সরকারি মিলে আখ মাড়াই-লোকসানের বোঝা কে বইবে
স্বাধীনতার পর ব্যক্তিমালিকানাধীন যেসব শিল্প-কারখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে, তার মধ্যে ছিল কয়েকটি চিনিকল। প্রধানত উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ সব চিনিকলের অবস্থান। মূল কাঁচামাল আখের পর্যাপ্ত ফলনের কারণেই ওই সব এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল মিলগুলো।
কিন্তু অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সরকারি সব চিনিকলেই বছরের পর বছর চলছে লোকসান। শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায় একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'শত শত কোটি টাকা লোকসানের বোঝা :বিভিন্ন চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হচ্ছে আজ'। পঞ্চগড়, ঈশ্বরদী, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা প্রভৃতি জেলা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে একই চিত্র_ চিনিকল এলাকায় অবৈধ ক্রাশার মেশিনে গুড় তৈরি, আখের স্বল্পতা, উৎপাদন খরচের তুলনায় চিনির কমমূল্য নির্ধারণ এবং মেশিন-যন্ত্রাংশ পুরনো হয়ে যাওয়াই অব্যাহত লোকসানের কারণ। দুর্নীতি তো আছেই। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্যরা আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ লাভ করেছেন। কেন ধারাবাহিক লোকসান এবং নতুন মৌসুমে লোকসানের পরিমাণ কত বাড়বে_ তা নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবেন কি-না, সেটা জানা নেই। লোকসানি প্রতিষ্ঠানে আখ মাড়াই কাজ উদ্বোধনের জন্য সাড়ম্বর আয়োজনের দরকার আছে কি-না, সেটাও হয়তো তারা আমলে নেবেন না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মিল এবং তাদের মাথার ওপর বসে থাকা করপোরেশনের জন্য অবশ্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতে কয়েকটি চিনিকল স্থাপিত হয়েছে। তারা কাঁচামালের জন্য বাইরের উৎসের ওপর নির্ভর করছে। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় সরকার তাদের চিনি রফতানি করার অনুমতি দিয়েছে। সরকারি মিলগুলোকে এসব মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। তারা কেবল একটি যুক্তি দিতে পারে যে, বেসরকারি খাত আখ উৎপাদকদের স্বার্থ দেখে না। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন দেশে আখের ফলন বাড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানের সুফল কাজে লাগানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষক ও মিল কর্তৃপক্ষ সবারই লাভ। বাংলাদেশকেও সে পথেই চলতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতি থেকেও মুক্তি পেতে হবে। মিল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির দায় ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।
No comments