তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধিতে নগরীর ভূমিকা by এনামুল হক
শহরাঞ্চলও আবহাওয়ার ওপর কমবেশি প্রভাব
বিস্তার করে থাকে। নিকটতম বড় নগরী থেকে কেউ হাজার মাইলেরও বেশি দূরে বাস
করলে আবহাওয়ার ওপর এর প্রভাব অনুভব করতে পারবে।
মানুষের
কার্যকলাপ পরিবেশকে কতখানি প্রভাবিত করে থাকে নতুন এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায়
তা দেখানো হয়েছে। সেই সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা উপসংহার টেনেছেন যে, মেট্রোপলিটন
এলাকায় প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় তাতে জেট প্রবাহ
এবং বায়ুম-লীয় অন্যান্য প্রধান প্রধান ব্যবস্থার চরিত্র বদলে যায়।
এর ফলে হাজার হাজার মাইল দূরের তাপমাত্রা প্রভাবিত হয়। কোন কোন এলাকা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উষ্ণ হয় আবার কিছু এলাকা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শীতল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ ম্যাগাজিনে এই সমীক্ষা ও তার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উত্তর গোলার্ধের প্রধান শহর এলাকায় ইমারত, গাড়ি ও অন্যান্য উৎস থেকে যে বাড়তি বর্জ্যতাপ উৎপন্ন হয় তাতে উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চল ও উত্তর এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় শীতকালে উষ্ণতা সঞ্চারিত হয়। কোন কোন প্রত্যন্ত এলাকায় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১ দশমিক ৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট বৃদ্ধি পায় বলে বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে। এই গবেষণাটি চালায় স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বায়ুম-লীয় গবেষণা কেন্দ্র। একই সময় বর্জ্য তাপের কারণে বায়ুম-লে প্রবাহের যে পরিবর্তন ঘটে তাতে ইউরোপের এলাকাগুলো ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১ দশমিক ৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট শীতল হয়। অর্থাৎ ইউরোপীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা কমে ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা হ্রাস পায় শরতে। অবশ্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে অতি সামান্যÑ ধর্তব্যের মধ্যেই নয়। বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বাড়ে মাত্র দশমিক ০১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা প্রায় দশমিক ০২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এর কারণ হলো মানুষের তৈরি বর্জ্য তাপ হচ্ছে বায়ুম-লীয় প্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের দ্বারা উচ্চতর অক্ষাংশে পরিবাহিত তাপের মাত্র প্রায় দশমিক ৩ শতাংশ। অবশ্য আঞ্চলিক তাপমাত্রার ওপর যে লক্ষণীয় প্রভাব এসে পড়ে তা থেকে ব্যাখ্যা মিলতে পারে যে, জলবায়ুর কম্পিউটার মডেলে প্রদর্শিত হিসাবের তুলনায় কোন কোন অঞ্চলে শীতকালের তাপমাত্রা কেন বেশি হয়। এ থেকে মনে হয় বর্জ্য তাপের প্রভাব হিসাবে নিয়ে মডেলগুলোকে সমন্বয় করতে হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে গ্রীন হাউজ গ্যাসই যে শুধু নির্গত হয় তা নয়, এটা তাপমাত্রাকেও সরাসরি প্রভাবিত করে। এর কারণ হলো ইমারত বা ভবন এবং যানবাহনের মতো উৎস থেকে তাপ বেরিয়ে আসে। এই বর্জ্য তাপের অনেকটাই বড় বড় শহরে কেন্দ্রীভূত থাকলেও এটা বায়ুম-লীয় বৈশিষ্ট্যকে এমনভাবে বদলে ফেলে যে, তার ফলে যথেষ্ট দূরত্ব জুড়েও তাপমাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, বর্জ্য তাপের প্রভাব শহরাঞ্চলে জমে থাকা তাপের প্রভাব থেকে স্বতন্ত্র। শহরের দালান কোঠা, রাস্তা, ফুটপাত ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকে সংগৃহীত ও পুনর্বিকিরিত তাপই মূলত একটা দ্বীপের মতো জমে থাকে। অন্যদিকে নতুন সমীক্ষায় পরিবহন হিমায়ন ও তাপ ইউনিট পরিচালনা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ থেকে সরাসরি উৎপাদিত তাপ পরীক্ষা করে দেখা হয়। ‘জ্বালানি ব্যবহার এবং শীতকালে উত্তর এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় উষ্ণতা বৃদ্ধির অব্যাখ্যাত ঘটনা’ শীর্ষক এই সমীক্ষাটি গত ১৭ জানুয়ারি অনলাইনে পরিবেশিত হয়েছে। গবেষক দলের অন্যতম আইজুয়ে হু এবং পুয়াং ঝাং বাড়িঘরে উত্তাপ সঞ্চার থেকে শুরু করে যানবাহনে শক্তিযোগানোর মতো যেসব জ্বালানির ব্যবহারে বর্জ্য তাপ সৃষ্টি হয় সেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তারা বলেছেন ২০০৬ সালে বিশ্বে মোট জ্বালানির ব্যবহার হয়েছিল ১৬ টেরাওয়াট বা ১৬ ট্রিলিয়ন ওয়াট। এর মধ্যে উত্তর গোলার্ধের ৮৬টি মেট্রোপলিটন এলাকা গড়ে ৬.৭ ট্রিলিয়ন ওয়াট ব্যবহার করে। বায়ুম-লের একটি কম্পিউটার মডেল কাজে লাগিয়ে গবেষকদ্বয় লক্ষ্য করেছেন যে, এই বর্জ্য তাপের প্রভাবে জেট প্রবাহ প্রশস্ত রূপ ধারণ করতে পারে।
ঝাং বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন যে একাধিক শহর এলাকায় জ্বালানির ব্যবহার সমষ্টিগতভাবে অনেক দূর থেকে অর্থাৎ যেখানে যেখানে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছে সেখান থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের বায়ুম-লকে উষ্ণ করে তুলতে পারে।
বায়ুম-লের প্রবাহে পরিবর্তন ঘটার মধ্য দিয়ে এই উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা মন্তব্য করেন যে, বায়ম-লে বর্জ্য তাপ ছড়িয়ে পড়া আর প্রাকৃতিক উপায়ে এনার্জি বা তাপ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। তাপের সর্ববৃহৎ উৎস হলো সৌরশক্তি।
এই সৌরশক্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং বায়ুম-লীয় প্রবাহে সেই এনার্জি এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে মানুষ প্রকৃতির ইন্দনশক্তি ব্যবহার করে এবং এই ব্যবহারের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ বছর ধরে প্রধানত তেল ও কয়লার আকারে সুপ্ত ও সংরক্ষিত থাকা এনার্জিকে ছড়িয়ে দেয়।
প্রকৃতির পরিবাহিত এনার্জির তুলনায় মানুষের উৎপাদিত এনার্জির পরিমাণ কম হলেও সেটা শহর এলাকাগুলোতে অতিমাত্রায় ঘনীভূত অবস্থায় থাকে।
উত্তর গোলার্ধের এসব শহর এলাকার অনেকই প্রধান প্রধান বায়ুম-লীয় নিম্নচাপ এলাকা ও জেটস্ট্রিমের সরাসরি নিচে থাকে। মিং কাই নামে আরেক গবেষক বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও জ্বালানি নিবিড় মেট্রোপলিটন এলাকাগুলো উত্তর আমেরিকার ও ইউরেশিয়া মহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল বরাবর অবস্থিত। এগুলো সবচেয়ে সুপরিচিত বায়ুম-লীয় প্রবাহের চড়াই ও উতরাইয়ের ঠিক নিচে। শহর এলাকার এই ঘনীভূত বর্জ্য এনার্জি বেরিয়ে যাওয়াা ফলে উপরের স্বাভাবিক বায়ুম-লীয় প্রবাহ ব্যবস্থায় লক্ষণীয় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ফলে যে সব জায়গায় বর্জ্যতাপ উৎপন্ন হয় সেখান থেকে অনেক দূরের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রায় পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং অনেক আগে থেকে যা জানা ছিল তা হচ্ছে দালানকোঠা, রাস্তাঘাট এবং মানুষের তৈরি অন্যান্য কাঠামোয় তাপ মজুদ হওয়ার কারণে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় এয়ার কন্ডিশনার। বয়লার ও অন্যান্য দাহ্য উৎস ও মেশিন চালানোর তাপ।
এই সেদিন পর্যন্ত যেটা জানা ছিল না তা হলো শহরগুলোও তাদের চারপাশের হাজার হাজার মাইল দূরের এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। অর্থাৎ মানুষের কর্মকা- স্থানীয় পরিসরে দূরবর্তী এলাকায়Ñউভয়ক্ষেত্রে বায়ুম-লকে প্রভাবিত করে থাকে এবং এর মাধ্যমে তাপমাত্রাও প্রভাবিত হয়।
এর ফলে হাজার হাজার মাইল দূরের তাপমাত্রা প্রভাবিত হয়। কোন কোন এলাকা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উষ্ণ হয় আবার কিছু এলাকা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শীতল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ ম্যাগাজিনে এই সমীক্ষা ও তার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উত্তর গোলার্ধের প্রধান শহর এলাকায় ইমারত, গাড়ি ও অন্যান্য উৎস থেকে যে বাড়তি বর্জ্যতাপ উৎপন্ন হয় তাতে উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চল ও উত্তর এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় শীতকালে উষ্ণতা সঞ্চারিত হয়। কোন কোন প্রত্যন্ত এলাকায় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১ দশমিক ৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট বৃদ্ধি পায় বলে বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে। এই গবেষণাটি চালায় স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বায়ুম-লীয় গবেষণা কেন্দ্র। একই সময় বর্জ্য তাপের কারণে বায়ুম-লে প্রবাহের যে পরিবর্তন ঘটে তাতে ইউরোপের এলাকাগুলো ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১ দশমিক ৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট শীতল হয়। অর্থাৎ ইউরোপীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা কমে ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা হ্রাস পায় শরতে। অবশ্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে অতি সামান্যÑ ধর্তব্যের মধ্যেই নয়। বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বাড়ে মাত্র দশমিক ০১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা প্রায় দশমিক ০২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এর কারণ হলো মানুষের তৈরি বর্জ্য তাপ হচ্ছে বায়ুম-লীয় প্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের দ্বারা উচ্চতর অক্ষাংশে পরিবাহিত তাপের মাত্র প্রায় দশমিক ৩ শতাংশ। অবশ্য আঞ্চলিক তাপমাত্রার ওপর যে লক্ষণীয় প্রভাব এসে পড়ে তা থেকে ব্যাখ্যা মিলতে পারে যে, জলবায়ুর কম্পিউটার মডেলে প্রদর্শিত হিসাবের তুলনায় কোন কোন অঞ্চলে শীতকালের তাপমাত্রা কেন বেশি হয়। এ থেকে মনে হয় বর্জ্য তাপের প্রভাব হিসাবে নিয়ে মডেলগুলোকে সমন্বয় করতে হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে গ্রীন হাউজ গ্যাসই যে শুধু নির্গত হয় তা নয়, এটা তাপমাত্রাকেও সরাসরি প্রভাবিত করে। এর কারণ হলো ইমারত বা ভবন এবং যানবাহনের মতো উৎস থেকে তাপ বেরিয়ে আসে। এই বর্জ্য তাপের অনেকটাই বড় বড় শহরে কেন্দ্রীভূত থাকলেও এটা বায়ুম-লীয় বৈশিষ্ট্যকে এমনভাবে বদলে ফেলে যে, তার ফলে যথেষ্ট দূরত্ব জুড়েও তাপমাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, বর্জ্য তাপের প্রভাব শহরাঞ্চলে জমে থাকা তাপের প্রভাব থেকে স্বতন্ত্র। শহরের দালান কোঠা, রাস্তা, ফুটপাত ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকে সংগৃহীত ও পুনর্বিকিরিত তাপই মূলত একটা দ্বীপের মতো জমে থাকে। অন্যদিকে নতুন সমীক্ষায় পরিবহন হিমায়ন ও তাপ ইউনিট পরিচালনা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ থেকে সরাসরি উৎপাদিত তাপ পরীক্ষা করে দেখা হয়। ‘জ্বালানি ব্যবহার এবং শীতকালে উত্তর এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় উষ্ণতা বৃদ্ধির অব্যাখ্যাত ঘটনা’ শীর্ষক এই সমীক্ষাটি গত ১৭ জানুয়ারি অনলাইনে পরিবেশিত হয়েছে। গবেষক দলের অন্যতম আইজুয়ে হু এবং পুয়াং ঝাং বাড়িঘরে উত্তাপ সঞ্চার থেকে শুরু করে যানবাহনে শক্তিযোগানোর মতো যেসব জ্বালানির ব্যবহারে বর্জ্য তাপ সৃষ্টি হয় সেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তারা বলেছেন ২০০৬ সালে বিশ্বে মোট জ্বালানির ব্যবহার হয়েছিল ১৬ টেরাওয়াট বা ১৬ ট্রিলিয়ন ওয়াট। এর মধ্যে উত্তর গোলার্ধের ৮৬টি মেট্রোপলিটন এলাকা গড়ে ৬.৭ ট্রিলিয়ন ওয়াট ব্যবহার করে। বায়ুম-লের একটি কম্পিউটার মডেল কাজে লাগিয়ে গবেষকদ্বয় লক্ষ্য করেছেন যে, এই বর্জ্য তাপের প্রভাবে জেট প্রবাহ প্রশস্ত রূপ ধারণ করতে পারে।
ঝাং বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন যে একাধিক শহর এলাকায় জ্বালানির ব্যবহার সমষ্টিগতভাবে অনেক দূর থেকে অর্থাৎ যেখানে যেখানে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছে সেখান থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের বায়ুম-লকে উষ্ণ করে তুলতে পারে।
বায়ুম-লের প্রবাহে পরিবর্তন ঘটার মধ্য দিয়ে এই উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা মন্তব্য করেন যে, বায়ম-লে বর্জ্য তাপ ছড়িয়ে পড়া আর প্রাকৃতিক উপায়ে এনার্জি বা তাপ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। তাপের সর্ববৃহৎ উৎস হলো সৌরশক্তি।
এই সৌরশক্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং বায়ুম-লীয় প্রবাহে সেই এনার্জি এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে মানুষ প্রকৃতির ইন্দনশক্তি ব্যবহার করে এবং এই ব্যবহারের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ বছর ধরে প্রধানত তেল ও কয়লার আকারে সুপ্ত ও সংরক্ষিত থাকা এনার্জিকে ছড়িয়ে দেয়।
প্রকৃতির পরিবাহিত এনার্জির তুলনায় মানুষের উৎপাদিত এনার্জির পরিমাণ কম হলেও সেটা শহর এলাকাগুলোতে অতিমাত্রায় ঘনীভূত অবস্থায় থাকে।
উত্তর গোলার্ধের এসব শহর এলাকার অনেকই প্রধান প্রধান বায়ুম-লীয় নিম্নচাপ এলাকা ও জেটস্ট্রিমের সরাসরি নিচে থাকে। মিং কাই নামে আরেক গবেষক বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও জ্বালানি নিবিড় মেট্রোপলিটন এলাকাগুলো উত্তর আমেরিকার ও ইউরেশিয়া মহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল বরাবর অবস্থিত। এগুলো সবচেয়ে সুপরিচিত বায়ুম-লীয় প্রবাহের চড়াই ও উতরাইয়ের ঠিক নিচে। শহর এলাকার এই ঘনীভূত বর্জ্য এনার্জি বেরিয়ে যাওয়াা ফলে উপরের স্বাভাবিক বায়ুম-লীয় প্রবাহ ব্যবস্থায় লক্ষণীয় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ফলে যে সব জায়গায় বর্জ্যতাপ উৎপন্ন হয় সেখান থেকে অনেক দূরের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রায় পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং অনেক আগে থেকে যা জানা ছিল তা হচ্ছে দালানকোঠা, রাস্তাঘাট এবং মানুষের তৈরি অন্যান্য কাঠামোয় তাপ মজুদ হওয়ার কারণে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় এয়ার কন্ডিশনার। বয়লার ও অন্যান্য দাহ্য উৎস ও মেশিন চালানোর তাপ।
এই সেদিন পর্যন্ত যেটা জানা ছিল না তা হলো শহরগুলোও তাদের চারপাশের হাজার হাজার মাইল দূরের এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। অর্থাৎ মানুষের কর্মকা- স্থানীয় পরিসরে দূরবর্তী এলাকায়Ñউভয়ক্ষেত্রে বায়ুম-লকে প্রভাবিত করে থাকে এবং এর মাধ্যমে তাপমাত্রাও প্রভাবিত হয়।
No comments