আদর্শ মা-বাবার ভূমিকায় by প্রণব কুমার চৌধুরী

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মা-বাবা বুঝতে পারেন বা না পারেন, এ কথা সত্যি, সন্তান সার্বক্ষণিকভাবে সিসি ক্যামেরার মতো আপনাদের অবলোকন করছে—আপনাদের দেখে শিখছে। মাঝেমধ্যে তা কপি করে নেয়, মা-বাবার রোল মডেল হয়ে অভিনয় করে দেখায়। আপনারা কীভাবে মানসিক চাপ মোকাবিলা করেন, ব্যর্থতা


কীভাবে গ্রহণ করেন, বন্ধুর সঙ্গে কী রকম করে তর্ক করেন—সব। তবে এখন থেকে তার মধ্যে উচ্চ আদর্শ জাগ্রত করতে চাইলে অন্যকে সম্মান, বন্ধুভাবাপন্ন, সৎ, দয়াপরবশ হওয়া, ধৈর্য ধরার মতো গুণগুলো তার সামনে নিজেকে প্রতিস্থাপন করে কাজে লাগাতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন, ব্যায়ামচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ধূমপান না করা ইত্যাদি সু-অভ্যাসের বীজ বপনের এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। তার মধ্যে আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ নারীর চরিত্র এখনই জাগিয়ে রাখা যায়। এই আদর্শ মডেল খুঁজতে নিজ পরিবারের সদস্যদের বাইরেও অন্য কোনো পরিবারের সদস্য বা শিক্ষকের উপমা তুলে ধরা যায়। নয়টি পদক্ষেপ বিবেচনায় নিন—
১. শিশুর আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করুন—সন্তান আপনার গলার স্বর, শব্দচয়ন, শারীরিক ভাষা—সবকিছু শোষণ করে নেয়। তার সব ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করুন। অন্য কোনো সমবয়সীর তুলনা টেনে তাকে হেয় করে কথা বলা হলে সে হতাশায় তলিয়ে যায়। ‘তুমি একদম বোকা, তোমার ছোট ভাই তোমার থেকে ভালো’—এ রকম আবোল-তাবোল শব্দ ব্যবহার থেকে সতর্ক থাকুন।
২. শিশুর ভালো দিকগুলোর প্রতি লক্ষ রেখে তাকে পরিচালিত করুন। নেতিবাচক বিশ্লেষণ শিশুকে নিচুতে নিয়ে যায়।
৩. তার জন্য সীমারেখা টেনে দিন। বাসায় শৃঙ্খলা বোধ গড়ে তুলুন; যেমন: হোমওয়ার্ক শেষ না করে টেলিভিশন দেখতে যাবে না।
৪. আপনার সন্তানকে সময় দিন। অধুনা ব্যস্তজীবনে যদিও মোটেই এটি সহজ কাজ নয়। তবু বাচ্চার জন্য সময় বের করে এনে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করা, প্রধান খাবারগুলো এক টেবিলে বসে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। সপ্তাহে অন্তত একটা বিকেল পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া শিশুবয়স বেশ উদ্যাপন করে।
৫. সন্তানের সামনে উচ্চ আদর্শভাব বজায় রাখুন। তার সামনে ঝগড়াঝাঁটি, ক্রোধান্ধ হয়ে যাচ্ছেতাই আচরণ করার আগে চিন্তা করে নিতে হবে, এসব দেখে শিশু কী শিখছে!
৬. সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। সর্বদা আপনার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলুন। প্রয়োজনে তার পরামর্শ চেয়ে নিন। তাকে মূল্য দিন।
৭. বয়ঃসন্ধিকালের শিশুর সব আচরণ মা-বাবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তারা বন্ধু-বান্ধবীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কিছু আচার-আচরণ করে। বেশি ক্ষতিকর মনে না হলে তা মেনে নিন। সবকিছু কঠিন মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে যাওয়া ঠিক নয়।
৮. আপনি তাকে বুঝিয়ে দিন তার প্রতি আপনাদের প্রশ্নাতীত ভালোবাসা রয়েছে, যা কেবল তার মঙ্গলের জন্য। তাকে যখন-তখন দোষারোপ না করে সপ্রশংস দৃষ্টিভঙ্গিতে উৎসাহিত করে অগ্রসর হতে দিন।
৯. অভিভাবক হিসেবে আপনাদের সামর্থ্যচিত্র তাকে বুঝিয়ে দিন। নিজেরাও নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকুন। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিল রেখে পথ অতিক্রমে বেশি সুফল মেলে।

No comments

Powered by Blogger.