শিশু হৃদরোগ-চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে হবে

 দেশে সার্বিকভাবে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার মান বেড়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোই নয়, নানা ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালগুলো বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে।
বলা হয়ে থাকে, বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত সেবা অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে ওয়াকিবহাল মানুষেরা মনে করেন, ঢাকাকেন্দ্রিক সুবিধাগুলোকে ঢাকার বাইরে ছড়ানো দরকার। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে এমন একটি মনোভাব যখন বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে। ঢাকার বাইরে তো বটেই খোদ রাজধানী শহরেও কিছু ক্ষেত্রে বিশেষায়িত চিকিৎসার অবাধ সুবিধা নেই। এমন একটি শিশু হৃদরোগ। দেশে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জানা গেছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহে রুবেলা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে শিশুরা হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহে রুবেলা ভাইরাসের সংক্রমণ খুব সাধারণ ব্যাপার, অহরহই এমন সংক্রমণ দেখা দেয়। এর ফলে জন্মের পর শিশুরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিশুদের রুবেলা ভ্যাকসিন দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হৃদরোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে জন্মের ৫ বছরের মধ্যেই রুবেলা ভ্যাকসিন দিতে হয়। কিন্তু ভ্যাকসিন কার্যক্রম গৃহীত না হওয়ায় শিশুদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার এখন অনেক বেশি। এমন একটি পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তারা আশা করছেন, খুব শিগগিরই সরকারি উদ্যোগে শিশুদের রুবেলা ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। কথায় আছে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর_ আরোগ্যের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই ভালো। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের আরোগ্যের সুযোগ আছে, সেক্ষেত্রেও অনেক বাধা দুর্লঙ্ঘনীয় মনে হয়। সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা বাধা চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে আমাদের বিব্রত করে। এমন অবস্থায় প্রতিরোধ কার্যক্রমের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। রুবেলা ভ্যাকসিন নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই কর্মপন্থা ঠিক করবেন। কিন্তু ইতিমধ্যে যারা হৃদরোগের শিকার হয়েছেন তাদের কী হবে? জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হৃদরোগ বিভাগগুলোর সক্ষমতা কম। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের যেমন অভাব আছে তেমনি আছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির স্বল্পতাও। এ বিষয়ে ডাক্তারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগও নেই। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে শিশু হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে হাজারে ৬ থেকে ৮ সেখানে আমাদের হার আরও বেশি হবে। শিশু হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা এখানে কম, তারপরও বছরে ১২ হাজার শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। সচেতনতা ও চিকিৎসাসেবা বাড়লে এ হার অনেক বেড়ে যাবে সন্দেহ নেই। সীমিত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন ডাক্তাররা। ফলে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার বলে সকলেই মনে করছেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হৃদরোগ তো বটেই বধিরতা, অন্ধত্ব, মানসিক রোগসহ অনেক জটিল রোগ নিয়ে একটি শিশুকে বেড়ে উঠতে হয়। এমন প্রতিবন্ধকতার শিকার শিশুদের মধ্যে একটি জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা রুবেলা আক্রান্ত মায়ের সন্তান। আমরা মনে করি, আমাদের সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে রুবেলা ভ্যাকসিনের সঙ্গে শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো দরকার। সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজগুলোর সীমিত সুযোগ বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংস্থান যেমন দরকার, তেমনি দরকার গবেষণা ও উচ্চতর প্রশিক্ষণও। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আসুক। পাশাপাশি, বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বড় হাসপাতালগুলোতেও শিশু হৃদরোগের সেবার ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। সকলের চেষ্টায় শিশুদের জন্য একটি সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যৎ পৃথিবী নিশ্চিত হোক_ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
 

1 comment:

  1. এই ব্লগটি শিশু হৃদরোগ সুবিধা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহায়ক। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য একসাথে সরবরাহ করার জন্য ধন্যবাদ!

    ReplyDelete

Powered by Blogger.