প্রতিবাদে মুখর দেশ, তবুও থেমে নেই ধর্ষণ by শামীম ফেরদৌস
দিল্লীর বাসে মেডিক্যাল ছাত্রীর গণধর্ষণের
ঘটনাটি যখন বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে তখন এর রেশ কাটতে না কাটতেই
মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে গার্মেন্ট কর্মীর ধর্ষণের ঘটনাটি যেন দিল্লীর ঘটনারই
পুনরাবৃত্তি।
এ যেন ভারতীয় ছবি নকলের মতোই কোন ঘটনা। এই
ঘটনাটি যেন আমাদের দেশের বিবেকবান মানুষের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাকে আরও বাড়িয়ে
দিয়েছে। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো মানিকগঞ্জ।
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নারী ধর্ষিত হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই
শিশু। কেউ কেউ হচ্ছেন গণধর্ষণের শিকার। কাউকে আবার ধর্ষণের পর হত্যা করা
হচ্ছে নির্মমভাবে। কি নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা। এসব নিষ্ঠুরতা আর বর্বরতার
বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ সোচ্চার হচ্ছে। রাস্তায় এসে দাঁড়াচ্ছেন
স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। প্রতিবাদে
মুখর হয়ে উঠেছে সারাদেশ। তবুও কমছে না ধর্ষণের ঘটনা।
প্রতিদিনই সম্ভ্রম হারাচ্ছে নারী। ফুলের মতোই ঝরে পড়ছে ছোট ছোট শিশুর জীবন। কেউবা বোঝার বয়স না হতেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে বুকে নিয়ে যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে। কেউবা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। বিদায়ী বছর ২০১২ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে। এক বছরে ৭৭১ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে ২৩৯ জন নারী, ৩৮৪ জন শিশু। বাকিদের নাম ও বয়স জানা যায়নি। এদের মধ্যে ১৫৭ জনই গণধর্ষণের শিকার। আর ধর্ষণের পর ১০৬ জনকে হত্যা করা হয়। আবার ধর্ষণের অপবাদ নিয়ে ২৩০ জন আত্মহত্যাও করেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অধিকারের এ রিপোর্ট অনুযায়ী এ সময়ে নয়জন নারী ও শিশু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। যেমন গত বছরের ২১ আগস্ট খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কারবারীপাড়ার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১১ বছরের শিশু অটল টিলা পুলিশ ক্যাম্পের পাশে গরু চরাতে যায়। সেখানে ওই পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল রাসেল রানা তাকে ধর্ষণ করে।
গত বছরের আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে বছরের শেষ দিকে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শিবপুর তারাবাড়ি গ্রামের দিনমজুর ফয়েজুদ্দিনের মেয়ে সদর উপজেলার বিক্রমহাটি মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বিথি তার স্কুল সহপাঠীকে (ধর্ষিতা) গত ৬ ডিসেম্বর বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় মধুপুরে জনৈক মণি’র মালিকানাধীন কম্পিউটার দোকানে। সেখান থেকে তারা নির্জন পাহাড়ী এলাকার একটি বাড়িতে যায়। এরপর দিনে সেখানে তারা বিভিন্ন পাহাড়ী লোকেশনে ‘নিয়তি’ নামক নাটকের শূটিং করে। পরে পূর্বপরিকল্পনা মতো নুরুজ্জামান গেদার বাড়িতে যায়। রাতে মণিসহ শাজাহান আলী, নুরুজ্জামান গেদা, হারুনুর রশীদ তাকে গণধর্ষণ করে। এ সময় বিথি পাশের রুমে অবস্থান নিয়ে জোরে গান বাজাতে থাকে। এভাবে তিন দিন তাকে ওই বাড়িতে আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, পরপশুরা এ ধর্ষণের ভিডিও চিত্রও ধারণ করে। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর সদর উপজেলার রসুলপুর রেললাইনের ওপর ধর্ষিত স্কুলছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে তারা চলে যায়।
টাঙ্গাইলের এই ঘটনাটি সারাদেশে নিন্দার ঝড় তুললেও নতুন বছরে ধর্ষণের ঘটনা আরও বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও গণধর্ষণ আর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চিংড়িখালী গ্রামে ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশের পরিচয়ে ডাকাতি ও মা-মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের খুলশী থানার ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় পনের বছর বয়সী এক কর্মজীবী কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে চার দুর্বৃত্ত। ৪ জানুয়ারি ভোরে কলোনি সংলগ্ন পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নরসিংদীর রায়পুরার চান্দেরকান্দী দাইরেরপাড় গ্রামে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছে দুই পাষ-। গত ৩ জানুয়ারি শ্রীনিধি দাইরেরপাড় জামে মসজিদের ইমাম আল-আমিন মাহমুদ ও তার বন্ধু ফয়সাল এই নাবালিকাকে ডেকে নিয়ে ঘরের ভেতর আটক ও সারারাত উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে চরখালী রেজি. প্রাঃ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি আক্তারকে (৮) নরপশুরা ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ বাগানের মধ্যে ফেলে দেয়। চারদিন পর ওই বাগান থেকে লাশ উদ্ধার করেছে নাজিরপুর থানা পুলিশ। গত ১০ জানুয়ারি রবিশালের গৌরনদী উপজেলার ইল্লা গ্রামের এক যুবতীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমী আক্তারের (৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি সকালে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় পথে রইচউদ্দিন (১৮) নামের এক যুবক পার্শ্ববর্তী একটি বাঁশবাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যা করে।
ভোলার লালমোহন উপজেলায় ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীকে এলাকার কয়েক বখাটে যুবক গণধর্ষণ করেছে। লালমোহন উপজেলার রামগঞ্জ ইউনিয়নের কর্তারহাট আলী মিয়া দাখিল মাদ্রাসার এই ছাত্রী মাদ্রাসার একটি কক্ষে ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের অমূল্য দাসের ছেলে রাজীবের কাছে প্রাইভেট পড়ে আসছিল। এ সুযোগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১০ জানুয়ারি বিকেলে তাদের মাদ্রাসার বাথরুমে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে একই এলাকার প্রভাবশালী আফতাব উল্যাহ মাস্টারের ছেলে নাজিম, আজাহারের পুত্র মানিক, মাওলানা বশিরউল্যাহর ছেলে বরকত ও বখাটে শামিম। পরে ওই শিক্ষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তারা মেয়েটিকে আটকে রাখে। ছাত্রীটিকে বাড়ি যেতে না দিয়ে রাতভর পার্শ্ববর্তী একটি পরিত্যক্ত ঘরে আটকে রেখে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। মুন্সীগঞ্জে সাড়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে এক লম্পট। রাতে লম্পট রাসেলের ঘরে টিভি দেখতে যায় শিশু সুমাইয়া। তখন খেলার ছলে লম্পট রাসেল সুমাইয়াকে ধর্ষণ করে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজশাহীর বাঘায় মেধাবী কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
সাভারের আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার বাসিন্দা মহর আলীর ভাড়াটিয়া মৃণাল কান্তি চাকমার বাসা হতে নিখোঁজ হয় গৃহপরিচারিকা এক উপজাতি কিশোরী। গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গাজীরচট এলাকার একটি বাসা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে। তৌফিক নামে এক যুবক তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় এবং টানা তিন দিন একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করে। কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে মাদ্রাসা ছাত্রী। ঘটনার দিন রাতে ৪-৫ দুর্বৃত্ত মাদ্রাসাছাত্রী কিশোরী রাবেয়া বসরীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বাড়ির পাশের একটি ছোট্ট গাছে ঝুলিয়ে রাখে। নীলফামারীতে বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১২ বছরের এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে দুই বখাটে। নীলফামারী জেলা সদরের চড়াইখোলা বসুনিয়াপাড়া গ্রামে শফিকুল ইসলামের মেয়ে তানজিলার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। তার এক চাচাত বোন বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে তানজিলার বোন ওই কিশোরী বাইরে এলে একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে বখাটে আবু সাঈদ (২০) ও কালু মাহমুদের ছেলে বখাটে মুকুল হোসেন (২১) তার মুখ চেপে গ্রামের অদূরে একটি ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে দুই বখাটে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং সেখানে ফেলে পালিয়ে যায়।
ফরিদপুরের সারথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পুটয়া গ্রামে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী (১২) মামা বাড়িতে অবস্থান করে লেখাপড়া করত। সে পুটিয়া স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। ঘটনার রাতে একই গ্রামের আদেল মাতুব্বরের ছেলে বখাটে হোসেন মাতুব্বর (২২) মেয়েটির ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাড়িয়াঘোপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সন্ধ্যায় ভা-ারখোলা বাজার থেকে হাড়িয়াঘোপ বাড়ি ফিরছিল। ফেরার পথে তার দূর সম্পর্কের মামা ফতেপুর গ্রামের জাহাবক্স মোড়লের ছেলে মতিয়ার রহমান মাঠের মধ্যে নিয়ামতের মেহগনি বাগানে তাকে ধর্ষণ করে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে বের হলে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়। উপজেলার গোপালদী পৌরসভাধীন রামচন্দ্রী গ্রামের ২০ বছরের তরুণী দাইরাদী গ্রামের হাজী আঃ মান্নানের টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করত। রাত দেড়টার দিকে প্রকৃতির ডাকে ওই তরুণী কারখানার বাইরে বের হলে পাশের কারখানার চার শ্রমিক তাকে তুলে নিয়ে পাশের একটি ওয়ার্কশপের পেছনে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। উল্লেখিত ঘটনাগুলো ঘটেছে নতুন বছরের ১-২০ জানুয়ারির মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে আরও কিছু ধর্ষণের ঘটনা আছে যেগুলো এখানে তুলে ধরা হয়নি। তাদের কেউ কেউ ধর্ষিত হয়েছেন নিজগৃহে। আবার কেউবা কর্মক্ষেত্রে। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ ঘরে-বাইরে সর্বত্রই মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুরাই টার্গেট হচ্ছে পাষ-দের। যা দেশের সচেতন জনগণের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একদিকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন প্রতিবাদ, অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনাও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু কেন? (চলবে...)
প্রতিদিনই সম্ভ্রম হারাচ্ছে নারী। ফুলের মতোই ঝরে পড়ছে ছোট ছোট শিশুর জীবন। কেউবা বোঝার বয়স না হতেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে বুকে নিয়ে যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে। কেউবা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। বিদায়ী বছর ২০১২ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে। এক বছরে ৭৭১ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে ২৩৯ জন নারী, ৩৮৪ জন শিশু। বাকিদের নাম ও বয়স জানা যায়নি। এদের মধ্যে ১৫৭ জনই গণধর্ষণের শিকার। আর ধর্ষণের পর ১০৬ জনকে হত্যা করা হয়। আবার ধর্ষণের অপবাদ নিয়ে ২৩০ জন আত্মহত্যাও করেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অধিকারের এ রিপোর্ট অনুযায়ী এ সময়ে নয়জন নারী ও শিশু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। যেমন গত বছরের ২১ আগস্ট খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কারবারীপাড়ার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১১ বছরের শিশু অটল টিলা পুলিশ ক্যাম্পের পাশে গরু চরাতে যায়। সেখানে ওই পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল রাসেল রানা তাকে ধর্ষণ করে।
গত বছরের আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে বছরের শেষ দিকে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শিবপুর তারাবাড়ি গ্রামের দিনমজুর ফয়েজুদ্দিনের মেয়ে সদর উপজেলার বিক্রমহাটি মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বিথি তার স্কুল সহপাঠীকে (ধর্ষিতা) গত ৬ ডিসেম্বর বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় মধুপুরে জনৈক মণি’র মালিকানাধীন কম্পিউটার দোকানে। সেখান থেকে তারা নির্জন পাহাড়ী এলাকার একটি বাড়িতে যায়। এরপর দিনে সেখানে তারা বিভিন্ন পাহাড়ী লোকেশনে ‘নিয়তি’ নামক নাটকের শূটিং করে। পরে পূর্বপরিকল্পনা মতো নুরুজ্জামান গেদার বাড়িতে যায়। রাতে মণিসহ শাজাহান আলী, নুরুজ্জামান গেদা, হারুনুর রশীদ তাকে গণধর্ষণ করে। এ সময় বিথি পাশের রুমে অবস্থান নিয়ে জোরে গান বাজাতে থাকে। এভাবে তিন দিন তাকে ওই বাড়িতে আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, পরপশুরা এ ধর্ষণের ভিডিও চিত্রও ধারণ করে। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর সদর উপজেলার রসুলপুর রেললাইনের ওপর ধর্ষিত স্কুলছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে তারা চলে যায়।
টাঙ্গাইলের এই ঘটনাটি সারাদেশে নিন্দার ঝড় তুললেও নতুন বছরে ধর্ষণের ঘটনা আরও বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও গণধর্ষণ আর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চিংড়িখালী গ্রামে ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশের পরিচয়ে ডাকাতি ও মা-মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের খুলশী থানার ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় পনের বছর বয়সী এক কর্মজীবী কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে চার দুর্বৃত্ত। ৪ জানুয়ারি ভোরে কলোনি সংলগ্ন পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নরসিংদীর রায়পুরার চান্দেরকান্দী দাইরেরপাড় গ্রামে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছে দুই পাষ-। গত ৩ জানুয়ারি শ্রীনিধি দাইরেরপাড় জামে মসজিদের ইমাম আল-আমিন মাহমুদ ও তার বন্ধু ফয়সাল এই নাবালিকাকে ডেকে নিয়ে ঘরের ভেতর আটক ও সারারাত উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে চরখালী রেজি. প্রাঃ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি আক্তারকে (৮) নরপশুরা ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ বাগানের মধ্যে ফেলে দেয়। চারদিন পর ওই বাগান থেকে লাশ উদ্ধার করেছে নাজিরপুর থানা পুলিশ। গত ১০ জানুয়ারি রবিশালের গৌরনদী উপজেলার ইল্লা গ্রামের এক যুবতীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমী আক্তারের (৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি সকালে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় পথে রইচউদ্দিন (১৮) নামের এক যুবক পার্শ্ববর্তী একটি বাঁশবাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যা করে।
ভোলার লালমোহন উপজেলায় ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীকে এলাকার কয়েক বখাটে যুবক গণধর্ষণ করেছে। লালমোহন উপজেলার রামগঞ্জ ইউনিয়নের কর্তারহাট আলী মিয়া দাখিল মাদ্রাসার এই ছাত্রী মাদ্রাসার একটি কক্ষে ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের অমূল্য দাসের ছেলে রাজীবের কাছে প্রাইভেট পড়ে আসছিল। এ সুযোগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১০ জানুয়ারি বিকেলে তাদের মাদ্রাসার বাথরুমে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে একই এলাকার প্রভাবশালী আফতাব উল্যাহ মাস্টারের ছেলে নাজিম, আজাহারের পুত্র মানিক, মাওলানা বশিরউল্যাহর ছেলে বরকত ও বখাটে শামিম। পরে ওই শিক্ষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তারা মেয়েটিকে আটকে রাখে। ছাত্রীটিকে বাড়ি যেতে না দিয়ে রাতভর পার্শ্ববর্তী একটি পরিত্যক্ত ঘরে আটকে রেখে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। মুন্সীগঞ্জে সাড়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে এক লম্পট। রাতে লম্পট রাসেলের ঘরে টিভি দেখতে যায় শিশু সুমাইয়া। তখন খেলার ছলে লম্পট রাসেল সুমাইয়াকে ধর্ষণ করে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজশাহীর বাঘায় মেধাবী কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
সাভারের আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার বাসিন্দা মহর আলীর ভাড়াটিয়া মৃণাল কান্তি চাকমার বাসা হতে নিখোঁজ হয় গৃহপরিচারিকা এক উপজাতি কিশোরী। গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গাজীরচট এলাকার একটি বাসা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে। তৌফিক নামে এক যুবক তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় এবং টানা তিন দিন একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করে। কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে মাদ্রাসা ছাত্রী। ঘটনার দিন রাতে ৪-৫ দুর্বৃত্ত মাদ্রাসাছাত্রী কিশোরী রাবেয়া বসরীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বাড়ির পাশের একটি ছোট্ট গাছে ঝুলিয়ে রাখে। নীলফামারীতে বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১২ বছরের এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে দুই বখাটে। নীলফামারী জেলা সদরের চড়াইখোলা বসুনিয়াপাড়া গ্রামে শফিকুল ইসলামের মেয়ে তানজিলার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। তার এক চাচাত বোন বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে তানজিলার বোন ওই কিশোরী বাইরে এলে একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে বখাটে আবু সাঈদ (২০) ও কালু মাহমুদের ছেলে বখাটে মুকুল হোসেন (২১) তার মুখ চেপে গ্রামের অদূরে একটি ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে দুই বখাটে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং সেখানে ফেলে পালিয়ে যায়।
ফরিদপুরের সারথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পুটয়া গ্রামে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী (১২) মামা বাড়িতে অবস্থান করে লেখাপড়া করত। সে পুটিয়া স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। ঘটনার রাতে একই গ্রামের আদেল মাতুব্বরের ছেলে বখাটে হোসেন মাতুব্বর (২২) মেয়েটির ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাড়িয়াঘোপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সন্ধ্যায় ভা-ারখোলা বাজার থেকে হাড়িয়াঘোপ বাড়ি ফিরছিল। ফেরার পথে তার দূর সম্পর্কের মামা ফতেপুর গ্রামের জাহাবক্স মোড়লের ছেলে মতিয়ার রহমান মাঠের মধ্যে নিয়ামতের মেহগনি বাগানে তাকে ধর্ষণ করে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে বের হলে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়। উপজেলার গোপালদী পৌরসভাধীন রামচন্দ্রী গ্রামের ২০ বছরের তরুণী দাইরাদী গ্রামের হাজী আঃ মান্নানের টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করত। রাত দেড়টার দিকে প্রকৃতির ডাকে ওই তরুণী কারখানার বাইরে বের হলে পাশের কারখানার চার শ্রমিক তাকে তুলে নিয়ে পাশের একটি ওয়ার্কশপের পেছনে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। উল্লেখিত ঘটনাগুলো ঘটেছে নতুন বছরের ১-২০ জানুয়ারির মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে আরও কিছু ধর্ষণের ঘটনা আছে যেগুলো এখানে তুলে ধরা হয়নি। তাদের কেউ কেউ ধর্ষিত হয়েছেন নিজগৃহে। আবার কেউবা কর্মক্ষেত্রে। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ ঘরে-বাইরে সর্বত্রই মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুরাই টার্গেট হচ্ছে পাষ-দের। যা দেশের সচেতন জনগণের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একদিকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন প্রতিবাদ, অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনাও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু কেন? (চলবে...)
No comments