জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে জরুরি সেবাও বন্ধ!

মুক্তিযোদ্ধা মো. কালু মিঞার রক্ত দরকার। রক্ত পাওয়া গেছে, কিন্তু রক্ত দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ছুটির দিনে রক্ত সঞ্চালন বিভাগ বন্ধ থাকে। গতকাল রোববার ছিল সরকারি ছুটি।
ক্যানসার হাসপাতালে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, দিবাযত্ন কেন্দ্র সব বন্ধ। সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। জরুরি বিভাগে একজন এবং ১৫০ শয্যার অন্তর্বিভাগে


একজন মাত্র চিকিৎসক ছিলেন। জরুরি এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ডসহ কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। দূর-দূরান্ত থেকে রোগী নিয়ে স্বজনেরা এসেছিলেন। তাঁরা রোগী ভর্তি করাতে পারেননি। কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ পাননি।
মো. কালু মিঞার ভাতিজা টিটু ইসলাম জানান, পাশের জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করিয়েছেন। ওই হাসপাতালটির রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রটি খোলা ছিল।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, ‘ক্যানসারের তো জরুরি চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। কেউ যদি হাসপাতালে এসে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চায়, তাহলে জরুরি বিভাগে আসতে পারে।’ তিনি বলেন, তদবির ছাড়া রোগী ভর্তি করা খুবই কঠিন।
কুমিল্লা থেকে মো. শাহআলম তাঁর চাচা আবদুল মতিনকে নিয়ে এসেছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জরুরি বিভাগে ভর্তির ব্যবস্থা নেই। পাবনার জাকির হোসেনও একই অভিযোগ করেন। তিনি স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁর মা হাসিনা বেগমকে নিয়ে এসেছিলেন।
নারায়ণগঞ্জের রোকসানা বেগম বলেন, ‘আমার স্তন ক্যানসার হইছিল। এই হাসপাতালেই অপারেশন করাইছি। কেমোথেরাপিও এইখান থেকে নিছি। আবার টিউমার হইছে। আজ আইসা কোনো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারি নাই।’
অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনেরা বলেন, গতকাল তাঁদের বেশি ভোগান্তি হয়েছে। একজন রোগীর স্বজন বলেন, ‘বিদেশিরা হাসপাতালে আসবে। তাই ধোয়ামোছা হচ্ছে। নোংরা হয়ে যাবে বলে বাইরে থেকে কোনো আত্মীয়স্বজনকে ঢুকতে দিচ্ছে না।’
কর্তৃপক্ষ জানায়, আজ হাসপাতালে দেশ-বিদেশের বড় বড় চিকিৎসক ও গবেষকেরা আসবেন। সে জন্যই ধুয়েমুছে সাফ করা হয়েছে। অন্য সময় রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারলেও মেঝেতে পাটি পেতে থাকেন। গতকাল কাউকে বারান্দায় বা করিডরে থাকতে দেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.