ফিরে দেখা-বিপ্লব ও বেদনার গাথা by বৃত্বা রায় দীপা
আমার কল্পনার আনোয়ার-দেলোয়াররা কখনও মরে যেত না। আমার শিশুমন তাদের বাঁচিয়ে দিত। লাখো দানবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতিয়ে দিত। কেননা শৈশবে আমি তখনও ভালো করে বুঝতে শিখিনি, বিপ্লবীদের মৃত্যু নেই। কোনোকালেই নেই
১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল। রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে ঘটেছিল ইতিহাসের এক নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। এই দিনে অমানবিক কারাশ্রমের বিরুদ্ধে কারাবন্দি কমিউনিস্টরা বিদ্রোহ করেছিলেন। বিপ্লবীদের রক্তস্রোতে ভেসে গিয়েছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কমিউনিস্ট পার্টির প্রচুর নেতাকর্মী ওপার বাংলায় চলে যান। বিপ্লবের সম্ভাবনা আর স্বপ্ন বুকে নিয়ে যারা থেকে যান স্বদেশে, তারা জীবন বাজি রেখেই কমিউনিস্ট পার্টির লাল পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভুলের পটভূমিতে জন্ম নেওয়া সাম্প্রদায়িক শিশুরাষ্ট্র পাকিস্তানে তখন প্রবলভাবে চলছে কমিউনিস্ট নিগ্রহ। কারণ কমিউনিস্টরা পাকিস্তান তৈরির অসারতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তরুণ কমিউনিস্টদের নিরবচ্ছিন্ন শ্রমে তৎকালীন পূর্ববাংলার বেশ কিছু এলাকায় তখন কৃষক-জনতার মধ্যে কমিউনিস্টদের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পাক সরকার। কমিউনিস্টদের ওপর চলতে থাকে জেল-জুলুম-নিপীড়ন।
ব্রিটিশের চালু করা কারা-শাস্তির চর্চা তখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে কারাগারগুলোতে। খাবার কম দেওয়া, তামাক নিষিদ্ধ করা, অমানুষিক শারীরিক শ্রম আদায় করে নেওয়া_ এসব ছিল কারাগারের নিয়মিত চিত্র। তার মধ্যে অন্যতম ছিল তেলের ঘানিকলে পশুর পরিবর্তে কয়েদিদের ব্যবহার। রাজশাহী জেলে কমিউনিস্টরাই প্রথম এই অমানবিক শাস্তির প্রতিবাদ করে। দানা বাঁধতে শুরু করে আন্দোলন। একপর্যায়ে রাজবন্দিদের দাবির মুখে তৎকালীন আইজি প্রিজন মোহাম্মদ আমিরুদ্দিন আলোচনায় বসতে রাজি হন। জেলেই কমরেডরা এক তাৎক্ষণিক মিটিং করে ১২ জন প্রতিনিধিকে আলোচনার জন্য পাঠান। তাদের মধ্যে ছিলেন পাবনার কমরেড অমূল্য লাহিড়ী, রাজশাহীর কমরেড সীতাংশু মৈত্র ও কমরেড বিজন সেন, বর্ধমানের কমরেড মনসুর হাবিব, যশোরের কমরেড আবদুল হক, কুষ্টিয়ার কমরেড হানিফ শেখ প্রমুখ। আলোচনার সূচনাতেই ধৈর্য হারান আইজি প্রিজন। তিনি উত্তপ্ত হয়ে জানতে চান, রাজবন্দিরা কেন কয়েদিদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে চান? সত্যিই রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ, প্রভুপ্রিয় এবং জনবিচ্ছিন্ন এই সেবকের পক্ষে বিষয়টি বোঝা সম্ভব ছিল না। কয়েদি আর কমিউনিস্ট রাজবন্দিরা যখন একই জেলে বন্দি এবং কয়েদিদের দাবি যখন ন্যায়সঙ্গত, তখন তারা নীরব থাকতে পারেন না। কারণ জনগণের দুর্দশা মোচনের জন্য কমিউনিস্টরাই জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত। আর এর প্রমাণও মিলেছিল এ প্রশ্নের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু আইজি প্রিজন সেদিন জেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে জেল সুপার বিলকে একটি সাংঘাতিক নির্দেশ দিয়ে যান। নির্দেশটি হলো, কমিউনিস্টদের মধ্যে যারা নেতাগোছের, তাদের বিচ্ছিন্ন করে ১৪ নম্বর সেলে দিতে হবে। এ নির্দেশের একমাত্র কারণ ছিল, যেন একসঙ্গে কোনো রকম মতবিনিময়ের সুযোগ না পায় কমিউনিস্টরা। এ সিদ্ধান্তটি নিয়ে জেলের ভেতরে কমরেডদের মধ্যে প্রচুর বিতর্ক হয়। কারাবন্দি কমিউনিস্টরা সেদিন নেতা মেনে নিয়েছিলেন কমরেড আবদুল হককে। তার নেতৃত্বেই সারারাত বৈঠক চলে। সেদিনের সেই ঐতিহাসিক বৈঠকে একমতে মিলতে অনেক বিতর্ক আসে। আবদুল হকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ছিল, খাপড়া ছেড়ে কেউ যাবে না।
২৪ এপ্রিল, ১৯৫০, সোমবার। দিনটি ছিল জেল সুপার এডওয়ার্ড বিলের কারা পরিদর্শনের। সারারাত মিটিংয়ের পর সকাল ৯টায় কমরেডরা আবার আলোচনায় বসলে জেল সুপার বিল সরাসরি ঢুকে পড়েন খাপড়া ওয়ার্ডে। কমরেড আবদুল হকের সামনে গিয়ে উচ্চেস্বরে বলেন_ হক, এ মুহূর্তে তোমরা কয়েকজন খাপড়া ছেড়ে চলে যাও। কমরেড হক বিলকে এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে গেলেই জেল সুপার চিৎকার করে খাপড়ার দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ দেওয়ার পরই বিল দৌড়ে বের হয়ে যেতে চাইলে তার পথরোধ করে দাঁড়ান কমরেড বাবর আলী, দেলোয়ার ও রশীদউদ্দীন। বিল হান্টারের আঘাতে বাবর আলীর কব্জি ভেঙে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে হুইসেল বাজান। সঙ্গে সঙ্গে চলি্লশজন সশস্ত্র সিপাহি ঘিরে ফেলে খাপড়া ওয়ার্ড। খাপড়ার ভেতরে সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হয়, মূল দরজায় প্রতিরোধ রাখতে হবে। কমরেড প্রসাদ রায় ছুটে গিয়ে খাপড়ার নড়বড়ে দরজায় কাঁধ লাগিয়ে আটকে রাখেন। উল্টো পাশের প্রবল ধাক্কায় দরজা আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাইরে থেকে লাঠিধারী পুলিশ জানালা দিয়ে লাঠি ছুড়ে মারতে থাকে। নিরস্ত্র রাজবন্দিরা থালা-বাটি, দোয়াত-ওষুধের শিশি ছুড়ে আক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মধ্যে দরজার ফাঁক দিয়ে নল ঢুকিয়ে গুলি চালালে কমরেড প্রসাদ রায়ের বাম ঊরুতে সাতটি বুলেট বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বৃষ্টির মতো গুলি চালাতে চালাতে খাপড়ায় ঢুকে পড়ে আর্মড পুলিশ। রাইফেলের গর্জনে ফেটে পড়ে কারাগার। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে দেয়াল থেকে ছাদ পর্যন্ত লালে লাল হয়ে যায়। সেখানেই ঝরে পড়ে ছয়জন কমরেডের জীবন। অবিরাম গুলির পর শুরু হলো লাঠিচার্জ। তিন দফায় লাঠিচার্জের মধ্যে একবারের জন্য খাপড়ায় ঢোকেন বিল। কমরেড হককে খুঁজে বের করে হাতের হান্টার দিয়ে তার মাথায় তীব্র আঘাত করেন। মাথা ফেটে লুটিয়ে পড়েন হক। গুলিবিদ্ধ বিজন সেন চিৎকার করে বলে ওঠেন_ আমরা মরি নাই কমরেড, আমরা বিজয়ী হয়েছি, ভবিষ্যৎ আমাদের। এ কথা বলেই প্রাণ হারান তিনি। হাসপাতালে মারা যান কমরেড কম্পরাম সিং। শহীদের সংখ্যা হলো সাত। এই সাতজন হলেন কমরেড বিজন সেন, হানিফ শেখ, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, সুখেন ভট্টাচার্য, সুধীন ধর ও কম্পরাম সিং। ইতিহাসের উজ্জ্বল সাতটি নক্ষত্র। এক নির্ভীক লড়াইয়ের অগ্রপথিক, যারা সূচনা করে গেছেন মানুষ ও মৃত্তিকাকে ভালোবাসার এক অনন্য ইতিহাস।
আমার সৌভাগ্য, আমি খাপড়ার বীর কমরেড প্রসাদ রায়ের সন্তান। আমার সবুজ শৈশবজুড়ে ছিল এই অমিতবীরদের গাথা। আমার ঘুমপাড়ানি গল্পের লালকমল-নীলকমলরা ছিল কম্পরাম-হানিফ। আমার কল্পনার আনোয়ার-দেলোয়াররা কখনও মরে যেত না। আমার শিশুমন তাদের বাঁচিয়ে দিত। লাখো দানবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতিয়ে দিত। কেননা শৈশবে আমি তখনও ভালো করে বুঝতে শিখিনি, বিপ্লবীদের মৃত্যু নেই। কোনোকালেই নেই।
বৃত্বা রায় দীপা : কমরেড প্রসাদ রায়ের কন্যা, মানবাধিকার কর্মী b.roydipa@yahoo.com
ব্রিটিশের চালু করা কারা-শাস্তির চর্চা তখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে কারাগারগুলোতে। খাবার কম দেওয়া, তামাক নিষিদ্ধ করা, অমানুষিক শারীরিক শ্রম আদায় করে নেওয়া_ এসব ছিল কারাগারের নিয়মিত চিত্র। তার মধ্যে অন্যতম ছিল তেলের ঘানিকলে পশুর পরিবর্তে কয়েদিদের ব্যবহার। রাজশাহী জেলে কমিউনিস্টরাই প্রথম এই অমানবিক শাস্তির প্রতিবাদ করে। দানা বাঁধতে শুরু করে আন্দোলন। একপর্যায়ে রাজবন্দিদের দাবির মুখে তৎকালীন আইজি প্রিজন মোহাম্মদ আমিরুদ্দিন আলোচনায় বসতে রাজি হন। জেলেই কমরেডরা এক তাৎক্ষণিক মিটিং করে ১২ জন প্রতিনিধিকে আলোচনার জন্য পাঠান। তাদের মধ্যে ছিলেন পাবনার কমরেড অমূল্য লাহিড়ী, রাজশাহীর কমরেড সীতাংশু মৈত্র ও কমরেড বিজন সেন, বর্ধমানের কমরেড মনসুর হাবিব, যশোরের কমরেড আবদুল হক, কুষ্টিয়ার কমরেড হানিফ শেখ প্রমুখ। আলোচনার সূচনাতেই ধৈর্য হারান আইজি প্রিজন। তিনি উত্তপ্ত হয়ে জানতে চান, রাজবন্দিরা কেন কয়েদিদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে চান? সত্যিই রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ, প্রভুপ্রিয় এবং জনবিচ্ছিন্ন এই সেবকের পক্ষে বিষয়টি বোঝা সম্ভব ছিল না। কয়েদি আর কমিউনিস্ট রাজবন্দিরা যখন একই জেলে বন্দি এবং কয়েদিদের দাবি যখন ন্যায়সঙ্গত, তখন তারা নীরব থাকতে পারেন না। কারণ জনগণের দুর্দশা মোচনের জন্য কমিউনিস্টরাই জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত। আর এর প্রমাণও মিলেছিল এ প্রশ্নের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু আইজি প্রিজন সেদিন জেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে জেল সুপার বিলকে একটি সাংঘাতিক নির্দেশ দিয়ে যান। নির্দেশটি হলো, কমিউনিস্টদের মধ্যে যারা নেতাগোছের, তাদের বিচ্ছিন্ন করে ১৪ নম্বর সেলে দিতে হবে। এ নির্দেশের একমাত্র কারণ ছিল, যেন একসঙ্গে কোনো রকম মতবিনিময়ের সুযোগ না পায় কমিউনিস্টরা। এ সিদ্ধান্তটি নিয়ে জেলের ভেতরে কমরেডদের মধ্যে প্রচুর বিতর্ক হয়। কারাবন্দি কমিউনিস্টরা সেদিন নেতা মেনে নিয়েছিলেন কমরেড আবদুল হককে। তার নেতৃত্বেই সারারাত বৈঠক চলে। সেদিনের সেই ঐতিহাসিক বৈঠকে একমতে মিলতে অনেক বিতর্ক আসে। আবদুল হকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ছিল, খাপড়া ছেড়ে কেউ যাবে না।
২৪ এপ্রিল, ১৯৫০, সোমবার। দিনটি ছিল জেল সুপার এডওয়ার্ড বিলের কারা পরিদর্শনের। সারারাত মিটিংয়ের পর সকাল ৯টায় কমরেডরা আবার আলোচনায় বসলে জেল সুপার বিল সরাসরি ঢুকে পড়েন খাপড়া ওয়ার্ডে। কমরেড আবদুল হকের সামনে গিয়ে উচ্চেস্বরে বলেন_ হক, এ মুহূর্তে তোমরা কয়েকজন খাপড়া ছেড়ে চলে যাও। কমরেড হক বিলকে এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে গেলেই জেল সুপার চিৎকার করে খাপড়ার দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ দেওয়ার পরই বিল দৌড়ে বের হয়ে যেতে চাইলে তার পথরোধ করে দাঁড়ান কমরেড বাবর আলী, দেলোয়ার ও রশীদউদ্দীন। বিল হান্টারের আঘাতে বাবর আলীর কব্জি ভেঙে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে হুইসেল বাজান। সঙ্গে সঙ্গে চলি্লশজন সশস্ত্র সিপাহি ঘিরে ফেলে খাপড়া ওয়ার্ড। খাপড়ার ভেতরে সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হয়, মূল দরজায় প্রতিরোধ রাখতে হবে। কমরেড প্রসাদ রায় ছুটে গিয়ে খাপড়ার নড়বড়ে দরজায় কাঁধ লাগিয়ে আটকে রাখেন। উল্টো পাশের প্রবল ধাক্কায় দরজা আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাইরে থেকে লাঠিধারী পুলিশ জানালা দিয়ে লাঠি ছুড়ে মারতে থাকে। নিরস্ত্র রাজবন্দিরা থালা-বাটি, দোয়াত-ওষুধের শিশি ছুড়ে আক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মধ্যে দরজার ফাঁক দিয়ে নল ঢুকিয়ে গুলি চালালে কমরেড প্রসাদ রায়ের বাম ঊরুতে সাতটি বুলেট বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বৃষ্টির মতো গুলি চালাতে চালাতে খাপড়ায় ঢুকে পড়ে আর্মড পুলিশ। রাইফেলের গর্জনে ফেটে পড়ে কারাগার। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে দেয়াল থেকে ছাদ পর্যন্ত লালে লাল হয়ে যায়। সেখানেই ঝরে পড়ে ছয়জন কমরেডের জীবন। অবিরাম গুলির পর শুরু হলো লাঠিচার্জ। তিন দফায় লাঠিচার্জের মধ্যে একবারের জন্য খাপড়ায় ঢোকেন বিল। কমরেড হককে খুঁজে বের করে হাতের হান্টার দিয়ে তার মাথায় তীব্র আঘাত করেন। মাথা ফেটে লুটিয়ে পড়েন হক। গুলিবিদ্ধ বিজন সেন চিৎকার করে বলে ওঠেন_ আমরা মরি নাই কমরেড, আমরা বিজয়ী হয়েছি, ভবিষ্যৎ আমাদের। এ কথা বলেই প্রাণ হারান তিনি। হাসপাতালে মারা যান কমরেড কম্পরাম সিং। শহীদের সংখ্যা হলো সাত। এই সাতজন হলেন কমরেড বিজন সেন, হানিফ শেখ, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, সুখেন ভট্টাচার্য, সুধীন ধর ও কম্পরাম সিং। ইতিহাসের উজ্জ্বল সাতটি নক্ষত্র। এক নির্ভীক লড়াইয়ের অগ্রপথিক, যারা সূচনা করে গেছেন মানুষ ও মৃত্তিকাকে ভালোবাসার এক অনন্য ইতিহাস।
আমার সৌভাগ্য, আমি খাপড়ার বীর কমরেড প্রসাদ রায়ের সন্তান। আমার সবুজ শৈশবজুড়ে ছিল এই অমিতবীরদের গাথা। আমার ঘুমপাড়ানি গল্পের লালকমল-নীলকমলরা ছিল কম্পরাম-হানিফ। আমার কল্পনার আনোয়ার-দেলোয়াররা কখনও মরে যেত না। আমার শিশুমন তাদের বাঁচিয়ে দিত। লাখো দানবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতিয়ে দিত। কেননা শৈশবে আমি তখনও ভালো করে বুঝতে শিখিনি, বিপ্লবীদের মৃত্যু নেই। কোনোকালেই নেই।
বৃত্বা রায় দীপা : কমরেড প্রসাদ রায়ের কন্যা, মানবাধিকার কর্মী b.roydipa@yahoo.com
No comments