স্মরণ-লেফটেন্যান্ট মো. আনোয়ারুল আজিম by শামসুন্নাহার আজিম
লেফটেন্যান্ট মো. আনোয়ারুল আজিম একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধার নাম। এই সাহসী মানুষটির জন্ম ১৯৩১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, নওগাঁর রানীনগর গ্রামে। ম্যাট্রিক পাস করেছেন ১৯৪৯ সালে। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। তিনি ছিলেন একাধারে সুবক্তা, গায়ক ও নাট্যশিল্পী।
বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন।
তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ এমপ্লয়মেন্ট এঙ্চেঞ্জে। এরপর ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস ও গোপালপুর উত্তরবঙ্গ চিনিকলে কিছুদিন চাকরি করেন। ১৯৬৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল লেবার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার মিশিগানে চলে যান। দেশে ফিরে ইপিআইডিসির নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে সিনিয়র প্রশাসনিক অফিসার পদে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে প্রধান প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। চাকরিকালীন তিনি নিযুক্ত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্যাসরো বিভাগের অনারারি লেফটেন্যান্ট পদে। মুক্তিপাগল, প্রাণখোলা এই মানুষটিকে পাকিস্তানি নরপিশাচ বাহিনী একাত্তরের ৫ মে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তরবঙ্গ চিনিকলের একটি পুকুরের নাম 'শহীদ সাগর' এবং গোপালপুর রেলওয়ে স্টেশনের নাম 'আজিমনগর' রাখা হয়।
'৭১-এর ৫ মে তিনি যে স্মৃতি উপহার দিয়ে গেলেন, তা শুধু আমার জন্য নয়, দেশবাসীর জন্যও এক অনন্য গৌরবগাথা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উদ্যত বন্দুকের সামনে তিনি অকুতোভয়ে জামার বোতাম খুলে বুক পেতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন, 'আমাকে গুলি না করে আমার একটি লোককেও গুলি করা যাবে না।'
অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরবঙ্গ সুগার মিলের চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে মিলের শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান নেন। শুরু সেখান থেকেই।
২৫ মার্চের কালরাতে গণহত্যা শুরুর পর মিলের লোকজন আরো সচেতন হয়ে ওঠে। উত্তরবঙ্গ প্রতিরোধের শলাপরামর্শে আমার স্বামীও ছিলেন একজন প্রধান হোতা। এই শলাপরামর্শ হতো মিলের 'গেস্ট হাউসে'। সেখানে উপস্থিত থাকতেন রাজশাহীর ডিসি আসাদুজ্জামান এবং নাটোরের এসডিও কামালউদ্দিন আহমেদ।
এপ্রিলের মাঝামাঝি। রাজশাহী থেকে পাকিস্তানি সেনার একটি বড় দল ঢাকা ফেরার পথে মুলাডুলী নামক জায়গায় বাধা পায়।
সেখান থেকে সেনাদলটা মিলের দিকে আসতে শুরু করে। এদিকে আমাদের মিলেও খবর আসে যে মুলাডুলী থেকে একটি বড় সেনাদল মিলের দিকেই আসছে। দুটি পথই খোলা ছিল তখন। ওদের বাধা দেওয়া, নয়তো মিলে আপ্যায়ন করা। এককথায় সবাই প্রথম পথটাকেই বেছে নিল। মিলে বেশ কিছু রাইফেল ছিল। আমার স্বামী সেগুলো বিলি করে দিলেন মিলের দারোয়ান আর শ্রমিকদের মধ্যে, লাঠিসোটা নিয়েই তৈরি হলেন বাকিরা। প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন মিলে ঢুকতে পারেনি। কিন্তু পরে পাকিস্তানি বাহিনীর আরো সুসজ্জিত দল সেখানে প্রবেশ করে।
শহীদ আজিম সাহেবের এই আত্মত্যাগের জন্য ১৯৭৪ সালে গোপালপুর রেলস্টেশনের নামকরণ করা হয় আজিমনগর এবং ১৯৯৪ সালে তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার।
শামসুন্নাহার আজিম
তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ এমপ্লয়মেন্ট এঙ্চেঞ্জে। এরপর ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস ও গোপালপুর উত্তরবঙ্গ চিনিকলে কিছুদিন চাকরি করেন। ১৯৬৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল লেবার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার মিশিগানে চলে যান। দেশে ফিরে ইপিআইডিসির নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে সিনিয়র প্রশাসনিক অফিসার পদে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে প্রধান প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। চাকরিকালীন তিনি নিযুক্ত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্যাসরো বিভাগের অনারারি লেফটেন্যান্ট পদে। মুক্তিপাগল, প্রাণখোলা এই মানুষটিকে পাকিস্তানি নরপিশাচ বাহিনী একাত্তরের ৫ মে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তরবঙ্গ চিনিকলের একটি পুকুরের নাম 'শহীদ সাগর' এবং গোপালপুর রেলওয়ে স্টেশনের নাম 'আজিমনগর' রাখা হয়।
'৭১-এর ৫ মে তিনি যে স্মৃতি উপহার দিয়ে গেলেন, তা শুধু আমার জন্য নয়, দেশবাসীর জন্যও এক অনন্য গৌরবগাথা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উদ্যত বন্দুকের সামনে তিনি অকুতোভয়ে জামার বোতাম খুলে বুক পেতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন, 'আমাকে গুলি না করে আমার একটি লোককেও গুলি করা যাবে না।'
অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরবঙ্গ সুগার মিলের চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে মিলের শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান নেন। শুরু সেখান থেকেই।
২৫ মার্চের কালরাতে গণহত্যা শুরুর পর মিলের লোকজন আরো সচেতন হয়ে ওঠে। উত্তরবঙ্গ প্রতিরোধের শলাপরামর্শে আমার স্বামীও ছিলেন একজন প্রধান হোতা। এই শলাপরামর্শ হতো মিলের 'গেস্ট হাউসে'। সেখানে উপস্থিত থাকতেন রাজশাহীর ডিসি আসাদুজ্জামান এবং নাটোরের এসডিও কামালউদ্দিন আহমেদ।
এপ্রিলের মাঝামাঝি। রাজশাহী থেকে পাকিস্তানি সেনার একটি বড় দল ঢাকা ফেরার পথে মুলাডুলী নামক জায়গায় বাধা পায়।
সেখান থেকে সেনাদলটা মিলের দিকে আসতে শুরু করে। এদিকে আমাদের মিলেও খবর আসে যে মুলাডুলী থেকে একটি বড় সেনাদল মিলের দিকেই আসছে। দুটি পথই খোলা ছিল তখন। ওদের বাধা দেওয়া, নয়তো মিলে আপ্যায়ন করা। এককথায় সবাই প্রথম পথটাকেই বেছে নিল। মিলে বেশ কিছু রাইফেল ছিল। আমার স্বামী সেগুলো বিলি করে দিলেন মিলের দারোয়ান আর শ্রমিকদের মধ্যে, লাঠিসোটা নিয়েই তৈরি হলেন বাকিরা। প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন মিলে ঢুকতে পারেনি। কিন্তু পরে পাকিস্তানি বাহিনীর আরো সুসজ্জিত দল সেখানে প্রবেশ করে।
শহীদ আজিম সাহেবের এই আত্মত্যাগের জন্য ১৯৭৪ সালে গোপালপুর রেলস্টেশনের নামকরণ করা হয় আজিমনগর এবং ১৯৯৪ সালে তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার।
শামসুন্নাহার আজিম
No comments