নারী উদ্যোক্তা- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি নারী by মেলান ভারভিয়ের
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বৃহৎ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণ অপরিহার্য। এই একীভূতকরণকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন দেশের সরকার, বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক অংশীদারেরা এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক গৃহীত আঞ্চলিক ও এর বাইরে বাণিজ্য এবং বাজার
তৈরির প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে। ‘নতুন সিল্ক রোড’ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের দৃষ্টিভঙ্গি আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক যোগাযোগকে অপরিহার্য হিসেবে প্রাধান্য দিচ্ছে।
আমরা নিশ্চিতরূপে বলতে পারি যে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণের কোনো প্রচেষ্টা বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি কখনোই সম্ভব নয় অর্ধেক জনসংখ্যার ্পূর্ণ ও সমান অংশগ্রহণ ছাড়া, যাঁরা নারী।
আর এই লক্ষ্যকে সমর্থন জানাতে আমরা এই সপ্তাহে ঢাকায় আয়োজন করতে যাচ্ছি আঞ্চলিক ‘দক্ষিণ এশিয়া নারী উদ্যোক্তা সিম্পোজিয়াম’। এ সিম্পোজিয়ামে অংশ নেবেন এই অঞ্চলের ১১টি দেশের ১০০ জনের মতো প্রথম সারির নীতিনির্ধারক, নারী উদ্যোক্তা, সুশীল সমাজের সংগঠন, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ, যারা নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে টেকসই কর্মপন্থা তৈরি করবে।
নারীদের এবং বিশেষত, নারী উদ্যোক্তাদের ওপর বিনিয়োগ করা শুধু যে একটি সঠিক কাজ, তা-ই নয়, এটি বুদ্ধিমানের মতো কাজও বটে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপাত্ত অনুযায়ী, নারী-মালিকানাধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের ব্যবসা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা এবং এসব দ্বারা ব্যাপক কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে। এটি যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, তেমনি সারা বিশ্বে একই রকমভাবে সত্যি। এবং যেসব নারী তাঁদের ব্যবসায় সফল, তাঁরা তাঁদের সমাজে ও দেশে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষমতা অর্জন করে থাকেন।
উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের মিজ তানিয়া ওয়াহাবের কথা বলা যেতে পারে। একজন চামড়াজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারক হিসেবে মাত্র ১০ হাজার টাকা (আনুমানিক ১২২ ডলার) এবং স্বল্প পরিমাণ কিছু চামড়াজাত দ্রব্য নিয়ে তানিয়া তাঁর যাত্রা শুরু করেন ২০০৫ সালে। দক্ষ শ্রমিক, কারিগরি জ্ঞান, ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং অর্থায়নের অভাবে মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে প্রথম দিকে তানিয়াকে বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে ২০১০ সালে তানিয়া একটি প্রশিক্ষণ লাভ করেন, যা তাঁকে পণ্য উৎপাদনের মান উন্নয়নে, উৎপাদনদক্ষতা বাড়াতে এবং উন্নততর ব্যবস্থাপনা ও নথিবদ্ধ করার দক্ষতাকে সহায়তা করে। এই প্রশিক্ষণের ফলে তানিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাগুলোতে অংশগ্রহণে এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার দক্ষতা অর্জন করেন।
বর্তমানে তানিয়ার সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘কারিগর’-এ ২০ জন পূর্ণকালীন ও ১০০ জন খণ্ডকালীন শ্রমিক কাজ করেন, যাঁরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করার জন্য অতি উন্নত মানের মেয়েদের বেল্ট, চামড়ার জ্যাকেট এবং ক্ষুদ্র চামড়াজাত পণ্য তৈরি করেন। ২০০৮ সাল থেকে তাঁর বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায় এই সফলতা অর্জনের জন্য যেসব বিষয়কে তানিয়া মুখ্য বলে মনে করেন, সেগুলো হলো: প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, পণ্যের মান ও ব্যবসায়িক দক্ষতা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে জন্য তথ্যপ্রবাহে তার প্রবেশাধিকার এবং পেশাগত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সহায়তা।
অথবা বলা যেতে পারে, আফগানিস্তানের কামিলা সিদ্দিকীর কথা। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর, যখন তালেবান মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে এবং সম্পূর্ণ হিজাব ও সঙ্গে কোনো পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মেয়েদের বাড়ির বাইরে কাজ করা বা ঘরের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
এসব বিরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও সিদ্দিকী একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা পেয়েছেন এবং এ জন্য তিনি এখন সবার কাছে একটি আদর্শ। তাঁর বড় বোন তাঁকে সেলাই করতে শিখিয়েছেন এবং তাঁর ভাই স্থানীয় কাপড়ের দোকানে নিয়ে যেতেন বিক্রয়ের জন্য। কাজের জন্য মরিয়া স্থানীয় মেয়ে ও নারী প্রতিবেশীরাও সিদ্দিকী ও তাঁর ছোট বোনদের সঙ্গে যোগ দেন। আর এ কাজের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকায় তা অতি দ্রুত বড় আকার ধারণ করে।
সম্মিলিতভাবে তাঁরা সুনির্দিষ্ট কর্মপ্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এবং কীভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা ঠিক করেন এবং কীভাবে তালেবানদের নজর এড়িয়ে চলা যায়, সে চেষ্টা করতেন। একপর্যায়ে এমনকি তালেবানরাও সিদ্দিকীর কাছে কাজ চাওয়া শুরু করে এবং একবার তাঁকে অনুরোধ জানায় এক তালেবানের বিয়ের পোশাক তৈরি করে দেওয়ার জন্য। সিদ্দিকী এখন তাঁর কনসালট্যান্সি ফার্ম চালাচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে নারীদের নিজেদের ব্যবসা শুরু করা শেখাচ্ছেন।
দুর্ভাগ্যবশত, এই নারীরা স্বাভাবিক ধারার অংশ নন, বরং তাঁরা ব্যতিক্রম। ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের সফলতা প্রায়ই এমন অনেক বাধাবিপত্তির জন্য ব্যাহত হয়, যেগুলো তাঁদের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু বা তার প্রসারের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দেয়। আজও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, পথনির্দেশনা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ যেমন এক চ্যালেঞ্জ, তেমনি বাজারে প্রবেশ করা ও ঋণের সুবিধা পাওয়াও তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জ। পুরুষ ও নারী—উভয়ই এই বাধাগুলোর সম্মুখীন হলেও নারীদের প্রায়ই নিজ ব্যবসায়িক দায়িত্বের পাশাপাশি গৃহস্থালি দায়িত্ব পালনের মতো অনন্য কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হতে হয়।
নারীরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন—এমন বহু প্রমাণ থাকলেও আমরা এই বিপত্তিগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারি না। পক্ষান্তরে, সঠিকরূপে ব্যবহার না হওয়া প্রবৃদ্ধির এই সম্ভাবনার প্রতিপালনের জন্য বিভিন্ন দেশের ও খাতের মধ্যে অংশীদারি গড়ে তুলে ও উদ্ভাবনী নীতির উন্নয়ন করে আমাদের সক্রিয়ভাবে এই বিপত্তিগুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এই প্রয়াসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই সপ্তাহের দক্ষিণ এশিয়া নারী উদ্যোক্তা সিম্পোজিয়ামের অংশগ্রহণকারীরা সম্পদ, বাজার ও বিভিন্ন নেটওয়ার্কে নারীদের সংযুক্ত হওয়ার মুখে মূল বাধাগুলো চিহ্নিত করবেন। এরপর তাঁরা নারীদের নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিজ ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নেতৃত্বমূলক দক্ষতা ও সামর্থ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যপরিকল্পনা গড়ে তুলবেন। সিম্পোজিয়ামের পর ঢাকায় যে কার্যপরিকল্পনা গড়ে উঠবে, সেটা এই অঞ্চলব্যাপী নারীদের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি লক্ষ করে আরও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করতে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি অবদান রাখতে ব্যবহার করা হবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করার ও নিজ জীবনমান উন্নত করার ক্রমবর্ধমান সুযোগ উপভোগ করা এক তরুণ ও বৈচিত্র্যময় কর্মশক্তি নিয়ে এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়া এক রোমাঞ্চকর সময় অতিবাহিত করছে। ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ সবার জন্য সমৃদ্ধির উন্নয়ন করতে নারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলোর অপচয় করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। কর্মশক্তিতে নারীদের সফল হওয়ার সমান সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিগুলোতে নারীদের সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তির মুখে যেসব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপত্তি রয়েছে, আমাদের সেগুলোর মোকাবিলা করতে হবে। এমনটি করার মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজ ও ভবিষ্যতের পূর্ণ সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করব।
মেলান ভারভিয়ের: যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজ-বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ।
রবার্ট ও. ব্লেক জুনিয়র: যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি।
আমরা নিশ্চিতরূপে বলতে পারি যে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণের কোনো প্রচেষ্টা বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি কখনোই সম্ভব নয় অর্ধেক জনসংখ্যার ্পূর্ণ ও সমান অংশগ্রহণ ছাড়া, যাঁরা নারী।
আর এই লক্ষ্যকে সমর্থন জানাতে আমরা এই সপ্তাহে ঢাকায় আয়োজন করতে যাচ্ছি আঞ্চলিক ‘দক্ষিণ এশিয়া নারী উদ্যোক্তা সিম্পোজিয়াম’। এ সিম্পোজিয়ামে অংশ নেবেন এই অঞ্চলের ১১টি দেশের ১০০ জনের মতো প্রথম সারির নীতিনির্ধারক, নারী উদ্যোক্তা, সুশীল সমাজের সংগঠন, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ, যারা নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে টেকসই কর্মপন্থা তৈরি করবে।
নারীদের এবং বিশেষত, নারী উদ্যোক্তাদের ওপর বিনিয়োগ করা শুধু যে একটি সঠিক কাজ, তা-ই নয়, এটি বুদ্ধিমানের মতো কাজও বটে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপাত্ত অনুযায়ী, নারী-মালিকানাধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের ব্যবসা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা এবং এসব দ্বারা ব্যাপক কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে। এটি যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, তেমনি সারা বিশ্বে একই রকমভাবে সত্যি। এবং যেসব নারী তাঁদের ব্যবসায় সফল, তাঁরা তাঁদের সমাজে ও দেশে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষমতা অর্জন করে থাকেন।
উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের মিজ তানিয়া ওয়াহাবের কথা বলা যেতে পারে। একজন চামড়াজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারক হিসেবে মাত্র ১০ হাজার টাকা (আনুমানিক ১২২ ডলার) এবং স্বল্প পরিমাণ কিছু চামড়াজাত দ্রব্য নিয়ে তানিয়া তাঁর যাত্রা শুরু করেন ২০০৫ সালে। দক্ষ শ্রমিক, কারিগরি জ্ঞান, ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং অর্থায়নের অভাবে মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে প্রথম দিকে তানিয়াকে বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে ২০১০ সালে তানিয়া একটি প্রশিক্ষণ লাভ করেন, যা তাঁকে পণ্য উৎপাদনের মান উন্নয়নে, উৎপাদনদক্ষতা বাড়াতে এবং উন্নততর ব্যবস্থাপনা ও নথিবদ্ধ করার দক্ষতাকে সহায়তা করে। এই প্রশিক্ষণের ফলে তানিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাগুলোতে অংশগ্রহণে এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার দক্ষতা অর্জন করেন।
বর্তমানে তানিয়ার সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘কারিগর’-এ ২০ জন পূর্ণকালীন ও ১০০ জন খণ্ডকালীন শ্রমিক কাজ করেন, যাঁরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করার জন্য অতি উন্নত মানের মেয়েদের বেল্ট, চামড়ার জ্যাকেট এবং ক্ষুদ্র চামড়াজাত পণ্য তৈরি করেন। ২০০৮ সাল থেকে তাঁর বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায় এই সফলতা অর্জনের জন্য যেসব বিষয়কে তানিয়া মুখ্য বলে মনে করেন, সেগুলো হলো: প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, পণ্যের মান ও ব্যবসায়িক দক্ষতা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে জন্য তথ্যপ্রবাহে তার প্রবেশাধিকার এবং পেশাগত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সহায়তা।
অথবা বলা যেতে পারে, আফগানিস্তানের কামিলা সিদ্দিকীর কথা। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর, যখন তালেবান মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে এবং সম্পূর্ণ হিজাব ও সঙ্গে কোনো পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মেয়েদের বাড়ির বাইরে কাজ করা বা ঘরের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
এসব বিরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও সিদ্দিকী একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা পেয়েছেন এবং এ জন্য তিনি এখন সবার কাছে একটি আদর্শ। তাঁর বড় বোন তাঁকে সেলাই করতে শিখিয়েছেন এবং তাঁর ভাই স্থানীয় কাপড়ের দোকানে নিয়ে যেতেন বিক্রয়ের জন্য। কাজের জন্য মরিয়া স্থানীয় মেয়ে ও নারী প্রতিবেশীরাও সিদ্দিকী ও তাঁর ছোট বোনদের সঙ্গে যোগ দেন। আর এ কাজের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকায় তা অতি দ্রুত বড় আকার ধারণ করে।
সম্মিলিতভাবে তাঁরা সুনির্দিষ্ট কর্মপ্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এবং কীভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা ঠিক করেন এবং কীভাবে তালেবানদের নজর এড়িয়ে চলা যায়, সে চেষ্টা করতেন। একপর্যায়ে এমনকি তালেবানরাও সিদ্দিকীর কাছে কাজ চাওয়া শুরু করে এবং একবার তাঁকে অনুরোধ জানায় এক তালেবানের বিয়ের পোশাক তৈরি করে দেওয়ার জন্য। সিদ্দিকী এখন তাঁর কনসালট্যান্সি ফার্ম চালাচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে নারীদের নিজেদের ব্যবসা শুরু করা শেখাচ্ছেন।
দুর্ভাগ্যবশত, এই নারীরা স্বাভাবিক ধারার অংশ নন, বরং তাঁরা ব্যতিক্রম। ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের সফলতা প্রায়ই এমন অনেক বাধাবিপত্তির জন্য ব্যাহত হয়, যেগুলো তাঁদের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু বা তার প্রসারের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দেয়। আজও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, পথনির্দেশনা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ যেমন এক চ্যালেঞ্জ, তেমনি বাজারে প্রবেশ করা ও ঋণের সুবিধা পাওয়াও তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জ। পুরুষ ও নারী—উভয়ই এই বাধাগুলোর সম্মুখীন হলেও নারীদের প্রায়ই নিজ ব্যবসায়িক দায়িত্বের পাশাপাশি গৃহস্থালি দায়িত্ব পালনের মতো অনন্য কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হতে হয়।
নারীরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন—এমন বহু প্রমাণ থাকলেও আমরা এই বিপত্তিগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারি না। পক্ষান্তরে, সঠিকরূপে ব্যবহার না হওয়া প্রবৃদ্ধির এই সম্ভাবনার প্রতিপালনের জন্য বিভিন্ন দেশের ও খাতের মধ্যে অংশীদারি গড়ে তুলে ও উদ্ভাবনী নীতির উন্নয়ন করে আমাদের সক্রিয়ভাবে এই বিপত্তিগুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এই প্রয়াসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই সপ্তাহের দক্ষিণ এশিয়া নারী উদ্যোক্তা সিম্পোজিয়ামের অংশগ্রহণকারীরা সম্পদ, বাজার ও বিভিন্ন নেটওয়ার্কে নারীদের সংযুক্ত হওয়ার মুখে মূল বাধাগুলো চিহ্নিত করবেন। এরপর তাঁরা নারীদের নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিজ ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নেতৃত্বমূলক দক্ষতা ও সামর্থ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যপরিকল্পনা গড়ে তুলবেন। সিম্পোজিয়ামের পর ঢাকায় যে কার্যপরিকল্পনা গড়ে উঠবে, সেটা এই অঞ্চলব্যাপী নারীদের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি লক্ষ করে আরও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করতে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি অবদান রাখতে ব্যবহার করা হবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করার ও নিজ জীবনমান উন্নত করার ক্রমবর্ধমান সুযোগ উপভোগ করা এক তরুণ ও বৈচিত্র্যময় কর্মশক্তি নিয়ে এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়া এক রোমাঞ্চকর সময় অতিবাহিত করছে। ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ সবার জন্য সমৃদ্ধির উন্নয়ন করতে নারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলোর অপচয় করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। কর্মশক্তিতে নারীদের সফল হওয়ার সমান সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিগুলোতে নারীদের সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তির মুখে যেসব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপত্তি রয়েছে, আমাদের সেগুলোর মোকাবিলা করতে হবে। এমনটি করার মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজ ও ভবিষ্যতের পূর্ণ সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করব।
মেলান ভারভিয়ের: যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজ-বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ।
রবার্ট ও. ব্লেক জুনিয়র: যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি।
No comments