বাধ্যতামূলক করা হলো প্রশিক্ষণ-বিজিবিতে প্রেষণে আসা সেনা কর্মকর্তাদের by সাহাদাত হোসেন পরশ

পাল্টে গেল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের চাকরিতে যোগদানের নিয়ম। এখন থেকে সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে আসা মাত্রই বিজিবিতে যোগদান করা যাবে না। কোনো কর্মকর্তার প্রেষণে আসার পর তাকে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এর মধ্যে ৮ দিন ওই কর্মকর্তাকে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের পর তাকে পরীক্ষায়ও অংশ নিতে হবে। বিজিবির ইতিহাসে এই প্রথম


প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের সরাসরি চাকরিতে যোগদানের আগে প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার নিয়ম চালু হলো। বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এ নিয়ম চালু করা হলো। বিজিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব খবর জানা গেছে। এর আগে বিজিবি জওয়ানদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হয়। এদিকে বিজিবিতে প্রেষণে আসা সেনা কর্মকর্তাদের বর্তমানে সর্বোচ্চ মেয়াদ আছে তিন বছর। প্রেষণের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে চার বছর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর
জেনারেল আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ইতিহাস জেনে ও মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময় বাহিনীকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ দিনের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে বাহিনীতে যুক্ত হলে ভবিষ্যতে ভুলত্রুটি কম হবে। এতে বর্ডার ম্যানেজমেন্টে একটি সুদূরপ্রসারী অগ্রগতি হবে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের পর বিজিবিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বিজিবিতে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের জন্য তাত্তি্বক ও মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণের নিয়ম চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। ওই ব্যাচটি ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগদান করেছে।
প্রেষণে আসা সেনা কর্মকর্তাদের ২০ দিনের প্রশিক্ষণের মধ্যে প্রথম ১২ দিন তাত্তি্বক বিষয়ে ধারণা দেওয়া হবে। পরবর্তী ৮ দিন সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা নেবেন কর্মকর্তারা। প্রশিক্ষণে ফ্লাগ মিটিং, বর্ডার ম্যানেজমেন্ট, বিজিবির নিয়মকানুন, সীমান্ত সুরক্ষার নীতিমালা, বিজিবির ইতিহাস, বিজিবির সঙ্গে পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পর্কের বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে। বিজিবিতে আসা কর্মকর্তাদের জন্য সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সীমান্ত সম্পর্কিত বিষয়ে জ্ঞানার্জনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হয়, চোরাচালানি-মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা ২০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে একটি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ওই পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন না হলে সেখানে তাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়া হবে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর বিজিবি মহাপরিচালকের দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ শোনার মধ্য দিয়ে বাহিনীতে যোগদান করবেন প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, প্রথম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের পর আরও একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণকালে কর্মকর্তারা সীমান্তের দুর্গম এলাকায় ৮ দিন অবস্থান করে সৈনিকদের জীবন ও চোরাচালানের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে জওয়ানদের প্রশিক্ষণ ও সীমান্ত এলাকায় বিওপির উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা আমূল পরিবর্তনের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে নতুন পাঠ্যসূচি। সীমান্ত সুরক্ষা, জওয়ানদের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিষয়াদি নিয়ে পৃথক ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্ত হয়েছে নারী-শিশু পাচার রোধে করণীয় সংক্রান্ত অধ্যায়। কীভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পারদর্শিতা অর্জন করা সম্ভব_ এ বিষয়ে জওয়ানদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের চোরাচালান অভিযান ও পেট্রল কার্যক্রম গতিশীল করতে মোটর দেওয়া হচ্ছে। সোলার চার্জার লাগানোর কাজ চলছে।
বিজিবিতে কর্মরত একজন সেনা কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আগে একজন কর্মকর্তা প্রেষণে এসেই সরাসরি যোগদান করায় বাহিনীর অনেক নিয়মকানুন তার কাছে অজানা থাকত। প্রশিক্ষণের মধ্যে বাহিনীতে যুক্ত হলে এ বাহিনী উপকৃত হবে। এমনকি প্রেষণের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলে বাহিনীতে ওই কর্মকর্তার আরও বেশি অবদান রাখার সুযোগ তৈরি হবে।

No comments

Powered by Blogger.