পুলিশই নষ্ট করে আলামত! by নেসারুল হক খোকন ও ওবায়েদ অংশুমান
নিহত সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের পা বাঁধা ছিল লাল রঙের ওড়না দিয়ে। যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। অথচ পুলিশের এক সদস্য খালি হাতে ওই আলামত স্পর্শ করেন |
শুনতে
অনেকটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী
হত্যা মামলার আলামত নষ্ট করে খোদ পুলিশই। এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজের পরতে
পরতে যার অকাট্য প্রমাণ মিলেছে। যুগান্তর অনুসন্ধানী টিম দুর্লভ এমন ভিডিও
ফুটেজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুলিশ শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহে চরম গাফলতি ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সুযোগ থাকলেও এ ক্ষেত্রে ‘ক্রাইম সিন’ সংগ্রহের স্বীকৃত কোনো নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করেনি। বরং অবলীলায় আলামতগুলো সরাসরি খোলা হাত ও পা দিয়ে স্পর্শ করে নষ্ট করে। এ রকম দৃশ্য কেউ যখন সচক্ষে ভিডিও ফুটেজে দেখবেন তখন যে কোনো সচেতন ব্যক্তির মনে হতে পারে, হয়তো অনেকটা ইচ্ছে করেই এ রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর যারা এ সাংবাদিক দম্পতি খুনের ঘটনায় অশ্র“ ফেলেছেন তারা হয়তো একটু আগ বাড়িয়ে বলতেও পারেন, খুনিদের পার করে দিতেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতগুলো শুরুতে নষ্ট করে ফেলা হয়। যদিও এসব শুধুই অভিযোগ আর সন্দেহের মধ্যে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে দ্রুত উপস্থিত হন। অথচ তাদের সামনেই কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জুতা পায়ে ফ্রি স্টাইলে রক্তের উপর হাঁটাহাটি করেন। এমনকি কোনো প্রকার গ্লাভস না পরেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতও জব্দ করা হয়। এছাড়া তারা খালি হাতে সাগর ও রুনীর মরদেহ ধরাধরি করে খাটের উপরে তোলেন। এ সময় সাগরের হাত-পা বাঁধা ছিল দুটি ওড়না দিয়ে। হাত বাঁধা ছিল নীল রংয়ের আর পা বাঁধা ছিল লাল রংয়ের ওড়নায়। ঘটনাস্থল থেকে সাগর ও রুনীকে ফ্লোর থেকে তোলার সময়ও খালি হাতে পুলিশ সদস্যরা ওই দুটি ওড়না স্পর্শ করেন। এতে করে মামলার এ গুরুত্বপূর্ণ আলামতে পুলিশ সদস্যদের সংমিশ্রণ ঘটে। শুধু এ দুটি আলামতই নয়, লাশের পাশে পড়ে থাকা রক্তে ভেজা আরেকটি ওড়না, কয়েকটি চুল, কাগজের টুকরাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পুলিশ খালি হাতেই জব্দ করে। আর এভাবে আলামত নষ্ট করার কারণে ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ছুরি ও বঁটি থেকে খুনির স্পষ্ট হাতের ছাপ মেলেনি। এসব কারণে পরে সিআইডির রিপোর্টেও আলামত নষ্ট হওয়ার প্রমাণ মেলে। সিআইডির এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা সব আলামতে সংমিশ্রণ (কনটামিনেটেড) বা একাধিক লোকের হাতের স্পর্শ রয়েছে। অথচ অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দের সময় থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডির একাধিক সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সিআইডির সদস্যরাও বুট জুতা পায়ে রক্ত মাখা ফ্লোর তছনছ করেন। তাদের পায়ের জুতায় ঘটনাস্থলের অনেক আলামত নষ্ট হয়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম থাকলেও শুরুতেই ঘটনাস্থলের চারদিক বিশেষ ফিতা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়নি।
এদিকে অধিকাংশ আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নেন র্যাবের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সম্প্রতি তিনি যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমকে বলেন, ‘হত্যায় ব্যবহৃত কোনো ছুরি কিংবা বঁটির ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়নি পুলিশ। এগুলো নিতে হতো আর্মস থেকে। এগুলো কিছুই করেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে তখনই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা যেত। কোনো ছাপও নিতে পারেনি পুলিশ। এগুলো নিলে আমরা অনেক রহস্যের জট খুলতে পারতাম।’
অন্যদিকে ডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা একই শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে যে আলামত (ছুরি, বঁটি, জামা-কাপড়) পেয়েছিলাম সেগুলো সিআইডি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়েছিল। আলামতে কোনো মানুষের হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি, এর মানে মিক্সড (মিশ্রণ) হয়ে গেছে। কেমন করে যে কি হয়েছিল তা তো জানি না। তিনি বলেন, সিআইডি থেকে আমরা যে রিপোর্ট পেয়েছি তা অস্পষ্ট।’
যেভাবে আলামত নষ্ট : যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমের কাছে সংরক্ষিত স্থির ও ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সাগর-রুনী খুন হওয়ার সংবাদ পেয়ে সেখানে হাজির হন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তখন ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহে ব্যস্ত থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। ঘরের ভেতর পড়ে আছে সাগর-রুনীর লাশ। রুনীর লাশটি ছিল দরজাঘেঁষা। তার উল্টো দিকে ছিল সাগরের মৃতদেহ। ফ্লোর রক্তে থকথক করছে। রুনীর পায়ের কাছে পড়ে আছে টিয়া রংয়ের একটি ওড়না, লাল রংয়ের একটি কম্বল, রক্তাক্ত পাপোশ ও বাঁশপাতা রংয়ের শপিং ব্যাগ। রুনীর মাথার ডান পাশে কয়েকটি চুল ও সাদা রংয়ের পকেট টিস্যু। পাশেই রয়েছে রুনীর ব্যবহৃত একজোড়া স্যান্ডেল। অন্যদিকে, সাগরের মাথার শিয়রে পড়ে আছে মোবাইলের চার্জার ও একটি প্যাকেট। সাগরের দেহে গোটা বিশেক ছুরির আঘাত। আর বুকের ডান পাশের বাহুর নিচে একটি ছুরি বিঁধে থাকতে দেখা যায়। ভিডিও চিত্রে আরও দেখা যায়, রুনীদের ব্যবহৃত খাটের ওপর পড়ে আছে লাল-কালো রংয়ের একটি মোবাইল। পাশেই নীল রংয়ের একটি কম্বল, যা এলোমেলো। পাশেই রয়েছে তিনটি বালিশ। খাটের দেয়ালঘেঁষা পাশে আরেকটি মকমলের কম্বল ও বেশ কিছু জামাকাপড়। এছাড়া খাটের উপরে রুনীর ব্যবহৃত গহনার বাক্স, দুটি হাত ব্যাগ ও একটি কমলালেবু পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে ছিল কয়েক টুকরা কাগজ। আর ওই রুমের ভেতরে ছিল কালো রংয়ের দুটি আলমারি, যার দরজা খোলা। আলমারির সামনেই পড়ে আছে কাপড়-চোপড়।
স্থিরচিত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই আবু জাফর একটি ব্যাগ ধরে আছেন। পাশেই সাদা-পোশাকে পুলিশের আরেক সদস্য পাসপোর্ট, ঘড়িসহ বেশ কিছু আলামত খালি হাতে ওই ব্যাগে ঢোকাচ্ছেন।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ঘটনাস্থলকে কোনো প্রকারের বেষ্টনী দেয়নি সিআইডি। ডিএমপির তৎকালীন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আসার পরপরই ঘরের দরজা খুলে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করেন একজন সিআইডি কর্মকর্তা। এর পরপরই থানা পুলিশের তিন থেকে চারজন সদস্য রুমের মধ্যে জুতা পায়ে প্রবেশ করেন। তারা ঢুকেই সাগর ও রুনীর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। এভাবেই রক্তাক্ত মেঝেতে পুলিশের জুতার ছাপে ভরে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দুই পুলিশ সদস্য সাগরের লাশ খাটের উপর তোলার জন্য প্রস্তুতি নেন। প্রথম দফায় একজন হাত ও অপরজন পা ধরে তোলার চেষ্টা করেন। এর পরপরই ওই দুই সদস্য খালি হাতে চ্যাংদোলা করে সাগরকে খাটের উপরে তোলেন। এ সময় হাত-পা বাঁধা ওড়নার উপরে তাদের হাত রাখেন। এর কয়েক মিনিট পর পুলিশের দু’জন সদস্য রুনীর হাত-পা ধরে খাটের উপরে সাগরের মৃতদেহের পাশে রাখেন। এ সময় কারও হাতে কোনো প্রকারের গ্লাভস ছিল না। এখানেই শেষ নয়, দু’জনকে তোলার পর মেঝেতে পড়ে থাকা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ‘একটি ওড়না’ খালি হাত দিয়ে তোলা হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অন্তত ২০-২৫ বার ঘটনাস্থলে চক্কর দেন। এতে করে মেঝেতে থাকা রক্ত তাদের পায়ের জুতায় লেপ্টে যায়। অপরদিকে সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘের কক্ষে সাগরের ব্যবহৃত মানিব্যাগ, বেল্টসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব আলামত সেখানে কিভাবে গেল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তো আছেই।
ভিডিও ফুটেজটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুলিশ শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহে চরম গাফলতি ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সুযোগ থাকলেও এ ক্ষেত্রে ‘ক্রাইম সিন’ সংগ্রহের স্বীকৃত কোনো নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করেনি। বরং অবলীলায় আলামতগুলো সরাসরি খোলা হাত ও পা দিয়ে স্পর্শ করে নষ্ট করে। এ রকম দৃশ্য কেউ যখন সচক্ষে ভিডিও ফুটেজে দেখবেন তখন যে কোনো সচেতন ব্যক্তির মনে হতে পারে, হয়তো অনেকটা ইচ্ছে করেই এ রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর যারা এ সাংবাদিক দম্পতি খুনের ঘটনায় অশ্র“ ফেলেছেন তারা হয়তো একটু আগ বাড়িয়ে বলতেও পারেন, খুনিদের পার করে দিতেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতগুলো শুরুতে নষ্ট করে ফেলা হয়। যদিও এসব শুধুই অভিযোগ আর সন্দেহের মধ্যে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে দ্রুত উপস্থিত হন। অথচ তাদের সামনেই কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জুতা পায়ে ফ্রি স্টাইলে রক্তের উপর হাঁটাহাটি করেন। এমনকি কোনো প্রকার গ্লাভস না পরেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতও জব্দ করা হয়। এছাড়া তারা খালি হাতে সাগর ও রুনীর মরদেহ ধরাধরি করে খাটের উপরে তোলেন। এ সময় সাগরের হাত-পা বাঁধা ছিল দুটি ওড়না দিয়ে। হাত বাঁধা ছিল নীল রংয়ের আর পা বাঁধা ছিল লাল রংয়ের ওড়নায়। ঘটনাস্থল থেকে সাগর ও রুনীকে ফ্লোর থেকে তোলার সময়ও খালি হাতে পুলিশ সদস্যরা ওই দুটি ওড়না স্পর্শ করেন। এতে করে মামলার এ গুরুত্বপূর্ণ আলামতে পুলিশ সদস্যদের সংমিশ্রণ ঘটে। শুধু এ দুটি আলামতই নয়, লাশের পাশে পড়ে থাকা রক্তে ভেজা আরেকটি ওড়না, কয়েকটি চুল, কাগজের টুকরাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পুলিশ খালি হাতেই জব্দ করে। আর এভাবে আলামত নষ্ট করার কারণে ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ছুরি ও বঁটি থেকে খুনির স্পষ্ট হাতের ছাপ মেলেনি। এসব কারণে পরে সিআইডির রিপোর্টেও আলামত নষ্ট হওয়ার প্রমাণ মেলে। সিআইডির এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা সব আলামতে সংমিশ্রণ (কনটামিনেটেড) বা একাধিক লোকের হাতের স্পর্শ রয়েছে। অথচ অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দের সময় থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডির একাধিক সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সিআইডির সদস্যরাও বুট জুতা পায়ে রক্ত মাখা ফ্লোর তছনছ করেন। তাদের পায়ের জুতায় ঘটনাস্থলের অনেক আলামত নষ্ট হয়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম থাকলেও শুরুতেই ঘটনাস্থলের চারদিক বিশেষ ফিতা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়নি।
এদিকে অধিকাংশ আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নেন র্যাবের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সম্প্রতি তিনি যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমকে বলেন, ‘হত্যায় ব্যবহৃত কোনো ছুরি কিংবা বঁটির ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়নি পুলিশ। এগুলো নিতে হতো আর্মস থেকে। এগুলো কিছুই করেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে তখনই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা যেত। কোনো ছাপও নিতে পারেনি পুলিশ। এগুলো নিলে আমরা অনেক রহস্যের জট খুলতে পারতাম।’
অন্যদিকে ডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা একই শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে যে আলামত (ছুরি, বঁটি, জামা-কাপড়) পেয়েছিলাম সেগুলো সিআইডি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়েছিল। আলামতে কোনো মানুষের হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি, এর মানে মিক্সড (মিশ্রণ) হয়ে গেছে। কেমন করে যে কি হয়েছিল তা তো জানি না। তিনি বলেন, সিআইডি থেকে আমরা যে রিপোর্ট পেয়েছি তা অস্পষ্ট।’
যেভাবে আলামত নষ্ট : যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমের কাছে সংরক্ষিত স্থির ও ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সাগর-রুনী খুন হওয়ার সংবাদ পেয়ে সেখানে হাজির হন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তখন ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহে ব্যস্ত থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। ঘরের ভেতর পড়ে আছে সাগর-রুনীর লাশ। রুনীর লাশটি ছিল দরজাঘেঁষা। তার উল্টো দিকে ছিল সাগরের মৃতদেহ। ফ্লোর রক্তে থকথক করছে। রুনীর পায়ের কাছে পড়ে আছে টিয়া রংয়ের একটি ওড়না, লাল রংয়ের একটি কম্বল, রক্তাক্ত পাপোশ ও বাঁশপাতা রংয়ের শপিং ব্যাগ। রুনীর মাথার ডান পাশে কয়েকটি চুল ও সাদা রংয়ের পকেট টিস্যু। পাশেই রয়েছে রুনীর ব্যবহৃত একজোড়া স্যান্ডেল। অন্যদিকে, সাগরের মাথার শিয়রে পড়ে আছে মোবাইলের চার্জার ও একটি প্যাকেট। সাগরের দেহে গোটা বিশেক ছুরির আঘাত। আর বুকের ডান পাশের বাহুর নিচে একটি ছুরি বিঁধে থাকতে দেখা যায়। ভিডিও চিত্রে আরও দেখা যায়, রুনীদের ব্যবহৃত খাটের ওপর পড়ে আছে লাল-কালো রংয়ের একটি মোবাইল। পাশেই নীল রংয়ের একটি কম্বল, যা এলোমেলো। পাশেই রয়েছে তিনটি বালিশ। খাটের দেয়ালঘেঁষা পাশে আরেকটি মকমলের কম্বল ও বেশ কিছু জামাকাপড়। এছাড়া খাটের উপরে রুনীর ব্যবহৃত গহনার বাক্স, দুটি হাত ব্যাগ ও একটি কমলালেবু পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে ছিল কয়েক টুকরা কাগজ। আর ওই রুমের ভেতরে ছিল কালো রংয়ের দুটি আলমারি, যার দরজা খোলা। আলমারির সামনেই পড়ে আছে কাপড়-চোপড়।
স্থিরচিত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই আবু জাফর একটি ব্যাগ ধরে আছেন। পাশেই সাদা-পোশাকে পুলিশের আরেক সদস্য পাসপোর্ট, ঘড়িসহ বেশ কিছু আলামত খালি হাতে ওই ব্যাগে ঢোকাচ্ছেন।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ঘটনাস্থলকে কোনো প্রকারের বেষ্টনী দেয়নি সিআইডি। ডিএমপির তৎকালীন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আসার পরপরই ঘরের দরজা খুলে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করেন একজন সিআইডি কর্মকর্তা। এর পরপরই থানা পুলিশের তিন থেকে চারজন সদস্য রুমের মধ্যে জুতা পায়ে প্রবেশ করেন। তারা ঢুকেই সাগর ও রুনীর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। এভাবেই রক্তাক্ত মেঝেতে পুলিশের জুতার ছাপে ভরে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দুই পুলিশ সদস্য সাগরের লাশ খাটের উপর তোলার জন্য প্রস্তুতি নেন। প্রথম দফায় একজন হাত ও অপরজন পা ধরে তোলার চেষ্টা করেন। এর পরপরই ওই দুই সদস্য খালি হাতে চ্যাংদোলা করে সাগরকে খাটের উপরে তোলেন। এ সময় হাত-পা বাঁধা ওড়নার উপরে তাদের হাত রাখেন। এর কয়েক মিনিট পর পুলিশের দু’জন সদস্য রুনীর হাত-পা ধরে খাটের উপরে সাগরের মৃতদেহের পাশে রাখেন। এ সময় কারও হাতে কোনো প্রকারের গ্লাভস ছিল না। এখানেই শেষ নয়, দু’জনকে তোলার পর মেঝেতে পড়ে থাকা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ‘একটি ওড়না’ খালি হাত দিয়ে তোলা হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অন্তত ২০-২৫ বার ঘটনাস্থলে চক্কর দেন। এতে করে মেঝেতে থাকা রক্ত তাদের পায়ের জুতায় লেপ্টে যায়। অপরদিকে সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘের কক্ষে সাগরের ব্যবহৃত মানিব্যাগ, বেল্টসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব আলামত সেখানে কিভাবে গেল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তো আছেই।
No comments