বেল্গকের ঢাকা সফর-জমানো সব নালিশ নিয়ে... by ফজলুল হালিম রানা
বেল্গকের এই সফরে আমাদের মোটাদাগের প্রাপ্তি বলতে এই যে, তার ভাষ্যমতে টিফা চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশই কাছাকাছি পেঁৗছেছে। এ ছাড়া জেনারেল ইলেকট্রিক এবং সামিটের মধ্যে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ২৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে
দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও বেল্গক তিনদিনের ঢাকা সফর শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এই সফরের যবনিকাপাত ঘটান। ঢাকায় এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির বাংলাদেশ সফরের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় যোগ দেন এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখা ও চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন্স পরিদর্শন করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মিয়ানমার সফর, বেল্গকের ঢাকা সফর এবং অতিসম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় দলের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মার্কিন মুলুক এ অঞ্চলের ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেল্গকের আলোচনায় যে বিষয়গুলো স্থান পায় তার মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড অন্যতম। যদিও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেল্গককে বলেন, সীমান্তের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়ার পরও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশি যুবক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এ তো গেল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। এদিকে একই ধরনের বক্তব্য প্রদান করেছেন রবার্ট বেল্গক। তিনি বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এবার সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি ভারতের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সীমান্তে হত্যা বন্ধের ব্যপারে আশ্বাস দেন এবং ঘটনার জন্য নিন্দা প্রকাশ করেন, তাহলে তারপরও কীভাবে সীমান্তে হত্যা চলছে? এ বিষয়ের সঙ্গে তাহলে কারা জড়িত? এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উদ্ধৃত করতে চাই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তৎকালীন হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। যদিও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই দুই দেশের প্রশাসনের কলকাঠি ছিল তখন ইংরেজ সামরিক অফিসারদের হাতে। ওই সময় বর্ডার ফোর্স বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পূর্ব পাঞ্জাবে মুসলমানদের ওপর এবং পশ্চিম পাঞ্জাবে হিন্দু শিখদের ওপর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং এ বিষয়ে বর্ডার ফোর্স বা সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরুকে পর্যন্ত তোয়াক্কা করেনি। ফলে দুটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে সূচনালগ্নে যে শত্রুতার শুরু হয় তা আজও চলছে অথচ ওই ঘটনায় পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কতটা জড়িত ছিলেন তা আজও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। কারণ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় যখন ১৯৪৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান টাইমসে (লাহোর) ওই দাঙ্গার ঘটনায় কলকাঠি নাড়া জ্যাকসন নামের এক ইংরেজ অফিসার ষড়যন্ত্রের গোপন তথ্য ফাঁস করে একটি চিঠি প্রকাশ করেন।
যাই হোক, বর্তমান ভারতের বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য, সীমান্তে গুলি চলবে কী কারণে তা জানতে হলে আমাদের হয়তো জ্যাকসনের চিঠির মতো আরও একটি চিঠির অপেক্ষায় থাকতে হবে। এবার আসা যাক গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে। শুধু রবার্ট বেল্গক নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মুখপাত্র হিসেবে (গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের পর) যারাই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন তারা সবাই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর মূল কারণ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম একজন বিশিষ্ট নাগরিক এবং তিনি নোবেল বিজয়ী সম্মানিত মানুষ। এই বন্ধুত্ব সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতে চাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশে আসেন তখন ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে ভাষণ দেন সেটি ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মর্নিং নিউজে প্রকাশিত হয়। কেনেডি ওই বক্তৃতায় স্পষ্ট করেছিলেন, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি নাগরিকের সঙ্গে নাগরিকের, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর, মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্যে নিহিত। আজ কেনেডির সফরের ৪০ বছর পূর্তি কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার যুগ পরে ইউনূস-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে কেনেডির পররাষ্ট্রনীতির সেই অমোঘ বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ এ দেশের অনেকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তার পদচ্যুতি হয়তো ভালোভাবে নেয়নি। পাশাপাশি এটাও ঠিক, একজন নোবেল বিজয়ী হওয়ার পরও তার রাজনৈতিক দল গঠনের আগ্রহ ছিল। সরকারের ভাষ্য মতে, সরকারের পক্ষ থেকে আইনি জটিলতার কারণে অর্থমন্ত্রী তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের পথ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তা উপেক্ষা করে সেই বিষয় নিয়ে এই নোবেল বিজয়ীর আদালত পর্যন্ত যাওয়া কতটা যৌক্তিক সেটা পাঠকের বিবেচনার বিষয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় দলকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রধান করার প্রস্তাব আশা করি এই ইস্যুতে ইতিবাচক মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও মনে রাখতে হবে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির টানাপড়েন কতটা সময়ের দাবি রাখে? আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে? তা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন জানতে চাইলে বেল্গক বলেন, ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সবার অংশগ্রহণ-উপযোগী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফর্মুলা ঠিক করতে প্রধান দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা অবশ্যই চাইব, দেশে সংঘাত-হানাহানিবিবর্জিত সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন এবং এ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যেন আবার ২০০৭ সালের মতো কূটনৈতিক পাড়ায় দোড়ঝাঁপ শুরু না হয় এবং এ ক্ষেত্রে আমরা যে একটি আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন জাতি তা যেন ভুলে না যাই। আর এ বিষয়ে শুধু যে সরকারি দল ভূমিকা পালন করবে তা নয়, বিরোধী দলেরও সংসদে আসতে হবে এবং তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে হবে। ২০০৭ সালের সেই পুরনো পথে আমরা যেন নতুন করে আবার না হাঁটি সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলেরই সচেতন হওয়া দরকার।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকেই ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এসেছেন আবার পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই আসার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছেন। বিদেশি মেহমান এলে তাতে রাষ্ট্রের খুশি হওয়ারই কথা; কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, আমরা জমানো সব নালিশ নিয়ে মহাজনের দরবারে হাজির হই আর তিনি আমাদের পথ বাতলে দেন। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের কি সেই ওয়ান-ইলেভেনের পূর্বেকার কথা মনে নেই?
বেল্গকের এই সফরে আমাদের মোটাদাগের প্রাপ্তি বলতে এই যে, তার ভাষ্যমতে টিফা চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশই কাছাকাছি পেঁৗছেছে। এ ছাড়া জেনারেল ইলেকট্রিক এবং সামিটের মধ্যে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ২৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোম্পানিগুলো, বিশেষ করে শেভরন ও কনোকো-ফিলিপস জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জনে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেল্গকের আলোচনায় যে বিষয়গুলো স্থান পায় তার মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড অন্যতম। যদিও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেল্গককে বলেন, সীমান্তের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়ার পরও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশি যুবক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এ তো গেল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। এদিকে একই ধরনের বক্তব্য প্রদান করেছেন রবার্ট বেল্গক। তিনি বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এবার সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি ভারতের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সীমান্তে হত্যা বন্ধের ব্যপারে আশ্বাস দেন এবং ঘটনার জন্য নিন্দা প্রকাশ করেন, তাহলে তারপরও কীভাবে সীমান্তে হত্যা চলছে? এ বিষয়ের সঙ্গে তাহলে কারা জড়িত? এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উদ্ধৃত করতে চাই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তৎকালীন হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। যদিও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই দুই দেশের প্রশাসনের কলকাঠি ছিল তখন ইংরেজ সামরিক অফিসারদের হাতে। ওই সময় বর্ডার ফোর্স বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পূর্ব পাঞ্জাবে মুসলমানদের ওপর এবং পশ্চিম পাঞ্জাবে হিন্দু শিখদের ওপর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং এ বিষয়ে বর্ডার ফোর্স বা সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরুকে পর্যন্ত তোয়াক্কা করেনি। ফলে দুটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে সূচনালগ্নে যে শত্রুতার শুরু হয় তা আজও চলছে অথচ ওই ঘটনায় পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কতটা জড়িত ছিলেন তা আজও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। কারণ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় যখন ১৯৪৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান টাইমসে (লাহোর) ওই দাঙ্গার ঘটনায় কলকাঠি নাড়া জ্যাকসন নামের এক ইংরেজ অফিসার ষড়যন্ত্রের গোপন তথ্য ফাঁস করে একটি চিঠি প্রকাশ করেন।
যাই হোক, বর্তমান ভারতের বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য, সীমান্তে গুলি চলবে কী কারণে তা জানতে হলে আমাদের হয়তো জ্যাকসনের চিঠির মতো আরও একটি চিঠির অপেক্ষায় থাকতে হবে। এবার আসা যাক গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে। শুধু রবার্ট বেল্গক নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মুখপাত্র হিসেবে (গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের পর) যারাই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন তারা সবাই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর মূল কারণ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম একজন বিশিষ্ট নাগরিক এবং তিনি নোবেল বিজয়ী সম্মানিত মানুষ। এই বন্ধুত্ব সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতে চাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশে আসেন তখন ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে ভাষণ দেন সেটি ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মর্নিং নিউজে প্রকাশিত হয়। কেনেডি ওই বক্তৃতায় স্পষ্ট করেছিলেন, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি নাগরিকের সঙ্গে নাগরিকের, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর, মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্যে নিহিত। আজ কেনেডির সফরের ৪০ বছর পূর্তি কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার যুগ পরে ইউনূস-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে কেনেডির পররাষ্ট্রনীতির সেই অমোঘ বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ এ দেশের অনেকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তার পদচ্যুতি হয়তো ভালোভাবে নেয়নি। পাশাপাশি এটাও ঠিক, একজন নোবেল বিজয়ী হওয়ার পরও তার রাজনৈতিক দল গঠনের আগ্রহ ছিল। সরকারের ভাষ্য মতে, সরকারের পক্ষ থেকে আইনি জটিলতার কারণে অর্থমন্ত্রী তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের পথ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তা উপেক্ষা করে সেই বিষয় নিয়ে এই নোবেল বিজয়ীর আদালত পর্যন্ত যাওয়া কতটা যৌক্তিক সেটা পাঠকের বিবেচনার বিষয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় দলকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রধান করার প্রস্তাব আশা করি এই ইস্যুতে ইতিবাচক মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও মনে রাখতে হবে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির টানাপড়েন কতটা সময়ের দাবি রাখে? আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে? তা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন জানতে চাইলে বেল্গক বলেন, ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সবার অংশগ্রহণ-উপযোগী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফর্মুলা ঠিক করতে প্রধান দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা অবশ্যই চাইব, দেশে সংঘাত-হানাহানিবিবর্জিত সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন এবং এ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যেন আবার ২০০৭ সালের মতো কূটনৈতিক পাড়ায় দোড়ঝাঁপ শুরু না হয় এবং এ ক্ষেত্রে আমরা যে একটি আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন জাতি তা যেন ভুলে না যাই। আর এ বিষয়ে শুধু যে সরকারি দল ভূমিকা পালন করবে তা নয়, বিরোধী দলেরও সংসদে আসতে হবে এবং তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে হবে। ২০০৭ সালের সেই পুরনো পথে আমরা যেন নতুন করে আবার না হাঁটি সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলেরই সচেতন হওয়া দরকার।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকেই ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এসেছেন আবার পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই আসার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছেন। বিদেশি মেহমান এলে তাতে রাষ্ট্রের খুশি হওয়ারই কথা; কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, আমরা জমানো সব নালিশ নিয়ে মহাজনের দরবারে হাজির হই আর তিনি আমাদের পথ বাতলে দেন। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের কি সেই ওয়ান-ইলেভেনের পূর্বেকার কথা মনে নেই?
বেল্গকের এই সফরে আমাদের মোটাদাগের প্রাপ্তি বলতে এই যে, তার ভাষ্যমতে টিফা চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশই কাছাকাছি পেঁৗছেছে। এ ছাড়া জেনারেল ইলেকট্রিক এবং সামিটের মধ্যে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ২৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোম্পানিগুলো, বিশেষ করে শেভরন ও কনোকো-ফিলিপস জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জনে।
ফজলুল হালিম রানা : শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments