সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার পরামর্শ
(বাঁ থেকে) জিল্লুর রহমান খান, মেখলা সরকার, আহমেদ হেলাল, ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল, ফারজানা রহমান ও ইকবাল মাসুদ |
প্রথম
আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলনের উদ্যোগে ১৪ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায়
পরামর্শ সহায়তা-৫৮-এর আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে। এ
আয়োজনে মাদকাসক্ত রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মনোরোগ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য তাঁদের বিভিন্ন
পরামর্শ দেন। পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠানের আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো
প্রথমে
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আহমেদ হেলাল সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন,
দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ অনুষ্ঠান করছি। আজ ৫৮তম আসর। অনেক মানুষ এই অনুষ্ঠানে
এসেছেন। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে অনেকে মাদকাসক্ত ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ
ভালো হয়ে আবার অনুষ্ঠানে এসেছেন। অনেকে প্রতিজ্ঞা করেছেন জীবনে আর কখনো
মাদক গ্রহণ করবেন না। এসব আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এর বাইরেও অসংখ্য মানুষ এ
অনুষ্ঠান থেকে উপকৃত হন। এটাও আমাদের আশাবাদী হওয়ার একটা কারণ। সবার
নাম-পরিচয় গোপন রেখেই আপনাদের প্রশ্ন, আমাদের পরামর্শ—সবই প্রথম আলো
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দেশের অনেক ভুক্তভোগী মানুষ এটা পড়ে উপকৃত হন।
তাঁদের করণীয় এখান থেকে জানতে পারেন।
প্রশ্ন: আমি একজন ছাত্র। আগে গাঁজা, ইয়াবা সেবন করতাম। ১৭ মাস ধরে মাদকমুক্ত আছি। পড়াশোনায় মনোযোগ অনেক কমে গেছে। চরম হতাশায় ভুগছি। বিদেশে যেতে চাই।
পরামর্শ : ১৭ মাস ধরে আপনি মাদকমুক্ত। এ জন্য প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন। সাধারণত যাঁরা মাদক গ্রহণ করেন, তাঁদের শরীরে অনেক দিন পর্যন্ত মাদকের প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। গাঁজা বা ইয়াবা আমাদের মস্তিষ্কে একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অনেক সময় এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। পড়াশোনায় অমনোযোগী, অনীহা, অনিচ্ছা দেখা দেয়। এ সময় মনে অনেক হতাশা বাসা বাঁধে। এই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ রকম হতাশায় পড়তে দেখা যায়। এ রকম সমস্যায় প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, করপোরেট অফিসের বড় কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমরা চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করে তুলেছি। আপনার হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। চিকিৎসার মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা থেকে শতভাগ সমাধান পাওয়া সম্ভব। আপনি ধৈর্য ধরুন, মনকে স্থির করুন। আপনি যেহেতু ১৭ মাস ধরে মাদকমুক্ত। তাই আমরা মনে করি আপনার হতাশামুক্ত হওয়াও সম্ভব। ঠিকমতো পড়াশোনা করুন। বারবার পড়তে থাকুন। পড়ার পর লিখুন। নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখুন। সমস্যা থাকলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আসতে পারেন। বিদেশ গেলে এর সমাধান আসবে না। এতে আরও ক্ষতি হতে পারে। এমন উদাহরণ আমাদের দেশে অনেক আছে। এমনকি বিয়ে করলে বা নতুন কোনো বন্ধু-বান্ধবী তৈরি করলেও এর সমাধান হবে না। এ সময় আপনাকে পরিবারের সঙ্গে থাকা জরুরি। পরিবারের ভালোবাসা আর সঠিক চিকিৎসায় হতাশার বলয় থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
প্রশ্ন: আমার স্বামী মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন তিনি গাঁজা ও সিসা গ্রহণ করেন। তাঁকে রিহ্যাবে (পুনর্বাসন কেন্দ্রে) রাখা হয়েছে। এখন কোনো প্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এটা কি ঠিক?
পরামর্শ: যারা মাদক গ্রহণ করে আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা করে থাকি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তার শরীরে মাদক উপস্থিতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এরপর মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসকেরা ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। আপনার স্বামী যদি বলে থাকেন তিনি কী কী মাদক কত দিন যাবৎ গ্রহণ করছেন, তাহলে মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা ছাড়াও চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে প্রয়োজন হলে চিকিৎসক এসব পরীক্ষা করে নিতে পারেন। আপনার স্বামী যেহেতু রিহ্যাবে (মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন আছেন, সেহেতু তিনি এখন মাদক থেকে দূরে আছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলে সেখানে মাদক নিতে পারবেন না। আর মাদক থেকে দূরে থাকলে একটা পর্যায়ে মাদকের রাসায়নিক প্রভাব শরীর থেকে ধীরে ধীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। মাদক গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক, ফুসফুস ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: আমার ভাইয়ের ছেলে একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। একসময় সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর থেকে সে ধূমপান ও কাশির সিরাপ খাওয়া শুরু করে। প্রথমে এক বোতল খেত। এখন দুই বোতল লাগে। সে তার মাকে চিকিৎসা করাতে বলেছে। এখন কী করতে পারি?
পরামর্শ: সে যেহেতু চিকিৎসা নিতে চেয়েছে, এতে চিকিৎসা করাটা সহজ হবে। প্রথমেই আমরা বলব আপনি তাকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে নিয়ে যেতে পারেন। এটা প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থেকে। বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন: আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সে দিনে ঘুমায় ও রাতে জাগে। রাতে দরজা লাগিয়ে প্রচুর ধূমপান করে। সব সময় মোবাইল ফোন ও ট্যাব ব্যবহার করে। আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। তার রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করানো হয়েছে। কোনো কিছু ধরা পড়েনি। এখন আমি কী করব?
পরামর্শ: হতাশা বা সন্দেহ থেকে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে। মানসিক রোগ ও মাদকাসক্তি একই সঙ্গে থাকতে পারে। ধরুন একজন লোক মানসিকভাবে অসুস্থ, তখন সে মাদকের দিকে ঝঁুকে পড়বে। আবার সে যদি মাদকাসক্ত হয় তখন সে মানসিক রোগীদের মতো আচরণ করে থাকবে। এ সময় মানসিক রোগের সঠিক চিকিৎসা করালে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। আপনার ছেলের হঠাৎ কোনো মানসিক চাপ বা পড়াশোনার চাপ আছে কি না তা খোঁজ নিতে হবে। ক্লাস বা কোচিংয়ে রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে কি না বা হঠাৎ করে তার মন খারাপ হচ্ছে কি না তারও খোঁজ নিতে হবে। অথবা পরিবারে কেউ মানসিক রোগে বা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কি না তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। যেহেতু আমরা তাকে দেখিনি শুধু আপনার কাছে কিছু লক্ষণের বিবরণ শুনে কোনো মন্তব্য করা চিকিৎসা আইনের পরিপন্থী হবে। তাকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরামর্শ দেবেন।
আপনারা মা-বাবা তাকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে তার টিভি দেখা, পড়াশোনা, ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় নির্ধারণ করে দেবেন। একটা সঠিক রুটিন তার জীবনের পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রশ্ন: আমার একজন পরিচিত রোগী রিহ্যাবে (মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন। রিহ্যাব থেকে ফিরে তিনি কী করতে পারবেন এবং কীভাবে সুস্থ থাকবেন?
পরামর্শ: সদ্য মাদক ছাড়া কোনো রোগী কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। রিহ্যাব থেকে যাওয়ার পর রোগী কী করবেন, আমরা এ ব্যাপারে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করি। তিনি যদি শিক্ষিত হন তবে তাঁর চাকরির কথা ভাবি। কম শিক্ষিত হলে ব্যবসার কথা বলি। তবে প্রথমত তাঁর হাতে বেশি টাকা দেওয়া যাবে না। পুরো ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাঁর মাথায় ব্যবসায়িক চাপ দেওয়া যাবে না। মাদক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে তিন মাস পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁর প্রতি সব সময় নজর রাখতে হবে তিনি যেন আগের মাদকাসক্ত বন্ধুদের থেকে দূরে থাকেন। তিনি যে এলাকা বা স্থানে মাদক গ্রহণ করতেন সে এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রয়োজনে আগের ফোন নম্বর পরিবর্তন করতে হবে। পরিবারের সবাই যেন তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাঁকে কোনো সময় একা বের হতে দেওয়া যাবে না। বদ্ধঘরে একা থাকতে দেওয়া যাবে না। এ রকম কিছু পরামর্শ তাঁর পরিবারের সদস্যদের দিতে হবে।
প্রশ্ন: আমি একসময় বিদেশে ছিলাম। সেখানেই ইয়াবার নেশায় জড়িয়ে পড়ি। দেশে ফিরে একবার রিহ্যাবে চিকিৎসা নিয়েছি। আবার নেশাখোর বন্ধুদের প্ররোচনায় নেশায় পড়ি। আমার কিছু জমি খুব কম মূল্যে হাতছাড়া হয়। এখন খুব হতাশায় আছি, কী করব?
পরামর্শ: আমরা এখানে জমিজমাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিতে পারব না। এ জন্য আপনাকে অন্য কোথাও পরামর্শ নিতে হবে। তবে আপনাকে মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্ত থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিতে পারি। সব সমস্যা একবারে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য আপনাকে প্রথমে স্থির হতে হবে। এরপর মাদক ছাড়তে হবে। মাদকমুক্ত থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মাদকমুক্ত না হতে পারলে জমিজমার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। আপনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ১০ টাকায় টিকিট করে বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। আপনার বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সিলিং করানো দরকার। প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা লাগতে পারে।
প্রশ্ন: আমার ছেলে দীর্ঘ দিন রিহ্যাবে ছিল। রিহ্যাব থেকে ফিরে এসে আবার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে মেশা শুরু করেছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি কখন সে আবার নেশায় পড়ে। তার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। কী করব?
পরামর্শ: নিরাময়কেন্দ্র থেকে ফিরে আসার পরে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ওষুধ না খেলে তার মানসিক সমস্যা আবারও বেড়ে যাবে। আর মানসিক সমস্যা বেড়ে গেলে মাদক গ্রহণের প্রবণতাটাও বেড়ে যাবে। অবশ্যই মাদকাসক্ত পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। এমন বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ না করলে পুনরায় মাদকের ছোবলে পড়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। অনেক সময় ওষুধ খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ওজন বাড়ার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে এ সময় নড়াচড়া কম হয়। এ জন্য ওজন বাড়তে পারে। আপনার ছেলেকে ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখুন। শর্করা-জাতীয় খাবার (যেমন ভাত, মিষ্টি ) কম খেতে হবে। তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। শাকসবজি বেশি খেতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
প্রশ্ন: আমার স্বামী মাদকাসক্ত। তিনি মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদক গ্রহণ করেন। সারা রাত ঘুমান না। প্রতি রাতে তার পাঁচ-ছয়টা ইয়াবা ট্যাবলেট লাগে। যা আয় করেন তার সব মাদক নিতে ব্যয় করেন। মাঝেমধ্যে আমাকে মারধর করেন। তাঁকে কোথায় চিকিৎসা করাব?
পরামর্শ: আপনার স্বামী যেহেতু প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টা ইয়াবা ট্যাবলেট ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ করছেন, তাই আমরা বলতেই পারি তিনি এখন মাদক গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে নেই। এ পর্যায়ে আপনার শ্বশুর, দেবর বা বন্ধুদের বিষয়টা জানান। প্রথমত, তাঁকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তিনি যদি রাজি না হন তবে তাঁকে বিশেষ পদ্ধতিতে জোরপূর্বক ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার স্বামী যেহেতু মাদকাসক্তের জটিল পর্যায়ে চলে গেছেন, তাই খুব দ্রুত তাঁকে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের নিরাময়কেন্দ্র বা রিহ্যাব আছে। আপনার স্বামীকে ভর্তি করতে হলে অবশ্যই জেনে-বুঝে ভর্তি করতে হবে। তা নাহলে চিকিৎসার পরিবর্তে ক্ষতিটাই বেশি হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন যাঁরা:
আহমেদ হেলাল, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
মেখলা সরকার, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ফারজানা রহমান, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
মো. জিল্লুর রহমান খান, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল, নির্বাহী পরিচালক, আপন
ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুর্নবাসন কেন্দ্র, ঢাকা
সঞ্চালনা: ফেরদৌস ফয়সাল
প্রশ্ন: আমি একজন ছাত্র। আগে গাঁজা, ইয়াবা সেবন করতাম। ১৭ মাস ধরে মাদকমুক্ত আছি। পড়াশোনায় মনোযোগ অনেক কমে গেছে। চরম হতাশায় ভুগছি। বিদেশে যেতে চাই।
পরামর্শ : ১৭ মাস ধরে আপনি মাদকমুক্ত। এ জন্য প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন। সাধারণত যাঁরা মাদক গ্রহণ করেন, তাঁদের শরীরে অনেক দিন পর্যন্ত মাদকের প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। গাঁজা বা ইয়াবা আমাদের মস্তিষ্কে একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অনেক সময় এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। পড়াশোনায় অমনোযোগী, অনীহা, অনিচ্ছা দেখা দেয়। এ সময় মনে অনেক হতাশা বাসা বাঁধে। এই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ রকম হতাশায় পড়তে দেখা যায়। এ রকম সমস্যায় প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, করপোরেট অফিসের বড় কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমরা চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করে তুলেছি। আপনার হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। চিকিৎসার মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা থেকে শতভাগ সমাধান পাওয়া সম্ভব। আপনি ধৈর্য ধরুন, মনকে স্থির করুন। আপনি যেহেতু ১৭ মাস ধরে মাদকমুক্ত। তাই আমরা মনে করি আপনার হতাশামুক্ত হওয়াও সম্ভব। ঠিকমতো পড়াশোনা করুন। বারবার পড়তে থাকুন। পড়ার পর লিখুন। নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখুন। সমস্যা থাকলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আসতে পারেন। বিদেশ গেলে এর সমাধান আসবে না। এতে আরও ক্ষতি হতে পারে। এমন উদাহরণ আমাদের দেশে অনেক আছে। এমনকি বিয়ে করলে বা নতুন কোনো বন্ধু-বান্ধবী তৈরি করলেও এর সমাধান হবে না। এ সময় আপনাকে পরিবারের সঙ্গে থাকা জরুরি। পরিবারের ভালোবাসা আর সঠিক চিকিৎসায় হতাশার বলয় থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
প্রশ্ন: আমার স্বামী মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন তিনি গাঁজা ও সিসা গ্রহণ করেন। তাঁকে রিহ্যাবে (পুনর্বাসন কেন্দ্রে) রাখা হয়েছে। এখন কোনো প্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এটা কি ঠিক?
পরামর্শ: যারা মাদক গ্রহণ করে আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা করে থাকি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তার শরীরে মাদক উপস্থিতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এরপর মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসকেরা ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। আপনার স্বামী যদি বলে থাকেন তিনি কী কী মাদক কত দিন যাবৎ গ্রহণ করছেন, তাহলে মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা ছাড়াও চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে প্রয়োজন হলে চিকিৎসক এসব পরীক্ষা করে নিতে পারেন। আপনার স্বামী যেহেতু রিহ্যাবে (মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন আছেন, সেহেতু তিনি এখন মাদক থেকে দূরে আছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলে সেখানে মাদক নিতে পারবেন না। আর মাদক থেকে দূরে থাকলে একটা পর্যায়ে মাদকের রাসায়নিক প্রভাব শরীর থেকে ধীরে ধীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। মাদক গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক, ফুসফুস ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: আমার ভাইয়ের ছেলে একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। একসময় সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর থেকে সে ধূমপান ও কাশির সিরাপ খাওয়া শুরু করে। প্রথমে এক বোতল খেত। এখন দুই বোতল লাগে। সে তার মাকে চিকিৎসা করাতে বলেছে। এখন কী করতে পারি?
পরামর্শ: সে যেহেতু চিকিৎসা নিতে চেয়েছে, এতে চিকিৎসা করাটা সহজ হবে। প্রথমেই আমরা বলব আপনি তাকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে নিয়ে যেতে পারেন। এটা প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থেকে। বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন: আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সে দিনে ঘুমায় ও রাতে জাগে। রাতে দরজা লাগিয়ে প্রচুর ধূমপান করে। সব সময় মোবাইল ফোন ও ট্যাব ব্যবহার করে। আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। তার রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করানো হয়েছে। কোনো কিছু ধরা পড়েনি। এখন আমি কী করব?
পরামর্শ: হতাশা বা সন্দেহ থেকে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে। মানসিক রোগ ও মাদকাসক্তি একই সঙ্গে থাকতে পারে। ধরুন একজন লোক মানসিকভাবে অসুস্থ, তখন সে মাদকের দিকে ঝঁুকে পড়বে। আবার সে যদি মাদকাসক্ত হয় তখন সে মানসিক রোগীদের মতো আচরণ করে থাকবে। এ সময় মানসিক রোগের সঠিক চিকিৎসা করালে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। আপনার ছেলের হঠাৎ কোনো মানসিক চাপ বা পড়াশোনার চাপ আছে কি না তা খোঁজ নিতে হবে। ক্লাস বা কোচিংয়ে রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে কি না বা হঠাৎ করে তার মন খারাপ হচ্ছে কি না তারও খোঁজ নিতে হবে। অথবা পরিবারে কেউ মানসিক রোগে বা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কি না তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। যেহেতু আমরা তাকে দেখিনি শুধু আপনার কাছে কিছু লক্ষণের বিবরণ শুনে কোনো মন্তব্য করা চিকিৎসা আইনের পরিপন্থী হবে। তাকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরামর্শ দেবেন।
আপনারা মা-বাবা তাকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে তার টিভি দেখা, পড়াশোনা, ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় নির্ধারণ করে দেবেন। একটা সঠিক রুটিন তার জীবনের পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রশ্ন: আমার একজন পরিচিত রোগী রিহ্যাবে (মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন। রিহ্যাব থেকে ফিরে তিনি কী করতে পারবেন এবং কীভাবে সুস্থ থাকবেন?
পরামর্শ: সদ্য মাদক ছাড়া কোনো রোগী কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। রিহ্যাব থেকে যাওয়ার পর রোগী কী করবেন, আমরা এ ব্যাপারে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করি। তিনি যদি শিক্ষিত হন তবে তাঁর চাকরির কথা ভাবি। কম শিক্ষিত হলে ব্যবসার কথা বলি। তবে প্রথমত তাঁর হাতে বেশি টাকা দেওয়া যাবে না। পুরো ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাঁর মাথায় ব্যবসায়িক চাপ দেওয়া যাবে না। মাদক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে তিন মাস পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁর প্রতি সব সময় নজর রাখতে হবে তিনি যেন আগের মাদকাসক্ত বন্ধুদের থেকে দূরে থাকেন। তিনি যে এলাকা বা স্থানে মাদক গ্রহণ করতেন সে এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রয়োজনে আগের ফোন নম্বর পরিবর্তন করতে হবে। পরিবারের সবাই যেন তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাঁকে কোনো সময় একা বের হতে দেওয়া যাবে না। বদ্ধঘরে একা থাকতে দেওয়া যাবে না। এ রকম কিছু পরামর্শ তাঁর পরিবারের সদস্যদের দিতে হবে।
প্রশ্ন: আমি একসময় বিদেশে ছিলাম। সেখানেই ইয়াবার নেশায় জড়িয়ে পড়ি। দেশে ফিরে একবার রিহ্যাবে চিকিৎসা নিয়েছি। আবার নেশাখোর বন্ধুদের প্ররোচনায় নেশায় পড়ি। আমার কিছু জমি খুব কম মূল্যে হাতছাড়া হয়। এখন খুব হতাশায় আছি, কী করব?
পরামর্শ: আমরা এখানে জমিজমাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিতে পারব না। এ জন্য আপনাকে অন্য কোথাও পরামর্শ নিতে হবে। তবে আপনাকে মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্ত থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিতে পারি। সব সমস্যা একবারে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য আপনাকে প্রথমে স্থির হতে হবে। এরপর মাদক ছাড়তে হবে। মাদকমুক্ত থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মাদকমুক্ত না হতে পারলে জমিজমার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। আপনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ১০ টাকায় টিকিট করে বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। আপনার বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সিলিং করানো দরকার। প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা লাগতে পারে।
প্রশ্ন: আমার ছেলে দীর্ঘ দিন রিহ্যাবে ছিল। রিহ্যাব থেকে ফিরে এসে আবার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে মেশা শুরু করেছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি কখন সে আবার নেশায় পড়ে। তার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। কী করব?
পরামর্শ: নিরাময়কেন্দ্র থেকে ফিরে আসার পরে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ওষুধ না খেলে তার মানসিক সমস্যা আবারও বেড়ে যাবে। আর মানসিক সমস্যা বেড়ে গেলে মাদক গ্রহণের প্রবণতাটাও বেড়ে যাবে। অবশ্যই মাদকাসক্ত পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। এমন বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ না করলে পুনরায় মাদকের ছোবলে পড়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। অনেক সময় ওষুধ খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ওজন বাড়ার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে এ সময় নড়াচড়া কম হয়। এ জন্য ওজন বাড়তে পারে। আপনার ছেলেকে ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখুন। শর্করা-জাতীয় খাবার (যেমন ভাত, মিষ্টি ) কম খেতে হবে। তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। শাকসবজি বেশি খেতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
প্রশ্ন: আমার স্বামী মাদকাসক্ত। তিনি মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদক গ্রহণ করেন। সারা রাত ঘুমান না। প্রতি রাতে তার পাঁচ-ছয়টা ইয়াবা ট্যাবলেট লাগে। যা আয় করেন তার সব মাদক নিতে ব্যয় করেন। মাঝেমধ্যে আমাকে মারধর করেন। তাঁকে কোথায় চিকিৎসা করাব?
পরামর্শ: আপনার স্বামী যেহেতু প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টা ইয়াবা ট্যাবলেট ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ করছেন, তাই আমরা বলতেই পারি তিনি এখন মাদক গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে নেই। এ পর্যায়ে আপনার শ্বশুর, দেবর বা বন্ধুদের বিষয়টা জানান। প্রথমত, তাঁকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তিনি যদি রাজি না হন তবে তাঁকে বিশেষ পদ্ধতিতে জোরপূর্বক ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার স্বামী যেহেতু মাদকাসক্তের জটিল পর্যায়ে চলে গেছেন, তাই খুব দ্রুত তাঁকে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের নিরাময়কেন্দ্র বা রিহ্যাব আছে। আপনার স্বামীকে ভর্তি করতে হলে অবশ্যই জেনে-বুঝে ভর্তি করতে হবে। তা নাহলে চিকিৎসার পরিবর্তে ক্ষতিটাই বেশি হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন যাঁরা:
আহমেদ হেলাল, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
মেখলা সরকার, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ফারজানা রহমান, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
মো. জিল্লুর রহমান খান, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল, নির্বাহী পরিচালক, আপন
ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুর্নবাসন কেন্দ্র, ঢাকা
সঞ্চালনা: ফেরদৌস ফয়সাল
No comments