ভারত নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত
অন্য
কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মূল্যায়ন নয়, ভারত নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত বলে
মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ। গতকাল জাতীয়
প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট
অ্যাসোসিয়েশন (ডিকাব) আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। দেশের
বহুল আলোচিত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের বছরপূর্তিকে ঘিরে এখানে গত ৩ মাস ধরে
যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে তাতে ভারতের মূল্যায়ন কি? জানতে চয়েছিলেন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক সাংবাদিক। জবাবে দেশটির হাই কমিশনার এ মন্তব্য করেন।
বিদেশী দূতদের সঙ্গে ডিকাবের নিয়মিত এমন আয়োজনে এবারই প্রথম ভারতীয় হাই
কমিশনার অংশ নিলেন। সেখানে সূচনা বক্তৃতার পর উন্মুক্ত সেশনে দুই দেশের
স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন
বিষয়ে খেলামেলা কথা বলেছেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এই মুহূর্তে সবচেয়ে
আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পঙ্কজ শরণ বলেন,
এই বিষয়টি দুই দেশের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। তিস্তার পানি
বণ্টনের সঙ্গে দুই দেশেরই স্বার্থ জড়িত। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। হাই কমিশনার
তার বক্তব্যেও এ নিয়ে দেশটির ইতিবাচক মনোভাবের কথা তুলে ধরেন। বলেন, দুই
দেশের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই চুক্তিটি সই হবে। প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক
সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে হাই কমিশনারের কাছে ব্যাখ্যা চান। তিস্তার ব্যাপারে
ধৈর্য ধারণ ও আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ২০১১
সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের আগে চুক্তিটির যে খসড়ায়
দুপক্ষের সম্মতি ছিল সেটাই সই হবে না-কি নতুন করে আবারও আলোচনা হবে? হাই
কমিশনার সুনির্দিষ্ট করে কোন কিছুই বলেননি। তার ভাষ্য, পানি মূল্যবান
সম্পদ। দুই দেশের জন্যই এই সম্পদ সমানভাবে ব্যবহারের সুযোগ রাখতে হবে।
অতীতে ড্রাফট বা যাই হোক চুক্তিটি হওয়াই মুখ্য। সেটি অবশ্যই দুই দেশের
সম্মতির ভিত্তিতে হবে। পুরো বিষয়টি নিয়েই উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে
তিনি বলেন, চুক্তির ক্ষেত্রে ওই নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল লোকগুলোর কষ্ট
যেমন বিবেচনা করা হবে তেমনি স্বার্থও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ঢাকা সফর আলোচনার ইতিবাচক অগ্রগতি বলে মনে করেন
হাই কমিশনার। তবে তিস্তার সঙ্গে ফেনীসহ অন্য অভিন্ন নদীগুলোর পনি বণ্টন
এবং তীর সংরক্ষণের প্রসঙ্গও টানেন ভারতের দূত। বলেন, এখন সুনির্দিষ্ট কিছু
নীতির ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ চলছে। ফেনী নদীর পানিবণ্টন
চুক্তিও একই নীতির ভিত্তিতে হবে। তিস্তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চলমান আলোচনা যে
শিগগিরই শেষ হচ্ছে এমন কোন ইঙ্গিত ডিকাব-টক এর আলোচনা থেকে পাওয়া যায়নি।
দেশটির সঙ্গে ১৯৭৪ সালে সই হওয়া স্থল সীমানা চুক্তি এবং বাস্তবায়ন সম্পর্কে
ভারতের হাইকমিশনার বলেন, এই বিষয়টি নিয়েও ভারতের উচ্চপর্যায়ে কাজ চলছে।
বাংরাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল, নদী ও সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত সব বিরোধের
শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। দুই দেশের স্থল সীমানার ক্ষেত্রে ৯৯.৭ শতাংশের
মীমাংসা হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির
ঢাকা সফর নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে যে আলোচনা চলছে সুনির্দিষ্ট করে কোন সময় কি
ঠিক হয়েছে জানাতে চাওয়া হয় ডিকাব টক-এ। জবাবে হাই কমিশনার বলেন উভয়ের
সুবিধাজনক সময় খোঁজা হচ্ছে। সে প্রসঙ্গে হাই কমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার দিল্লি সফরের আমন্ত্রণের বিষয়টিও যুক্ত করেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণও দিয়িেছেন নরেন্দ্র মোদি। পারস্পরিক
আমন্ত্রণ রয়েছে। এখন সফরের সময়সূচি নিয়ে দুইপক্ষ আলোচনা করছে। প্রশ্নোত্তর
পর্বে সম্প্রতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে
এবং ভারতের পক্ষ নিয়ে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে জানতে চান
সাংবাদিকরা। শুরুতে পঙ্কজ শরণ বলেন, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল
(আইসিসি), বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিল (বিসিসি) বা ভারতের ক্রিকেটের কেউ নই।
তাই এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য আমি যথোপযুক্ত ব্যক্তি নই। বিতর্কিত ওই
ম্যাচের পর দুই দেশের মানুষের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা
নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে পঙ্কজ শরণ বলেন, খেলাধুলার
সম্পর্ক অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে থাকতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে
রাখার স্বার্থেই খেলাধুলায়ও সুন্দর সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে থাকতে হবে।
সূচনা বক্তৃতায় হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত বিপুল জনসংখ্যার দেশ। দুই
দেশেরই রয়েছে স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস। দুই দেশের মানুষই চায় উন্নতি আর
অগ্রগতির মধ্য দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে। তারা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চায়
না। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যাপক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে পঙ্কজ শরণ
বলেন, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে
২০১৩ সালে যা এখনও অব্যাহত আছে। সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ যেসব বিষয়ে দুই
দেশের মধ্যে এখনও তিক্ততা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে সীমান্ত
হত্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমছে বলেও দাবি করেন ভারতীয় এ কূটনীতিক। লিখিত
বক্তৃতায় বাংলাদেশ ও ভারত বিপুল জনসংখ্যার দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই
দেশেরই রয়েছে স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস। দুই দেশের মানুষই চায় উন্নতি আর
অগ্রগতির মধ্য দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে। তারা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চায়
না। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যাপক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে পঙ্কজ শরণ
বলেন, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে
২০১৩ সালে যা এখনও অব্যাহত আছে। সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ যেসব বিষয়ে দুই
দেশের মধ্যে এখনও তিক্ততা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন,
সীমান্তে হত্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমছে। ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিমের
সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুকে সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা
করেন।
ভিসার নিয়ন্ত্রণ ঢাকায় নয়, দিল্লিতে: ভারতীয় ভিসার জন্য সাক্ষাতের তারিখ পেতে জটিলতা সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্নে পঙ্কজ শরণ বলেন, ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা মোটেই ঢাকা দূতাবাস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় না, এর নিয়ন্ত্রণ দিল্লিতে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার ভিসা দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী পাঁচ বছরের ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ ভিসা পান। সাক্ষাতের তারিখ পাওয়া নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি ‘সচেতন’ রয়েছেন জানিয়ে বলেন, আমরা এসব জটিলতা নিরসন করতে এবং কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়গুলো। ভিসা পাওয়া সহজ করতে সাক্ষাতের তারিখের বিধান তুলে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারিখ পাওয়ার অপর্যাপ্ততার বিষয়ে সমস্যার কারণ খুঁজতে আমাদের কারিগরি ব্যবস্থার নিরীক্ষা চালানোসহ নানা ধরনের সমাধানের বিষয়ে নজর দিচ্ছি আমরা। আমাদের চিন্তা এটাকে কিভাবে সহজ, সরল ও স্বচ্ছ করা যায়। এর মধ্যে আমরা কোনও দালাল বা কোনও অবৈধ উপায় সহ্য করি না। এ সময় ভারতীয় দূত দু’দেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানো এবং উন্নততর সংযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দেন। ভারত ও বাংলাদেশ ‘পারস্পরিক অংশীদার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, শান্তি, স্থিতি, পারস্পরিক নিরাপত্তা ও সুবিধাজনক একটি পরিবেশে উভয় দেশ যাতে এক সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জন করে তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভিসার নিয়ন্ত্রণ ঢাকায় নয়, দিল্লিতে: ভারতীয় ভিসার জন্য সাক্ষাতের তারিখ পেতে জটিলতা সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্নে পঙ্কজ শরণ বলেন, ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা মোটেই ঢাকা দূতাবাস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় না, এর নিয়ন্ত্রণ দিল্লিতে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার ভিসা দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী পাঁচ বছরের ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ ভিসা পান। সাক্ষাতের তারিখ পাওয়া নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি ‘সচেতন’ রয়েছেন জানিয়ে বলেন, আমরা এসব জটিলতা নিরসন করতে এবং কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়গুলো। ভিসা পাওয়া সহজ করতে সাক্ষাতের তারিখের বিধান তুলে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারিখ পাওয়ার অপর্যাপ্ততার বিষয়ে সমস্যার কারণ খুঁজতে আমাদের কারিগরি ব্যবস্থার নিরীক্ষা চালানোসহ নানা ধরনের সমাধানের বিষয়ে নজর দিচ্ছি আমরা। আমাদের চিন্তা এটাকে কিভাবে সহজ, সরল ও স্বচ্ছ করা যায়। এর মধ্যে আমরা কোনও দালাল বা কোনও অবৈধ উপায় সহ্য করি না। এ সময় ভারতীয় দূত দু’দেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানো এবং উন্নততর সংযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দেন। ভারত ও বাংলাদেশ ‘পারস্পরিক অংশীদার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, শান্তি, স্থিতি, পারস্পরিক নিরাপত্তা ও সুবিধাজনক একটি পরিবেশে উভয় দেশ যাতে এক সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জন করে তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
No comments