সময় নষ্ট করল ফিলিস্তিন
ইসরায়েলি দখলদারত্ব অবসানে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব তুলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কেবল সময়ই নষ্ট করেছে। কারণ, প্রস্তাবটি যে সেখানে পাস হবে না, সেটি আগেই জানা গিয়েছিল। এর পরও এমন উদ্যোগ নিয়ে তারা অযথা ইসরায়েলকে প্রতীকী হলেও একটা কূটনৈতিক জয় পাইয়ে দিল। ফিলিস্তিনের পক্ষে জর্ডানের তোলা প্রস্তাবটি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয় গত ৩০ ডিসেম্বর। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে সেটি পাস হওয়ার জন্য নয় ভোটের দরকার ছিল। তবে পক্ষে পড়ে আট ভোট। পাঁচটি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ভোট দেয় বিপক্ষে। প্রস্তাবটিতে ইসরায়েলকে এক বছরের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ২০১৭ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে দখলদারত্বের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাধারণত কোনো প্রস্তাব তোলার আগে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়। তাই যেই প্রস্তাব উত্থাপন করুক না কেন, ভোটাভুটির ফল কী হতে যাচ্ছে, তা আগে থেকেই সে জানে। এই প্রস্তাবটির ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম ছিল না। কার্যত ভোটাভুটি করতে দেরি করার পেছনে সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ার বিষয়টিই ছিল প্রাথমিক কারণ। তাহলে নাকচ হতে যাচ্ছে জেনেও প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হলো কেন? এমনকি প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন ভোটের নিশ্চয়তা পেলেও যুক্তরাষ্ট্র যে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রস্তাবটি আটকে দিতে পারে, সেটাও তো ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের অজানা ছিল না। ইসরায়েলের কিঞ্চিৎ সমালোচনা করে কোনো প্রস্তাব তোলা হলে আমেরিকানরা বরাবরই সেটা করেছে। এবারের বেলায় তো তারা রাখঢাক না করেই ঘোষণা দিয়েছিল,
প্রয়োজন হলে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করা হবে। বিষয়টা যদি তেমনই হয়ে থাকে তবে ফিলিস্তিনের পক্ষে জাতিসংঘে প্রস্তাব তোলা জর্ডানের রাষ্ট্রদূত দিনা কাওয়ারের বক্তব্যটা বেশ ধাঁধাপূর্ণ। তিনি বলেছেন, তাঁর এটা মনে হয়েছিল যে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা অনেক বেশি সময় পাবে। তাহলে আমেরিকানরা যে ভেটো দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল, সে বিষয়ে কী বলা হবে? ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণেই তিনি বারবার প্রস্তাবটি স্থগিত করেছিলেন। আব্বাস কি এটা মনে করেছিলেন যে তিনি যা বলছেন বা করছেন তার ফলে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের চাপ তুলে নেবে বা দেশটি শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটি মেনে নেবে? বাস্তবতা হলো, মাসের পর মাস দেনদরবার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কেবল দীর্ঘসূত্রতাই ঘটানো হয়েছে। এতে করে প্রস্তাবটির ভাষা কেবল দুর্বল থেকে দুর্বলতর করা হয়েছে। এর বেশি কিছু আর অর্জন করা যায়নি। পাশাপাশি প্রস্তাবটিকে পরিচ্ছদ-৭ হিসেবে উত্থাপন করা হয়নি। সেটি করা হলে এবং প্রস্তাবটি না মেনে চললে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকত। তার মানে, প্রস্তাবটি পাস হলেও ইসরায়েলের টিকিটি ছোঁয়া যেত না। অনায়াসে তারা এটিকে অবজ্ঞা করতে পারত। অতীতেও তারা সেটা করে পার পেয়ে গেছে। এককথায়, প্রস্তাবটিতে এমন কোনো ভাষা ছিল না, যাতে ইসরায়েলের চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে। অর্থাৎ এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে ফিলিস্তিনিরা কেবলই সময়ের অপচয় করেছে। এ থেকে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নকে এগিয়ে নেওয়ার কিছুই পায়নি ফিলিস্তিনিরা।
No comments