গোপন মার্কিন দলিল- বিহারিদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল ওরা by মিজানুর রহমান খান
পেনসিল দিয়ে যোসেফ সিসকোর সই। একাত্তরে তিনি ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। নথিটিতে লাল টেপ লাগানো। এটি একটি অবস্থানপত্র। এতে পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের রাষ্ট্রদূতদের করণীয় নির্দেশ করছে।
স্মারকটির শিরোনাম: ‘পূর্ব পাকিস্তান: সংখ্যালঘু, পাকসেনা, তৃতীয় দেশের নাগরিক’।
এর দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফের একটি টাইপ করা বাক্য পেনসিল দিয়ে কাটা। সেখানে লেখা, ‘সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ করে উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ক. পাকিস্তান সরকার ঢাকার বিহারি সংখ্যালঘুদের অস্ত্র দিচ্ছে। খ. ‘মুক্ত করা অঞ্চলে’ ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তর করছে।
কে বি লাল: কে বি লাল ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব। দুটি নথি পেলাম। এ থেকে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ নিয়ে কে বি লালই প্রথম মার্কিন সরকারের সঙ্গে একাত্তরের এই দিনটিতে (৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১) আলোচনা শুরু করেছিলেন এবং তাঁর প্রস্তাবকে পররাষ্ট্র দপ্তর স্বাগত জানিয়েছিল।
ওয়াশিংটন থেকে ন্যাটোর মার্কিন মিশনে পাঠানো ২২১৮৩০ নম্বর তারবার্তায় বলা হয়েছে, ‘আমরা কে বি লালের আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে বিহারিদের নিয়ে ভয়ানক রকমের একটা রক্তপাত হতে পারে। একই সঙ্গে তৃতীয় দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা কে বি লালের এই মন্তব্যকে স্বাগত জানাই যে, ভারত বিহারি ও পাঞ্জাবিদের নিরাপত্তার দায়দায়িত্ব নেবে। আমরা আশা করি, ভারত এ লক্ষ্যে যা কিছু দরকার পড়ে, তা-ই যেন তারা গ্রহণ করে। এটা যাতে তারা প্রকাশ্যে দিতে শুরু করতে পারে, সে জন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে পারে।
‘পাকিস্তানি সেনাদের বিষয়ে লালের “ব্যক্তিগত” পরামর্শের ব্যাপারে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি যে, ভারতীয় সেনাদের কাছে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ করাই উচিত হবে এবং ভারতের এই প্রস্তাবকেও স্বাগত জানাচ্ছি যে, যুদ্ধবন্দীদের জেনেভা কনভেনশনের আওতায় নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
‘নয়াদিল্লির দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আপনি অবিলম্বে পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউলের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার সময় আপনি বিহারি ও পাঞ্জাবিদের নিরাপত্তার বিষয়ে লালের দেওয়া অঙ্গীকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলবেন। আপনি একই সঙ্গে সামরিক বন্দীদের নিরাপত্তার কথাও তুলবেন।’
এই বার্তায় ইসলামাবাদকে বলা হয়, ‘আপনি যদি মনে করেন যে এটা করা সম্ভব, তাহলে পাকিস্তান সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আমাদের মানবিক উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরুন। তাদের বলুন, পাকিস্তানি সেনারা যাতে এমন কিছু আর করে না বসে, যাতে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে আগুনে ঘি ঢালা হয়। আমরা অবশ্যই মনে করি যে, এটা একটা চরমতম সংবেদনশীল বিষয়। কোন পর্যায়ে তুলবেন, সেটা আপনি ভেবে ঠিক করুন।’
এর আগে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং যে বার্তাটি পাঠান, সেই সূত্রেই ওই নির্দেশনা। কেনেথ কিটিংয়ের বিবরণ ছিল এ রকম: ‘আজ ৮ ডিসেম্বর কে বি লালের সঙ্গে আমার দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয়। তিনি বলেন, কেবল মানবিক বিবেচনায় পূর্ব পাকিস্তানের লড়াই অবিলম্বে থামানোর দাবি রাখে। এটা যত তাড়াতাড়ি করা যায়, ততই মঙ্গল। যুদ্ধ আরও চালিয়ে যাওয়াটা পাকিস্তান সরকারের জন্য আর কোনো তাৎপর্য বহন করে না। ভারত চায় না যে, আর কোনো প্রাণহানি ঘটুক। এটা বিহারি ও পাঞ্জাবিদের জন্য বিশেষ করে সত্য।’
কে বি লাল বলেন, ‘এটা যদি একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ আত্মসমর্পণ ঘটে, তাহলে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা ভারতের পক্ষে সহজ হবে। আর যদি সেটা না-ও ঘটে, তাহলেও ভারত এর দায়দায়িত্ব নিচ্ছে। তবে সেটা যে সবক্ষেত্রে নিরাপদ হবে, সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে অপারগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘যশোরে কিছুই ঘটেনি। ভারতীয় সেনারা সেখানে নিয়ন্ত্রণ নিতে যত সময়ের হেরফের ঘটেছিল, এই যা। ভাগ্যক্রমে যশোরে কিছুই ঘটেনি।’
কিটিং বলেন, ‘আমি তখন তাঁকে বলি যে তিনি যা বলেছেন, সেটা কেবল তখনই সম্ভব যদি পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের সব অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা এর কতিপয় নির্দিষ্ট এলাকা থেকে তারা সরে যায়। লাল সম্মত হন এবং বলেন, “পাকিস্তান সরকারের উচিত হবে সেই সব মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নেওয়া, যারা তাদের সমর্থন দিয়েছিল।”
‘আমি যখন উঠে আসছি, তখন লাল বলেন, তিনি আশা করতে পারেন কি না যে, তাঁর এই ব্যক্তিগত প্রস্তাবটি ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হিসেবে পাকিস্তান সরকারের কাছে তারা পৌঁছে দিতে পারেন কি না। কে বি লাল অবশ্য বলেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত হলেও তিনি মনে করেন যে, এটাই ভারতের সরকারি প্রস্তাবে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, তিনি পরে আমাকে ফোন করে এটা ব্যাখ্যা করার কথা বলেছিলেন। সেটা তিনি করেও ছিলেন। কে বি লাল বললেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।” আপাতত মত হচ্ছে, পাকিস্তানের কাছে এই প্রস্তাব তাঁর ব্যক্তিগত মত হিসেবেই পৌঁছে দিতে। কারণ, ভারত এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিব্রত করতে চায় না।’
কিটিং ওই বিবরণ দিয়ে মন্তব্য করেন যে, ‘লালের প্রস্তাব আমার কাছে এই মুহূর্তে দায়িত্বশীল ও রাষ্ট্রনায়কোচিত মনে হয়েছে। এটা এমন একটি প্রস্তাব, যার ওপর দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু একটা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।’
শেষ মুসলিম: তবে কথা হলো, জেনারেল ইয়াহিয়া তখনো তাঁর ‘ব্লু প্রিন্ট’ বাস্তবায়নে বিভোর ছিলেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত যোসেফ ফারল্যান্ডকে তাঁর বাসভবনে ডেকে আধা ঘণ্টা অনানুষ্ঠানিক কথা বলেছেন। নুরুল আমিনকে দিয়ে সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি আগ্রহ দেখান। ভারতের নৌজাহাজ ডুবে গেল কি না, তার খবর নেন। আর ফারল্যান্ডকে বলেন, ‘আমি ক্ষমতা হস্তান্তরে আমার ব্লু প্রিন্ট বাস্তবায়ন করছি। পাকিস্তানের একজন মুসলমান বেঁচে থাকতেও তারা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবে। কারণ, তা না হলে ইসলাম ধর্ম বিপদগ্রস্ত হবে।’
লক্ষণীয়, ফারল্যান্ডের সঙ্গে উচ্চারিত তাঁর এই বাক্যটি নিক্সন-কিসিঞ্জারের জন্য পররাষ্ট্র দপ্তর যে সিচুয়েশন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল, তাতেও উল্লেখ করা হয়।
ইয়াহিয়া এদিন আরও বলেছিলেন, ‘আমি ২৭ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে চেয়েছিলাম, ভারতের কারণেই পারলাম না।’
ইসলামাবাদ দূতাবাস এদিনে পৃথক এক বার্তায় বলেছে, ভুট্টো নবনিযুক্ত উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন মিশন উপপ্রধানকে ডেকে পাঠান। ভুট্টো বলেন, ‘তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় যাবেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে সক্রিয় সমঝোতা শুরু করবেন।’
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
এর দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফের একটি টাইপ করা বাক্য পেনসিল দিয়ে কাটা। সেখানে লেখা, ‘সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ করে উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ক. পাকিস্তান সরকার ঢাকার বিহারি সংখ্যালঘুদের অস্ত্র দিচ্ছে। খ. ‘মুক্ত করা অঞ্চলে’ ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তর করছে।
কে বি লাল: কে বি লাল ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব। দুটি নথি পেলাম। এ থেকে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ নিয়ে কে বি লালই প্রথম মার্কিন সরকারের সঙ্গে একাত্তরের এই দিনটিতে (৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১) আলোচনা শুরু করেছিলেন এবং তাঁর প্রস্তাবকে পররাষ্ট্র দপ্তর স্বাগত জানিয়েছিল।
ওয়াশিংটন থেকে ন্যাটোর মার্কিন মিশনে পাঠানো ২২১৮৩০ নম্বর তারবার্তায় বলা হয়েছে, ‘আমরা কে বি লালের আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে বিহারিদের নিয়ে ভয়ানক রকমের একটা রক্তপাত হতে পারে। একই সঙ্গে তৃতীয় দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা কে বি লালের এই মন্তব্যকে স্বাগত জানাই যে, ভারত বিহারি ও পাঞ্জাবিদের নিরাপত্তার দায়দায়িত্ব নেবে। আমরা আশা করি, ভারত এ লক্ষ্যে যা কিছু দরকার পড়ে, তা-ই যেন তারা গ্রহণ করে। এটা যাতে তারা প্রকাশ্যে দিতে শুরু করতে পারে, সে জন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে পারে।
‘পাকিস্তানি সেনাদের বিষয়ে লালের “ব্যক্তিগত” পরামর্শের ব্যাপারে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি যে, ভারতীয় সেনাদের কাছে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ করাই উচিত হবে এবং ভারতের এই প্রস্তাবকেও স্বাগত জানাচ্ছি যে, যুদ্ধবন্দীদের জেনেভা কনভেনশনের আওতায় নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
‘নয়াদিল্লির দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আপনি অবিলম্বে পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউলের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার সময় আপনি বিহারি ও পাঞ্জাবিদের নিরাপত্তার বিষয়ে লালের দেওয়া অঙ্গীকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলবেন। আপনি একই সঙ্গে সামরিক বন্দীদের নিরাপত্তার কথাও তুলবেন।’
এই বার্তায় ইসলামাবাদকে বলা হয়, ‘আপনি যদি মনে করেন যে এটা করা সম্ভব, তাহলে পাকিস্তান সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আমাদের মানবিক উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরুন। তাদের বলুন, পাকিস্তানি সেনারা যাতে এমন কিছু আর করে না বসে, যাতে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে আগুনে ঘি ঢালা হয়। আমরা অবশ্যই মনে করি যে, এটা একটা চরমতম সংবেদনশীল বিষয়। কোন পর্যায়ে তুলবেন, সেটা আপনি ভেবে ঠিক করুন।’
এর আগে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং যে বার্তাটি পাঠান, সেই সূত্রেই ওই নির্দেশনা। কেনেথ কিটিংয়ের বিবরণ ছিল এ রকম: ‘আজ ৮ ডিসেম্বর কে বি লালের সঙ্গে আমার দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয়। তিনি বলেন, কেবল মানবিক বিবেচনায় পূর্ব পাকিস্তানের লড়াই অবিলম্বে থামানোর দাবি রাখে। এটা যত তাড়াতাড়ি করা যায়, ততই মঙ্গল। যুদ্ধ আরও চালিয়ে যাওয়াটা পাকিস্তান সরকারের জন্য আর কোনো তাৎপর্য বহন করে না। ভারত চায় না যে, আর কোনো প্রাণহানি ঘটুক। এটা বিহারি ও পাঞ্জাবিদের জন্য বিশেষ করে সত্য।’
কে বি লাল বলেন, ‘এটা যদি একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ আত্মসমর্পণ ঘটে, তাহলে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা ভারতের পক্ষে সহজ হবে। আর যদি সেটা না-ও ঘটে, তাহলেও ভারত এর দায়দায়িত্ব নিচ্ছে। তবে সেটা যে সবক্ষেত্রে নিরাপদ হবে, সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে অপারগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘যশোরে কিছুই ঘটেনি। ভারতীয় সেনারা সেখানে নিয়ন্ত্রণ নিতে যত সময়ের হেরফের ঘটেছিল, এই যা। ভাগ্যক্রমে যশোরে কিছুই ঘটেনি।’
কিটিং বলেন, ‘আমি তখন তাঁকে বলি যে তিনি যা বলেছেন, সেটা কেবল তখনই সম্ভব যদি পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের সব অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা এর কতিপয় নির্দিষ্ট এলাকা থেকে তারা সরে যায়। লাল সম্মত হন এবং বলেন, “পাকিস্তান সরকারের উচিত হবে সেই সব মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নেওয়া, যারা তাদের সমর্থন দিয়েছিল।”
‘আমি যখন উঠে আসছি, তখন লাল বলেন, তিনি আশা করতে পারেন কি না যে, তাঁর এই ব্যক্তিগত প্রস্তাবটি ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হিসেবে পাকিস্তান সরকারের কাছে তারা পৌঁছে দিতে পারেন কি না। কে বি লাল অবশ্য বলেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত হলেও তিনি মনে করেন যে, এটাই ভারতের সরকারি প্রস্তাবে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, তিনি পরে আমাকে ফোন করে এটা ব্যাখ্যা করার কথা বলেছিলেন। সেটা তিনি করেও ছিলেন। কে বি লাল বললেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।” আপাতত মত হচ্ছে, পাকিস্তানের কাছে এই প্রস্তাব তাঁর ব্যক্তিগত মত হিসেবেই পৌঁছে দিতে। কারণ, ভারত এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিব্রত করতে চায় না।’
কিটিং ওই বিবরণ দিয়ে মন্তব্য করেন যে, ‘লালের প্রস্তাব আমার কাছে এই মুহূর্তে দায়িত্বশীল ও রাষ্ট্রনায়কোচিত মনে হয়েছে। এটা এমন একটি প্রস্তাব, যার ওপর দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু একটা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।’
শেষ মুসলিম: তবে কথা হলো, জেনারেল ইয়াহিয়া তখনো তাঁর ‘ব্লু প্রিন্ট’ বাস্তবায়নে বিভোর ছিলেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত যোসেফ ফারল্যান্ডকে তাঁর বাসভবনে ডেকে আধা ঘণ্টা অনানুষ্ঠানিক কথা বলেছেন। নুরুল আমিনকে দিয়ে সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি আগ্রহ দেখান। ভারতের নৌজাহাজ ডুবে গেল কি না, তার খবর নেন। আর ফারল্যান্ডকে বলেন, ‘আমি ক্ষমতা হস্তান্তরে আমার ব্লু প্রিন্ট বাস্তবায়ন করছি। পাকিস্তানের একজন মুসলমান বেঁচে থাকতেও তারা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবে। কারণ, তা না হলে ইসলাম ধর্ম বিপদগ্রস্ত হবে।’
লক্ষণীয়, ফারল্যান্ডের সঙ্গে উচ্চারিত তাঁর এই বাক্যটি নিক্সন-কিসিঞ্জারের জন্য পররাষ্ট্র দপ্তর যে সিচুয়েশন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল, তাতেও উল্লেখ করা হয়।
ইয়াহিয়া এদিন আরও বলেছিলেন, ‘আমি ২৭ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে চেয়েছিলাম, ভারতের কারণেই পারলাম না।’
ইসলামাবাদ দূতাবাস এদিনে পৃথক এক বার্তায় বলেছে, ভুট্টো নবনিযুক্ত উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন মিশন উপপ্রধানকে ডেকে পাঠান। ভুট্টো বলেন, ‘তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় যাবেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে সক্রিয় সমঝোতা শুরু করবেন।’
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments