকল হয়ে যেতে পারে। অস্থিমজ্জায় রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যের সঙ্গে তা শরীরে গেলে গর্ভবতী নারীদের সন্তানের নানা সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের উপাদান যাঁরা সারের মধ্যে ব্যবহার করবেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও এ বি এম আব্দুল্লাহ মত দেন।
এসআরডিআইয়ের ওই পরীক্ষায় দস্তা সার (জিংক সালফেট) ও মিশ্র সারের (এনপিকেএস) প্রায় ৮০ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে। সিঙ্গেল সুপার ফসফেট (এসএসপি) সারে ৬৭ শতাংশ ও জৈব সারে ৫২ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে। তবে ইউরিয়া সারের সবচেয়ে কম, ২ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে।
এসআরডিআই সারা দেশ থেকে ১৭ রকমের সারের তিন হাজার ৫০২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাটি করেছে। এতে দেখা গেছে, ডিলারদের দোকানে বিক্রি হওয়া ৪২ শতাংশ সারে প্রয়োজনীয় উপাদান নেই। ইটের গুঁড়া, মাটি, বালু, কাচের টুকরো, মুরগির বিষ্ঠা, কারখানার বর্জ্য প্রভৃতি মিশিয়ে ডিলার ও ক্ষুদ্র উৎপাদকেরা সার বিক্রি করছেন।
এ ছাড়া সংস্থাটি প্রথম বারের মতো নিজস্ব উদ্যোগে আরও এক হাজার সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। তাতেও ৫০ শতাংশ সারে ভেজাল পাওয়া গেছে।
এসআরডিআইয়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিলার ও স্থানীয় উৎপাদকেরা সার ভেজাল-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার ও সরকারি বিভিন্ন কারখানার উৎপাদিত সার পরীক্ষা করে তারা কোনো ভেজাল পায়নি।
কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জন্য ২০ লাখ টন ইউরিয়া, ২২ লাখ টন টিএসপি, ১৫ লাখ টন এমওপি ও ১৭ লাখ টন ডিএপি সারের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের পুরোটাই সরকার বিদেশ থেকে আমদানি ও সরকারি ছয়টি সার কারখানা থেকে সরবরাহ করে।
টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের বেশির ভাগ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বেসরকারি আমদানিকারকেরা আমদানি করেন। এই সার বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) পাঁচ হাজার ২০০ জন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।
সারে ভেজাল থাকায় ফসল উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ার পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পরীক্ষায় ভেজাল জিংক সালফেট ও জিপসাম সারের মধ্যে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হেভি মেটাল, ক্যাডমিয়ামের মতো উপাদান পাওয়া গেছে। উৎপাদিত ফসল থেকে খাদ্যের মাধ্যমে এসব উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যানসার, লিভার ও হাড়ের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
এসআরডিআইয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ফসল আবাদ করার ফলে মাটিতে বেশ কিছু উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। আর ফসল ঠিকমতো বেড়ে ওঠার জন্য সারের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু উপাদান যুক্ত করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৪০ থকে ৫০ শতাংশ সারের মধ্যে ওই উপাদানগুলো নেই। জিপসাম, মিশ্র সার ও জিংক সালফেট সারে ভেজাল মেশাতে গিয়ে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক ভারী ধাতব পদার্থ (হেভি মেটাল) মেশানো হচ্ছে।
সার ডিলার, উৎপাদক ও আমদানিকারকদের সংগঠন বিএফএর সভাপতি কামরুল আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ডিলার এক রকম নন। সারে ভেজাল দেওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে সারে ভেজাল চিহ্নিত করতে পাঁচ হাজার টাকার একটি তহবিল দেওয়া হয়। সারের নমুনা সংগ্রহ করে ভেজাল পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত একজন ডিলারের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
কোন সারে কী পরিমাণে ভেজাল: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাঠানো নমুনার ভিত্তিতে তৈরি সারের মানসংক্রান্ত প্রতিবেদন-২০১১ অনুযায়ী, ১৭ রকমের সার পরীক্ষা করা হয়েছে। জিংক সালফেট সারের ৯৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৯ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে। এর পরই রয়েছে এনপিকেএস বা মিশ্র সার। ২৩২টি নমুনার মধ্যে ৭৬ শতাংশ সারেই ভেজাল। জৈব সারে ভেজালের হার ৫২ শতাংশ।
বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হওয়া ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সারে ২৬ শতাংশে, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেটে ২১ শতাংশ, মিউরেট অব পটাশে (এমওপি) ১৩ শতাংশ, বোরন সারে ৪৩ শতাংশ, জিপসাম সারে ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য সারের মধ্যে ৩৭ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে।
মিশ্র ও দস্তা সারের বিপদ: এসআরডিআই দেশের ১১টি অঞ্চল থেকে দস্তা সারের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই সারে ২১ শতাংশ দস্তা ও ১০ দশমিক ৫ শতাংশ সালফার থাকার কথা। কিন্তু প্রায় ৮০ শতাংশ সারে ওই পরিমাণ দস্তা ও সালফার পাওয়া যায়নি। বরং পাওয়া গেছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্যাডমিয়াম, লেড ও নিকেল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাডমিয়াম, লেড ও নিকেলের সংস্পর্শে এলে অর্থাৎ যেসব কৃষক এই উপাদানগুলো জমিতে দেবেন, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের কিডনি ও লিভার বিকল হয়ে যেতে পারে। অস্থিমজ্জায় রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যের সঙ্গে তা শরীরে গেলে গর্ভবতী নারীদের সন্তানের নানা সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের উপাদান যাঁরা সারের মধ্যে ব্যবহার করবেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও এ বি এম আব্দুল্লাহ মত দেন।
No comments