এক মাসের ব্যবধানে পোশাক রফতানি কমেছে দুই হাজার কোটি টাকা by আবু হেনা মুহিব

তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। গত নভেম্বর একক মাসে আগের মাসের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে গত তিন মাসে রফতানি আদেশ কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। পুরোনো রফতানি আদেশ প্রত্যাহারের ঘটনা চলছে একই সঙ্গে। দামও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তৈরি পোশাক রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিট পোশাক রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের


সংগঠন বিকেএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, গত নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় অর্থাৎ অক্টোবরের তুলনায় পোশাক রফতানি থেকে আয় কমেছে ২৫ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার ডলার বা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। নভেম্বরে আয় হয় ১২৪ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
বিকেএমইএর গবেষণা সেলের তথ্য মতে, নভেম্বরে নিটওয়্যার খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ এবং ওভেন খাতে হয়েছে ১১ শতাংশ। নভেম্বরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় নিটওয়্যার খাতে আয় কম হয়েছে ২০ শতাংশ ও ওভেন গার্মেন্টস খাতে ৯ শতাংশ।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপ-আমেরিকায় দ্বিতীয় দফায় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রফতানি পরিস্থিতি খারাপ যাচ্ছে। এছাড়া নতুন বাজার থেকেও কাঙ্ক্ষিত সুবিধা আদায় করতে পারছে না বাংলাদেশ। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিট পোশাক রফতানি আয় কমেছে ২২ শতাংশ, কানাডায় কমেছে ১৯ শতাংশ, জার্মানিতে ৩৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ১০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৯, স্পেনে ৩২, নেদারল্যান্ডরস ১৩ এবং ইতালিতে ৮ শতাংশ। বিজিএমইএ গবেষণা সেল সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি নভেম্বরে রফতানি আয় কমেছে রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়াসহ তৈরি পোশাকের নতুন বাজারেও। নভেম্বরে রাশিয়ার বাজারে নিট পোশাক রফতানি আয় কমেছে ৫৩ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩০ শতাংশ। পোশাক রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে ইউরোপ ও আমেরিকার মূল দুই বাজারে পোশাক রফতানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। প্রতি বছর বাটেক্সপো উপলক্ষে বিদেশি বায়াররা বাংলাদেশে ছুটে আসেন। বাটেক্সপোর পর এসব বায়ার বিভিন্ন কারখানা ঘুরে অর্ডার দিয়ে থাকেন। এ বছর চিত্র ভিন্ন। কাঙ্ক্ষিত অর্ডার পাওয়া যায়নি বিদেশি বায়ারদের তরফ থেকে।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, গত তিন মাসে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) বিজিএমইএ থেকে ইউডি ( ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন) নেওয়ার হার কমেছে প্রায় ৬০ ভাগ। অন্যদিকে বিকেএমইএ থেকে ইউডি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইএবি পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন বলে জানা গেছে। ইএবি সভাপতি সালাম মুর্শেদী এ প্রসঙ্গে সমকালকে জানান, 'পরিস্থিতি নজরে আনতে আমরা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেব। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে জানান, নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টস রফতানির মূল বাজার এখনও ইউরোপ ও আমেরিকা। এ দুই বাজারে রফতানি কমে যাওয়া মানে দেশের সার্বিক রফতানি আয় কমে যাওয়া। প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজার সন্ধানে কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা শুরু করার কথা বলেছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.