উত্তেজনা বাড়ছে
বাংলাদেশে
বিতর্কিত নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে ব্যাপক সহিংসতার পর ক্রমেই
বাড়ছে উত্তেজনা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্র হয়ে টালমাটাল
হয়ে পড়ছে। গতকাল এ কথা বলা হয়েছে জার্মানির প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম অনলাইন
ডয়েচে ভেলে’তে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত এমন কয়েকজন রাজনীতিক,
বোদ্ধার মন্তব্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,
বাংলাদেশে এখন যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এমন অবস্থায় একদলের মত অন্যদলের ওপর
চাপিয়ে দেয়া একটি ভুল পদক্ষেপ। এতে আরও হতাশার সৃষ্টি হবে। যদি বাংলাদেশে
জননিরাপত্তার জন্য প্রতিবাদ বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে তা প্রয়োগ করতে
হবে সব দলের জন্য। এমন মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক সহকারী উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কাউন্সিল অন ফরেন
রিলেশন্স-এর সিনিয়র ফেলো এলিসা আয়রিস, ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের
দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ তোবিয়াস বার্গার, নয়া দিল্লি ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর
ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড এনালাইসিস-এর রিসার্স ফেলো শ্রুতি পট্টনায়েক। এতে
তারা রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও সহিংসতা প্রতিরোধে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর
মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,
জাতীয় নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে সোমবার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের
সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষের ফলে কমপক্ষে চারজন নিহত
হয়েছেন। এ খবরে ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের
অবরোধ ঘোষণা করেছেন। গতকাল তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনার হুমকি দিয়েছে
সরকার। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ছেলে, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক
রহমানের বক্তব্য প্রচার করার পরে কর্তৃপক্ষ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের
প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ওই চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। তবে
পুলিশ বলছে, পর্নোগ্রাফিক বিষয় প্রচার করার কারণে তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে অন্যরা সরকারি এ ব্যাখ্যাকে মিথ্যা বলে দাবি করছেন। শ্রুতি পট্টনায়েক
বলেছেন, বিএনপি বর্তমানে যে সুযোগ পেয়েছে তা ব্যবহার করে একটি বার্তা পৌঁছে
দেয়ার চেষ্টা করছে। তাহলো গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য।
তোবিয়াস বার্গার মনে করেন, বিএনপি যাতে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করতে না পারে সবার
আগে আওয়ামী লীগ তা প্রতিরোধ করছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানীতে
যাতে বিক্ষোভে নেতাকর্মীর উপস্থিত সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে চেষ্টা করছে।
এটাই সরকারের উদ্দেশ্য। তাই সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হয় তারা খালেদা
জিয়াকে তার অফিসে অবরুদ্ধ রেখে ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, রাজনৈতিক
বিক্ষোভ মাঝে-মধ্যেই সহিংসতায় রূপ নেয়। রাজনৈতিক সমাবেশে, মিছিল-মিটিংয়ে
নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরও ৫ই জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ
করতে দেয়া হয়েছে। তাই এলিসা আয়রিস বলেছেন, একপক্ষের মত অন্যপক্ষের ওপর
চাপিয়ে দেয়া ভুল। সব দলের জন্য একই নীতি প্রয়োগ করা উচিত। তোবিয়াস বার্গার
বিশ্বাস করেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং
নতুন নির্বাচন দিতে রাজি করানোর মতো যথেষ্ট শক্তি নেই। স্বল্প সময়েই দেশের
পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক
মতপার্থক্য ও সহিংসতা সমাধানের জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে
গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন। প্রকৃত ও গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমেই এই অচলাবস্থা
সমাধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তোবিয়াস বার্গার বলেন, বর্তমানে
সরকার বা বিরোধী দল কোন পক্ষই সেই দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
No comments