ডিজিটাল বাংলাদেশের নমুনা... by আবুল কাশেম
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহারে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ। দলটির নির্বাচনী প্রচারণায় এক ধরনের স্লোগানেও পরিণত হয় এটি। তারপর নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করার পর কেটে গেছে চার বছর।
এই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ (http://www.digitalbangladesh.gov.bd/) নামে সরকারের একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটও খোলা হয়নি। এখনো ওয়েবপেজটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থাকলেও তা ভরে আছে ভুল আর পুরনো তথ্যে। এই ভুলের রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর নামও আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যখন এই নমুনা, তখন আগামী ডিসেম্বরে ঘটা করে ঢাকায় তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে সরকার। এতে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, "আগামী ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় 'ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২' কনফারেন্স হবে। বিশ্বের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের উদ্যোগ তুলে ধরা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়াই এর মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথিরা আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন।"
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই তোড়জোড়ের মহিমা ধূলিসাৎ হতে চলেছে কিছু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দৃষ্টিকটু ও হাস্যকর ভুলের কারণে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের বানানে ভুল আছে। মন্ত্রণালয়টির ওয়েবসাইটে (http://www.mowca.gov.bd/?p=743) একটি ছবির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে, 'ক্ষুদ্র নারী উদ্বোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করার জন্য জয়িতার উদ্বোধন করছেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনা।' ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই বাক্যটি শোভা পাচ্ছে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটটিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান এই বাক্যটি দেখে অবাক হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর নামের বানান ছাড়াও বাক্যটিতে আরো পাঁচটি ভুল ধরেন তিনি।
ওয়েবসাইটটিতে আরেকটি ছবির বর্ণনায় 'প্রতিমন্ত্রী' শব্দটি লেখা হয়েছে 'প্রতিমন্তী'। আবার আরেকটি ছবির বর্ণনায় রয়েছে, 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১২ উতযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।' এ বাক্যেও বানান ভুলের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করে 'রাখছেন' না লিখে অসম্মানসূচক 'রাখছে' লেখা হয়েছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলোর বাণিজ্য সংগঠন আপটার মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বরে। তিন বছরের পুরনো ঘটনাটিকে এখনো ভবিষ্যৎ করে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে (http://www.mincom.gov.bd/reg_bil_trade.php)। বৈঠক সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, 'আপটার মন্ত্রিপরিষদ আশা করছে ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বরে সিউলে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।' আর দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক সম্পর্কে এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, '২০০৯ সালের ২৪-২৮ অক্টোবর নেপালে সাফটার মন্ত্রি পর্যায়ে বৈঠক হবে।' অর্থাৎ, ২০০৯ সালের পরে ওয়েবসাইটটিতে আর হাতই দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মাস দুয়েক আগে এ বিষয়ে তখনকার বাণিজ্যসচিব (বর্তমানে এনবিআর চেয়ারম্যান) মো. গোলাম হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তৎক্ষণাৎ টেলিফোন করে এক কর্মকর্তাকে দ্রুত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করার নির্দেশ দেন। তবে তাতে যে কোনো কাজ হয়নি, ওয়েবসাইটটির বর্তমান হাল তার প্রমাণ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মন্ত্রীকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। এতে মন্ত্রীর ছবির ওপর বলা আছে, 'আস্ক ইউর মিনিস্টার' বা আপনার মন্ত্রীকে প্রশ্ন করুন। আগের মন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খান এ ব্যবস্থা করেছেন। তবে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর মেলে না। বর্তমান মন্ত্রী জি এম কাদেরকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একাধিকবার প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর মেলেনি। এ বিষয়ে গত ঈদুল আজহার পর মন্ত্রী জি এম কাদেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রশ্নগুলো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমার কাছে পাঠান না। তাই উত্তর দেওয়াও সম্ভব হয় না।'
সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হলো জনপ্রশাসন। এ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা আছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে ১৩তম সার্ক সম্মেলনের জন্য যে স্যুভেনির প্রকাশিত হয়েছিল, সেখান থেকে এ তথ্যটি উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এরপর বাংলাদেশে আরেকটি আদমশুমারি হওয়ার কথা কমবেশি সবাই জানে।
জাতীয় সংসদ থেকে প্রতি তিন মাস পর একটি করে বুলেটিন প্রকাশিত হওয়ার কথা। তবে এর ওয়েবসাইটে গিয়ে পাওয়া গেল সর্বশেষ ২০১১ সালের এপ্রিল-জুন সংখ্যা। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাসিক ভিত্তিতে একটি করে নিউজলেটার প্রকাশিত হলেও ওয়েবসাইটে রয়েছে শুধু একটি সংখ্যা, ২০১১ সালের অক্টোবর সংখ্যা।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ওয়েবসাইটটি দেখলে মনে হয়, ২০১০ সালের ৯ আগস্টের পর সেটি আর হালনাগাদ করা হয়নি। ওই দিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য এবং ইকুয়েডরের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগের দিন দেশটির তখনকার রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানানোর তথ্য আছে ওয়েবসাইটটিতে।
আনন্দ কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, '২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিল। জয়লাভের পরের চার বছরে তারা বিষয়টি ভুলে যায়নি। সরকার চেষ্টা করছে। তবে আমাদের দেশের প্রশাসন একেবারেই প্রস্তুত নয়। এই চার বছরে ই-গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হয়নি। ঔপনিবেশিক ধারায় চলা এই প্রশাসন মানসিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বর্তমান সরকারের গত চার বছরেও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তারা ডিজিটাল বাংলাদেশের মমার্থ বুঝতে পারেননি। এই প্রশাসন অদক্ষ ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান বলেন, 'নির্বাচনের আগে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। গত পৌনে চার বছরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অর্জন সামান্যই। কয়েক দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন শিক্ষাক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করা হয়। অথচ মন্ত্রণালয়গুলোর ওয়েবসাইটগুলোর তথ্যই ভুল, ত্রুটিপূর্ণ ও অশুদ্ধ। অথচ সরকারের ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করতে দুই দিনও লাগার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা দুঃখজনক।' তিনি আরো বলেন, 'সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করেন, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের। তাঁদের ব্যর্থতার দায় সরকারপ্রধানের। মন্ত্রণালয়গুলোর ভুলে ভরা ওয়েবসাইট লালন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে না পারার বড় কারণ হলো সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবাই অযোগ্য। কথাটা একটু নির্মম হয়ে গেল।'
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, "আগামী ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় 'ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২' কনফারেন্স হবে। বিশ্বের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের উদ্যোগ তুলে ধরা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়াই এর মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথিরা আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন।"
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই তোড়জোড়ের মহিমা ধূলিসাৎ হতে চলেছে কিছু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দৃষ্টিকটু ও হাস্যকর ভুলের কারণে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের বানানে ভুল আছে। মন্ত্রণালয়টির ওয়েবসাইটে (http://www.mowca.gov.bd/?p=743) একটি ছবির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে, 'ক্ষুদ্র নারী উদ্বোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করার জন্য জয়িতার উদ্বোধন করছেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনা।' ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই বাক্যটি শোভা পাচ্ছে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটটিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান এই বাক্যটি দেখে অবাক হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর নামের বানান ছাড়াও বাক্যটিতে আরো পাঁচটি ভুল ধরেন তিনি।
ওয়েবসাইটটিতে আরেকটি ছবির বর্ণনায় 'প্রতিমন্ত্রী' শব্দটি লেখা হয়েছে 'প্রতিমন্তী'। আবার আরেকটি ছবির বর্ণনায় রয়েছে, 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১২ উতযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।' এ বাক্যেও বানান ভুলের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করে 'রাখছেন' না লিখে অসম্মানসূচক 'রাখছে' লেখা হয়েছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলোর বাণিজ্য সংগঠন আপটার মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বরে। তিন বছরের পুরনো ঘটনাটিকে এখনো ভবিষ্যৎ করে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে (http://www.mincom.gov.bd/reg_bil_trade.php)। বৈঠক সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, 'আপটার মন্ত্রিপরিষদ আশা করছে ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বরে সিউলে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।' আর দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক সম্পর্কে এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, '২০০৯ সালের ২৪-২৮ অক্টোবর নেপালে সাফটার মন্ত্রি পর্যায়ে বৈঠক হবে।' অর্থাৎ, ২০০৯ সালের পরে ওয়েবসাইটটিতে আর হাতই দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মাস দুয়েক আগে এ বিষয়ে তখনকার বাণিজ্যসচিব (বর্তমানে এনবিআর চেয়ারম্যান) মো. গোলাম হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তৎক্ষণাৎ টেলিফোন করে এক কর্মকর্তাকে দ্রুত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করার নির্দেশ দেন। তবে তাতে যে কোনো কাজ হয়নি, ওয়েবসাইটটির বর্তমান হাল তার প্রমাণ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মন্ত্রীকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। এতে মন্ত্রীর ছবির ওপর বলা আছে, 'আস্ক ইউর মিনিস্টার' বা আপনার মন্ত্রীকে প্রশ্ন করুন। আগের মন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খান এ ব্যবস্থা করেছেন। তবে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর মেলে না। বর্তমান মন্ত্রী জি এম কাদেরকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একাধিকবার প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর মেলেনি। এ বিষয়ে গত ঈদুল আজহার পর মন্ত্রী জি এম কাদেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রশ্নগুলো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমার কাছে পাঠান না। তাই উত্তর দেওয়াও সম্ভব হয় না।'
সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হলো জনপ্রশাসন। এ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা আছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে ১৩তম সার্ক সম্মেলনের জন্য যে স্যুভেনির প্রকাশিত হয়েছিল, সেখান থেকে এ তথ্যটি উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এরপর বাংলাদেশে আরেকটি আদমশুমারি হওয়ার কথা কমবেশি সবাই জানে।
জাতীয় সংসদ থেকে প্রতি তিন মাস পর একটি করে বুলেটিন প্রকাশিত হওয়ার কথা। তবে এর ওয়েবসাইটে গিয়ে পাওয়া গেল সর্বশেষ ২০১১ সালের এপ্রিল-জুন সংখ্যা। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাসিক ভিত্তিতে একটি করে নিউজলেটার প্রকাশিত হলেও ওয়েবসাইটে রয়েছে শুধু একটি সংখ্যা, ২০১১ সালের অক্টোবর সংখ্যা।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ওয়েবসাইটটি দেখলে মনে হয়, ২০১০ সালের ৯ আগস্টের পর সেটি আর হালনাগাদ করা হয়নি। ওই দিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য এবং ইকুয়েডরের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগের দিন দেশটির তখনকার রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানানোর তথ্য আছে ওয়েবসাইটটিতে।
আনন্দ কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, '২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিল। জয়লাভের পরের চার বছরে তারা বিষয়টি ভুলে যায়নি। সরকার চেষ্টা করছে। তবে আমাদের দেশের প্রশাসন একেবারেই প্রস্তুত নয়। এই চার বছরে ই-গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হয়নি। ঔপনিবেশিক ধারায় চলা এই প্রশাসন মানসিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বর্তমান সরকারের গত চার বছরেও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তারা ডিজিটাল বাংলাদেশের মমার্থ বুঝতে পারেননি। এই প্রশাসন অদক্ষ ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান বলেন, 'নির্বাচনের আগে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। গত পৌনে চার বছরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অর্জন সামান্যই। কয়েক দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন শিক্ষাক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করা হয়। অথচ মন্ত্রণালয়গুলোর ওয়েবসাইটগুলোর তথ্যই ভুল, ত্রুটিপূর্ণ ও অশুদ্ধ। অথচ সরকারের ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করতে দুই দিনও লাগার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা দুঃখজনক।' তিনি আরো বলেন, 'সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করেন, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের। তাঁদের ব্যর্থতার দায় সরকারপ্রধানের। মন্ত্রণালয়গুলোর ভুলে ভরা ওয়েবসাইট লালন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে না পারার বড় কারণ হলো সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবাই অযোগ্য। কথাটা একটু নির্মম হয়ে গেল।'
No comments