উইলফোর্স দিয়ে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না by মাহবুব কামাল

দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে সম্প্রতি বাজি ধরেছি আমি। সেটি বলতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে ধরা তিনটি বাজির কথা মনে এলো। পাঠকের সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করি আগে।
১.
সবে ভুট্টোর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হলের গেস্টরুমে বসে কথা বলছিলাম মিলন ভাইয়ের সঙ্গে। মিলন ভাই (আলী সানোয়ার, বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় কর্মরত) এক ভয়ংকর দাহ্য পদার্থ; কিন্তু জ্বলে উঠতে পারলেন না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম বলেছেন, প্রত্যেক মানুষই কিছু না কিছু আগুন নিয়ে জন্মায়, তার উচিত সেই আগুন ছড়িয়ে দেয়া। এই পণ্ডিত ভারতীয় সমাজ বলেই হয়তো নিজে নিজেই জ্বলতে পেরেছিলেন। এদেশে জ্বলতে হলে দাহ্য পদার্থ হলেই চলে না, দেশলাই লাগে। এই দেশলাই যাদের পকেটে, তারা তোষামুদের গায়ে কাঠি ঘষেন। আর তাই, যার মুদি দোকানদার হওয়ার কথা ছিল, তিনি হয়ে যান মন্ত্রী আর যার মন্ত্রী হওয়ার কথা, অনুরোধ করতে সংকোচ লাগে বলে পাস জোগাড় করতে পারেন না, তাই সচিবালয়ের ভেতরটা কেমন, সেটাও জানেন না। তোষামোদের ব্যাপারটি এখন বিশ্রী পর্যায়ে চলে গেছে। যাকগে।
ভুট্টোর ফাঁসি কার্যকর হবে কি-না, তা নিয়ে কথা বলছি, মিলন ভাই পনেরো মিনিটের একটা অ্যাকাডেমিক লেকচার দিলেন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও গ্লোবাল রাজনীতির নানা ইকুয়েশন দেখিয়ে তিনি বললেন- ফাঁসির রায় কার্যকর হবে না। সিক্সথ সেন্স কখনও কখনও পরাক্রম যুক্তির চেয়েও শক্তিশালী হয়। মিলন ভাইয়ের কথা শেষ হলে আমি বললাম, কারণটা আপনার মতো ব্যাখ্যা করতে পারব না, তবে ফাঁসি হয়ে যাবে। শেষমেশ ফাঁসি হওয়া-না হওয়া নিয়ে পাঁচশ’ টাকার বাজি ধরি আমরা।
আমি যে বাজি জিতেছিলাম, সেটা সিক্সথ সেন্সের জোরেও নয়। সিক্রেটটা বলি। ভুট্টোর মামলা চলছিল যখন, নিউজউইকে জিয়াউল হকের একটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন- I will hang that bastard (আমি ওই বাস্টার্ডটাকে ঝোলাবো)। তাকে পাল্টা বলা হল- আপনার মনে কি কোনো ভয় নেই? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- Not at all. Higher you fly, the harder you fall (মোটেই না। আপনি যত উপরে উঠবেন, নিচে পড়ে যাওয়া ততো কঠিন হয়ে পড়বে)।
উপরের কথাগুলো জিয়াউল হকের যে মনস্তত্ত্ব তুলে ধরে, সেটাই পাঁচশ’ টাকার ঝুঁকি নিতে সাহস জুগিয়েছে আমাকে। এক অপ্রতিরোধ্য, লজ্জা-সংকোচহীন, নির্ভয়, মরিয়া, দুর্দান্ত, বেপরোয়া জিয়াউল হকের ছবি দেখতে পেয়েছিলাম আমি ওই সাক্ষাৎকারে। জিঘাংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে এই লোক কোনো তত্ত্ব মানবেন না, বুঝতে চাইবেন না মানবতার কোনো বাণী, ভাবতে চাইবেন না কোনো ঝুঁকি; তিনি রাষ্ট্র, এমনকি নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও ঝোলাবেন ভুট্টোকে।
২.
ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। রিয়াজ, দিলু, মাসুদসহ আমরা আড্ডা মারছি প্রয়াত বন্ধু জিএম গাউসের ফকিরাপুলস্থ অফিসে। সবার মুখে এক কথা- আমেরিকা এবার টের পাবে সাদ্দাম কী জিনিস। আমি চুপ মেরে যাই। ভাবতে থাকি- আমরা যে পরস্পর বন্ধু হলাম, সেটা কীসের ভিত্তিতে? ঘটনাচক্রে মিলন ঘটলেই বন্ধু হওয়া যায়? চিন্তার ঐক্য কিংবা সমউচ্চতার ইনটেলেক্ট প্রয়োজন পড়ে না? হবে হয়তো। আমরা আসলে ল.সা.গু অর্থাৎ লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়কের ভিত্তিতেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। দু’একটি বিষয়ে কমন পড়লেই চলে। ভালো চুটকি বলতে পারে অথবা প্রেমিকার সঙ্গে ডেট করার জায়গা করে দিল কিংবা খবর দিল অমুক পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে- ব্যস, হয়ে গেল বন্ধু! তা না হলে আমারই বন্ধু হয়ে তারা সাদ্দাম কী জিনিস বোঝাতে চায়, আমেরিকা কী জিনিস জানে না।
শুধু আমার এই বন্ধুরা কেন, সাদ্দামের বিজয় কামনা করে প্রার্থনা চলছিল তখন চারদিকে। কিন্তু রাব্বুল আলামিন কোন প্রার্থনা কবুল করবেন আর কোনটা করবেন না, সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। আমরা যারা বান্দা, তারা কেন ধরে নেব তিনি আমাদের প্রার্থনা কবুল করতে বাধ্য? ইউরোপিয়ান কে যেন বলেছিলেন- আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি, তবে ঈশ্বর আমার সঙ্গে পরামর্শ করেই আমার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। সাদ্দামের ভাগ্যও তিনি নিজেই নির্ধারণ করেছেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম (এটা অবশ্য গৌরবের কিছু নয়, সাধারণ বুদ্ধিতেই কুলোয় এটা), বীজ না বুনে শুধু প্রার্থনায় যেমন ফসল ফলবে না, ১৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দেশ আমেরিকার কাছে তেমন মাত্র কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশের পরাজয় শুধু প্রার্থনা দিয়ে ঠেকানো যাবে না। সাদ্দাম বিজয়ী হলে ব্যক্তিগতভাবে আমিও খুশি হতাম। তাতে অন্তত কুর্দি হত্যাসহ সাদ্দামের স্বৈরতান্ত্রিক অপকর্মগুলো ছাপিয়ে মার্কিনিদের বলা যেত- তোমরা আটলান্টিকের ওই পাড়েই থাকো, এই পাড়ে মাতব্বরি ফলাতে এসো না। ঝঘঅঋট তত্ত্বও অসার হয়ে পড়ত তখন। একসময় মার্কিন প্রশাসন যখন তাদের জন্য বিপজ্জনক শক্তি দমন করতে সৈন্য পাঠাত, তারা অকুস্থলে পৌঁছার দুই ঘণ্টার মধ্যেই হোয়াইট হাউসে টেলেক্স (তখন কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি ছিল না) পাঠাত- SNAFU DONE (SNAFU বিস্তারিত করলে দাঁড়ায়- Situation normal, all fucked up)।
কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়াই আমি বাজি ধরি। কেন থাকবে দ্বিধা? আমি তো জানি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে আমেরিকা যে দুটি বিষয়ে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে, তার একটি চিকিৎসাশাস্ত্র, অন্যটি সমরবিদ্যা। সেই ’৮১ সালেই জেনেছিলাম, আমেরিকার সমরশক্তি যা, তাতে সমগ্র পৃথিবীকে অন্তত ১৭ বার ধ্বংস করা সম্ভব। আমেরিকার শক্তির দাপট খর্ব করতে পারে কেবল আমেরিকানরাই। আমরা বরং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, তিনি যেন এমন এক আমেরিকান নেতৃত্বের জন্ম দেন, যিনি তার পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনবেন, অবনত মস্তকে সম্মান করবেন এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার।
দ্বিতীয় যে কারণে আমেরিকার জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম তা হল, ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে টাইম ম্যাগাজিনের একটি নিবন্ধে দেখেছিলাম- আমেরিকা যদি মানবিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চায়, তাহলে সময় লাগবে কম-বেশি দুই মাস। আর তা না চাইলে তিন দিনেই কেল্লা ফতে। টাইম ধরনের পত্রিকার ভবিষ্যদ্বাণী আদালতের রায়ের মতোই মান্য করে থাকি আমি।
৩.
’৯১-এর নির্বাচনের ঠিক আগের দিন আমি পাটগ্রাম থেকে রংপুর হয়ে ঢাকায় পৌঁছাই। সন্ধ্যায় যাই চিরচেনা শাহবাগের সিনোরিটায়। সেখানে আড্ডা শুরু হয়েছে বিকেলেই, আড্ডাবাজদের মধ্যে আছে আমেরিকান এম্বেসির নাসির (বর্তমানে রুয়ান্ডায় ইউএসএইডে কর্মরত), স্কলাসটিকার কাজী দীশু, গ্রীন হেরাল্ডের ড্যানিসহ আরও অনেকে। আমাকে দেখেই সবাই বলে ওঠে- এই যে বাহের দেশের লোক পাওয়া গেছে। বলো কামাল, রংপুরের খবর কী।
তারা কী জানতে চায়, তা তো বোঝাই যায়। বলি, গ্রেটার রংপুরের এভরি সিঙ্গল।
মানে?
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিচার হয়ে ইংরেজি বোঝো না? বৃহত্তর রংপুরের সব আসনই পাবে এরশাদ।
আমি একের পর এক গালি খেতে থাকি। lunatic (পাগল), insane (উন্মাদ), provincial (শব্দটির অর্থ প্রাদেশিক, গালি যখন, তখন অর্থ ক্ষ্যাত) আরও কত কী! এরশাদের দালাল বলতে বাকি থেকেছে শুধু। এদের চিন্তার দুর্বলতাটুকু বুঝতে পারি আমি খুব। আকাঙ্ক্ষা কখনও কখনও বিশ্বাসের জন্ম দেয়। নবীন লেখক আকাক্সক্ষা করে, তার বই সবাই কিনুক। এরপর বিশ্বাস জন্মায়, তার বই সবাই কিনবে এবং তাই যে বই একশ’ ছাপলেই চলে, সেটা তিনি ছাপান এক হাজার। যা হওয়ার তা-ই হয়। দশ কপিও বিক্রি হয় না। আমার এই বন্ধুরাও চেয়েছিল এরশাদ সমূল উৎপাটিত হোক রাজনীতি থেকে। তাই এদের বিশ্বাস জন্মেছিল, তিনি রংপুরেও কোনো আসন পাবেন না।
কোনো কোনো রিপোর্টারও কি কম করেছেন! রিপোর্ট তৈরি হয় মাঠে-ঘাটে অথচ এদের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে মাথায়! পাঠক, বাস্তবজ্ঞানের কী ছিরি দেখুন। জরিপ পরিচালনাকারীরা এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ২২০টি আসন দিয়ে দিয়েছিল! আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন। কোনো নির্বাচনের আগে আপনি যদি বলেন, আওয়ামী লীগ জিতবে, শ্রোতা ধরে নেবে আপনি আওয়ামী লীগার। অথচ আপনি হিসাব করে দেখেছেন আওয়ামী লীগই জিতবে। বিএনপির বিজয় কামনা করেও ব্যক্তিত্বের স্বার্থে আপনার বুঝটাই বলা উচিত নয় কি আপনার? আমি যা চাই, সেটা না ঘটে যা ঘটবে- সেটা আমি বলতে পারব না? কিছু রিপোর্টার চেয়েছেন, জাতীয় পার্টি নির্মূল হোক আর তাই রিপোর্টও সাজিয়েছেন সেভাবে। তারা বরং রিপোর্ট না লিখে কলাম লিখে রংপুরের ভোটারদের লাঙ্গলে ভোট দিতে বারণ করতে পারতেন। যা হোক।
আমি বন্ধুদের বলি, দেখ গতকাল আমি রংপুর শহরে মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির শেষ নির্বাচনী মিছিলটি দেখেছি। এই মিছিলের তরঙ্গাভিঘাত গ্রেটার রংপুরের আনাচে-কানাচে আছড়ে পড়েছে। তাছাড়া রংপুরের মানুষের স্বভাব-চরিত্র তোমরা বুঝবে না।
তারা কেউই আমার কথায় সায় দেয় না। এরপর বাজির প্রস্তাবটা আমিই দিই। কথা হয়, নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি; ১ মার্চ আমি সবাইকে চাইনিজ খাওয়াব, না হয় তারা সবাই মিলে আমাকে খাওয়াবে। আমি নির্বাচনের পরের দিনই পাটগ্রামে ফিরে গিয়েছিলাম বলে চাইনিজটা আর খাওয়া হয়নি।
যে বাজির নিষ্পত্তি হয়নি, সেটার কথা বলি এখন। বিএনপি-সমর্থকদের একটি টাইপ হল- তারা নিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে এমনভাবে কথা বলেন যে, মনেই হবে না তারা বিএনপিকেই সবসময় ক্ষমতায় দেখতে চান। বিএনপি বিরোধী দলে থাকলে তারা দ্রুত নির্বাচন দাবি করতে থাকেন ক্রমাগত এবং বাংলাদেশে শতকরা একশ’ ভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বলে এই সত্যকে পুঁজি করে বলেন- কে ক্ষমতায় আসবে সেটা বড় কথা নয়, নির্বাচনটা ফেয়ার হতে হবে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, এরা পুনঃনির্বাচন দাবি করেন না। তখন সরকারের ব্যর্থতার কথা তুললে বলেন- আওয়ামী লীগ আমলে কি এমনটা হয়নি?
এই টাইপের একজন বিএনপি-সমর্থক কয়েকদিন আগে বললেন, বিএনপি ২০১৫তেই ক্ষমতায় আসবে। বললাম, সেটা কীভাবে? বিষয়টা তো এমন নয় যে, শেখ হাসিনা এখন যে চেয়ারটায় বসেন, সেখান থেকে তাকে ফেলে দিয়ে সেখানে খালেদা জিয়াকে বসিয়ে দিলাম। আপনারা যদি আন্দোলন তুঙ্গে তুলতে পারেন, সেক্ষেত্রে এই সরকারের পতন হবে বুঝলাম। কিন্তু তার মানে তো বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া নয়। যার অধীনেই হোক, একটা নির্বাচন লাগবে এবং তাতে জিততে হবে।
২০১৫ সালে বিএনপি কীভাবে ক্ষমতায় আসবে, এই ভদ্রলোকের কাছে সেই রূপরেখা কী ছিল জানি না, তবে আমার যুক্তি শুনে তিনি বললেন- ২০১৫ সালেই নির্বাচন হবে।
বললাম, কীভাবে হবে? এ সরকার তো নির্বাচন দেবে না। তাদের নির্বাচন দিতে বাধ্যও করানো যাবে না।
এবার তিনি যা বললেন, আমি তেমনটাই আন্দাজ করেছিলাম। বললেন, আবার এক-এগারোর মতো কিছু ঘটবে। তারাই নির্বাচন দেবে।
টিকটিকির উইলফোর্স ঈর্ষণীয়। সে অন্য পক্ষকে উইলফোর্স দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যে কীট বা পতঙ্গটিকে সে টার্গেট করে, তার ওপর এমন সম্মোহনী দৃষ্টি ফেলে যে, ওটা আর নড়তে চড়তে পারে না। এরপর খপ করে মুখে পুরে ওটাকে।
টিকটিকি তার টার্গেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও মানুষ তার উইলফোর্স দিয়ে সোশ্যাল ডিনামিক্স প্রভাবিত করতে পারে না। সোসাইটি আসলে প্রভাবিত, নিয়ন্ত্রিত, পরিবর্তিত হয় সামাজিক শক্তিগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এই ভদ্রলোক উইলফোর্স দিয়ে আরেকটি এক-এগারো ঘটাতে চাচ্ছেন! বুঝতে পারি, আন্দোলন প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হতে হতে শেষ পর্যন্ত তিনি উইলফোর্সের দ্বারস্থ হয়েছেন। আমি বললাম, দেখুন বর্তমানে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে আমারও মন ভালো না। কিন্তু আবারও এক-এগারো ঘটবে না। যদি ঘটেও, আগেরটার মতো হবে না সেটা।
লোকটি শিক্ষিত। বললেন, কেন? ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে না কি? বললাম, আপনারা শুধু জানেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। বাকিটুকু জানেন না। কার্ল মার্কস বাকিটা বলে দিয়েছেন। বলেছেন- History repeats itself; first as tragedy, second as farce (ইতিহাস পুনরাবৃত্তি ঘটায় এবং প্রথমবার যদি তা ট্রাজেডি নাটক, দ্বিতীয়বার তা হয় প্রহসন)। ইতিহাসের হুবহু পুনরাবৃত্তি ঘটে না কখনও।
যা হোক, শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কী আসবে না- এই ইস্যুতে বাজি ধরি আমরা। এই বাজি জেতার জন্য একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে! অবশ্য এ বছর দুই দলের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যদি অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং তাতে বিএনপি জেতে, তাহলে গণতন্ত্রের প্রতি আমার নির্ভেজাল পক্ষপাতিত্বের কারণে বাজি হেরে গেলেও এক ধরনের বিজয়ের স্বাদ পাব আমি।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.