রাজপথে মুখোমুখি আ. লীগ-বিএনপি
বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের আগামীকালের দেশব্যাপী রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা। বিরোধী দলগুলোর এই কর্মসূচি সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও এদিন রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
আর দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি উত্তাপ, উত্তেজনা। উদ্বেগ ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সিপিবি ও বাসদের আগামী ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা।
কাল ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি : আগামীকাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট। এই প্রতীকী কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন জোট নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, জোটের শীর্ষ নেতা ও মহানগর বিএনপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সে সময় সুশৃঙ্খলভাবে এ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান তিনি। কর্মসূচি পালনের বিষয় নিয়ে গতকালও ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা পৃথকভাবে নিজ নিজ দলের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে নেতারা জানান, সরকারের দিক থেকে কোনো রকম বাধা এলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে অবরোধের দিন কাউকে গাড়ি বের না করে জনগণের কাতারে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, এটা প্রতীকী কর্মসূচি। কর্মসূচি অনুযায়ী, ঢাকার চারপাশে পশ্চিমে আমিনবাজার-গাবতলী, উত্তরে আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী, পূর্বে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণে সদরঘাট-কেরানীগঞ্জের প্রবেশপথে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই অবস্থান নেবে। অবরোধ চলাকালে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জোটের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
জেলা শহরে অবরোধ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হলে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছেন জোট নেতারা। এ জন্য নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল থাকবে। এই সেল সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি : এদিকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি মোকাবিলায় একই দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সমাবেশ ও মিছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয় ঘিরে মূলত থাকবে তাদের কর্মসূচি। এ ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করার প্রস্তুতি রয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। গতকাল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য দেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষায়, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের নেই। তবে কর্মসূচির নামে জামায়াতের মতো অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত কেবল দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিহত করা সবার দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সে কাজটি করবে। বিজয়ের মাসে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবে। এদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, মিছিল-সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এসব সংগঠনের নেতারা বলেছেন, 'কেউ কর্মসূচির নামে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে নাগরিক হিসেবে তা মোকাবিলা করার অধিকার আমাদের রয়েছে।'
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের নেই। তবে কর্মসূচির নামে জামায়াতের মতো অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত প্রতিহত করা প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের সব সময় থাকে। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো রয়েছেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, 'মাঠে ছিলাম, মাঠে আছি, মাঠে থাকব। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রবিবার মিছিল-সমাবেশ নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।' স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ বলেন, 'অবরোধ কর্মসূচি মোকাবিলার বিষয়ে আমাদের ওপর সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। সেই নির্দেশনা আমাদের ওপর রয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'সব সময় যেভাবে কর্মসূচি পালন করি, রবিবারও আমরা মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব।' যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ বলেন, 'বিজয়ের মাস উপলক্ষে আমাদের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। আমরা সেসব কর্মসূচি পালন করব।'
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নৈরাজ্যকর কিছু ঘটলে অবশ্যই তা মোকাবিলা করা হবে।
এদিকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার সময় এসেছে। এত দিন সরকার ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন কামরুল।
অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ : রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১৮ দলীয় জোট নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজধানীর সাবেক দুই কাউন্সিলরসহ বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিনি আরো বলেন, 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আমরা রাজপথে অবস্থান করব। আমাদের বুকের ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলবে না।' রাজধানীবাসীকে এদিন গাড়ি বের না করার আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, এ অবরোধ হবে শান্তিপূর্ণ। বাধা দিলে লাগাতার হরতালের ডাক দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য নিজেরাই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে জরুরি অবস্থা জারির নীলনকশা করছে। গতকাল বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে এলডিপির এক যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে 'সংসদ সচল ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, অবরোধে বাধা দিলে বাধা দেওয়ার স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই শিখিয়েছে কিভাবে আন্দোলন সফল করতে হয়। কাজেই শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দিলে প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে হরতাল-ঘেরাও-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। ক্ষমতাসীনরা সংঘাত চাইলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে না।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী কল্যাণ পরিষদ' আয়োজিত 'চলমান রাজনৈতিক সংকট' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, র্যাব-পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় অবরোধ প্রতিহত করতে এলে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, শিবিরের মাত্র একটু ধাক্কায় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা এতই ভয় পেয়েছেন যে তাঁরা বারবার জামায়াত-শিবিরের নাম নিচ্ছেন। আর বাকি ১৭টি দল যদি ধাক্কা দেয়, তবে সরকার টিকতে পারবে না।
কাল ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি : আগামীকাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট। এই প্রতীকী কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন জোট নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, জোটের শীর্ষ নেতা ও মহানগর বিএনপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সে সময় সুশৃঙ্খলভাবে এ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান তিনি। কর্মসূচি পালনের বিষয় নিয়ে গতকালও ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা পৃথকভাবে নিজ নিজ দলের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে নেতারা জানান, সরকারের দিক থেকে কোনো রকম বাধা এলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে অবরোধের দিন কাউকে গাড়ি বের না করে জনগণের কাতারে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, এটা প্রতীকী কর্মসূচি। কর্মসূচি অনুযায়ী, ঢাকার চারপাশে পশ্চিমে আমিনবাজার-গাবতলী, উত্তরে আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী, পূর্বে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণে সদরঘাট-কেরানীগঞ্জের প্রবেশপথে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই অবস্থান নেবে। অবরোধ চলাকালে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জোটের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
জেলা শহরে অবরোধ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হলে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছেন জোট নেতারা। এ জন্য নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল থাকবে। এই সেল সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি : এদিকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি মোকাবিলায় একই দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সমাবেশ ও মিছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয় ঘিরে মূলত থাকবে তাদের কর্মসূচি। এ ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করার প্রস্তুতি রয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। গতকাল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য দেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষায়, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের নেই। তবে কর্মসূচির নামে জামায়াতের মতো অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত কেবল দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিহত করা সবার দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সে কাজটি করবে। বিজয়ের মাসে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবে। এদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, মিছিল-সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এসব সংগঠনের নেতারা বলেছেন, 'কেউ কর্মসূচির নামে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে নাগরিক হিসেবে তা মোকাবিলা করার অধিকার আমাদের রয়েছে।'
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের নেই। তবে কর্মসূচির নামে জামায়াতের মতো অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত প্রতিহত করা প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের সব সময় থাকে। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো রয়েছেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, 'মাঠে ছিলাম, মাঠে আছি, মাঠে থাকব। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রবিবার মিছিল-সমাবেশ নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।' স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ বলেন, 'অবরোধ কর্মসূচি মোকাবিলার বিষয়ে আমাদের ওপর সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। সেই নির্দেশনা আমাদের ওপর রয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'সব সময় যেভাবে কর্মসূচি পালন করি, রবিবারও আমরা মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব।' যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ বলেন, 'বিজয়ের মাস উপলক্ষে আমাদের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। আমরা সেসব কর্মসূচি পালন করব।'
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নৈরাজ্যকর কিছু ঘটলে অবশ্যই তা মোকাবিলা করা হবে।
এদিকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার সময় এসেছে। এত দিন সরকার ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন কামরুল।
অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ : রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১৮ দলীয় জোট নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজধানীর সাবেক দুই কাউন্সিলরসহ বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিনি আরো বলেন, 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আমরা রাজপথে অবস্থান করব। আমাদের বুকের ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলবে না।' রাজধানীবাসীকে এদিন গাড়ি বের না করার আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, এ অবরোধ হবে শান্তিপূর্ণ। বাধা দিলে লাগাতার হরতালের ডাক দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য নিজেরাই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে জরুরি অবস্থা জারির নীলনকশা করছে। গতকাল বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে এলডিপির এক যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে 'সংসদ সচল ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, অবরোধে বাধা দিলে বাধা দেওয়ার স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই শিখিয়েছে কিভাবে আন্দোলন সফল করতে হয়। কাজেই শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দিলে প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে হরতাল-ঘেরাও-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। ক্ষমতাসীনরা সংঘাত চাইলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে না।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী কল্যাণ পরিষদ' আয়োজিত 'চলমান রাজনৈতিক সংকট' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, র্যাব-পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় অবরোধ প্রতিহত করতে এলে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, শিবিরের মাত্র একটু ধাক্কায় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা এতই ভয় পেয়েছেন যে তাঁরা বারবার জামায়াত-শিবিরের নাম নিচ্ছেন। আর বাকি ১৭টি দল যদি ধাক্কা দেয়, তবে সরকার টিকতে পারবে না।
No comments