অপবাদ ও বৈষম্য—এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব

২৯ নভেম্বর ২০১২, ‘অপবাদ ও বৈষম্য—এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল ইউএনএফপিএ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপা হলো এই ক্রোড়পত্রে আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: বাংলাদেশে এইডস এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি, কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এইডস দূর করার অন্যতম বাধা অপবাদ ও বৈষম্য। একজন নারী বা পুরুষ হয়তো জানেনই না তাঁর কীভাবে এইডস হয়েছে, এইডসের জন্য তিনি নিজে দায়ী নন। আবার কখনো নিষ্পাপ শিশুও এইডসে আক্রান্ত হয়। অসতর্ক যৌনাচারের বাইরে আরও অনেকগুলো কারণে যেমন: আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, ব্যবহূত সুচ, ইনজেকশন সিরিঞ্জ, ছুরি, কাঁচি, ব্লেড ইত্যাদির মাধ্যমে এইডস ছড়ায়। যেভাবেই হোক, একবার কেউ আক্রান্ত হলে তিনি চরম অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হন। একটি গ্রামের ঘটনা জানি, যেখানে একজন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমস্ত পরিবারসহ তাঁর গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তবে সুখবর হলো, বিশ্বব্যাপী এইডস কমে আসছে। এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। এখন আলোচনা করবেন এ এম বদরুদ্দোজা।
এ এম বদরুদ্দোজা: ১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বিশ্ব এইডস দিবস। একটি ভালো সময়ে আলোচনাটি হচ্ছে। এইডস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে হয়তো শেষ হবে না। প্রসঙ্গটি অনেক ব্যাপক। বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য এইডস কমে আসছে, এটি একটি আশার খবর। এইডসমুক্ত থাকার জন্য সবাই একসঙ্গে কাজ না করলে আবার হয়তো বাড়তে থাকবে। এইডস থেকে নিরাপদ থাকা একটি নিরবচ্ছিন্ন সচেতনতা ও সতর্কতামূলক প্রক্রিয়া। এইডস দূর করার বড় বাধা হলো অপবাদ ও বৈষম্য। বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশে বৈষম্যের বিষয়টি অনেক পুরোনো। একটা সময় ছিল, মানুষের যক্ষ্মা ও গুটিবসন্ত হতো। তখন আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিবার থেকে, এমনকি সমাজ থেকে আলাদা করে ফেলা হতো। কলাপাতায় খাবার দেওয়া হতো। গাছের নিচে রাখা হতো। কিন্তু সে সময় অপবাদ ছিল না। দুঃখজনক হলেও সত্য, এইডসের সঙ্গে এখন অপবাদের বিষয়টি চলে এসেছে। এটি শুধু আমাদের একার সমস্যা নয়, এ সমস্যা বিশ্বব্যাপী। তাই সবাই একসঙ্গে মোকাবিলার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এইডস সম্পর্কে সমাজের মানুষের মানসিকতা বদলাতে হবে। এইডসকে আর দশটা রোগের মতো মনে করতে হবে। অন্য রোগের ক্ষেত্রে যেমন রোগীকে লুকিয়ে রাখি না, রোগ গোপন করি না; এইডসের ক্ষেত্রেও তেমনি খোলামেলা হতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে, আর দশটা রোগের মতো এইডসেরও ভালো চিকিৎসা রয়েছে। এইডস হলে এখন মানুষ মারা যায় না বরং ভালো চিকিৎসা পেলে ৩০-৩৫ বছর বেঁচে থাকতে পারে। ১৯৮৫ সালে বিশ্বে যখন প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়, তখন থেকে বাংলাদেশ এইডস নিয়ে কাজ করছে। এইডসে আক্রান্ত রোগী সারা জীবন বেঁচে আছে, এ রকম উদাহরণও আমাদের দেশে আছে। এইডস রোগীর ক্ষেত্রে অপবাদ ও বৈষম্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আসে। অপবাদ ও বৈষম্য দূর করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
খন্দকার এজাজুল হক: পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এইডস দূরীকরণের বড় বাধা অপবাদ ও বৈষম্য। অপবাদ-বৈষম্য শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের সব দেশে কম-বেশি আছে। এ বিষয়ে আলোচনার আগে একটু পেছনে ফিরে দেখতে চাই। গত শতকের আশির দশকে প্রথম এইচআইভি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। তখন থেকে আমরাই আমাদের অজান্তে এইচআইভি-সংক্রান্ত অপবাদ ও বৈষম্যের বীজ বপন করে ফেলেছিলাম। তখন আমরা বলতাম যে যাঁরা হিজড়া, সমকামী ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌনাচার করেন, তাঁরাই এইচআইভি ছড়ান। এ ধারণা এখনো আছে এবং দিনে দিনে তা বেড়ে চলেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রচলিত ধারণার বাইরেও বিভিন্ন কারণে এইচআইভি ছড়ায়। বিষয়টি তখন একেবারেই ভাবা হয়নি। সম্পূর্ণ দোষ পড়েছে হিজড়া, সমকামী ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌনাচারকারীদের ওপর। যে কারণে এইডসের সব অপবাদ একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীকে নিতে হচ্ছে এবং তাঁরা সমাজে এখন চরম বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছেন।
ধরা যাক, একজন সাধারণ গৃহিণী। পরিছন্ন জীবনযাপন করেন এবং বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কে অভ্যস্ত নন। তিনি না জেনে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, ব্যবহূত সুচ, ইনজেকশন সিরিঞ্জ বা তাঁর স্বামীর দ্বারাই এইচআইভিতে আক্রান্ত হলেন। তাঁর একটি সন্তান জন্ম নিল। এই সন্তানও এইচআইভিতে আক্রান্ত হলো। যখন সমাজ জানল এই নারী ও শিশু এইচআইভি আক্রান্ত, তখনই সমাজের যাবতীয় ঘৃণা, অপবাদ ও বৈষম্য তাদের সমাজ থেকে আলাদা করে দিল। কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশু ও তার মায়ের বিন্দুমাত্র অপরাধ নেই। এইচআইভি থেকে অপবাদ ও বৈষম্য সমাজকে বেশি কলুষিত করছে। এটা কীভাবে? একজন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি যখন অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হন, তখন তিনি নিজেকে সমাজ থেকে আড়াল করে ফেলেন। অন্ধকারে চলে যান। তিনি আর চিকিৎসাসেবার আওতায় আসেন না। এতে তাঁর দ্বারা এইচআইভি ছড়ানোর সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে। খুব সাধারণ ধারণা থেকে অপবাদ দিচ্ছে, বিষয়টি সে রকম নয়। একধরনের বিশ্বাস ও ঘৃণাবোধ থেকে অপবাদ দিচ্ছে। সে কারণে গতানুগতিক প্রচারণার মাধ্যমে এটা দূর হবে বলে মনে হয় না।
এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রচারণার বাইরে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন: আমাদের এইডস নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত নীতিমালা আছে। অপবাদ-বৈষম্যের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা না থাকলেও পরোক্ষভাবে এ বিষয়ে বলা আছে। নীতিমালার মধ্যে কী আছে, কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে কী আছে, এগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে পারি। তাত্ত্বিক দিক থেকে কিছু শব্দগত প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এটি দূর করা যাবে না।
সামাজের ওপর যাঁদের প্রভাব আছে, এ ধরনের ব্যক্তিত্বদের এ কাজে ব্যবহার করতে হবে। মনে আছে, প্রিন্সেস ডায়ানা যখন এইডস রোগীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, পৃথিবীর গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি প্রকাশ করেছিল। তখন এইডসের প্রতি অপবাদ ও বৈষম্য অনেকটাই কমে এসেছিল। ফলে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, রাষ্ট্রপ্রধান, বিশেষ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এইডস অধ্যায়ে অপবাদ-বৈষম্যের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তাই একজন শিক্ষার্থী জীবনের শুরু থেকে অপবাদ ও বৈষম্যের বিষয়টি জানতে পারে না। সাধারণ প্রচার-প্রচারণা দিয়ে এটা দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।
এম এস মুক্তি: দীর্ঘদিন ধরে এইচআইভি রোগীদের নিয়ে কাজ করি। ২০১২ সালের ঘটনা। একজন রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে। সে চিকিৎসকের কাছে গেল। চিকিৎসক বললেন, এখনই অপারেশন করাতে হবে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। অপারেশন শুরু হবে। রোগী বলল, সে এইচআইভিতে আক্রান্ত। তখন চিকিৎসক তার অপারেশন বন্ধ করে দিলেন। এভাবে তিনজন চিকিৎসক তাকে ফিরিয়ে দিলেন। ২০১২ সালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। দিনে দিনে আমরা কোথায় যাচ্ছি? এ ধরনের ঘটনা যদি একের পর এক ঘটতে থাকে, তাহলে কী অবস্থা হবে? একসময় কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে এরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হবে। এতে এইচআইভি আরও বেশি ছড়াবে। শেষে একজন চিকিৎসক অপারেশন করলেন। তিনি বললেন, বিদেশে এ রকম রোগীর অপারেশন অনেক করেছেন। আরও বললেন, এইচআইভি নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা আছে। এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও ভুল ধারণা আছে।
একমাত্র তরল পদার্থের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনোভাবে এইডস ছড়ায় না। এইচআইভি রোগীর হাঁচি-কাশি, তার সঙ্গে সাধারণ চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, একই পানিতে গোসল ইত্যাদি কারণে কখনো এইচআইভি ছড়ায় না। গণমাধ্যমসহ সমাজের সব মানুষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। গণমধ্যমের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামান্য কিছু সময় এইচআইভি নিয়ে প্রচার চালাতে পারে। দৈনিক পত্রিকাগুলো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিদিন এইচআইভির তথ্য ছাপতে পারে। সমাজের প্রতি গণমাধ্যমেরও একটি বড় রকমের দায়বদ্ধতা আছে। সেই জায়গা থকে তাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে কিছু করা উচিত। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চস্তর পর্যন্ত সব জায়গায় বৈষম্য আছে। সমাজের ৮০ শতাংশ এইচআইভি রোগী তাদের পরিবারের কাছে পর্যন্ত বলে না। কারণ সে জানে, একবার সবাই জেনে গেলে চরম অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হবে। এ অপবাদ-বৈষম্য তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হবে না।
সাধারণত দেশের নারী ও শিশুরা কিন্তু নিরপরাধ। তারা না জেনে এ রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু নারী, পুরুষ, শিশু, যিনি বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন—সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখা হয়। সবাই একই বৈষম্য-অপবাদের শিকার হয়। সব রোগের মধ্যে এইচআইভি রোগীকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এইচআইভি রোগীদের অধিকার রক্ষা করতে না পারলে আমাদের কারও অধিকার রক্ষা হবে না।
আব্দুল কাইয়ুম: দুজন শিক্ষার্থী আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে এসেছে। তারা বিষয়টিকে কীভাবে দেখে? এবার বলবে জেবিন আলম।
জেবিন আলম: তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন শিক্ষক বললেন, আলোচনাকক্ষে যাও। তোমাদের সঙ্গে কথা আছে। সবাই গেলাম। সেখানে কয়েকজন বিদেশি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা এইচআইভি সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন। শুধু বললেনই না, পর্দায় ছবির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন। অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর সেদিন পেলাম। শহরে থাকায় এই সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের তরুণেরা এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারে না। শহর ও গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষকেরা এইচআইভি অধ্যায় বাসা থেকে পড়ে আসতে বলেন। তাহলে তরুণেরা এ বিষয়ে কীভাবে জানবে? কীভাবে সতর্ক হবে?
মো. আব্দুল ওয়াহিদ: শুধু অপবাদ ও বৈষম্যের মধ্যে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। অনেকেই জানে না এইচআইভি ভাইরাস কী। এইচআইভি ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক নেই। এটি নিরাময়যোগ্য রোগ নয়। তবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পরিবার, সমাজ, চিকিৎসক—সবকিছুর ওপরে এইচআইভি রোগীর নিজের দায়দায়িত্ব অনেক বেশি। তাকে ভাবতে হবে, এইচআইভি আর দশটা রোগের মতো একটা রোগ। অন্য রোগের ক্ষেত্রে যেমন রোগী লুকিয়ে থাকে না, সবার সঙ্গে খোলামেলা কথা হয়। চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করে। কী কী করণে এইচআইভি হয়, কী কী করণে হয় না—সবই তাকে জানতে হবে। যেসব মানুষ অপবাদ দেবে, তাদের বোঝানোর দায়িত্ব এইচআইভি রোগীকেই প্রথমে নিতে হবে। বোঝাতে হবে, এটি আর দশটা রোগের মতো একটা রোগ। আজকে যারা অপবাদ বা ঘৃণা করছে, তারা নিজেরাও যেকোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এর বিপরীত। এইচআইভি আক্রান্ত রোগী নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে। কারও কাছে বলে না। চিকিৎসকের কাছে যায় না। চিকিৎসাশাস্ত্রের কোথাও লেখা নেই যে তাকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।
এইচআইভি রোগীদের একত্র হতে হবে। তাদের এ রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। সমাজের যে অংশ তাদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখবে, সে অংশকে বোঝানোর দায়িত্ব এইচআইভি রোগীদেরও নিতে হবে। এইচআইভি রোগীর সঙ্গে তার পরিবার, সমাজ, সরকার—সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। প্রত্যেককে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য সরকার দায়বদ্ধ। সমাজে যৌনরোগ লুকানোর প্রবণতা আছে। কারও যৌনরোগ হলে মানুষ মনে করে, তার ওপর অভিশাপ আছে।
একমাত্র অজ্ঞতার কারণে মানুষ এসব নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকে, যা মোটেই কাম্য নয়। অন্তত কী কারণে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়, কী কারণে হয় না—বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। যত বেশি প্রচার করা যাবে, তত বেশি জানতে পারবে। গোলটেবিলের আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। এর মাধ্যমে অনেক বেশি তথ্য মানুষ জানতে পারবে। তবে আশার বিষয় হলো, আগের যেকোনো সময়ের থেকে এখন এইচআইভি বিষয়টি অনেক বেশি খোলামেলা। রোগীরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে খুব আন্তরিক। ১৯৮৫ সালে এইচআইভি কমিটি গঠিত হয়। ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইচআইভি রোগী পাওয়া যায়। ২০১৩ সাল থেকে এইচআইভি রোগীদের আরও ব্যাপকভাবে সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতা থাকলে আমরা বাংলাদেশ এইচআইভি ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাব।
আব্দুল কাইয়ুম: আমরা বিভিন্ন কারণে চিকিৎসকের কাছে যাই। অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে দাঁতের চিকিৎসকের কাছে মানুষ হরহামেশা যায়। ডাক্তারি যন্ত্রপাতি কতটা নিরাপদ?
নজরুল ইসলাম: পাঠ্যপুস্তকের কারিকুলামে এইচআইভি সম্পর্কে বলা আছে, কিন্তু বৈষম্য ও অপবাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ, এইচআইভি রোগীর জন্য অপবাদ ও বৈষম্য বড় রকমের বাধা হিসেবে কাজ করছে। এইচআইভি রোগীর চিকিৎসার দুটি ভাগ আছে। এক. এইচআইভির চিকিৎসা; দুই. তারা তো মানুষ, তাদেরও তো অন্য রোগ হতে পারে। এর চিকিৎসা কী হবে? চিকিৎসকেরা ভয় পাচ্ছেন। কারণ তাঁরাও তো মানুষ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকেরা যে সবকিছু জানেন, তা কিন্তু নয়। তাঁদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
অজ্ঞতার কারণে কী হতে পারে, তার একটি উদাহরণ দিই। একবার একজন ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করল। লাশ ঢাকা মেডিকেলে আনা হলো। চিকিৎসকেরা তার ময়নাতদন্ত করবেন না। তার অপরাধ কী, সে এইচআইভি আক্রান্ত। পরে লাশ আঞ্জুমান মুফিদুলে দেওয়া হলো। এই যে আমরা চিকিৎসা করছি না, ময়নাতদন্ত করছি না—এটা সম্পূর্ণ আমাদের অজ্ঞতা। শিক্ষার ঘাটতি। প্রশিক্ষণের ঘাটতি। আমাদের ব্যর্থতা। চিকিৎসকেরা ঈশ্বর প্রদত্ত কোনো ক্ষমতা নিয়ে জন্মান না। তাঁদের শিখতে হয়, শেখাতে হয়।
আমাদের পাঠ্যক্রমে এইচআইভির ওপর ব্যাপকভাবে কোনো আলোচনা নেই। সাধারণ মানুষ যেভাবে জানে, চিকিৎসক হওয়ার জন্য হয়তো একটু বেশি জানেন। তাই খুব বেশি যে জানেন, তা কিন্তু নয়। ফলে তাঁদেরও শিখতে হবে। ১৯৯৫ সালের এক জরিপে জানা গেল, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে বাংলাদেশের সেনাসদস্য। ওই সময় বাংলাদেশের তিন সেনাসদস্যকে এইচআইভি আক্রান্ত পাওয়া গেল। সে সময় একটা সিদ্ধান্ত হলো, যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের সতর্ক করা হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ফিরে এলে আবার পরীক্ষা করা হবে। ’৯৫ সালের পর বাংলাদেশ থেকে শান্তি মিশনে যাওয়া একজন সেনাসদস্যও এইচআইভি আক্রান্ত হননি। সেনাসদস্য ছাড়া অন্য যাঁরা বিদেশে কাজ করতে গিয়েছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এঁদের প্রশিক্ষণের জন্য আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি। বর্তমান শ্রমমন্ত্রীকেও বলেছি।
এইচআইভিকে মূলধারার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এনজিওগুলোর স্থায়িত্ব কম হওয়ায় এইচআইভির চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয়। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকও উপজেলা হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আমাদের অভ্যাস খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা, তার পরও চিকিৎসা চলতে থাকবে। বর্তমান অবস্থায় একজন এইচআইভি আক্রান্ত হলেও তার চিকিৎসার জায়গা নেই। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন রোগী পাঠালাম। তারা চিকিৎসা করল না। তাই এই চিকিৎসাকে মূলধারায় যুক্ত করতে হবে।
এইচআইভি সম্পর্কে কিছু তথ্য সমাজে ভীতি ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যেমন বলা হয়ে থাকে, ঘাতক ব্যাধি। মরণব্যাধি। এইচআইভি ঘাতক বা মরণব্যাধি নয়। চিকিৎসা নিয়ে সহজেই ৩০-৩৫ বছর বেঁচে থাকা যায়। যশোরের কেশবপুরের হজরত আলী। ভারত থেকে জেনে এসেছেন, তিনি এইচআইভি আক্রান্ত। সব মানুষ তাঁকে আলাদা করে ফেলেছে। আমি তাঁর রক্ত পরীক্ষা করে দেখলাম, তিনি এইচআইভি আক্রান্ত নন। এরপর সব জায়গায় বলে দিলাম, নিশ্চিত না হয়ে কেউ এইচআইভি আক্রান্ত বলবেন না। আমাদের একটা বড় অর্জন আছে। ১৯৮৯ সালে প্রথম রোনাল্ড বি ব্রাভো নামে এক বিদেশি সোনা চোরাচালানি ধরা পড়ে। সে ছিল এইচআইভি আক্রান্ত। সরকার তাকে বের করে দেয়। ১৯৯০ সালে আরও দুজন ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে একজন মারা যায়। অন্যজনকে আমরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করি। তিনি এখনো ভালো আছেন। বিয়ে করেছেন। সন্তান হয়েছে। সবাই সুস্থ আছে। আমাদের চিকিৎসা ও তত্ত্বাবধানে যেসব এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের সন্তান হয়েছে, তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন। অতএব, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ যেন আমাদের কাছে আসে।
সালেহ আহমেদ: সমকামী ও হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম এদের নিয়ে কাজ করি। আজকের আলোচনার বিষয়টি আমাদের কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে এইডস কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশ এই কমিশনের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করার জন্য যে ধরনের অনুকূল আইন দরকার, সেটা নেই। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, বিশ্বের যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য আইন অনুকূলে আছে, সেখানে সহজে এরা সেবা নিচ্ছে।
বৈষম্যমূলক আইনের জন্য দেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সেবা নিতে পারছে না। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। কেন বেড়েছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অপবাদ ও বৈষম্যের জন্য এরা আত্মহত্যা করছে। একে তো এদের মধ্যে রয়েছে লিঙ্গবৈষম্য, তার ওপর ভগ্নস্বাস্থ্য, সুচিকিৎসার অভাব, এর সঙ্গে রয়েছে প্রচণ্ড অপবাদ ও বৈষম্য। সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, যে কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের সমস্যাকে নিরূপণ করে সমন্বিত সেবা ও চিকিৎসার মধ্যে আনতে হবে।
এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এইডস রোগীর সঙ্গে একজন চিকিৎসকের আলিঙ্গনের খবর পত্রিকায় এসেছিল-‘একটি আলিঙ্গন এক ঘণ্টার বক্তৃতার চেয়ে বেশি দামি।’ খবরটি সমাজে প্রভাব ফেলেছিল।
আব্দুল কাইয়ুম: অনেকেই গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা বলেছেন। আমরাও স্বীকার করি, গণমাধ্যমের অনেক ভূমিকা আছে। আমরা প্রথম আলো সাধ্য মতো সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করি, মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করি। এখন শুনব জাহিদ মো. মাসুদের কাছ থেকে।
জাহিদ মো. মাসুদ: আমার হাসপাতালে প্রথম এইচআইভি রোগী এল। চিকিৎসকেরা সবাই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেন। কোনো রকমে ব্যবস্থা করে অপারেশন শুরু করলাম। ওই চিকিৎসকেরা আবার ফিরে এলেন। তথ্য দুভাবে দেওয়া যায়। এক. প্রচার করে; দুই. নিজে কাজ করে দেখিয়ে। আমি শেষেরটা করেছিলাম, তাতে কাজ হয়েছিল।
অপবাদ মানে, সিল মেরে আলাদা করে দেওয়া। এইচআইভির ক্ষেত্রে সিল মেরে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। তথ্যের অভাবে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য অপবাদের একটি বড় কারণ। গ্রামে গিয়ে শিক্ষককে বললেন এইচআইভি/এইডস বিষয়ে ভালো করে পাড়াচ্ছেন তো? উনি বললেন, ওই অধ্যায় পড়াই না। বাসায় পড়ে আসতে বলি। চিকিৎসকেরা শুধু মেডিসিন আর সার্জারি পড়ে আসেন। এঁদের সমাজবিজ্ঞানসহ অনেক বিষয় পড়া দরকার। এইচআইভির ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু তাঁদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। চিকিৎসকদের এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
চিকিৎসকেরা সব ধরনের রোগী দেখবেন বলে শপথ করেছিলেন। এখন এইচআইভি রোগীর চিকিৎসা করবেন না। এটা কারও দায়িত্বশীল আচরণ হতে পারে না। এইচআইভি থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন, চিকিৎসকদের থেকে আর কে ভালো জানবে? কিন্তু চিকিৎসকেরা দূরে, আরও দূরে সরে যান। আমরা অনেকের ভূমিকার কথা বলেছি। কিন্তু প্রথম ভূমিকা ছিল চিকিৎসকদের। চিকিৎসকেরা সেটা ভুলে গেছেন। রোগের ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসকদের মধ্যে কুসংস্কার থাকে, তাহলে অন্যরা কোথায় যাবে? না জানাটা কোনো দোষের নয়। চিকিৎসকদের জানতে হবে এবং এইচআইভি রোগীর সেবার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
মুনির আহমেদ: আমিও চিকিৎসকদের কথাই বলব। চিকিৎসকদের অনুরোধ করব, জানেন না—এ কথা বলে আর যেন সময় নষ্ট না করেন। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের কথা বলা হয়, যারা অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার। যারা মাদক নেয়, তারাও চরম অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার। এদের কথা আলোচনায় আসেনি। বৈষম্যের কারণ হলো সামাজিক অবস্থান, শ্রেণীবিভেদ, তথ্যের অভাব।
এইচআইভি সম্পর্কে কেন এত ভয়? এইচআইভি নিয়ে গোপন কোনো রহস্য নেই। খুব ভালোভাবে বলা আছে, কনডম ব্যবহার করলে এইচআইভি হবে না। হাঁচি, কাশি, একসঙ্গে চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে এইচআইভি হবে না। তাহলে ভয়টা কোথায়? এই তথ্যগুলো যদি যথাযথভাবে দেওয়া যায়, তাহলে এইচআইভি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকে না। বাংলাদেশে সাংবদিকেরা গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়েছেন। তাঁরা অনেক শিখেছেন। চিকিৎসকেরা আছেন অন্ধকার ও কুসংস্কারের মধ্যে। তাঁরা কিছু শিখছেন না। তাঁরা মাদকাসক্তদের ঘৃণা করছেন। দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। এইচআইভি রোগীর ক্ষেত্রে তাঁদের আচরণ নেতিবাচক। বাংলাদেশে এক লাখ যৌনকর্মী আছেন। ৮০ হাজার পুরুষ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা পুরুষ খদ্দেরদের অপবাদ দিই না। কিন্তু নারী যৌন কর্মীদের দিই। কেন দিই? কারণ তাঁরা নারী। তাঁরা দেহব্যবসা করেন।
মো. আফতাব উদ্দিন: এইচআইভি সম্পর্কে সমাজের সব জায়গায় ভুল ধারণা আছে। নিজের ইচ্ছায় কিছুটা শিখেছি। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলি, তারা বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, যার এইডস হয়, সে আর বাঁচে না। এইডস রোগীর সঙ্গে যারা মেশে, তাদেরও এইডস হয়। এ ধারণা থেকে বের হতে চায় না। বোঝাতে গেলে বলে, তুই কী জানিস? এইচআইভি বিষয়ে তরুণদের মধ্যে চরম অজ্ঞতা রয়েছে। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে অনেক প্রচার করতে হবে। সচেতন করতে হবে।
সারা হোসেন: আইনজীবীদের মধ্যে এইডসের ক্ষেত্রে অপবাদ-বৈষম্য বিষয়ে কোনো আলোচনা হয় না। নারী নির্যাতনের বিষয় নিয়ে কেউ কেউ আসেন। বিচার পান কি না, সেটি ভিন্ন বিতর্ক। কিন্তু আসেন। সমাজের প্রত্যেকেরই মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। একজনের সম্মানের ওপর অন্যায়ভাবে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাই কেউ যদি অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়। সে অবশ্যই তার প্রতিকার চাইতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এইচআইভি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বা যেকোনো মানুষ অন্যায় অপবাদের শিকার হলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। কিন্তু কখনো দেখিনি, এ বিষয়ে কেউ আইনের প্রতিকার চাইতে এসেছে। কেউ প্রতিকারের জন্য এলে সে অবশ্যই সহযোগিতা পাবে।
জয়া শিকদার: মাদকাসক্ত থেকে শুরু করে সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ আমাদের সেবা নিতে আসে। আমরা কিন্তু তাদের কাছে যাই না, তারাই আমাদের খুঁজে বের করে। আমাদের সেবা নেয়। কিন্তু অপবাদ-বৈষম্যের শিকার কেবল আমাদের হতে হয়। আমাদের কাছে যারা আসে, তাদের কোনো দোষ নেই। যৌনপল্লি উঠিয়ে দিলে যৌনতা সমাজের সব জায়গায় ছড়িয়ে যাবে। না উঠিয়ে এক জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ এম বদরুদ্দোজা: দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হলো। এখান থেকে কিছু তথ্য সামনে আনতে হবে, যা সমাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অপবাদ ও বৈষম্য নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। নিশ্চই এইচআইভি দূর করার জন্য এটি একটি বড় বাধা। কিন্তু এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় যোগ করতে হবে, তা হলো আতঙ্ক। এইডস সম্পর্কে আতঙ্ক সারা পৃথিবীর মানুষকে গ্রাস করে ফেলেছে। একটি গল্প এ রকম: একজন আরেকজনকে বলছে, বাঘের সামনে পড়লে কী করবে? উত্তরে বলল, আমি আর কী করব, যা করার তা তো বাঘই করবে! না, বাঘের সঙ্গে লড়াই করে পৃথিবীর অনেক মানুষ বেঁচে আছে। এইডস এখন আর ঘতক ব্যাধি নয়। মরণব্যাধি নয়। ঠিকমতো চিকিৎসা করালে অনেক বছর বেঁচে থাকা যায়। আতঙ্ক দূর করতে পারলে এইডসও দূরে সরে যাবে।
আব্দুল কাইয়ুম: এইডস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি এখনই গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। তাহলে সব ধরনের হাসপাতালে এইডস রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আজকের আলোচনায় উপস্থিত সবাইকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

যাঁরা অংশ নিলেন
এ এম বদরুদ্দোজা
অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
নজরুল ইসলাম
সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মো. আব্দুল ওয়াহিদ
লাইন ডিরেক্টর, জাতীয় এইডস এসটিডি প্রোগ্রাম
সারা হোসেন
ব্যারিস্টার, অনারারি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড এইড সার্ভিস ট্রাস্ট
মুনির আহমেদ
উপদেষ্টা, সোশ্যাল মোবিলাইজেশন ও পার্টনারশিপ-ইউএনএইডস
খন্দকার এজাজুল হক
ফোকাল পয়েন্ট, এইচআইভি এইডস কার্যক্রম, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল
সালেহ আহমেদ
নির্বাহী পরিচালক, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি
জাহিদ মো. মাসুদ, নির্বাহী পরিচালক, এইটাম হাসপাতাল
এম এস মুক্তি, নির্বাহী পরিচালক, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ
জয়া শিকদার, সভাপতি, সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক
জেবিন আলম, শিক্ষার্থী
মো. আফতাব উদ্দিন, শিক্ষার্থী

সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.