কপোতাক্ষের বুকে বেড়িবাঁধ-এমন ধ্বংসাত্মক উদ্যোগ কেন?
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর কপোতাক্ষ তীরের জলাবদ্ধতা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। একটি বিষয়ে সবাই একমত যে, প্রাকৃতিক জলাধারগুলোর ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই পানি জলাধার ছাড়িয়ে মানুষের আবাসস্থলসহ সমতল ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে। জলাবদ্ধতাসহ নদীকেন্দ্রিক যাবতীয় সমস্যার জন্য
নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই সবার মনোযোগ থাকা উচিত। আগে কপোতাক্ষ নদের প্রস্থ ছিল ৪০০ ফুট, এখন কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে ৪০ ফুটে। আর এ ৪০ ফুট নদীও এমনভাবে গভীরতা হারিয়েছে যে এর ধারণক্ষমতা নেই বললেই চলে। নদী খননের কাজ চলছে বটে, কিন্তু নদী রক্ষার দায়িত্ব যাদের তারা ক্ষেত্রবিশেষে ভক্ষক বা ভক্ষকের সহযোগী হিসেবেই আবির্ভূত হচ্ছেন। এবার খবর মিলল, কপোতাক্ষের বুকে আড়াআড়ি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর বুকে বেড়িবাঁধ দেওয়ার খবরে সবাই বিস্মিত হবেন। কোথাও নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ আছে কি-না জানা যাচ্ছে না। বাঁধ সাধারণত দেওয়া হয় নদীর তীরে। কিন্তু কপোতাক্ষ নদীর বুকেই বাঁধ হচ্ছে। আর এ বাঁধের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবারের সমকালে। বিস্ময়কর সংবাদ হলেও কিন্তু যারা বাঁধ দিচ্ছেন তাদের একটা উদ্দেশ্য আছে। প্রথম উদ্দেশ্য কাবিখার বরাদ্দ ব্যয় আর সুদূরপ্রসারী যে উদ্দেশ্য তা হলো নদীতীরের জমি ও চর দখলকারীদের সহায়তা করা। নদী সচল হলে, নাব্যতা বাড়লে দখলদারদের অসুবিধা। তাই খনন কাজের শুরু থেকেই নানা পরিকল্পনা এঁটে এখন বাঁধ দেওয়ার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কাজ বেশ এগিয়েও গেছে। নদী আর নদী-তীরবর্তী মানুষের স্বার্থ দেখতে হলে এ কাজটি আর অগ্রসর হওয়া উচিত নয়। বরং অতিসত্বর পরিকল্পনাটি বাতিল করা উচিত। নদীর বুকের বাঁধ সরিয়ে স্থানটি উপযুক্ত খননের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত খননের মাটি নদী থেকে দূরে ফেলা হচ্ছে কি-না তা নিশ্চিত করা। আমরা চাই স্রোতস্বিনী ও ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদ আবার জেগে উঠুক। সে লক্ষ্যেই যাবতীয় উদ্যোগ চালিত হোক।
No comments