শিক্ষিকা বটে!-পাঠদান মানবিক হওয়া উচিত
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে শ্রেণীকক্ষে অঙ্ক কষতে না পারায় ৩৩ শিশু শিক্ষার্থীকে নিজের থুথু চাটতে বাধ্য করেছেন এক শিক্ষিকা। অবশ্য এজন্য কালিকাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লায়লা আরজুমান বানুকে গত বৃহস্পতিবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে গত শনিবার এ সম্পর্কিত সমকালের লোকালয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এভাবে শিশুকে নিজের থুথু চাটতে বাধ্য করানোর শিক্ষাটা ওই শিক্ষিকা কোথায় পেলেন? এখানেই শিশুদের পাঠদানকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হওয়ার দাবির যৌক্তিকতা মেলে। মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার কোমলমতি শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অমানবিক আচরণের সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। শিক্ষার্থীকে পাঠ ঠিকভাবে আত্মস্থ করতে না পারার জন্য কষে বেত মারা এবং কখনও কখনও শিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পর্যায়ে শাস্তিটিকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নাগরিক সমাজ সোচ্চার হয়। কিন্তু অঙ্ক কষতে না পারার জন্য থুথু চাটতে বাধ্য করানোর শাস্তি অভিনব এবং এটি এক ধরনের বিকৃত মানসিকতার প্রকাশও বটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষিকার মূল্যবোধগত সমস্যা এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার ঝাঁঝ কোমলমতি শিক্ষার্থীর ওপর রুদ্র রোষ হয়ে সওয়ার হয়। অথচ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আনন্দঘন পরিবেশ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণ মানবিক হওয়া উচিত। কিন্তু কোনো কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেত মেরে, গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে বা শীতে খালি গায়ে দাঁড় করিয়ে রেখে অথবা নির্দয় কোনো পন্থায় শিক্ষার্থীকে পাঠ গ্রহণে বাধ্য করতে চান। এমন করতে গিয়ে এসব শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিশুর মনের ওপর কী ধরনের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেন তা তারা চিন্তাও করতে পারেন না। এই নির্দয় শাস্তি শিশুমনের ওপর স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে সারাজীবনের জন্য পারিপার্শ্বিকতার ওপর বিরূপ করে দিতে পারে। আজকের শিশুই পরিবার ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাই উন্নত জাতি ও সুন্দর পরিবার গড়ে তোলার জন্য শিশুকে সুনাগরিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্বটি প্রাথমিকভাবে পিতা-মাতার পর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপরই বর্তায়। পার্বতীপুরের ঘটনার মতো আর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটাই কাম্য।
No comments