জন্মদিন-মামুনুর রশীদ : গণমানুষের নাট্যকার by সাইফুল ইসলাম

আজ নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক মামুনুর রশীদের ৬৫তম জন্মদিন। তিনি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এ দেশের নাট্যাঙ্গনে। মামুনুর রশীদের জীবনযাপন ও চলাফেরা লক্ষ করলে দেখা যায়, তিনি ভালোবাসেন এ দেশকে, বিশেষ করে এ দেশের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে খাওয়া মানুষকে। ছাত্রাবস্থায় এ কারণেই হয়তো ভেবেছেন রাজনীতি নিয়ে।


১৯৬৪ সালে তাঁকে দেখা গেছে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ মহানগর কমিটির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের একটি অনুন্নত দেশে রাজনীতির চেয়ে সংস্কৃতিকেই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন তিনি। এরপর নিজেকে নিয়োজিত করেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা নাট্যাঙ্গনে। আর তাই সব সময়ই তাঁকে থাকতে হয়েছে রাজনীতি-সচেতন। আমরা দেখতে পাই যে দেশ-জাতির প্রতিটি সংকটে পিছিয়ে থাকেননি তিনি, বরং সাহসের সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছেন জনতার মিছিল। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসনামলে বাংলা একাডেমীর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করতে বুক কাঁপেনি এতটুকু। দ্বিধা করেননি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জাহানারা ইমামের সহযাত্রী হতে। তবে যাঁরা রাজনৈতিক পরিচয়কে নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যবহার করে, তাদের ঘৃণা করেন মনেপ্রাণে। এমনকি কখনো কখনো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেও দ্বিধা করেন। কারণ তাঁরই ঘনিষ্ঠ অনেককেই দেখেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে নিজের নৌকা তরতর করে বেয়ে যেতে। সে কারণে দলীয় কাঠামোর বাইরে থেকে জনতার কাতারে দাঁড়ানোর রাজনীতিই হয়ে উঠেছে তাঁর পছন্দের রাজনীতি। এ কারণে তাঁকে প্রায় সব সরকারের আমলেই পড়তে হয়েছে কোপানলে। মামুনুর রশীদের দুর্বলতার একটি স্থান চলচ্চিত্র। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি যুক্ত হন এই অঙ্গনে। কাজ করেছেন কখনো কখনো সহকারী পরিচালক, কখনো পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার ও অভিনেতা হিসেবে। এখনো স্বপ্ন দেখেন, একটি সুস্থ ধারার বাংলা ছবি বানাবেন তিনি। ঘনিষ্ঠজনদের ছবির গল্পও শোনান। হয়তো একদিন সত্যি সত্যি খবর পাওয়া যাবে যে মামুনুর রশীদ তাঁর ছবির ইউনিট নিয়ে চলে গেছেন ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ে। মামুনুর রশীদের আস্থা এ দেশের সাধারণ মানুষের শক্তিতে। তিনি মনে করেন, দেশীয় সংস্কৃতির মূল রক্ষক এ দেশের জনগণই। যুগে যুগে তারাই রচনা করেছে এ দেশের যাত্রা, সঙযাত্রা, জারি, সারি, পালা, ধুয়াগান। তিনি একঝাঁক উদ্যমী নাট্যকর্মী নিয়ে ছুটে গেলেন প্রত্যন্ত গ্রামে। জ্যোৎস্না-হারিকেন-কুপির আলোয় বসল আসর। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে শুরু হলো মহড়া। পাত্র-পাত্রী, কলাকুশলী_সবাই সেই পা-ফাটা খেটে খাওয়া মানুষ। এসব নাটক প্রদর্শনীতে গ্রামে শুরু হয় নতুন চাঞ্চল্য। গ্রামে গ্রামে গঠিত হয় মুক্ত নাটক দল। মফস্বল থেকে উঠে আসে একঝাঁক নতুন নাট্যকর্মী। মামুনুর রশীদের বয়স বাড়ে, অভিজ্ঞতা বাড়ে_কিন্তু জন্মদিন আসে না। কারণ ২৯ ফেব্রুয়ারি তো আর প্রতিবছর মেলে না। চার বছর পর পর তা মেলে। ফলে বয়সও বাড়ে না, থেকে যান তরুণই। গণমানুষের এই নাট্যকার চিরতরুণ মামুনুর রশীদের জন্মদিনে রক্তিম শুভেচ্ছা, সংগ্রামী অভিনন্দন।
সাইফুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.