সময়ের প্রতিবিম্ব-কতখানি ‘পবিত্র’ আমাদের সংবিধান by এবিএম মূসা
দেশের সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অপরিসীম ও দুঃসহ ভোগান্তিতে আছে বিদ্যুৎ, গ্যাস আর পানি নিয়ে। প্রতিদিনের সকালের দৈনিক পত্রিকায় হত্যা, গণপিটুনি, খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, অপহরণ আর নারী নির্যাতনের খবর পড়ে আতঙ্কগ্রস্ত।
আইনের অপশাসন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের নিষ্ঠুরতায় জনগণ হতাশাগ্রস্ত, সন্ত্রস্ত আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এসব নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই শুধু শাসক আর শাসকবিরোধী রাজনীতিবিদদের। তাঁদের দুশ্চিন্তা রাষ্ট্রের সংবিধান নিয়ে, যার বিধানগুলো তাঁরা নিজেরা কতখানি মানেন, তা নিয়ে জনগণের সংশয় রয়েছে। সেসব বিধান নিয়ে তাঁরা মামলা আর হামলায় লিপ্ত হয়েছেন। এদিকে আমাদের উচ্চতম আদালত এই রাজনৈতিক দুই দলের বিবাদে ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েছেন অথবা তাঁদের জড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
কী দুর্ভাগা জনগণ! প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের দুর্দশা লাঘবে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মাঠ সরগরম করে রেখেছে সংবিধান তথা রাষ্ট্র পরিচালনায় বিধিসংবলিত একটি গ্রন্থ নিয়ে। প্রথম আলোর অনলাইনে পাঠকের মন্তব্য, চিঠি আর টেলিফোন থেকে পাওয়া জনগণের এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, ‘রোম যখন পুড়ছে, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছে।’ এ বাঁশিটি মেলা থেকে কেনা তালপাতার ভেঁপু নয়, আমাদের সংবিধান নামক কতিপয় অনুচ্ছেদ-সংবলিত একটি গ্রন্থের কয়েকটি পাতা মুড়ে বানানো হয়েছে। আমাদের যে পবিত্র আদালত অঙ্গনটি অতীতে ঐতিহাসিক বৈচারিক রায় সরগরম রাখত, সেটি এখন স্লোগান-মিছিলে সরগরম শুধু নয়, একেবারে সরকারি আর বিরোধী দলের অনুসারী শিক্ষিত আইনজীবীদের রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। অভূতপূর্ব এই ঘটনা, একটি গ্রন্থের ‘মর্যাদা রক্ষার’ লড়াইয়ে দুটি পক্ষের লড়াই লাঠিখেলার মহরতে, চিৎকার-লাফালাফিতে সীমাবদ্ধ নেই। পানির বোতল আর চেয়ার নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী অবস্থা। অবশ্য অন্য আমলে অতীতেও এমনটি ঘটেছে, টেবিল ভাঙা আর দরজায় লাথি মারার ন্যক্কারজনক উদাহরণ রয়েছে। অতীতের সেই ময়লা নাই-বা ঘাঁটলাম। কারণ, তখন এত সব অপকর্ম এত দূর গড়ায়নি। আদালত ও বিচারব্যবস্থার মর্যাদা এতখানি ক্ষুণ্ন হয়নি, শুধু ক্ষণিক আলোচিত হয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণের বর্তমান মল্লযুদ্ধের উপলক্ষ তথা সূত্রপাত কোথায়? একজন অখ্যাত অজানা ভুঁইফোড় ধর্মব্যবসায়ী হঠাৎ করে ধর্মীয় উন্মাদনার হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নেমে সংবিধান সম্পর্কে একটি অযাচিত ও অবাঞ্ছিত মন্তব্য করে বসলেন। এতে কারও মনে হলো, আমাদের সাংবিধানিক শাসনের ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। সেই বক্তব্যকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে আমাদের মহামূল্যবান গ্রন্থকে ‘অপবিত্র’ অথবা অবজ্ঞা করা হয়েছে—এই অভিযোগে একটি মামলা হলো। আমার মনে হয়, যদিও মন্তব্যকারীরা ‘সংবিধান’ বলেছেন, আসলে তিনি ছাপানো বইটি সম্পর্কেই ‘ছুড়ে ফেলে দেবেন’ মন্তব্য করেছিলেন। মন্তব্যটি আমাদের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ধর্মীয় শব্দের অস্পষ্ট ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মজার ব্যাপার, এই সংবিধানে ধর্মের জগাখিচুড়ি অবস্থানের অন্তর্ভুক্তির যাঁরা বিরোধী, আমিও তাঁদের একজন, এই অবস্থানের বৈধতা মোকাবিলায় উচ্চ আদালতে মামলা করেননি। অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবীরা শুধু পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন, সভা-সেমিনার করেছেন। সংবিধানে ধর্মের বিভ্রান্তিমূলক অবস্থানের সুরাহার জন্য কেউ উচ্চতম আদালতে যাননি কেন?
আসল ঝামেলা বেধেছে তখন ‘অবজ্ঞা তথা অবমাননা’ সম্পর্কিত মামলার শুনানিতে একজন মহামান্য বিচারক যখন আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর একটি মন্তব্য ‘শুনানিকালে’ উদ্ধৃত করেছেন। আর যায় কোথায়। কারও মনে হলো, তাঁদের নেত্রীকে উদ্ধৃত করে আমাদের একজন মহামান্য বিচারপতি যেন ‘মহাপবিত্র’ গ্রন্থটির অপবিত্র করার চেয়েও বড় গুনাহর কাজ করে ফেলেছেন। তার পরের হইহই-রইরই কাণ্ড, একদল শিক্ষিত, পণ্ডিতম্মন্য একদল ‘জাতীয়তাবাদী’ আইনজীবীর তাণ্ডব কাহিনি সবার জানা। সেই তাণ্ডবের জের চলছে এখনো, মানে আমি যখন এই প্রতিবেদনটি লিখছি তখন পর্যন্ত।
আদালত প্রাঙ্গণে আর বাইরে নানা নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকুক; আমি ভাবছি, সংবিধান নিয়ে এত ছোঁয়াছুঁয়ি, লোফালুফি, হাতাহাতি কেন। এর মান, মর্যাদা আর পবিত্রতা নিয়ে এত সব বিতর্ক আর জটিল পরিস্থিতির কেনই বা উদ্ভব ঘটেছে। কেন আদালতে বিচার্য বিষয়টিতে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক বৈরিতার প্রকাশ ঘটেছে। আবার এ-ও ভাবতে হবে, পঞ্চদশ সংশোধনীতে পরিচ্ছেদ ৭-ক-খ যোগ করে কেন আকাদেমিক আলোচনা নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো আইন, বিধান বা শাসকের লিখিত-অলিখিত আদেশ বা নির্দেশ নিষিদ্ধ যেমনটি করা হতো অতীতে সামরিক শাসনামলে। তাদের কোনো মৌখিক আইন আর আদেশের বিরুদ্ধে কথা বললেই ছিল বেত্রাঘাত আর জেল-জরিমানার বিধান, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও। এ নিয়ে একটি টিভি আলোচনায় আমি সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চেয়েছি, পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনায় শাস্তি প্রদানের এ ক্ষমতাটি (এও ঠিক যে কোন আদালতে এর বিচার হবে সে বিষয়ে ৭ ক অস্পষ্ট) দিয়ে উচ্চতম আদালতকে নিম্ন ফৌজদারি আদালতের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে কি না। এমনকি বর্ণিত অনুচ্ছেদটি আমি ও আরও অনেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসনের, মত প্রকাশের স্বাধীনতার তৃতীয় ভাগ—মৌলিক অধিকার (উপ অনুচ্ছেদ ৩২) পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক বলেছি। অবশ্য এই যে মন্তব্যগুলো করলাম, না জানি ৭-ক-খ অনুচ্ছেদে বিধিবদ্ধ শাস্তির আওতায় পড়লাম কি না।
এত সবের পরও সংবিধান গ্রন্থটির ‘পবিত্রতা’ ও গিলাফে ঢেকে রাখার বিধান নিয়ে সব ঝুঁকি সত্ত্বেও বিস্তারিত আলোচনা করতে হচ্ছে। কতখানি আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে বারেবারে, কারণে-অকারণে পরিবর্তিত ও ফুটো করা, কাটাছেঁড়া আমাদের সংবিধান। কতখানি সাফসুতরো আর পবিত্র বলা উচিত মনুষ্যরচিত এই গ্রন্থ ও এর বিধানগুলোকে? আমাদের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি মাত্র ‘পবিত্র’ গ্রন্থ আছে। সেই গ্রন্থটি কোরআন মজিদ, যাতে সব বয়ান আল্লাহ পাক নাজিল করেছিলেন। গ্রহণ করেছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তিনি তাঁর অনুসারীদের মধ্যে সেই গ্রন্থে বর্ণিত আল্লাহর বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই গ্রন্থ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন করা যায় না। এমনকি পাকপবিত্র না হয়ে ছোঁয়া যাবে না, পাঠ করার প্রশ্নই ওঠে না। জনান্তিকে বলে রাখি, এই আরবি গ্রন্থটি প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন একজন অমুসলিম—গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি যদি গ্রন্থটি অপবিত্র করেও থাকেন নিশ্চয় কাজটির মাহাত্ম্যের জন্য আল্লাহ পাক তাঁকে ক্ষমা করেছেন। কোরআন শরিফের দ্বিতীয় সূরা আল-বাকারার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘জালিকাল কিতাবু’ ইহাই একমাত্র প্রভুর বিধানসংবলিত কিতাব। এর সত্যতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করা যাইবে না, ‘লা রাইবা ফি।’
উপরিউক্ত পটভূমিতে আমাদের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৭-ক-খ অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্তকারীরা এ সম্পর্কে কী বলেন? সংবিধানকে অথবা কোনো অনুচ্ছেদকে আমাদের একমাত্র পবিত্র গ্রন্থের একই মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করলে ধর্মীয় বিধি লঙ্ঘন, মুরতাদি বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা যাবে কী? অপরদিকে কেবলমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থগুলো ‘ছুড়ে ফেলে দিলে’ অথবা ‘ডাস্টবিনে’ নিক্ষেপ করলে, এমনটি করব বললেও, সংশ্লিষ্ট কিতাব বা গ্রন্থের অনুসারীরা অবশ্যই ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত হবেন। আমাদের মনুষ্য রচিত সংবিধান গ্রন্থ বিধির বিধান নয়, অথচ এমন একটি অন্ধ ধারণা দিয়ে একটি মামলা নয় শুধু, সর্বোচ্চ বিচারালয়ে তুলকালাম কাণ্ড বেধেছে। আগেই বলেছি, এর মূলে রয়েছে আমাদের একটি রাষ্ট্রীয় গ্রন্থ সংবিধানের সংশোধনী নিয়ে একজন অখ্যাত ব্যক্তির অবমাননাকর মন্তব্য। এখন ওই ব্যক্তিকে অকারণ গুরুত্ব দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যাঁরা একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সূচনা করেছেন, তাঁদের সেই তথাকথিত ধর্মীয় গুরুর মন্তব্যে ক্ষুণ্ন বা ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ ঘটেনি। যখন একজন রাজনৈতিক শীর্ষ নেত্রীর এই ধরনের মন্তব্যটি শুনানিকালে একজন বিচারপতি উদাহরণস্বরূপ শুধু উদ্ধৃত করলেন, তখনই পুরো ব্যাপার একটি রাজনৈতিক রূপাশ্রয়ী আন্দোলনে পরিণত হলো কেন? তাঁদের আমার প্রশ্ন, একজন রাজনৈতিক দলের নেত্রীর মন্তব্যগুলো কি এমন ‘পবিত্র’ যে এ নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারবেন না? তাঁর ‘পবিত্র’ বাক্যটির অবমাননার জন্য আদালতের বিচারককে কিছু ছুড়তে হবে? তাঁদের দলীয় নেত্রী অথবা দেশনেত্রীর ‘রাজনৈতিক ভাবমূর্তি’ রক্ষার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্থানটির পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করলেন কেন কতিপয় আইনজীবী?
এবার আসি কতিপয় ছাপানো সংবিধান বইয়ের আলোচনায়। বাহাত্তরের পরে, তারও আগের পাকিস্তান গণপরিষদের, আইয়ুবের সংসদে গৃহীত সংবিধানের মুদ্রণযন্ত্রে ছাপানো কত সংস্করণ, কত আকারের কতটি বই আছে বা এ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে? সেই ছাপানো বইগুলোতে ৭-ক-খ অনুচ্ছেদ থাকলেও জেনারেলদের ক্যু ঠেকানো যেত? সেসব আদি সংবিধান পুস্তকাকারে কত কপি ছাপা হয়েছিল মনে করে উঠতে পারছি না। পাকিস্তানি আমলের বইগুলো বোধ হয় ‘ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়েছে।’ আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানটিতে প্রণেতাদের দস্তখত আছে। প্রয়াত শিল্পী আবদুর রউফের অলংকরণসংবলিত হাতে লেখা দলিলটি মনে হয় জাতীয় সংসদে রক্ষিত আছে। তারপর দুজন সামরিক শাসকের যাঁর একজন বর্তমান সরকারের প্রিয়ভাজন, সেটি যথেচ্ছভাবে কাটাছেঁড়া করেছেন। এমনকি জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত অথবা জনস্বার্থে কিংবা ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ তথা সাজানো নির্বাচনে জয়ী সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন, সংযোজন করে পুস্তকাকারে ছাপিয়ে বিলি করেছেন।
আমার কাছে বাহাত্তরেরটি নেই, তবে সর্বশেষ তিনটি আমার সংগ্রহে ছিল। একটি ১২ হাজার কপি সরকারি ছাপাখানার তারিখ ১৯৯৯ সালের ৫ এপ্রিল, ১৯৯৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশোধিত। অতঃপর বহুদিন সংবিধানের ছাপানো বই লাপাত্তা ছিল। দুই নম্বরে হাতে পেয়েছিলাম ২০০৮ সালের এপ্রিলে ছাপানো দুই হাজার কপির একটি, পরমপ্রিয় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছ থেকে। প্রচ্ছদে লেখা আছে, ‘সর্বশেষ সংশোধনীসহ মুদ্রিত, এপ্রিল ২০০৮ তারিখ। সর্বশেষ হাতে এল ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে মুদ্রিত সংবিধান। মহামান্য আদালতের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত রায়ের আলোকে এটি ছাপা হয়েছিল। সংসদে ‘কিছু মেনে, কিছু পাশ কাটিয়ে’ পাস করা সর্বশেষ সংশোধিত এই পুস্তকাকারের সংবিধানটি আমার কাছে নেই।
দুঃখের বিষয়, এ প্রতিবেদনটি লেখার পর অতীতের সেসব ‘সংবিধান’ মানে ছাপানো বইগুলোও খুঁজে পাচ্ছি না। কম্পিত বক্ষে পাঠকদের জানাচ্ছি, আমার সেই সংগৃহীত সংবিধানগুলো মানে ছাপানো বইগুলো কয়েক দিন আগে পুরোনো সংবাদপত্রের সঙ্গে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। যিনি বিক্রি করেছেন তাঁকে বললাম, ‘কী সর্বনাশ, সংবিধানের কোন একটি বিধান সম্পর্কে উচ্চবাচ্য করলে সর্বোচ্চ দণ্ড হবে। একেবারে বিক্রি করে দিলে, কী হবে জানো?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এখন যা-ই হোক, ভবিষ্যতে সর্বশেষ ছাপানো বইটিও যে কোনো এক ক্ষমতাসীন দলের সরকার বা দুই-তৃতীয়াংশ আসন অর্জনকারী সংসদ সদস্যগণ সংশোধন বা বাতিল করে দেবেন না অথবা পুরোনো কাগজের সঙ্গে বিক্রি করে দেবেন না—এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেন? উত্তরটি আমার প্রিয় পাঠকেরা দেবেন।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
কী দুর্ভাগা জনগণ! প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের দুর্দশা লাঘবে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মাঠ সরগরম করে রেখেছে সংবিধান তথা রাষ্ট্র পরিচালনায় বিধিসংবলিত একটি গ্রন্থ নিয়ে। প্রথম আলোর অনলাইনে পাঠকের মন্তব্য, চিঠি আর টেলিফোন থেকে পাওয়া জনগণের এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, ‘রোম যখন পুড়ছে, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছে।’ এ বাঁশিটি মেলা থেকে কেনা তালপাতার ভেঁপু নয়, আমাদের সংবিধান নামক কতিপয় অনুচ্ছেদ-সংবলিত একটি গ্রন্থের কয়েকটি পাতা মুড়ে বানানো হয়েছে। আমাদের যে পবিত্র আদালত অঙ্গনটি অতীতে ঐতিহাসিক বৈচারিক রায় সরগরম রাখত, সেটি এখন স্লোগান-মিছিলে সরগরম শুধু নয়, একেবারে সরকারি আর বিরোধী দলের অনুসারী শিক্ষিত আইনজীবীদের রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। অভূতপূর্ব এই ঘটনা, একটি গ্রন্থের ‘মর্যাদা রক্ষার’ লড়াইয়ে দুটি পক্ষের লড়াই লাঠিখেলার মহরতে, চিৎকার-লাফালাফিতে সীমাবদ্ধ নেই। পানির বোতল আর চেয়ার নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী অবস্থা। অবশ্য অন্য আমলে অতীতেও এমনটি ঘটেছে, টেবিল ভাঙা আর দরজায় লাথি মারার ন্যক্কারজনক উদাহরণ রয়েছে। অতীতের সেই ময়লা নাই-বা ঘাঁটলাম। কারণ, তখন এত সব অপকর্ম এত দূর গড়ায়নি। আদালত ও বিচারব্যবস্থার মর্যাদা এতখানি ক্ষুণ্ন হয়নি, শুধু ক্ষণিক আলোচিত হয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণের বর্তমান মল্লযুদ্ধের উপলক্ষ তথা সূত্রপাত কোথায়? একজন অখ্যাত অজানা ভুঁইফোড় ধর্মব্যবসায়ী হঠাৎ করে ধর্মীয় উন্মাদনার হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নেমে সংবিধান সম্পর্কে একটি অযাচিত ও অবাঞ্ছিত মন্তব্য করে বসলেন। এতে কারও মনে হলো, আমাদের সাংবিধানিক শাসনের ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। সেই বক্তব্যকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে আমাদের মহামূল্যবান গ্রন্থকে ‘অপবিত্র’ অথবা অবজ্ঞা করা হয়েছে—এই অভিযোগে একটি মামলা হলো। আমার মনে হয়, যদিও মন্তব্যকারীরা ‘সংবিধান’ বলেছেন, আসলে তিনি ছাপানো বইটি সম্পর্কেই ‘ছুড়ে ফেলে দেবেন’ মন্তব্য করেছিলেন। মন্তব্যটি আমাদের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ধর্মীয় শব্দের অস্পষ্ট ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মজার ব্যাপার, এই সংবিধানে ধর্মের জগাখিচুড়ি অবস্থানের অন্তর্ভুক্তির যাঁরা বিরোধী, আমিও তাঁদের একজন, এই অবস্থানের বৈধতা মোকাবিলায় উচ্চ আদালতে মামলা করেননি। অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবীরা শুধু পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন, সভা-সেমিনার করেছেন। সংবিধানে ধর্মের বিভ্রান্তিমূলক অবস্থানের সুরাহার জন্য কেউ উচ্চতম আদালতে যাননি কেন?
আসল ঝামেলা বেধেছে তখন ‘অবজ্ঞা তথা অবমাননা’ সম্পর্কিত মামলার শুনানিতে একজন মহামান্য বিচারক যখন আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর একটি মন্তব্য ‘শুনানিকালে’ উদ্ধৃত করেছেন। আর যায় কোথায়। কারও মনে হলো, তাঁদের নেত্রীকে উদ্ধৃত করে আমাদের একজন মহামান্য বিচারপতি যেন ‘মহাপবিত্র’ গ্রন্থটির অপবিত্র করার চেয়েও বড় গুনাহর কাজ করে ফেলেছেন। তার পরের হইহই-রইরই কাণ্ড, একদল শিক্ষিত, পণ্ডিতম্মন্য একদল ‘জাতীয়তাবাদী’ আইনজীবীর তাণ্ডব কাহিনি সবার জানা। সেই তাণ্ডবের জের চলছে এখনো, মানে আমি যখন এই প্রতিবেদনটি লিখছি তখন পর্যন্ত।
আদালত প্রাঙ্গণে আর বাইরে নানা নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকুক; আমি ভাবছি, সংবিধান নিয়ে এত ছোঁয়াছুঁয়ি, লোফালুফি, হাতাহাতি কেন। এর মান, মর্যাদা আর পবিত্রতা নিয়ে এত সব বিতর্ক আর জটিল পরিস্থিতির কেনই বা উদ্ভব ঘটেছে। কেন আদালতে বিচার্য বিষয়টিতে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক বৈরিতার প্রকাশ ঘটেছে। আবার এ-ও ভাবতে হবে, পঞ্চদশ সংশোধনীতে পরিচ্ছেদ ৭-ক-খ যোগ করে কেন আকাদেমিক আলোচনা নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো আইন, বিধান বা শাসকের লিখিত-অলিখিত আদেশ বা নির্দেশ নিষিদ্ধ যেমনটি করা হতো অতীতে সামরিক শাসনামলে। তাদের কোনো মৌখিক আইন আর আদেশের বিরুদ্ধে কথা বললেই ছিল বেত্রাঘাত আর জেল-জরিমানার বিধান, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও। এ নিয়ে একটি টিভি আলোচনায় আমি সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চেয়েছি, পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনায় শাস্তি প্রদানের এ ক্ষমতাটি (এও ঠিক যে কোন আদালতে এর বিচার হবে সে বিষয়ে ৭ ক অস্পষ্ট) দিয়ে উচ্চতম আদালতকে নিম্ন ফৌজদারি আদালতের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে কি না। এমনকি বর্ণিত অনুচ্ছেদটি আমি ও আরও অনেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসনের, মত প্রকাশের স্বাধীনতার তৃতীয় ভাগ—মৌলিক অধিকার (উপ অনুচ্ছেদ ৩২) পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক বলেছি। অবশ্য এই যে মন্তব্যগুলো করলাম, না জানি ৭-ক-খ অনুচ্ছেদে বিধিবদ্ধ শাস্তির আওতায় পড়লাম কি না।
এত সবের পরও সংবিধান গ্রন্থটির ‘পবিত্রতা’ ও গিলাফে ঢেকে রাখার বিধান নিয়ে সব ঝুঁকি সত্ত্বেও বিস্তারিত আলোচনা করতে হচ্ছে। কতখানি আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে বারেবারে, কারণে-অকারণে পরিবর্তিত ও ফুটো করা, কাটাছেঁড়া আমাদের সংবিধান। কতখানি সাফসুতরো আর পবিত্র বলা উচিত মনুষ্যরচিত এই গ্রন্থ ও এর বিধানগুলোকে? আমাদের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি মাত্র ‘পবিত্র’ গ্রন্থ আছে। সেই গ্রন্থটি কোরআন মজিদ, যাতে সব বয়ান আল্লাহ পাক নাজিল করেছিলেন। গ্রহণ করেছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তিনি তাঁর অনুসারীদের মধ্যে সেই গ্রন্থে বর্ণিত আল্লাহর বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই গ্রন্থ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন করা যায় না। এমনকি পাকপবিত্র না হয়ে ছোঁয়া যাবে না, পাঠ করার প্রশ্নই ওঠে না। জনান্তিকে বলে রাখি, এই আরবি গ্রন্থটি প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন একজন অমুসলিম—গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি যদি গ্রন্থটি অপবিত্র করেও থাকেন নিশ্চয় কাজটির মাহাত্ম্যের জন্য আল্লাহ পাক তাঁকে ক্ষমা করেছেন। কোরআন শরিফের দ্বিতীয় সূরা আল-বাকারার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘জালিকাল কিতাবু’ ইহাই একমাত্র প্রভুর বিধানসংবলিত কিতাব। এর সত্যতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করা যাইবে না, ‘লা রাইবা ফি।’
উপরিউক্ত পটভূমিতে আমাদের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৭-ক-খ অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্তকারীরা এ সম্পর্কে কী বলেন? সংবিধানকে অথবা কোনো অনুচ্ছেদকে আমাদের একমাত্র পবিত্র গ্রন্থের একই মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করলে ধর্মীয় বিধি লঙ্ঘন, মুরতাদি বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা যাবে কী? অপরদিকে কেবলমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থগুলো ‘ছুড়ে ফেলে দিলে’ অথবা ‘ডাস্টবিনে’ নিক্ষেপ করলে, এমনটি করব বললেও, সংশ্লিষ্ট কিতাব বা গ্রন্থের অনুসারীরা অবশ্যই ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত হবেন। আমাদের মনুষ্য রচিত সংবিধান গ্রন্থ বিধির বিধান নয়, অথচ এমন একটি অন্ধ ধারণা দিয়ে একটি মামলা নয় শুধু, সর্বোচ্চ বিচারালয়ে তুলকালাম কাণ্ড বেধেছে। আগেই বলেছি, এর মূলে রয়েছে আমাদের একটি রাষ্ট্রীয় গ্রন্থ সংবিধানের সংশোধনী নিয়ে একজন অখ্যাত ব্যক্তির অবমাননাকর মন্তব্য। এখন ওই ব্যক্তিকে অকারণ গুরুত্ব দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যাঁরা একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সূচনা করেছেন, তাঁদের সেই তথাকথিত ধর্মীয় গুরুর মন্তব্যে ক্ষুণ্ন বা ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ ঘটেনি। যখন একজন রাজনৈতিক শীর্ষ নেত্রীর এই ধরনের মন্তব্যটি শুনানিকালে একজন বিচারপতি উদাহরণস্বরূপ শুধু উদ্ধৃত করলেন, তখনই পুরো ব্যাপার একটি রাজনৈতিক রূপাশ্রয়ী আন্দোলনে পরিণত হলো কেন? তাঁদের আমার প্রশ্ন, একজন রাজনৈতিক দলের নেত্রীর মন্তব্যগুলো কি এমন ‘পবিত্র’ যে এ নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারবেন না? তাঁর ‘পবিত্র’ বাক্যটির অবমাননার জন্য আদালতের বিচারককে কিছু ছুড়তে হবে? তাঁদের দলীয় নেত্রী অথবা দেশনেত্রীর ‘রাজনৈতিক ভাবমূর্তি’ রক্ষার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্থানটির পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করলেন কেন কতিপয় আইনজীবী?
এবার আসি কতিপয় ছাপানো সংবিধান বইয়ের আলোচনায়। বাহাত্তরের পরে, তারও আগের পাকিস্তান গণপরিষদের, আইয়ুবের সংসদে গৃহীত সংবিধানের মুদ্রণযন্ত্রে ছাপানো কত সংস্করণ, কত আকারের কতটি বই আছে বা এ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে? সেই ছাপানো বইগুলোতে ৭-ক-খ অনুচ্ছেদ থাকলেও জেনারেলদের ক্যু ঠেকানো যেত? সেসব আদি সংবিধান পুস্তকাকারে কত কপি ছাপা হয়েছিল মনে করে উঠতে পারছি না। পাকিস্তানি আমলের বইগুলো বোধ হয় ‘ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়েছে।’ আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানটিতে প্রণেতাদের দস্তখত আছে। প্রয়াত শিল্পী আবদুর রউফের অলংকরণসংবলিত হাতে লেখা দলিলটি মনে হয় জাতীয় সংসদে রক্ষিত আছে। তারপর দুজন সামরিক শাসকের যাঁর একজন বর্তমান সরকারের প্রিয়ভাজন, সেটি যথেচ্ছভাবে কাটাছেঁড়া করেছেন। এমনকি জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত অথবা জনস্বার্থে কিংবা ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ তথা সাজানো নির্বাচনে জয়ী সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন, সংযোজন করে পুস্তকাকারে ছাপিয়ে বিলি করেছেন।
আমার কাছে বাহাত্তরেরটি নেই, তবে সর্বশেষ তিনটি আমার সংগ্রহে ছিল। একটি ১২ হাজার কপি সরকারি ছাপাখানার তারিখ ১৯৯৯ সালের ৫ এপ্রিল, ১৯৯৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশোধিত। অতঃপর বহুদিন সংবিধানের ছাপানো বই লাপাত্তা ছিল। দুই নম্বরে হাতে পেয়েছিলাম ২০০৮ সালের এপ্রিলে ছাপানো দুই হাজার কপির একটি, পরমপ্রিয় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছ থেকে। প্রচ্ছদে লেখা আছে, ‘সর্বশেষ সংশোধনীসহ মুদ্রিত, এপ্রিল ২০০৮ তারিখ। সর্বশেষ হাতে এল ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে মুদ্রিত সংবিধান। মহামান্য আদালতের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত রায়ের আলোকে এটি ছাপা হয়েছিল। সংসদে ‘কিছু মেনে, কিছু পাশ কাটিয়ে’ পাস করা সর্বশেষ সংশোধিত এই পুস্তকাকারের সংবিধানটি আমার কাছে নেই।
দুঃখের বিষয়, এ প্রতিবেদনটি লেখার পর অতীতের সেসব ‘সংবিধান’ মানে ছাপানো বইগুলোও খুঁজে পাচ্ছি না। কম্পিত বক্ষে পাঠকদের জানাচ্ছি, আমার সেই সংগৃহীত সংবিধানগুলো মানে ছাপানো বইগুলো কয়েক দিন আগে পুরোনো সংবাদপত্রের সঙ্গে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। যিনি বিক্রি করেছেন তাঁকে বললাম, ‘কী সর্বনাশ, সংবিধানের কোন একটি বিধান সম্পর্কে উচ্চবাচ্য করলে সর্বোচ্চ দণ্ড হবে। একেবারে বিক্রি করে দিলে, কী হবে জানো?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এখন যা-ই হোক, ভবিষ্যতে সর্বশেষ ছাপানো বইটিও যে কোনো এক ক্ষমতাসীন দলের সরকার বা দুই-তৃতীয়াংশ আসন অর্জনকারী সংসদ সদস্যগণ সংশোধন বা বাতিল করে দেবেন না অথবা পুরোনো কাগজের সঙ্গে বিক্রি করে দেবেন না—এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেন? উত্তরটি আমার প্রিয় পাঠকেরা দেবেন।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
No comments