দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয় by আবদুল মান্নান
দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়- এ কথাটা এ বিজয়ের মাসে উচ্চারণ করতে হচ্ছে এটিই আমাদের দুর্ভাগ্য। জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার-সমর্থকরা পুলিশের ওপর যেভাবে আক্রমণ করছে, তা সচেতন সব মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।
পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করছে, গাড়ি ভাঙচুর করছে অথচ পুলিশ মার খাচ্ছে প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। রাজনৈতিক দূরদর্শিতাও এ ক্ষেত্রে মানা যায় না। এসব এমন একটি অপরাধ, যাকে আইনের দৃষ্টিতে মোটেও ছাড় দেওয়া যায় না।
রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের একটি হলো প্রশাসন, আর পুলিশ সেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে যারা সন্ত্রাসী আঘাত করে, তারা সরাসরি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে বলা যায়। তাদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করালে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জামায়াত-শিবির তা-ই করতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের তা করতে দেওয়া যায় না। তারা রাজনৈতিক খোলস থেকে বেরিয়ে সরাসরি আরবান টেরোরিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একসময় জাপান, জার্মানিতেও এমন টেরোরিস্টদের উদ্ভব ঘটেছিল। নব্য নাৎসিদের কথা মাঝেমধ্যে শোনা যায়। তবে তাদের দেশের প্রশাসন তা শক্তভাবে দমন করে। আমাদের দেশেও স্বাধীনতার ৪১ বছর পর আজ নব্য রাজাকারদের অভ্যুদয় ঘটছে ছাত্রশিবির নামের সংগঠনের ছত্রছায়ায়। এদের ভেতরে একাত্তরের রাজাকারদের ভাবমূর্তির সব কিছুই লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব বিভ্রান্ত তরুণ-যুবক এ দেশকে একটি মিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র বানাতে চায়। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব এদের মাথা থেকে মুছে দিয়েছে রাজাকার-আলবদরগোষ্ঠী। অথচ এরা স্বাধীন দেশের নতুন প্রজন্ম। তাই খুবই ভয়ের ও ভাবনার বিষয় এটি। এই যে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের ছেলেরা বিপথগামী হয়েছে, তা কিভাবে সম্ভব হলো!
আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্যদিকে তাদের সমান বয়সের তরুণ-যুবকরা ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখার টিকিট জোগাড় করছে। অনেক ছেলেমেয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি তৈরি করছে, করতে চাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো না কোনো সৃষ্টিশীল কাজ। হাজারো ছেলেমেয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। আর এরা কোন লোভে বা সাহসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুরু করেছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ- এ বিষয়টি আমাদের সবার জন্য আতঙ্কের। সমাজের সর্বস্তরের নাগরিককে এ বিষয়ে ভাবতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। এটি একা কোনো সরকারের কাজ নয়। পরিবারের দায়িত্ব ছেলেমেয়েদের খোঁজ রাখা। তারা কোনো সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কি? কোনো ভুল মন্ত্রে কোনো দল বা গোষ্ঠী তাদের ভুলিয়ে বিভ্রান্ত করছে কি? এসব লক্ষ রাখতে হবে পরিবারের সদস্যদের। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বদলাতে হবে। সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গন থেকে এই দুষ্টক্ষত সারিয়ে তুলতে হবে ধীরে ধীরে। তা না করতে পারলে জাতিকে দিতে হবে তার চরম মূল্য। আজ তারা গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, এমনকি বিজিবির গাড়িও ভাঙচুর করে। এরপর বাকি থাকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ। আর তারা তা-ই চাচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি যদি এমনই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, সেনাবাহিনী রাস্তায় নামে, তাহলে তাদের লক্ষ্য অনেকটা সফল হয়ে যাবে। তারপর তারা সেনাসদস্যদের সঙ্গে যেভাবে পারে ঢিল-বোমা ছুড়বে, দেশে আতঙ্ক তৈরি করে রাজাকারদের বিচার ঠেকানোর চেষ্টা করবে।
জামায়াতের সমর্থক-পৃষ্ঠপোষকরা বিদেশে কোটি কোটি টাকা ঢেলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর কোনো পথ বের করতে। ব্যর্থ হয়েছে তারা। এখন এই ডিসেম্বরে, বিজয়ের মাসে তাদের ধর্মীয়-দলীয় কিছু নেতার বিচারের রায় যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে জেনে আরো খেপে গেছে। তাদের সমর্থক গণমাধ্যমে মিথ্যা-বানোয়াট খবর প্রচার করছে। এমন একটি খবর হলো, তুরস্কে নাকি বিরাট সমাবেশ হয়েছে- বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন হচ্ছে এই মর্মে। যে ছবিটা তারা দিয়েছে, তা স্পষ্টত তুরস্কের কোনো উৎসব-আনন্দের ছবি। জামায়াতিরা এমন কোনো ছলাকলা নেই, যা তারা করেনি বা করবে না। শিবিরের ছেলেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। গত ৪১ বছরের মধ্যে এমন দুঃসাহস দেখাতে পারেনি তারা। আজ তা পারছে। এর অন্যতম যে কারণ, তা হচ্ছে বিএনপি ও অন্য গোপন জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের পেছনে রয়েছে।
তাই আমাদের এই সরকারের কাছে আবেদন, যত তাড়াতাড়ি পারা যায় যুদ্ধাপরাধীর বিচার যেন সমাপ্ত করা হয়। পাশাপাশি ধর্মের আড়ালে যেসব রাজনৈতিক দল তাদের হীনস্বার্থে রাজনীতির নামে জাতির অনিষ্ট করছে, এসব দল নিষিদ্ধ করা হোক। এ শক্ত পদক্ষেপগুলো এই সরকারকেই নিতে হবে। কারণ এ সরকার ছাড়া যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ আর কোনো দল বা সরকার করবে না।
(অনুলিখন)
লেখক : শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট।
রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের একটি হলো প্রশাসন, আর পুলিশ সেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে যারা সন্ত্রাসী আঘাত করে, তারা সরাসরি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে বলা যায়। তাদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করালে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জামায়াত-শিবির তা-ই করতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের তা করতে দেওয়া যায় না। তারা রাজনৈতিক খোলস থেকে বেরিয়ে সরাসরি আরবান টেরোরিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একসময় জাপান, জার্মানিতেও এমন টেরোরিস্টদের উদ্ভব ঘটেছিল। নব্য নাৎসিদের কথা মাঝেমধ্যে শোনা যায়। তবে তাদের দেশের প্রশাসন তা শক্তভাবে দমন করে। আমাদের দেশেও স্বাধীনতার ৪১ বছর পর আজ নব্য রাজাকারদের অভ্যুদয় ঘটছে ছাত্রশিবির নামের সংগঠনের ছত্রছায়ায়। এদের ভেতরে একাত্তরের রাজাকারদের ভাবমূর্তির সব কিছুই লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব বিভ্রান্ত তরুণ-যুবক এ দেশকে একটি মিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র বানাতে চায়। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব এদের মাথা থেকে মুছে দিয়েছে রাজাকার-আলবদরগোষ্ঠী। অথচ এরা স্বাধীন দেশের নতুন প্রজন্ম। তাই খুবই ভয়ের ও ভাবনার বিষয় এটি। এই যে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের ছেলেরা বিপথগামী হয়েছে, তা কিভাবে সম্ভব হলো!
আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্যদিকে তাদের সমান বয়সের তরুণ-যুবকরা ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখার টিকিট জোগাড় করছে। অনেক ছেলেমেয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি তৈরি করছে, করতে চাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো না কোনো সৃষ্টিশীল কাজ। হাজারো ছেলেমেয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। আর এরা কোন লোভে বা সাহসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুরু করেছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ- এ বিষয়টি আমাদের সবার জন্য আতঙ্কের। সমাজের সর্বস্তরের নাগরিককে এ বিষয়ে ভাবতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। এটি একা কোনো সরকারের কাজ নয়। পরিবারের দায়িত্ব ছেলেমেয়েদের খোঁজ রাখা। তারা কোনো সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কি? কোনো ভুল মন্ত্রে কোনো দল বা গোষ্ঠী তাদের ভুলিয়ে বিভ্রান্ত করছে কি? এসব লক্ষ রাখতে হবে পরিবারের সদস্যদের। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বদলাতে হবে। সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গন থেকে এই দুষ্টক্ষত সারিয়ে তুলতে হবে ধীরে ধীরে। তা না করতে পারলে জাতিকে দিতে হবে তার চরম মূল্য। আজ তারা গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, এমনকি বিজিবির গাড়িও ভাঙচুর করে। এরপর বাকি থাকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ। আর তারা তা-ই চাচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি যদি এমনই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, সেনাবাহিনী রাস্তায় নামে, তাহলে তাদের লক্ষ্য অনেকটা সফল হয়ে যাবে। তারপর তারা সেনাসদস্যদের সঙ্গে যেভাবে পারে ঢিল-বোমা ছুড়বে, দেশে আতঙ্ক তৈরি করে রাজাকারদের বিচার ঠেকানোর চেষ্টা করবে।
জামায়াতের সমর্থক-পৃষ্ঠপোষকরা বিদেশে কোটি কোটি টাকা ঢেলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর কোনো পথ বের করতে। ব্যর্থ হয়েছে তারা। এখন এই ডিসেম্বরে, বিজয়ের মাসে তাদের ধর্মীয়-দলীয় কিছু নেতার বিচারের রায় যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে জেনে আরো খেপে গেছে। তাদের সমর্থক গণমাধ্যমে মিথ্যা-বানোয়াট খবর প্রচার করছে। এমন একটি খবর হলো, তুরস্কে নাকি বিরাট সমাবেশ হয়েছে- বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন হচ্ছে এই মর্মে। যে ছবিটা তারা দিয়েছে, তা স্পষ্টত তুরস্কের কোনো উৎসব-আনন্দের ছবি। জামায়াতিরা এমন কোনো ছলাকলা নেই, যা তারা করেনি বা করবে না। শিবিরের ছেলেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। গত ৪১ বছরের মধ্যে এমন দুঃসাহস দেখাতে পারেনি তারা। আজ তা পারছে। এর অন্যতম যে কারণ, তা হচ্ছে বিএনপি ও অন্য গোপন জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের পেছনে রয়েছে।
তাই আমাদের এই সরকারের কাছে আবেদন, যত তাড়াতাড়ি পারা যায় যুদ্ধাপরাধীর বিচার যেন সমাপ্ত করা হয়। পাশাপাশি ধর্মের আড়ালে যেসব রাজনৈতিক দল তাদের হীনস্বার্থে রাজনীতির নামে জাতির অনিষ্ট করছে, এসব দল নিষিদ্ধ করা হোক। এ শক্ত পদক্ষেপগুলো এই সরকারকেই নিতে হবে। কারণ এ সরকার ছাড়া যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ আর কোনো দল বা সরকার করবে না।
(অনুলিখন)
লেখক : শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট।
No comments