অনলাইন শিক্ষাঃ ক্যাম্পাস জীবন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে?
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বহুতল ভবনের ছাদের পার্কিংয়ে বছর দুই আগে আমি একটি টয়োটা প্রায়াস গাড়ির পেছনের সিটে বসেছিলাম। গাড়িটা যে ক্ষিপ্রতায় সরাসরি ছুটে চললো তাতে বাধ্য হয়ে আমাকে দরজার হাতল ধরে বসতে হলো।
তীব্র গতিতে গাড়িটি যখন ছাদের দ্বারপ্রান্তে এসে থামলো তখন অবাক হয়ে দেখলাম, চালকের আসনে কেউ নেই।
না, এটি স্বপ্নে ভেসে ওঠা কোনো রূপকথার গল্প না। কিংবা কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক সিনেমারও দৃশ্য নয়। এটি হলো গুগলের সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত চালকবিহীন গাড়ির আদি নমুনা।
পরে গাড়িটির উদ্ভাবক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জার্মান বংশোদ্ভূত অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান থ্রুন এর সম্পর্কে জেনেছিলাম। সে সময়েরই একটি সাক্ষাতকারে থ্রুন গাড়িটির নির্মাণ কৌশল ব্যাখ্যা করেছিলেন। এছাড়া পুরো ক্যালিফোর্নিয়াতে কি করে গাড়িটি প্রায় দুই লাখ মাইল পথ অতিক্রম করেছে, সে সবেরও রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো তুলে ধরেন তিনি। থ্রুন বিশ্বাস করেন, এ উদ্ভাবনীর ফলে পৃথিবীতে একসময় সড়ক দুর্ঘটনা বলে আর কোনো শব্দ থাকবে না।
উপরোক্ত ঘটনার কয়েক মাস পরেই সেবাস্টিয়ান থ্রুন এর থলের বিড়াল বের হয়ে আসে। এতদিন সবাই তাকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে জানলেও আড়ালে তিনি ছিলেন গুগলের অতি গোপনীয় পরীক্ষামূলক গবেষণাগার ‘গুগল এক্স’ এর প্রধান। সেখানে চালকবিহীন গাড়ির সংস্কার ছাড়াও গুগল চশমা উদ্ভাবন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর গবেষণা চালাতেন থ্রুন।
এদিকে এ জানাজানি হওয়ার পরই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন সেবাস্টিয়ান থ্রুন। অধ্যাপনা ছেড়ে এক সপ্তাহ তিনি গুগলে কাজ করেন। এরপর নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে সামনে আসেন থ্রুন। তবে তিনি এটাকে প্রকল্প বলতে নারাজ। এটাই এখন আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। এই কাজেই ভবিষ্যতের শুরু হবে।
চালকবিহীন গাড়ি কিংবা নিত্য নতুন সাই-ফাই গ্যাজেট আবিষ্কার করে যে বিশ্বাসে ভর করে এগিয়েছেন থ্রুন, সেসবের চেয়ে এখন দ্বিগুণ উৎসাহ পাচ্ছেন একটি সাধারণ বিষয়ে, সেটি হলো শিক্ষা। বর্তমানে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। সংগীত শিল্প, প্রকাশনা শিল্প, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি ক্ষেত্রগুলোতে অত্যধিক ব্যবহারের ফলে প্রযুক্তিগতভাবে সাময়িক ব্যাহত হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলো অনলাইন। তাই থ্রুনের মতে, এখন সময় ‘শিক্ষা’র।
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার পরিবর্তন দরকার ছিলে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউডাসিটি নামে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা করেছেন থ্রুন। এর মাধ্যমে তিনি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে চান সবার কাছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা যেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষা পায় না কিংবা শিক্ষার ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের উদাসীনতা যেখানে ব্যাপক সেখানে আমাদের সামনে প্রশ্ন রাখেন থ্রুন। শিক্ষার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করবেন নাকি বিনা অর্থখরচে অনলাইন থেকে শিক্ষা নেবেন?
প্রচলিত উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ব্যাপক এবং অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্রিটেনের মতো একটি উন্নত দেশে শিক্ষার চেয়ে মদ্যপানকে অধিকতর সামাজিক আচরণ বলে গণ্য করা হয় যেখানে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবস্থিত। সবার কাছে যৌনতা এখন আগ্রহের কন্দ্রেবন্দিু, যা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, ব্রিটিশরা প্রথমে নিজেদের কাজে নিজেরাই বিঘœ ঘটায় এবং এর দীর্ঘকাল পরে কাজে বিঘœ ঘটার কারণ খুঁজতে শুরু করে তারা। তাই এখন দেখার বিষয়, নতুন এ শিক্ষা ব্যবস্থা কী রকম প্রভাব ফেলবে যুক্তরাজ্যে কিংবা কীভাবে নেবে আত্মপ্রমোদে ব্যস্ত থাকা ব্রিটিশরা।
অনলাইন শিক্ষাঃ ক্যাম্পাস জীবনের সমাপ্তি? (২য় পর্ব)
এরপর একটি কনফারেন্সে থ্রুন আনুষ্ঠানিকভাবে তার চালকবিহীন গাড়ি চালানোর কৌশল তুলে ধরেছিলেন। নিজের এ স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি আলোচনা শুরু করেন সালমান খানের সাথে।
না, ইনি বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান নন। ইনি হলেন ৩৬ বছর বয়সী এবং স্বল্পভাষী সালমান খান, যিনি কি না হেজ ফান্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থায় বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটসও যাকে প্রিয় শিক্ষক বলে সম্বোধন করে থাকেন। এছাড়া সালমান বিখ্যাত খান একাডেমিরও কর্ণধার।
প্রায় ১ কোটির মতো শিক্ষার্থী খান একাডেমি থেকে শিক্ষা সেবা নিয়ে থাকে। এছাড়াও এ একাডেমির সংগ্রহে রয়েছে ৩ হাজার ৪০০টি ভিডিও, যার বেশিরভাগই তৈরি করেছেন খান নিজে।
এ প্রসঙ্গে থ্রুন বলেন, সত্যি বলতে কি, খান একাডেমির ব্যাপারে এসব তথ্য জানার পর কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। একটা ভয়ংকর ব্যাপার হলো, যেখানে সালমান খান প্রায় মিলিয়ন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন, সেখানে আমি ২০০ জন শিক্ষার্থীর সামনে দাঁড়াই।
এর পরপরই থ্রুন সিদ্ধান্ত নেন, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে বিষয় পড়াতেন সেটাকে সমগ্র বিশ্বের কাছে অনলাইনের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। প্রতিষ্ঠা করলেন ইউডাসিটি, যাতে করে যে কেউ তার সিএস২২১ বিষয়ের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করতে পারে। এর ফলে স্ট্যানফোর্ডের শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে, ঠিকই একইভাবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও সিএস২২১ বিষয়ের উপর নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারবে।
উল্লেখ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত সিএস২২১ বিষয়টি খুবই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে আজকাল। সেই সাথে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম। তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, ক্যাম্পাসে যেখানে ২০০ জন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ পায়, সেখানে থ্রুনের অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করে।
সংখ্যাগত এই হিসাব-নিকাশে দারুণভাবে চমকে উঠেন থ্রুন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পড়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে, এমনকি উত্তর কোরিয়া থেকেও। এ পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী ইউডাসিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। এছাড়া পরীক্ষায় ভালো করে প্রথম ৪০০ জনের মধ্যে যারা অবস্থান করছেন, পুরোপুরি অনলাইনেরই মাধ্যমে তারা তাদের পাঠ কার্যক্রম শেষ করেছেন। এমনকি তারা সার্টিফিকেটও পেয়েছেন ই-মেইলের মাধ্যমে।
এ সফলতাকে আনন্দময় অনুভূতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে থ্রুন বলেন, যদিও দুটোই শিক্ষা সম্পর্কিত ব্যাপার, তবে এখন নিশ্চয়ই আমি সেই ২০০ জন ছাত্রের কাছে ফিরে যেয়ে তাদের পড়িয়ে সেই তৃপ্তি পাবো না, যেটা আমি পেয়েছি ইউডাসিটিতে।
অনলাইন শিক্ষাঃ ক্যাম্পাস জীবন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? (শেষ পর্ব)
থ্রুনের এ সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে আমেরিকার অন্যান্য স্থানেও অনেকে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। খোদ থ্রুনেরই প্রাক্তন দুই সহকর্মী অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যাফনে কোলার মিলে ‘কোরসেরা’ নামে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন।
যে সময়ে ‘ইউডাসিটি’ তাদের নিজস্ব সিলেবাস পুনরায় মূল্যায়নে ব্যস্ত, সে সময় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি সম্পাদনের জন্য আলোচনায় জড়াতে থাকে কোরসেরা। জুলাইয়ের দিকে কোলারের বরাতে জানা যায়, স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চারটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছে তাদের কোরসেরা ওয়েবসাইট। এর ঠিক চার মাস পরেই এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টিতে এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ লাখে।
প্রসঙ্গত, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় জড়িত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম হলো এডিনবার্গ। অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যাফনে কোলারের ‘কোরসেরা’র সাথে চুক্তি সম্পাদন করে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে এডিনবার্গের প্রস্তাবিত ৬ টি বিষয়ে পড়ার জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী কোরসেরায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে ফেলেছে।
এ সম্পর্কে এডিনবার্গের উপাধ্যক্ষ জেফ হেওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা নিরীক্ষামূলকভাবে এটা করছি। আসলে এ ব্যবস্থার সাথে আমরা পরিচিত হতে চাই। যদি এর ফলাফল সন্তুষ্টজনক হয় তবেই আমরা সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেবো। আর কোরসেরা কর্তৃপক্ষ যদি তাদের প্রস্তাবিত কাজের অন্যথা করে, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থানেই ফেরত আসবো।’
এদিকে এডএক্স নামে আরেকটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেন ম্যাসাচুসেটস টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক অনন্ত আগারওয়াল। খান একাডেমির সালমানকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মানেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল অনন্ত আগারওয়ালেরই এক সময়ের ছাত্র ছিলেন সালমান। উল্লেখ্য, এডএক্স এর মাধ্যমে এমআইটি, হার্ভার্ড, বার্কলি এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষাসংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকেন আগারওয়াল।
অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটাও এক ধরনের বিপ্লব। গত ২০০ বছরের ইতিহাসে শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য এটা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। শিক্ষাকে একটি ইতিবাচক মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করছি আগামী এক দশকের মধ্যে শিক্ষার এ মাধ্যম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কোনো রকম বিপণন ব্যবস্থার সাহায্য না নিয়েই আমরা গত চার মাসে প্রায় ৪ লক্ষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করতে পেরেছি। তো বুঝতেই পারছেন, অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কাল্পনিক কোনো বিষয় না।’
অনেকের মতে শিক্ষা এখনো শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি, তবে নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা হলো একটি বাজার উল্লেখ করে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ম্যাট গ্রিস্ট বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে এটা খুবই ভয়াবহ অবস্থা। অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু হয়তো আমাকেও এটা করতে হতে পারে।’
প্রগতিশীল শিক্ষাবিদরা মনে করছেন যে, এসব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স মাত্র কয়েক মাস হলো। এখনই তাদের খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তাদের ভিত্তি আরো মজবুত করতে হবে যদি তারা সামনে এগোতে চায়। তার কারণ, একসময় আমরা ভাবতাম যে, সংবাদপত্র বোধহয় চলতেই থাকবে। কিন্তু হাল আমলের অবস্থা বিবেচনা করে দেখুন। এখন অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা কেমন হারে বাড়ছে। অবাধ্য দেনার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব মুদ্রণ প্রকাশনাগুলো। তবে কি কাগজের সব রকম প্রকাশনা তার আবেদন হারাচ্ছে?
সম্প্রতি বেশকিছু জরিপে দেখা গেছে, ক্যাম্পাস সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের সন্তানকে পড়ানোর জন্য এমনিতেই আর্থিকভাবে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের। প্রতি বছরের মোট আয়ের সিংহভাগই চলে যায় সন্তানের জন্য শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যয়ে। এর ওপর আবার সম্পূর্ণ নতুন ধারার অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা। তাই বলা চলে যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা।
উন্নত দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখন অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। আবার অনেকে এটাকে ক্যাম্পাস শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন। এমনকি ব্রিটেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের হারও অনেক কমে গেছে। সেখানে সুটন ট্রাস্ট নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আবেদনের হার প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।
বর্তমান ক্যাম্পাস শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব জানতে হান্নাহ নামে এডিনবার্গের একজন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আগামীকাল তোমার কোনো ক্লাস আছে কি না? উত্তরে সে বললো, সকাল ৯ টার দিকে একটা মাত্র ক্লাস আছে, তাও দর্শন। কিন্তু আমি সেখানে যাচ্ছি না।
হান্নাহর এরকম উদাসীনতার কারণ কি?
কারণ যাই হোক না কেন, খোদ শিক্ষার্থীরাই যে এখন ভোক্তায় পরিণত হচ্ছেন!
- গার্ডিয়ান অবলম্বনে
পরে গাড়িটির উদ্ভাবক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জার্মান বংশোদ্ভূত অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান থ্রুন এর সম্পর্কে জেনেছিলাম। সে সময়েরই একটি সাক্ষাতকারে থ্রুন গাড়িটির নির্মাণ কৌশল ব্যাখ্যা করেছিলেন। এছাড়া পুরো ক্যালিফোর্নিয়াতে কি করে গাড়িটি প্রায় দুই লাখ মাইল পথ অতিক্রম করেছে, সে সবেরও রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো তুলে ধরেন তিনি। থ্রুন বিশ্বাস করেন, এ উদ্ভাবনীর ফলে পৃথিবীতে একসময় সড়ক দুর্ঘটনা বলে আর কোনো শব্দ থাকবে না।
উপরোক্ত ঘটনার কয়েক মাস পরেই সেবাস্টিয়ান থ্রুন এর থলের বিড়াল বের হয়ে আসে। এতদিন সবাই তাকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে জানলেও আড়ালে তিনি ছিলেন গুগলের অতি গোপনীয় পরীক্ষামূলক গবেষণাগার ‘গুগল এক্স’ এর প্রধান। সেখানে চালকবিহীন গাড়ির সংস্কার ছাড়াও গুগল চশমা উদ্ভাবন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর গবেষণা চালাতেন থ্রুন।
এদিকে এ জানাজানি হওয়ার পরই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন সেবাস্টিয়ান থ্রুন। অধ্যাপনা ছেড়ে এক সপ্তাহ তিনি গুগলে কাজ করেন। এরপর নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে সামনে আসেন থ্রুন। তবে তিনি এটাকে প্রকল্প বলতে নারাজ। এটাই এখন আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। এই কাজেই ভবিষ্যতের শুরু হবে।
চালকবিহীন গাড়ি কিংবা নিত্য নতুন সাই-ফাই গ্যাজেট আবিষ্কার করে যে বিশ্বাসে ভর করে এগিয়েছেন থ্রুন, সেসবের চেয়ে এখন দ্বিগুণ উৎসাহ পাচ্ছেন একটি সাধারণ বিষয়ে, সেটি হলো শিক্ষা। বর্তমানে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। সংগীত শিল্প, প্রকাশনা শিল্প, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি ক্ষেত্রগুলোতে অত্যধিক ব্যবহারের ফলে প্রযুক্তিগতভাবে সাময়িক ব্যাহত হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলো অনলাইন। তাই থ্রুনের মতে, এখন সময় ‘শিক্ষা’র।
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার পরিবর্তন দরকার ছিলে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউডাসিটি নামে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা করেছেন থ্রুন। এর মাধ্যমে তিনি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে চান সবার কাছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা যেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষা পায় না কিংবা শিক্ষার ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের উদাসীনতা যেখানে ব্যাপক সেখানে আমাদের সামনে প্রশ্ন রাখেন থ্রুন। শিক্ষার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করবেন নাকি বিনা অর্থখরচে অনলাইন থেকে শিক্ষা নেবেন?
প্রচলিত উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ব্যাপক এবং অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্রিটেনের মতো একটি উন্নত দেশে শিক্ষার চেয়ে মদ্যপানকে অধিকতর সামাজিক আচরণ বলে গণ্য করা হয় যেখানে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবস্থিত। সবার কাছে যৌনতা এখন আগ্রহের কন্দ্রেবন্দিু, যা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, ব্রিটিশরা প্রথমে নিজেদের কাজে নিজেরাই বিঘœ ঘটায় এবং এর দীর্ঘকাল পরে কাজে বিঘœ ঘটার কারণ খুঁজতে শুরু করে তারা। তাই এখন দেখার বিষয়, নতুন এ শিক্ষা ব্যবস্থা কী রকম প্রভাব ফেলবে যুক্তরাজ্যে কিংবা কীভাবে নেবে আত্মপ্রমোদে ব্যস্ত থাকা ব্রিটিশরা।
অনলাইন শিক্ষাঃ ক্যাম্পাস জীবনের সমাপ্তি? (২য় পর্ব)
এরপর একটি কনফারেন্সে থ্রুন আনুষ্ঠানিকভাবে তার চালকবিহীন গাড়ি চালানোর কৌশল তুলে ধরেছিলেন। নিজের এ স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি আলোচনা শুরু করেন সালমান খানের সাথে।
না, ইনি বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান নন। ইনি হলেন ৩৬ বছর বয়সী এবং স্বল্পভাষী সালমান খান, যিনি কি না হেজ ফান্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থায় বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটসও যাকে প্রিয় শিক্ষক বলে সম্বোধন করে থাকেন। এছাড়া সালমান বিখ্যাত খান একাডেমিরও কর্ণধার।
প্রায় ১ কোটির মতো শিক্ষার্থী খান একাডেমি থেকে শিক্ষা সেবা নিয়ে থাকে। এছাড়াও এ একাডেমির সংগ্রহে রয়েছে ৩ হাজার ৪০০টি ভিডিও, যার বেশিরভাগই তৈরি করেছেন খান নিজে।
এ প্রসঙ্গে থ্রুন বলেন, সত্যি বলতে কি, খান একাডেমির ব্যাপারে এসব তথ্য জানার পর কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। একটা ভয়ংকর ব্যাপার হলো, যেখানে সালমান খান প্রায় মিলিয়ন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন, সেখানে আমি ২০০ জন শিক্ষার্থীর সামনে দাঁড়াই।
এর পরপরই থ্রুন সিদ্ধান্ত নেন, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে বিষয় পড়াতেন সেটাকে সমগ্র বিশ্বের কাছে অনলাইনের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। প্রতিষ্ঠা করলেন ইউডাসিটি, যাতে করে যে কেউ তার সিএস২২১ বিষয়ের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করতে পারে। এর ফলে স্ট্যানফোর্ডের শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে, ঠিকই একইভাবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও সিএস২২১ বিষয়ের উপর নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারবে।
উল্লেখ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত সিএস২২১ বিষয়টি খুবই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে আজকাল। সেই সাথে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম। তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, ক্যাম্পাসে যেখানে ২০০ জন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ পায়, সেখানে থ্রুনের অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করে।
সংখ্যাগত এই হিসাব-নিকাশে দারুণভাবে চমকে উঠেন থ্রুন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পড়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে, এমনকি উত্তর কোরিয়া থেকেও। এ পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী ইউডাসিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। এছাড়া পরীক্ষায় ভালো করে প্রথম ৪০০ জনের মধ্যে যারা অবস্থান করছেন, পুরোপুরি অনলাইনেরই মাধ্যমে তারা তাদের পাঠ কার্যক্রম শেষ করেছেন। এমনকি তারা সার্টিফিকেটও পেয়েছেন ই-মেইলের মাধ্যমে।
এ সফলতাকে আনন্দময় অনুভূতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে থ্রুন বলেন, যদিও দুটোই শিক্ষা সম্পর্কিত ব্যাপার, তবে এখন নিশ্চয়ই আমি সেই ২০০ জন ছাত্রের কাছে ফিরে যেয়ে তাদের পড়িয়ে সেই তৃপ্তি পাবো না, যেটা আমি পেয়েছি ইউডাসিটিতে।
অনলাইন শিক্ষাঃ ক্যাম্পাস জীবন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? (শেষ পর্ব)
থ্রুনের এ সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে আমেরিকার অন্যান্য স্থানেও অনেকে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। খোদ থ্রুনেরই প্রাক্তন দুই সহকর্মী অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যাফনে কোলার মিলে ‘কোরসেরা’ নামে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন।
যে সময়ে ‘ইউডাসিটি’ তাদের নিজস্ব সিলেবাস পুনরায় মূল্যায়নে ব্যস্ত, সে সময় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি সম্পাদনের জন্য আলোচনায় জড়াতে থাকে কোরসেরা। জুলাইয়ের দিকে কোলারের বরাতে জানা যায়, স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চারটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছে তাদের কোরসেরা ওয়েবসাইট। এর ঠিক চার মাস পরেই এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টিতে এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ লাখে।
প্রসঙ্গত, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় জড়িত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম হলো এডিনবার্গ। অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যাফনে কোলারের ‘কোরসেরা’র সাথে চুক্তি সম্পাদন করে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে এডিনবার্গের প্রস্তাবিত ৬ টি বিষয়ে পড়ার জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী কোরসেরায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে ফেলেছে।
এ সম্পর্কে এডিনবার্গের উপাধ্যক্ষ জেফ হেওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা নিরীক্ষামূলকভাবে এটা করছি। আসলে এ ব্যবস্থার সাথে আমরা পরিচিত হতে চাই। যদি এর ফলাফল সন্তুষ্টজনক হয় তবেই আমরা সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেবো। আর কোরসেরা কর্তৃপক্ষ যদি তাদের প্রস্তাবিত কাজের অন্যথা করে, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থানেই ফেরত আসবো।’
এদিকে এডএক্স নামে আরেকটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেন ম্যাসাচুসেটস টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক অনন্ত আগারওয়াল। খান একাডেমির সালমানকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মানেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল অনন্ত আগারওয়ালেরই এক সময়ের ছাত্র ছিলেন সালমান। উল্লেখ্য, এডএক্স এর মাধ্যমে এমআইটি, হার্ভার্ড, বার্কলি এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষাসংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকেন আগারওয়াল।
অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটাও এক ধরনের বিপ্লব। গত ২০০ বছরের ইতিহাসে শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য এটা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। শিক্ষাকে একটি ইতিবাচক মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করছি আগামী এক দশকের মধ্যে শিক্ষার এ মাধ্যম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কোনো রকম বিপণন ব্যবস্থার সাহায্য না নিয়েই আমরা গত চার মাসে প্রায় ৪ লক্ষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করতে পেরেছি। তো বুঝতেই পারছেন, অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কাল্পনিক কোনো বিষয় না।’
অনেকের মতে শিক্ষা এখনো শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি, তবে নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা হলো একটি বাজার উল্লেখ করে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ম্যাট গ্রিস্ট বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে এটা খুবই ভয়াবহ অবস্থা। অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু হয়তো আমাকেও এটা করতে হতে পারে।’
প্রগতিশীল শিক্ষাবিদরা মনে করছেন যে, এসব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স মাত্র কয়েক মাস হলো। এখনই তাদের খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তাদের ভিত্তি আরো মজবুত করতে হবে যদি তারা সামনে এগোতে চায়। তার কারণ, একসময় আমরা ভাবতাম যে, সংবাদপত্র বোধহয় চলতেই থাকবে। কিন্তু হাল আমলের অবস্থা বিবেচনা করে দেখুন। এখন অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা কেমন হারে বাড়ছে। অবাধ্য দেনার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব মুদ্রণ প্রকাশনাগুলো। তবে কি কাগজের সব রকম প্রকাশনা তার আবেদন হারাচ্ছে?
সম্প্রতি বেশকিছু জরিপে দেখা গেছে, ক্যাম্পাস সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের সন্তানকে পড়ানোর জন্য এমনিতেই আর্থিকভাবে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের। প্রতি বছরের মোট আয়ের সিংহভাগই চলে যায় সন্তানের জন্য শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যয়ে। এর ওপর আবার সম্পূর্ণ নতুন ধারার অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা। তাই বলা চলে যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা।
উন্নত দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখন অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। আবার অনেকে এটাকে ক্যাম্পাস শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন। এমনকি ব্রিটেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের হারও অনেক কমে গেছে। সেখানে সুটন ট্রাস্ট নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আবেদনের হার প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।
বর্তমান ক্যাম্পাস শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব জানতে হান্নাহ নামে এডিনবার্গের একজন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আগামীকাল তোমার কোনো ক্লাস আছে কি না? উত্তরে সে বললো, সকাল ৯ টার দিকে একটা মাত্র ক্লাস আছে, তাও দর্শন। কিন্তু আমি সেখানে যাচ্ছি না।
হান্নাহর এরকম উদাসীনতার কারণ কি?
কারণ যাই হোক না কেন, খোদ শিক্ষার্থীরাই যে এখন ভোক্তায় পরিণত হচ্ছেন!
- গার্ডিয়ান অবলম্বনে
No comments