সমাজসেবার নামে ব্যবসা-ঝিনাইদহ স্টাইল সর্বত্রই

দেশে সমাজসেবা ও এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে কোটিপতি বনার প্রতিযোগিতা অজানা নয়। এভাবে অনেকে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে দিব্যি নিজের ও পরিবারের স্ট্যাটাস বাড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু যে সমাজ বা মানুষের নামে প্রতিষ্ঠান খোলা হয় তারা এদের কাছ থেকে তেমন উপকার পান না।


ঝিনাইদহে নিজেদের আখের গোছানোর অভিযোগে জেলা সমাজসেবা অধিদফতর এ ধরনের ১৩টি এনজিওসহ ২৪২টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করার সুপারিশ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজসেবার পরিবর্তে উদ্যোক্তাদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত। অল্পদিনে ঝিনাইদহের বেশ কয়েকটি এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মালিক কোটিপতি বনে যান। এরা নামে-বেনামে সংগঠনের প্রভাব-অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ও শত শত বিঘা জমির মালিক বনে যান। অনুসন্ধান চালালে দেশের অন্যান্য জেলায়ও প্রায় একই চিত্র পাওয়া যাবে। সমাজসেবা অধিদফতর সক্রিয় হলে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে প্রতিটি জেলা থেকেই ঝিনাইদহের মতো কমবেশি ব্যবসাদার এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের হদিস মিলবে। জেলা পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী ও এনজিও কার্যক্রম প্রধানত সমাজের হিত করার জন্যই। অতীতে অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে গরিব-দুস্থদের জন্য দান-খয়রাতসহ বিভিন্ন ধরনের সেবাধর্মী কার্যক্রম গ্রহণ করতেন। এদের একাংশ সম্পূর্ণ সমাজসেবার উদ্দেশ্য নিয়ে আবার কেউ কেউ সমাজে-রাজনীতিতে প্রভাব-প্রতিপত্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগে শামিল হতেন। কালক্রমে এ সেবা এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। এ ধরনের এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্য বিদেশি বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার অনুদান ও সরকারি সমর্থন থাকে। আর এই সাহায্য ও সমর্থন পেয়ে অনেকে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ না করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে তা ব্যবহার করেন। এখানেই ঘটে যত বিপত্তি। সমাজসেবা অধিদফতর এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি ব্যবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জারি রাখলে ঝিনাইদহের মতো স্বার্থান্বেষী ও ভুঁইফোড় এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্ম দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা ঝিনাইদহে স্বার্থান্বেষী এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নিবন্ধন বাতিলের জন্য জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের সুপারিশকে স্বাগত জানাই। দেশের অন্য জেলাগুলোতেও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সমাজসেবার নামে ব্যবসা চালানোর ফিকির হ্রাস পাবে।
 

No comments

Powered by Blogger.