ডিউক অব এডিনবরা’স অ্যাওয়ার্ড-দুরন্ত তারুণ্য by অঞ্জলি সরকার
বর্তমানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেখানে তুমুল প্রতিযোগিতা, সফল হওয়ার চেষ্টায় যখন কে কাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রতিমুহূর্তে চলতে থাকে নিঃশব্দ সংঘর্ষ, ডিউক অব এডিনবরাস অ্যাওয়ার্ড সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রিক একটি আয়োজন। মূলধারার শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের পছন্দমতো বিভিন্ন পাঠ-সম্পূরক
কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারে এবং সর্বোপরি নিজেদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তা মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে ডিউক অব এডিনবরাস অ্যাওয়ার্ডের সব কার্যক্রম।
২০ ফেব্রুয়ারি এমন একদল শিক্ষার্থীর মেলা বসেছিল ঢাকার বারিধারার ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে। ‘ডিউক অব এডিনবরাস অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ড অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার মি. রবার্ট ডব্লিউ গিবসন। বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন ডিউক অব এডিনবরাস অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা সালমান ইস্পাহানি।
এবারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পদক পেয়েছেন বুয়েটের আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ এন মাহমুদ, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল করিম, শামীমা সুলতানা, আজহারুল ইসলাম; আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) রায় সুদীপ্তা, ইশতিয়াক আহমেদ, রাকিবুল ইসলাম খান, মুক্তাদির আহমেদ চৌধুরী, রাকিব আজিজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসমিন আখতার, সালমা আক্তার, সুমিতা সিনহা, আবদুল লতিফ খান, মোহাম্মদ ইমরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, জান্নাতুল ফেরদৌস, মোহাম্মদ আল আমিন হক, খালিদ শাহরিয়ার, মোহাম্মদ হামিদুর রশিদ, লায়লা সানজিদা।
কথা হয় বুয়েটের আমিনুলের সঙ্গে। নেত্রকোনায় কেটেছে তাঁর স্কুলজীবন। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর প্রায় কিছুই চিনতেন না তিনি, শুদ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তেন। কিন্তু এই এখানে অংশ নিয়ে তিনি নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠেছেন। আবৃত্তির ক্লাস করেছেন, থিয়েটারে অভিনয় করেছেন। গোল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য ক্যাম্পিং করতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। সেখানে কাজ করেছেন সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে। আমিনুল বলেন, ‘এই অ্যাওয়ার্ড থেকে আমি অনেক ভালো একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে অনেকগুণ। আমি স্বপ্ন দেখি জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার।’
গোল্ড অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীমা সুলতানা বলেন, ‘এই প্রোগ্রামে আসার আগে আমি অনেক লাজুক ছিলাম। আমি ভাবতাম, অপরিচিত কারও সামনে কখনোই কথা বলতে পারব না। আমি জানতাম না, নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়। কিন্তু এখন আমি অনেক বদলে গেছি। আমি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছি।’"
এআইইউবির শিক্ষার্থী মুক্তাদির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি এখন নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিই, আগের চেয়ে অনেক পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারি। একজন গোল্ড অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হিসেবে আমি আমার আশপাশের মানুষদের অনুপ্রাণিত করব, যাতে তারাও এখানে অংশ নিয়ে সমাজ ও দেশের সেবায় এগিয়ে আসে।’
ডিউক অব এডিনবরা’স অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাঈদ করিম বলেন, ‘এই অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শুধু আত্মোন্নয়নেই ভূমিকা রাখে না, বরং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও নতুন সম্ভাবনার সূচনা করে। যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী, তাদের জন্য এই আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়।’
এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২১ জন এবং স্কুল পর্যায়ে ৩৯ জনসহ মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী এই পদক পেয়েছেন।
প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা—এমন মনোভাব নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন সবাই মিলে কোনো একটি ভালো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন তারা অনুধাবন করতে পারে শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের কী গভীর সম্পর্ক! পুঁথিগত শিক্ষাব্যবস্থায় বই মুখস্থ করে নম্বর পেলেই যে জীবনে সফল হওয়া যায় না, পাঠ্যবইয়ের পাতার বাইরেও যে সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ এক বিশাল পৃথিবী আছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে সেই অপরিসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেয় ডিউক অব এডিনবরা’স অ্যাওয়ার্ড।
আগে নিজে বদলাব, তারপর পৃথিবীকে বদলে দেব—এমন স্বপ্নই দেখছে তরুণ শিক্ষার্থীরা। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নেই, যখন শৈশবের রঙিন স্বপ্ন বাস্তবতার আঁচে আর ঝলসে যাবে না। শত বছরের ঘুণে ধরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়বে আজকের তরুণ প্রজন্ম, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
২০ ফেব্রুয়ারি এমন একদল শিক্ষার্থীর মেলা বসেছিল ঢাকার বারিধারার ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে। ‘ডিউক অব এডিনবরাস অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ড অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার মি. রবার্ট ডব্লিউ গিবসন। বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন ডিউক অব এডিনবরাস অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা সালমান ইস্পাহানি।
এবারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পদক পেয়েছেন বুয়েটের আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ এন মাহমুদ, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল করিম, শামীমা সুলতানা, আজহারুল ইসলাম; আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) রায় সুদীপ্তা, ইশতিয়াক আহমেদ, রাকিবুল ইসলাম খান, মুক্তাদির আহমেদ চৌধুরী, রাকিব আজিজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসমিন আখতার, সালমা আক্তার, সুমিতা সিনহা, আবদুল লতিফ খান, মোহাম্মদ ইমরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, জান্নাতুল ফেরদৌস, মোহাম্মদ আল আমিন হক, খালিদ শাহরিয়ার, মোহাম্মদ হামিদুর রশিদ, লায়লা সানজিদা।
কথা হয় বুয়েটের আমিনুলের সঙ্গে। নেত্রকোনায় কেটেছে তাঁর স্কুলজীবন। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর প্রায় কিছুই চিনতেন না তিনি, শুদ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তেন। কিন্তু এই এখানে অংশ নিয়ে তিনি নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠেছেন। আবৃত্তির ক্লাস করেছেন, থিয়েটারে অভিনয় করেছেন। গোল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য ক্যাম্পিং করতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। সেখানে কাজ করেছেন সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে। আমিনুল বলেন, ‘এই অ্যাওয়ার্ড থেকে আমি অনেক ভালো একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে অনেকগুণ। আমি স্বপ্ন দেখি জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার।’
গোল্ড অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীমা সুলতানা বলেন, ‘এই প্রোগ্রামে আসার আগে আমি অনেক লাজুক ছিলাম। আমি ভাবতাম, অপরিচিত কারও সামনে কখনোই কথা বলতে পারব না। আমি জানতাম না, নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়। কিন্তু এখন আমি অনেক বদলে গেছি। আমি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছি।’"
এআইইউবির শিক্ষার্থী মুক্তাদির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি এখন নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিই, আগের চেয়ে অনেক পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারি। একজন গোল্ড অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হিসেবে আমি আমার আশপাশের মানুষদের অনুপ্রাণিত করব, যাতে তারাও এখানে অংশ নিয়ে সমাজ ও দেশের সেবায় এগিয়ে আসে।’
ডিউক অব এডিনবরা’স অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাঈদ করিম বলেন, ‘এই অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শুধু আত্মোন্নয়নেই ভূমিকা রাখে না, বরং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও নতুন সম্ভাবনার সূচনা করে। যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী, তাদের জন্য এই আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়।’
এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২১ জন এবং স্কুল পর্যায়ে ৩৯ জনসহ মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী এই পদক পেয়েছেন।
প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা—এমন মনোভাব নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন সবাই মিলে কোনো একটি ভালো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন তারা অনুধাবন করতে পারে শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের কী গভীর সম্পর্ক! পুঁথিগত শিক্ষাব্যবস্থায় বই মুখস্থ করে নম্বর পেলেই যে জীবনে সফল হওয়া যায় না, পাঠ্যবইয়ের পাতার বাইরেও যে সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ এক বিশাল পৃথিবী আছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে সেই অপরিসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেয় ডিউক অব এডিনবরা’স অ্যাওয়ার্ড।
আগে নিজে বদলাব, তারপর পৃথিবীকে বদলে দেব—এমন স্বপ্নই দেখছে তরুণ শিক্ষার্থীরা। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নেই, যখন শৈশবের রঙিন স্বপ্ন বাস্তবতার আঁচে আর ঝলসে যাবে না। শত বছরের ঘুণে ধরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়বে আজকের তরুণ প্রজন্ম, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
No comments