সমাজ-প্রতিবন্ধীর সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হোক by সাবরিনা সুলতানা
এদেশের প্রতিবন্ধী তথা ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা, সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান ও সর্বক্ষেত্রে প্রবেশে সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান)।
কিছু মানুষ যারা নিজেরাই প্রতিবন্ধিতার শিকার কিংবা যারা খুব কাছে থেকে এমন মানুষদের কষ্টগুলো অনুভব করেছেন তাদের নিয়েই বি-স্ক্যান। বাংলাদেশের আর দশজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের যা নাগরিক অধিকার অথচ এই দেশেরই নাগরিক প্রতিবন্ধী বা ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষেরা তা থেকে বঞ্চিত প্রতিনিয়ত।
আমি নিজে দুরারোগ্য ব্যাধি গঁংপঁষধৎ উুংঃৎড়ঢ়যুতে আক্রান্ত। বেশি দূর পড়ালেখার সুযোগ পাইনি স্কুলশিক্ষকের অনাগ্রহ এবং পারিবারিক অসচেতনতার কারণে। আমার জীবনের ২৭ বছর কেটেছে চার দেয়ালের ভেতরে। হয়তো এই অস্বাভাবিক জীবনকেই নিয়তি মেনে নিতাম, যদি আমারই ছোট বোন একই রোগে আক্রান্ত না হতো! প্রচণ্ড হতাশা থেকে ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখি পত্রিকার মাধ্যমে। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পেঁৗছানো আমার সাধ্যে ছিল না। তাই ঠিক করি, সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুকেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করে যাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ চিঠির মাধ্যমে। ফেসবুকেই পরিচয় হয় পোলিওতে আক্রান্ত আমারই মতো আরেক ভুক্তভোগী ঢাকায় বসবাসরত সালমা মাহবুব আপার সঙ্গে। এ চিঠিকে কেন্দ্র করেই সে বছর ১৭ জুলাই ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলার মাধ্যমে বি-স্ক্যানের কার্যক্রম শুরু করি আমরা দু'জনে মিলে। এটি এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে সমমনারা সহজেই একত্র হতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের ২০১১ সালের এক জরিপমতে, বিশ্বে মোট প্রতিবন্ধী আছে ১০০ কোটি, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ। সেই হিসাবে প্রতিটি দেশে তার জনগোষ্ঠীর ১৫ ভাগ ধরে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। আজ পর্যন্ত আমাদের করা নিজস্ব পরিসংখ্যান নেই। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সমাজ ব্যবস্থা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছে তারা। কেউ তেমন করে ভাবে না_ এসব মানুষ ঘরের কোণে একাকী নিভৃতে সামাজিক মেলামেশা, শিক্ষা, বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তাদের নাগরিক অধিকার শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী নির্বিশেষে 'সবার জন্য শিক্ষা'_ এ স্লোগান সর্বত্র। অথচ ৩২ লাখ প্রতিবন্ধী শিশুর মধ্যে মাত্র তিন লাখ শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা বলা হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই তেমন কোনো তথ্য বা সচেতনতা। নেই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা। এখানে উল্লেখ্য, দৃষ্টি, বাক্, শ্রবণ এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্পসংখ্যক বিশেষ স্কুল থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা না পারে বিশেষ স্কুলে যেতে, না পায় স্বাভাবিক স্কুলে যাওয়ার যথাযথ পরিবেশ। কারণ স্বাভাবিক স্কুলে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য যে ঢালু পথ বা র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকার কথা, তা কিছু সরকারি স্কুল এবং ঢাকায় দুই-একটি বেসরকারি স্কুল ছাড়া কোথাও নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না র্যাম্প কী! নেই তাদের জন্য বিশেষ টয়লেট ব্যবস্থা।
গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের আইনে (জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮) সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা বিষয়টি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। (পৃষ্ঠা ৩০০৫-এ সর্বজনীন গম্যতার নকশা এবং ৩০৬১তে প্রতিবন্ধীদের জন্য সর্বজনীন গম্যতা সম্পর্কিত বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে)। যাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে পার্কিং এরিয়া থেকে লিফট অথবা বিল্ডিং পর্যন্ত যেতে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কোনো রকম বাধা থাকতে পারবে না। অর্থাৎ সিঁড়ির পাশাপাশি র্যাম্প (ঢালু পথ) থাকতে হবে, যা একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীর সহায়ক চলার পথ। তাছাড়া এটি প্রসূতি, বৃদ্ধ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং ক্রাচ ব্যবহারকারী ব্যক্তিও ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটা ফ্লোরে অন্তত একটি হুইল চেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট থাকতে হবে। যেটির ভেতরে অন্তত একটি হুইল চেয়ার ঘোরানোর জায়গা থাকবে। দরজার মাপ নূ্যনতম ৩০ ইঞ্চি চওড়া হতে হবে। হাই কমোডের দু'পাশেই হ্যান্ড রেলিং (গ্র্যাব বার) থাকতে হবে, যার সাহায্যে একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী নিরাপদে নিজেকে স্থানান্তর করতে পারেন। এছাড়াও প্রতিটি কক্ষ, করিডোর, চলাচলের পথ একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীর জন্য সম্পূর্ণ বাধামুক্ত হতে হবে। এ তো গেল একটি বিল্ডিংয়ে র্যাম্প ও হুইল চেয়ার প্রবেশযোগ্য টয়লেটের কথা।
বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, কোনো সাধারণের ব্যবহার উপযোগী ভবন যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিপণি বিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সর্বজনীন গম্যতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। স্টেডিয়ামসহ সমাবেশস্থল অথবা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে নির্দিষ্টসংখ্যক হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের উপযোগী আসন থাকতে হবে, যা প্রবেশপথ থেকে সহজেই দৃশ্যমান ও চলাচলে সহায়ক হয়। সর্বজনীন প্রবেশগম্যতার নকশা না মানা হলে তর জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান। Building Construction Act-1952-Gi section 12-Gi sub-sectiobn (1)-এর ধারায় সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল অথবা নূ্যনতম ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন দায়ী ব্যক্তি। ২০০৮-এর ২৯ মে সরকার প্রতিটি ডেভেলপার কোম্পানিকে এ সংক্রান্ত গেজেট পাঠায়। এত কিছুর পরও আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, বিষয়টি কেউ গুরুত্বের সঙ্গে দেখার প্রয়োজন মনে করছেন না। অর্থাৎ সর্বত্র প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আইনটি মানছেন না কেউ।
বি-স্ক্যানের লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ জনগণকে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষের নাগরিক মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। বি-স্ক্যানের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে_ ভিন্নভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের শতকরা ৫০ ভাগ স্কুলে একীভূত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিল্ডিংয়ে প্রবেশগম্যতা তৈরিতে জনগণকে সচেতন করা। দেশে শতকরা ৫ ভাগ যানবাহনকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করে গড়ে তোলা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বিকল্প দক্ষ ব্যক্তিদের চাকরি নিশ্চিত করা।
আমরা বিশ্বাস করি, একমাত্র পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলেই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটা নিশ্চিত হবে। কিন্তু সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা ও সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা ছাড়া শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয় কোনোভাবেই। অর্থাৎ একের সঙ্গে অন্যটি জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। এ কারণেই জনসচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা অনলাইন থেকে বেরিয়ে এসে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি।
সাবরিনা সুলতানা : প্রেসিডেন্ট, বি-স্ক্যান
আমি নিজে দুরারোগ্য ব্যাধি গঁংপঁষধৎ উুংঃৎড়ঢ়যুতে আক্রান্ত। বেশি দূর পড়ালেখার সুযোগ পাইনি স্কুলশিক্ষকের অনাগ্রহ এবং পারিবারিক অসচেতনতার কারণে। আমার জীবনের ২৭ বছর কেটেছে চার দেয়ালের ভেতরে। হয়তো এই অস্বাভাবিক জীবনকেই নিয়তি মেনে নিতাম, যদি আমারই ছোট বোন একই রোগে আক্রান্ত না হতো! প্রচণ্ড হতাশা থেকে ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখি পত্রিকার মাধ্যমে। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পেঁৗছানো আমার সাধ্যে ছিল না। তাই ঠিক করি, সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুকেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করে যাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ চিঠির মাধ্যমে। ফেসবুকেই পরিচয় হয় পোলিওতে আক্রান্ত আমারই মতো আরেক ভুক্তভোগী ঢাকায় বসবাসরত সালমা মাহবুব আপার সঙ্গে। এ চিঠিকে কেন্দ্র করেই সে বছর ১৭ জুলাই ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলার মাধ্যমে বি-স্ক্যানের কার্যক্রম শুরু করি আমরা দু'জনে মিলে। এটি এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে সমমনারা সহজেই একত্র হতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের ২০১১ সালের এক জরিপমতে, বিশ্বে মোট প্রতিবন্ধী আছে ১০০ কোটি, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ। সেই হিসাবে প্রতিটি দেশে তার জনগোষ্ঠীর ১৫ ভাগ ধরে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। আজ পর্যন্ত আমাদের করা নিজস্ব পরিসংখ্যান নেই। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সমাজ ব্যবস্থা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছে তারা। কেউ তেমন করে ভাবে না_ এসব মানুষ ঘরের কোণে একাকী নিভৃতে সামাজিক মেলামেশা, শিক্ষা, বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তাদের নাগরিক অধিকার শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী নির্বিশেষে 'সবার জন্য শিক্ষা'_ এ স্লোগান সর্বত্র। অথচ ৩২ লাখ প্রতিবন্ধী শিশুর মধ্যে মাত্র তিন লাখ শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা বলা হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই তেমন কোনো তথ্য বা সচেতনতা। নেই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা। এখানে উল্লেখ্য, দৃষ্টি, বাক্, শ্রবণ এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্পসংখ্যক বিশেষ স্কুল থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা না পারে বিশেষ স্কুলে যেতে, না পায় স্বাভাবিক স্কুলে যাওয়ার যথাযথ পরিবেশ। কারণ স্বাভাবিক স্কুলে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য যে ঢালু পথ বা র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকার কথা, তা কিছু সরকারি স্কুল এবং ঢাকায় দুই-একটি বেসরকারি স্কুল ছাড়া কোথাও নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না র্যাম্প কী! নেই তাদের জন্য বিশেষ টয়লেট ব্যবস্থা।
গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের আইনে (জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮) সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা বিষয়টি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। (পৃষ্ঠা ৩০০৫-এ সর্বজনীন গম্যতার নকশা এবং ৩০৬১তে প্রতিবন্ধীদের জন্য সর্বজনীন গম্যতা সম্পর্কিত বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে)। যাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে পার্কিং এরিয়া থেকে লিফট অথবা বিল্ডিং পর্যন্ত যেতে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কোনো রকম বাধা থাকতে পারবে না। অর্থাৎ সিঁড়ির পাশাপাশি র্যাম্প (ঢালু পথ) থাকতে হবে, যা একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীর সহায়ক চলার পথ। তাছাড়া এটি প্রসূতি, বৃদ্ধ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং ক্রাচ ব্যবহারকারী ব্যক্তিও ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটা ফ্লোরে অন্তত একটি হুইল চেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট থাকতে হবে। যেটির ভেতরে অন্তত একটি হুইল চেয়ার ঘোরানোর জায়গা থাকবে। দরজার মাপ নূ্যনতম ৩০ ইঞ্চি চওড়া হতে হবে। হাই কমোডের দু'পাশেই হ্যান্ড রেলিং (গ্র্যাব বার) থাকতে হবে, যার সাহায্যে একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী নিরাপদে নিজেকে স্থানান্তর করতে পারেন। এছাড়াও প্রতিটি কক্ষ, করিডোর, চলাচলের পথ একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীর জন্য সম্পূর্ণ বাধামুক্ত হতে হবে। এ তো গেল একটি বিল্ডিংয়ে র্যাম্প ও হুইল চেয়ার প্রবেশযোগ্য টয়লেটের কথা।
বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, কোনো সাধারণের ব্যবহার উপযোগী ভবন যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিপণি বিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সর্বজনীন গম্যতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। স্টেডিয়ামসহ সমাবেশস্থল অথবা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে নির্দিষ্টসংখ্যক হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের উপযোগী আসন থাকতে হবে, যা প্রবেশপথ থেকে সহজেই দৃশ্যমান ও চলাচলে সহায়ক হয়। সর্বজনীন প্রবেশগম্যতার নকশা না মানা হলে তর জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান। Building Construction Act-1952-Gi section 12-Gi sub-sectiobn (1)-এর ধারায় সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল অথবা নূ্যনতম ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন দায়ী ব্যক্তি। ২০০৮-এর ২৯ মে সরকার প্রতিটি ডেভেলপার কোম্পানিকে এ সংক্রান্ত গেজেট পাঠায়। এত কিছুর পরও আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, বিষয়টি কেউ গুরুত্বের সঙ্গে দেখার প্রয়োজন মনে করছেন না। অর্থাৎ সর্বত্র প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আইনটি মানছেন না কেউ।
বি-স্ক্যানের লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ জনগণকে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষের নাগরিক মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। বি-স্ক্যানের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে_ ভিন্নভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের শতকরা ৫০ ভাগ স্কুলে একীভূত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিল্ডিংয়ে প্রবেশগম্যতা তৈরিতে জনগণকে সচেতন করা। দেশে শতকরা ৫ ভাগ যানবাহনকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করে গড়ে তোলা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বিকল্প দক্ষ ব্যক্তিদের চাকরি নিশ্চিত করা।
আমরা বিশ্বাস করি, একমাত্র পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলেই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটা নিশ্চিত হবে। কিন্তু সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা ও সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা ছাড়া শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয় কোনোভাবেই। অর্থাৎ একের সঙ্গে অন্যটি জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। এ কারণেই জনসচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা অনলাইন থেকে বেরিয়ে এসে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি।
সাবরিনা সুলতানা : প্রেসিডেন্ট, বি-স্ক্যান
No comments