পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে ॥ সাঁড়াশি অভিযান by খায়রুল হোসেন রাজু
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে
পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ
ব্যাংক। ওই সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ
উদ্ধারে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং ও
সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এই অভিযানে নেমেছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে
কঠোর মনিটরিং ও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের
পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিশন কাজও শুরু করছে বলে জানা
গেছে। এ মিশনে দেশে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোক নিয়োগ থেকে শুরম্ন
করে হিসাব খোলা, করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা তদারকি করা, পিইপিদের
(বিদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তি) সঙ্গে সম্পর্ক রৰা করা, ব্যাংক ও আর্থিক
প্রতিষ্ঠানের পলিসি তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং
গ্রাহকদের শিক্ষা ও প্রশিৰণে কঠোর ও আধুনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক। এ ছাড়া জঙ্গী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দেশব্যাপী রোড শো
শুরু করা হচ্ছে। এসব বিষয় সংবলিত একটি কঠোর নির্দেশনা জারি করে ব্যাংক ও
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন
২০০৯ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের সন্ত্রাস
নিয়ন্ত্রণেই এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এসব টাকা উদ্ধারের লক্ষ্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু কিছু টাকার ইতোমধ্যে সন্ধানও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়েও সহায়তা করছে। তিনি আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ ব্যাংকিং খাতে কঠোরভাবে মনিটরিং এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে করে কোনভাবেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাচারসহ সস্ত্রাসী অর্থায়ন না করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশিস্নষ্ট বিভাগ জোরালো ভূমিকা নিয়ে কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের তৎপরতা বৃদ্ধির লৰ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে কিংবা অবৈধ পথে অর্থ সংগ্রহ করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের অর্থ দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের লভ্যাংশ দিয়ে সংগঠনের খরচ বহন করছে। বিষয়টি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে যাতে বৈধ-অবৈধ পথে জঙ্গী অর্থায়ন আসতে না পারে সে জন্য কঠোর ও যুগান্তকারী পদৰেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আনত্মর্জাতিক মানদ-, দেশে বিদ্যমান আইন, বিধিবিধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সমন্বয়ে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পলিসি ম্যানুয়াল থাকবে। এসব পলিসি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক/ সর্বোচ্চ কমিটি কর্তৃক পাস হতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সময় সময় তা পর্যালোচনা করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কিনা তার পরিদর্শন করা হবে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৬(২) ধারা অনুয়ায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এসব নির্দেশনা জারি করেছে।
যেসব দেশ/অঞ্চল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেনি (যেমন ফাইন্যান্সিয়াল একশন টাস্কফোর্সের 'নন-কো-অপারেটিং কান্ট্রিজ এ্যান্ড টেরিটরিজ' তালিকাবভুক্ত দেশ/অঞ্চল) সেসব দেশের কোন ব্যক্তির (আইনগত প্রতিনিধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোন প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখা এবং লেনদেন সম্পাদনের ৰেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার লৰ্যে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মানি লন্ডারিং পলিসি জোরদার করাসহ ইন্টারন্যাশনাল এগমেন্ট গ্রুপের সদস্য হওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এ গ্রম্নপের সদস্য হবে বাংলাদেশ। এ লৰ্যে গত সপ্তাহে গবর্নর ড. আতিউর রহমান, এ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেন। ওই সফর থেকে গবর্নর দেশে ফিরে এলেও এ্যাটর্নি জেনারেল এবং ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। নিউইয়র্কে এক মতবিনিময় সমাবেশে বার্তা সংস্থা এনার প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তারেক রহমান, আরাফাত রহমানসহ আরও অনেক দুর্নীতিবাজের পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আনত্মরিক সহায়তা চাইতে আমি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করলাম। সংশিস্নষ্ট বিষয়ে এ দেশের সরকার সহায়তা করবে বলেও আমাকে জানিয়েছে। রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রের ৰমতাধারী ব্যক্তি পলিটিক্যাল এক্সপোসড পারসন্স (পিইপিস)-দের ব্যাংক হিসাব খোলা অথবা পরিচালনার ৰেত্রে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারের প্রধান, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক, শাসক বিচারপতি অথবা সেনাবাহিনীর অফিসারসহ গুরম্নত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি পিইপিসের আওতাভুক্ত হবেন। পিইপিসদের হিসাব খোলা ও পরিচালনা সংক্রানত্ম ঝুঁকি শনাক্তকরণের জন্য একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রবর্তন করা হবে। এসব পিইপিসদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিতে হবে। তাঁদের হিসাব নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। একই সঙ্গে পিইপিসদের হিসাব লেনদেনকৃত অর্থ বা সম্পদের উৎস জানার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৰেত্রে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংককে রেসপন্ডেন্ট) ক্রেডিট, ডিপোজিট, কালেকশন, কিয়ারিং, পেমেন্ট বা অনুরূপ অন্য কোন সেবার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা যাতে মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে না পারে সে জন্য করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন ও অব্যাহত রাখার লক্ষ্য এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত শাখা বা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান কোন কারণে যদি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে একাধিকবার যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ করা হবে, যাতে করে কোনভাবেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক ঝুঁকির সম্মুখীন না হয়। দেশে এই প্রথমবারের মতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের ৰেত্রে এতে সতর্ক থাকার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করার লৰ্যে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি বিবেচনায় আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। বৈধ বা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি বিদেশে পাচার রোধে বৈদেশিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিৰণের পাশাপাশি বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের হিসাব খোলার ফরমের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) ও লেনদেনের অনুমতি মাত্রাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাহকের একাধিক প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব প্রদানসহ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ে সচেতন করতে মাঝে মাঝে লিফলেট বিতরণ এবং প্রতিটি শাখার পাবলিক পরিচিত স্থানে পোস্টার লাগানের ব্যবস্থা নির্দেশ দেয়া হয়।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এসব টাকা উদ্ধারের লক্ষ্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু কিছু টাকার ইতোমধ্যে সন্ধানও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়েও সহায়তা করছে। তিনি আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ ব্যাংকিং খাতে কঠোরভাবে মনিটরিং এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে করে কোনভাবেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাচারসহ সস্ত্রাসী অর্থায়ন না করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশিস্নষ্ট বিভাগ জোরালো ভূমিকা নিয়ে কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের তৎপরতা বৃদ্ধির লৰ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে কিংবা অবৈধ পথে অর্থ সংগ্রহ করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের অর্থ দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের লভ্যাংশ দিয়ে সংগঠনের খরচ বহন করছে। বিষয়টি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে যাতে বৈধ-অবৈধ পথে জঙ্গী অর্থায়ন আসতে না পারে সে জন্য কঠোর ও যুগান্তকারী পদৰেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আনত্মর্জাতিক মানদ-, দেশে বিদ্যমান আইন, বিধিবিধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সমন্বয়ে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পলিসি ম্যানুয়াল থাকবে। এসব পলিসি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক/ সর্বোচ্চ কমিটি কর্তৃক পাস হতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সময় সময় তা পর্যালোচনা করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কিনা তার পরিদর্শন করা হবে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৬(২) ধারা অনুয়ায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এসব নির্দেশনা জারি করেছে।
যেসব দেশ/অঞ্চল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেনি (যেমন ফাইন্যান্সিয়াল একশন টাস্কফোর্সের 'নন-কো-অপারেটিং কান্ট্রিজ এ্যান্ড টেরিটরিজ' তালিকাবভুক্ত দেশ/অঞ্চল) সেসব দেশের কোন ব্যক্তির (আইনগত প্রতিনিধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোন প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখা এবং লেনদেন সম্পাদনের ৰেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার লৰ্যে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মানি লন্ডারিং পলিসি জোরদার করাসহ ইন্টারন্যাশনাল এগমেন্ট গ্রুপের সদস্য হওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এ গ্রম্নপের সদস্য হবে বাংলাদেশ। এ লৰ্যে গত সপ্তাহে গবর্নর ড. আতিউর রহমান, এ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেন। ওই সফর থেকে গবর্নর দেশে ফিরে এলেও এ্যাটর্নি জেনারেল এবং ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। নিউইয়র্কে এক মতবিনিময় সমাবেশে বার্তা সংস্থা এনার প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তারেক রহমান, আরাফাত রহমানসহ আরও অনেক দুর্নীতিবাজের পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আনত্মরিক সহায়তা চাইতে আমি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করলাম। সংশিস্নষ্ট বিষয়ে এ দেশের সরকার সহায়তা করবে বলেও আমাকে জানিয়েছে। রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রের ৰমতাধারী ব্যক্তি পলিটিক্যাল এক্সপোসড পারসন্স (পিইপিস)-দের ব্যাংক হিসাব খোলা অথবা পরিচালনার ৰেত্রে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারের প্রধান, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক, শাসক বিচারপতি অথবা সেনাবাহিনীর অফিসারসহ গুরম্নত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি পিইপিসের আওতাভুক্ত হবেন। পিইপিসদের হিসাব খোলা ও পরিচালনা সংক্রানত্ম ঝুঁকি শনাক্তকরণের জন্য একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রবর্তন করা হবে। এসব পিইপিসদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিতে হবে। তাঁদের হিসাব নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। একই সঙ্গে পিইপিসদের হিসাব লেনদেনকৃত অর্থ বা সম্পদের উৎস জানার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৰেত্রে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংককে রেসপন্ডেন্ট) ক্রেডিট, ডিপোজিট, কালেকশন, কিয়ারিং, পেমেন্ট বা অনুরূপ অন্য কোন সেবার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা যাতে মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে না পারে সে জন্য করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন ও অব্যাহত রাখার লক্ষ্য এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত শাখা বা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান কোন কারণে যদি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে একাধিকবার যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ করা হবে, যাতে করে কোনভাবেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক ঝুঁকির সম্মুখীন না হয়। দেশে এই প্রথমবারের মতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের ৰেত্রে এতে সতর্ক থাকার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করার লৰ্যে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি বিবেচনায় আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। বৈধ বা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি বিদেশে পাচার রোধে বৈদেশিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিৰণের পাশাপাশি বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের হিসাব খোলার ফরমের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) ও লেনদেনের অনুমতি মাত্রাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাহকের একাধিক প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব প্রদানসহ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ে সচেতন করতে মাঝে মাঝে লিফলেট বিতরণ এবং প্রতিটি শাখার পাবলিক পরিচিত স্থানে পোস্টার লাগানের ব্যবস্থা নির্দেশ দেয়া হয়।
No comments