সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ুক-দরবারে র‌্যাবের ডাকাতি

পোশাক যে বাহিনীরই হোক, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পীরের দরবারে যা হয়েছে, তা নির্জলা ডাকাতি। ঘটনা ঘটেছে গত নভেম্বরের শুরুতে। ক্ষতিগ্রস্তরা এর মধ্যে বহু দেনদরবার করেও র‌্যাব কর্তৃপক্ষের টনক নড়াতে পারেনি। ডাকাতি এবং তার আইনগত বিহিত করায় এই গড়িমসি দুঃখজনক।


উচিত ছিল, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া। এ ব্যাপারে র‌্যাব কর্তৃপক্ষ কেবল আইনের খেলাপই করেনি, নিজেদের ভাবমূর্তিও ভূলুণ্ঠিত হতে দিয়েছে।
এই ডাকাতিতে চট্টগ্রামের র‌্যাব-৭-এর অধিনায়কের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান ঘটনাস্থর পরিদর্শন করেন মাত্র দুদিন আগে। এর আগে অবশ্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলেও আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। তাও করা হয়মাত্র দুই সপ্তাহ আগে। এখন পুলিশ বলছে, পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তা যদি থেকে থাকবে, তাহলে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে লুণ্ঠিত দরবারের পীর আহমদ ছফার অভিযোগ পাওয়ার পর পরই তারা তৎপর হলো না কেন? র‌্যাবও তৎক্ষণাৎ দোষী ব্যক্তিদের আইনি হেফাজতে নিলে সংস্থাটির দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠত না।
র‌্যাব রাষ্ট্রের এলিট ফোর্স। সন্ত্রাস দমনে এই বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতা অটুট থাকাই শ্রেয়। তাহলেও বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস দমন ও অস্ত্র উদ্ধারের নামে এই বাহিনীর কতিপয় সদস্যের বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। ঝালকাঠির রাখাল বালক লিমনকে বিনা কারণে গুলি করার ঘটনাও জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। র‌্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা তা নিরূপণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল নিরপেক্ষ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা। তাহলে র‌্যাবের ভাবমূর্তি ও শুদ্ধতা নিশ্চিত করায় কী পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়, তা-ও জানা যেত। কিন্তু কেউই দায়িত্ব পালন করেনি। এখন দেখা গেল, র‌্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা স্বয়ং ডাকাতিতে জড়িয়ে গেছেন। গোড়াতে সতর্ক হলে এ রকম ঘটনা ঘটানোর সুযোগ কমে যেত।
র‌্যাবের এহেন ভাবমূর্তির জন্যই একশ্রেণীর অপরাধী র‌্যাবের পরিচয় ও পোশাক ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এর দায়ও র‌্যাবের কাঁধেই চাপছে। সে কারণেই যেমন আসল র‌্যাব ও নকল র‌্যাবের পার্থক্য যাচাই হওয়া দরকার, তেমনি র‌্যাবের ভেতরের সুযোগসন্ধানীদেরও চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।
আমরা আশা করব, বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে র‌্যাব, পুলিশ ও খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টনক নড়বে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো নিশ্চিত করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.