কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
জামায়াতে
ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল রাত ১০টার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির
দড়িতে ঝুলিয়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষ
জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে কামারুজ্জামানের লাশ তার জন্মস্থান
শেরপুরে পাঠিয়ে দেয়া হবে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে।
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরবিষয়ক সরকারের নির্বাহী আদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে বেলা পৌনে ৩টায় কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে।
দণ্ড কার্যকর উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হতে থাকে। বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ, কারারক্ষী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কারাগারের আশপাশ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দিষ্ট কয়েকটি রোডে পুলিশ, সাংবাদিক, প্রশাসনের যানবাহন ছাড়া সব গাড়ি এবং লোকজনকে বের হয়ে যেতে বলা হয়।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে আসা উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক জড়ো হন।
সন্ধ্যা ৭টার পর কারাগারে একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো-চ ৭৪-০১২৭) প্রবেশ করে।
সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখারুজ্জামান প্রবেশ করেন। ৭টার দিকে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজিপি কর্নেল বজলুল কবির। সোয়া ৭টায় প্রবেশ করেন সহকারী সিভিল সার্জন আহসান হাবিব। পরবর্তীতে লালবাগ জোনের ডিসি, ইমাম এবং ফাঁসি কার্যকরের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যরা প্রবেশ করেন।
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, গতকাল সোয়া ১টার দিকে ডেপুটি জেল সুপার তাদেরকে ফোনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসতে বলেন কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করার জন্য। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কামারুজ্জামানের ২২ জন নিকটাত্মীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ৫টা ২০ মিনিটে তারা বের হয়ে আসেন। কারাফটকের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, তার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। তিনি বলেছেন, প্রাণ দেয়ার এবং নেয়ার মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কোনো প্রশ্নই আসে না।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিনই কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেকে আনে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাতেই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত রায় কারাগারে না পৌঁছায় দণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকে কর্তৃপক্ষ। এরপর ৮ এপ্রিল রিভিউ মামলার রায়ের কপিতে বিচারপতিদের স্বাক্ষর এবং তা ওই দিন কারাগারে পাঠানোর পর যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে মর্মে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হতে থাকে। কারাগার সূত্র এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় ৯ এপ্রিল কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করেন তার আইনজীবীরা। সাক্ষাৎ শেষে অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির সাংবাদিকদের জানান, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে বিষয়ে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে জানাবেন।
এরপর গত শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন দুইজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষা বিষয়ে জানার জন্য তারা কারাগারে যাচ্ছেন কি না সাংবাদিকেরা কারাফটকে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো কিছু জানাতে অস্বীকার করেন।
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
গত ৬ এপ্রিল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। ৮ এপ্রিল রিভিউ রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন চার বিচারপতি। এরপর গত রাতে কার্যকর করা হলো তার মৃত্যুদণ্ড।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছর ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের একটি অভিযোগ বহাল রাখেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। মৃত্যুদণ্ডের আরেকটি সাজা বাতিল করে যাবজ্জীবন করেন।
গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছর ৩ নভেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন তা চূড়ান্তভাবে বহাল থাকে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোট পাঁচটিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া হয়। দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, দু’টি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং অপর আরেকটি অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে আসামিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে। গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেন। আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া আরেকটি মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কামারুজ্জামানের আপিল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেনÑ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী।
আপিল মামলায় কামারুজ্জামানের পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে শেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি জি কে এম ইনস্টিটিউশন থেকে চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ (১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত) সালে তিনি ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে কৃতিত্বসহ বিএ পাস করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে কামারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে এ দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি দীর্ঘ দিন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতে যোগ দেয়ার আগে তিনি ১৯৭৮-৭৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৮০ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। দীর্ঘ দিন তিনি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।
কামারুজ্জামান এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
একজন লেখক এবং সুবক্তা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরবিষয়ক সরকারের নির্বাহী আদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে বেলা পৌনে ৩টায় কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে।
দণ্ড কার্যকর উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হতে থাকে। বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ, কারারক্ষী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কারাগারের আশপাশ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দিষ্ট কয়েকটি রোডে পুলিশ, সাংবাদিক, প্রশাসনের যানবাহন ছাড়া সব গাড়ি এবং লোকজনকে বের হয়ে যেতে বলা হয়।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে আসা উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক জড়ো হন।
সন্ধ্যা ৭টার পর কারাগারে একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো-চ ৭৪-০১২৭) প্রবেশ করে।
সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখারুজ্জামান প্রবেশ করেন। ৭টার দিকে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজিপি কর্নেল বজলুল কবির। সোয়া ৭টায় প্রবেশ করেন সহকারী সিভিল সার্জন আহসান হাবিব। পরবর্তীতে লালবাগ জোনের ডিসি, ইমাম এবং ফাঁসি কার্যকরের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যরা প্রবেশ করেন।
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, গতকাল সোয়া ১টার দিকে ডেপুটি জেল সুপার তাদেরকে ফোনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসতে বলেন কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করার জন্য। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কামারুজ্জামানের ২২ জন নিকটাত্মীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ৫টা ২০ মিনিটে তারা বের হয়ে আসেন। কারাফটকের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, তার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। তিনি বলেছেন, প্রাণ দেয়ার এবং নেয়ার মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কোনো প্রশ্নই আসে না।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিনই কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেকে আনে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাতেই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত রায় কারাগারে না পৌঁছায় দণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকে কর্তৃপক্ষ। এরপর ৮ এপ্রিল রিভিউ মামলার রায়ের কপিতে বিচারপতিদের স্বাক্ষর এবং তা ওই দিন কারাগারে পাঠানোর পর যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে মর্মে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হতে থাকে। কারাগার সূত্র এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় ৯ এপ্রিল কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করেন তার আইনজীবীরা। সাক্ষাৎ শেষে অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির সাংবাদিকদের জানান, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে বিষয়ে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে জানাবেন।
এরপর গত শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন দুইজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষা বিষয়ে জানার জন্য তারা কারাগারে যাচ্ছেন কি না সাংবাদিকেরা কারাফটকে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো কিছু জানাতে অস্বীকার করেন।
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
গত ৬ এপ্রিল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। ৮ এপ্রিল রিভিউ রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন চার বিচারপতি। এরপর গত রাতে কার্যকর করা হলো তার মৃত্যুদণ্ড।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছর ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের একটি অভিযোগ বহাল রাখেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। মৃত্যুদণ্ডের আরেকটি সাজা বাতিল করে যাবজ্জীবন করেন।
গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছর ৩ নভেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন তা চূড়ান্তভাবে বহাল থাকে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোট পাঁচটিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া হয়। দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, দু’টি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং অপর আরেকটি অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে আসামিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে। গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেন। আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া আরেকটি মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কামারুজ্জামানের আপিল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেনÑ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী।
আপিল মামলায় কামারুজ্জামানের পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে শেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি জি কে এম ইনস্টিটিউশন থেকে চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ (১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত) সালে তিনি ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে কৃতিত্বসহ বিএ পাস করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে কামারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে এ দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি দীর্ঘ দিন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতে যোগ দেয়ার আগে তিনি ১৯৭৮-৭৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৮০ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। দীর্ঘ দিন তিনি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।
কামারুজ্জামান এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
একজন লেখক এবং সুবক্তা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে
No comments