ত্বকে ক্যান্সার হয় কেন?
ত্বকের ক্যান্সারে ত্বকের কোষগুলো কিভাবে
বদলায়, গবেষকরা সেটা অনুসন্ধান করে দেখেছেন। উদ্দেশ্য হলো, এমন একটা ক্রিম
আবিষ্কার করা, যা এই প্রক্রিয়াকে রুখতে কিংবা বিলম্বিত করতে পারবে।
যেন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক হঠাৎ আবার শিশুতে পরিণত হয়ে দ্বিতীয়বার বাড়তে শুরু
করেছে – কিন্তু অসুস্থ হয়ে। ত্বকের একটি সাধারণ কোষ এইভাবেই টিউমারে
পরিবর্তিত হয়। যেন তার কম্পিউটার প্রোগ্রামটা উল্টে দেওয়া হয়েছে। ব্রাসেলস
ফ্রি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই তথ্যটি আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা তথাকথিত
‘বাসাল সেল ক্যান্সার’-এর টিউমারগুলো নিয়ে গবেষণা করেন। এই জাতের ক্যান্সার
প্রধানত ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়, যে কারণে
এককালে এটাকে ‘শ্বেত’ ত্বকের ক্যান্সার বলা হতো।
বিজ্ঞানীরা এযাবত জানতেন, ত্বকের স্টেম সেলগুলোর মিউটেশন হয়েই ত্বকের ক্যান্সারের সেল তৈরি হয়। ত্বকের স্টেম সেলগুলো সাধারণত ত্বক যাতে কাটাছেঁড়ার পর নিয়মিত সারে, তার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তারা যখন মিউটেট করে, অর্থাৎ তাদের ডিএনএ বদলে যায়, তখন তারা যথেচ্ছ বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করতে পারে। ক্যান্সার গবেষক সেড্রিক ব্লঁপ্যাঁ কিন্তু দেখাতে সমর্থ হয়েছেন যে, শুধু স্টেম সেলগুলোই নয়, ত্বকের সাধারণ, সুস্থ কোষগুলোও এই উল্টো প্রোগ্রামিংয়ের ফলে ক্যান্সারের সেলে পরিণত হতে পারে।
হাইডেলবের্গে জার্মান ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রের মার্টিন স্পিক মনে করেন, ত্বকের সাধারণ কোষ এবং স্টেম সেল, দুটো থেকেই ক্যান্সারের উৎপত্তি হতে পারে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট টিউমারগুলোও বিভিন্ন আকার ও প্রকৃতি পায়। আসল কথা হল, ত্বকের সাধারণ কোষগুলোর প্রোগ্রাম পাল্টে দিলে তারা ধীরে ধীরে এমব্রিয়োনাল স্টেম সেলের আকৃতি ধারণ করে।
এই এমব্রিয়োনাল স্টেম সেলগুলোকে বস্তুত শুধু ভ্রƒণের মধ্যেই পাওয়া যায়। স্টেম সেলগুলো প্রয়োজনে মানুষের শরীরের যে কোন অঙ্গ গঠন করতে পারে। তাদের কাজই হল, কোষের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা। তবে জন্মের পর মানুষের শরীরে যে ধরনের স্টেম সেল পাওয়া যায়, সেগুলোর বিকাশ সম্পূর্ণ হয়েছে। তারা বিশেষ বিশেষ ধরনের কোষে নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু সব কোষে নয়। কাজেই এই ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ স্টেম সেলগুলো অত সহজে ক্যান্সার সেলে পরিবর্তিত হতে পারে না, যেমন ভ্রƒণের স্টেম সেলগুলো পারে।
কিন্তু ত্বকের কোষগুলো যদি তাদের প্রোগ্রাম বদলে এক ধরনের এমব্রায়োনিক স্টেম সেলে পরিবর্তিত হয়, তাহলে বোঝা যাবে, ত্বকের ক্যান্সার কেটে বাদ দেওয়া সত্ত্বেও বার বার ফিরে আসে কেন। কেননা ক্যান্সারের উৎপত্তির ওই স্টেম সেলগুলো ক্যান্সারগ্রস্ত কোষ সমষ্টিও ঠিক একইভাবে মেরামত করে যা তাদের স্বভাব। তার ফলে ক্যান্সার আবার ফিরতে ও বাড়তে পারে।
ব্রাসেলস’এর বিজ্ঞানীরা যেটা করেছেন, সেটা হলো এই যে, তারা দেখিয়েছেন, আদত যে কোষগুলো থেকে ক্যান্সারের শুরু, সেগুলো নিজেদের ক্যান্সার সেলে বদলাতে পারে, একমাত্র যখন তারা বেটা-ক্যাটেনিন নামের একটি জৈব-রাসায়নিক সঙ্কেত পায়। এই বিশেষ ধরনের প্রোটিনগুলো কোষের ভেতরে সেই বার্তা পৌঁছে দেয়।
ওই সঙ্কেত যাওয়ার পথটি আটকে দিতে পারলে, উল্টো প্রোগ্রামিং করা, স্টেম সেলের অনুরূপ ত্বকের কোষগুলো থেকে টিউমারের সৃষ্টি হতে পারে না। কাজেই বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এমন একটি ত্বকের ক্রিম উদ্ভাবন করার আশা করছেন, যা কোষের অভ্যন্তরে ক্যান্সার তৈরির ওই বার্তা পৌঁছনো বন্ধ করতে পারবে। ‘সানবেদিং’-এর সময় যে সান ক্রিম মাখা হয়, তাতে ওই পদার্থটি মিশিয়ে দিলেই চলবে। পশ্চিমে সূর্যস্নান করতে গিয়ে সানবার্নের বিপদ ছাড়াও, শেষমেশ ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কাজেই এটা এক ঢিলে দুই পাখির মতো কাজ করবে। ক্রিমটা যেখানে লাগানো হবে, বড়জোর সেখানে কিছুটা লোম উঠে যেতে পারে- সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে যেটা বিশেষ অকাম্য নাও হতে পারে।
২০১২ সাল থেকেই এই ধরনের একটি বড়ি বাজারে এসেছে, যা ত্বকের ক্যান্সারের শ্বেতাঙ্গ রোগীদের দেওয়া হয়। এই ট্যাবলেটও ক্যান্সার তৈরির সঙ্কেত প্রেরণের অপর একটি পথ রোধ করে। কিন্তু এই ট্যাবলেট সারা শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। পদার্থটি ক্রিম হিসেবে পাওয়া গেলে, তা স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা যাবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
ইব্রাহিম নোমান
বিজ্ঞানীরা এযাবত জানতেন, ত্বকের স্টেম সেলগুলোর মিউটেশন হয়েই ত্বকের ক্যান্সারের সেল তৈরি হয়। ত্বকের স্টেম সেলগুলো সাধারণত ত্বক যাতে কাটাছেঁড়ার পর নিয়মিত সারে, তার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তারা যখন মিউটেট করে, অর্থাৎ তাদের ডিএনএ বদলে যায়, তখন তারা যথেচ্ছ বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করতে পারে। ক্যান্সার গবেষক সেড্রিক ব্লঁপ্যাঁ কিন্তু দেখাতে সমর্থ হয়েছেন যে, শুধু স্টেম সেলগুলোই নয়, ত্বকের সাধারণ, সুস্থ কোষগুলোও এই উল্টো প্রোগ্রামিংয়ের ফলে ক্যান্সারের সেলে পরিণত হতে পারে।
হাইডেলবের্গে জার্মান ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রের মার্টিন স্পিক মনে করেন, ত্বকের সাধারণ কোষ এবং স্টেম সেল, দুটো থেকেই ক্যান্সারের উৎপত্তি হতে পারে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট টিউমারগুলোও বিভিন্ন আকার ও প্রকৃতি পায়। আসল কথা হল, ত্বকের সাধারণ কোষগুলোর প্রোগ্রাম পাল্টে দিলে তারা ধীরে ধীরে এমব্রিয়োনাল স্টেম সেলের আকৃতি ধারণ করে।
এই এমব্রিয়োনাল স্টেম সেলগুলোকে বস্তুত শুধু ভ্রƒণের মধ্যেই পাওয়া যায়। স্টেম সেলগুলো প্রয়োজনে মানুষের শরীরের যে কোন অঙ্গ গঠন করতে পারে। তাদের কাজই হল, কোষের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা। তবে জন্মের পর মানুষের শরীরে যে ধরনের স্টেম সেল পাওয়া যায়, সেগুলোর বিকাশ সম্পূর্ণ হয়েছে। তারা বিশেষ বিশেষ ধরনের কোষে নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু সব কোষে নয়। কাজেই এই ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ স্টেম সেলগুলো অত সহজে ক্যান্সার সেলে পরিবর্তিত হতে পারে না, যেমন ভ্রƒণের স্টেম সেলগুলো পারে।
কিন্তু ত্বকের কোষগুলো যদি তাদের প্রোগ্রাম বদলে এক ধরনের এমব্রায়োনিক স্টেম সেলে পরিবর্তিত হয়, তাহলে বোঝা যাবে, ত্বকের ক্যান্সার কেটে বাদ দেওয়া সত্ত্বেও বার বার ফিরে আসে কেন। কেননা ক্যান্সারের উৎপত্তির ওই স্টেম সেলগুলো ক্যান্সারগ্রস্ত কোষ সমষ্টিও ঠিক একইভাবে মেরামত করে যা তাদের স্বভাব। তার ফলে ক্যান্সার আবার ফিরতে ও বাড়তে পারে।
ব্রাসেলস’এর বিজ্ঞানীরা যেটা করেছেন, সেটা হলো এই যে, তারা দেখিয়েছেন, আদত যে কোষগুলো থেকে ক্যান্সারের শুরু, সেগুলো নিজেদের ক্যান্সার সেলে বদলাতে পারে, একমাত্র যখন তারা বেটা-ক্যাটেনিন নামের একটি জৈব-রাসায়নিক সঙ্কেত পায়। এই বিশেষ ধরনের প্রোটিনগুলো কোষের ভেতরে সেই বার্তা পৌঁছে দেয়।
ওই সঙ্কেত যাওয়ার পথটি আটকে দিতে পারলে, উল্টো প্রোগ্রামিং করা, স্টেম সেলের অনুরূপ ত্বকের কোষগুলো থেকে টিউমারের সৃষ্টি হতে পারে না। কাজেই বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এমন একটি ত্বকের ক্রিম উদ্ভাবন করার আশা করছেন, যা কোষের অভ্যন্তরে ক্যান্সার তৈরির ওই বার্তা পৌঁছনো বন্ধ করতে পারবে। ‘সানবেদিং’-এর সময় যে সান ক্রিম মাখা হয়, তাতে ওই পদার্থটি মিশিয়ে দিলেই চলবে। পশ্চিমে সূর্যস্নান করতে গিয়ে সানবার্নের বিপদ ছাড়াও, শেষমেশ ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কাজেই এটা এক ঢিলে দুই পাখির মতো কাজ করবে। ক্রিমটা যেখানে লাগানো হবে, বড়জোর সেখানে কিছুটা লোম উঠে যেতে পারে- সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে যেটা বিশেষ অকাম্য নাও হতে পারে।
২০১২ সাল থেকেই এই ধরনের একটি বড়ি বাজারে এসেছে, যা ত্বকের ক্যান্সারের শ্বেতাঙ্গ রোগীদের দেওয়া হয়। এই ট্যাবলেটও ক্যান্সার তৈরির সঙ্কেত প্রেরণের অপর একটি পথ রোধ করে। কিন্তু এই ট্যাবলেট সারা শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। পদার্থটি ক্রিম হিসেবে পাওয়া গেলে, তা স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা যাবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
ইব্রাহিম নোমান
No comments